পাত্রী দেখা

পাত্রী দেখা

আমার বর্তমান বয়স ২৮ বছর চলছে। গত বছরেই বেকারত্বের খাতা থেকে নাম খারিজ করেছি একটা ফার্স্ট ক্লাস জব পাওয়ার মধ্য দিয়ে । মা আমাকে তাড়া দিচ্ছেন বিয়ে করার জন্য। কিন্তু আমার বিয়ে করার ইচ্ছে নেই একটুও। তবুও মায়ের অনুরোধে পাঁচ পাঁচটা মেয়েকে দেখতে গেছলাম। কিন্তু একটাও কপালে জুটেনি। আমি যে দেখতে খারাপ তা কিন্তু ভাবিয়েন না আপনারা। তাহলে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন বিয়ে হলনা আমার? ঐ একই কাহীনি বার বার ঘটে। প্রতিটা মেয়ের ভাষ্য, আমার বিএফ আছে ভাইয়া। আমরা ২/৩ বছর ধরে প্রেম করি। প্লিজ আপনি আমাকে বিয়ে কইরেন না।আপনি বাইরে গিয়ে বলবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি। আমিও বোকার মত তাদের কথা গুলো শুনতাম।

লাস্ট যে মেয়েটাকে দেখছিলাম, ওর নাম রুপন্তি। মেয়েটা একটু উজ্জ্বল কালো ছিল, চোখে কাজল দিত সর্বদাই, সেই সাথে একটা চিকন ফ্রেমের চশমা চোখে দিত। এই অবস্থায় তাকে যখন আমি প্রথম দেখি তখন চোখ সরাতে পারছিলামনা। কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেয়ে লজ্জায় লাল হয়ে বসে রইলাম। আমার জীবনে দুইটা মেয়ের প্রতি ক্রাশ খেয়েছি আমি । প্রথম জন হল এমবিএ এর এক বড় আপু। আর দ্বিতীয় জন হল আজকের কাজল পড়া মায়াবী মেয়েটি। যার প্রতি ক্রাশ খাওয়া হয়, তাকে কিন্তু আপন করে পাওয়া হয়না। এটাই হয়ত নিয়ম। তবুও রুপন্তি কে পাওয়ার জন্য একটু চেষ্টা করলাম।

যেহেতু আমরা প্রেম করে বিয়ে করতেছিনা তাই আমাদের দুজনের মাঝে একটু কথা বলা প্রয়োজন। দরজা বন্ধ, আমরা দুজন ঘরে। কোন মেয়ের সাথে আমার এটাই প্রথম একরুমে কিছ সময় থাকা, কথা বলা । মেয়েটা ঠিক আগের মেয়েগুলোর মতই বলে উঠলো, আমার বিএফ আছে। আমরা ৭ বছর থেকে রিলেশন করছি। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমি বললাম রিলেশন করছেন সমস্যা নাই। আমি তবুও আপনাকে বিয়ে করতে চাই। আমার ক্রাশকে পেতে চাই। মেয়েটা আমাকে অনেক বুঝাইলো কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। শেষে মেয়েটি বললো আমি আপনাকে বিয়ে করলেও রুবেলের( ওর বিএফ) সাথে কথা বলব। শারীরিক সম্পর্ক করব। এসব কিছু মেনে নিতে পারলে আমায় বিয়ে করেন। আমি ভাবলাম, শালা যে ছেলে কখনো মেয়ের হাত ধরা ছাড়া অন্য কোথাও স্পর্শ করলনা, অথচ তার ভাগ্যটাই এরকম হতে হয়। সেটাও ক্যান্সেল হল।সেবার আর বিয়ে করা হলনা।

সেদিন বাসায় এসে ঘূর্ণায়মান ফ্যানের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি, হায়রে দুনিয়া!! বিয়ের আগের অবৈধ সম্পর্কের প্রতি মানুষের কতটান যদিও সেটা পুরোটাই মরীচিকা ও অনিশ্চিত।
আর একটা বিষয় মাথায় চলে আসলো..। জীবনের কোন একটা পর্যায়ে একটা ‘বুড়ি’কে অনেক ভাল বেসেছিলাম আমি। আমাদের সম্পর্কটা এতটাই মধুর ছিল যে এরকম সম্পর্ক পৃথিবীতে হয়ত আর দ্বিতীয়টি খুজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু রিলেশনশিপের বয়স যখন ২ মাস ৭ দিন তাতেই তার পরিবারের কাছে একটা প্রতিষ্ঠিত ছেলে এসে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল। তার পরিবার তাকে না জানিয়ে কথা দিয়েছিল ছেলেটাকে। তারপর কোন এক অলস দুপুরে বুড়িটা তার পরিবারের বাধ্য মেয়ে হয়ে আমার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করলো। সাথে সাথে আমার আবেগ গুলোও হারিয়ে যেতে লাগলো।

এরপর অনেক বছর চলে গেছে একাকী। এরই মধ্যে প্রায় ৭/৮ টা মেয়ে আমাকে প্রপোজও করেছিল, কিন্তু আর একটা রিলেশনও করার সাহস হয়নি। জীবনটা একাকি কাটায়ে আজকে বিয়ে করতে এসে বউ খুজে পাইনা । অবশ্য আমি চাইলে ঐ পাঁচজনের মধ্য থেকে কোন একজনকে বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু আমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। ঐ বিয়েটা করলে আমি, মেয়েটা ও মেয়ের বিএফ তিনজনই সুখী হতে পারতামনা। জীবনের কোন একটা সময় আমি তো বুঝেছি, সত্যিকারের প্রেম হারানোটা কতটা কষ্টদায়ক। কারন আমি যে আমার ‘বুড়ি’টাকে হারিয়ে ফেলছি চিরতরের জন্য। অবশ্য ‘বুড়ি’টা সেদিন যদি ঐ ছেলেটিকে আজকের মেয়েগুলোর মত বলত ভাইয়া, আমি রিলেশন করি, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবনা। তাহলে হয়ত আজকে আমাকে নতুন করে বউ খুজতে হতনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, তাকে আর পাইনি কখনো আমি।

মা আবারও মেয়ে দেখার জন্য চাপ দিচ্ছে আমাকে। কিন্তু আমি জানি এবারও বিয়েটা হবেনা। কারন এই যুগের প্রায় সব ছেলে মেয়েদের যে ইলিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ থাকে। তবুও মাকে সন্তুষ্টি করার জন্য চলছে আমার পাত্রি দেখা অভিযান। অভিযান তার আপন গতিতে চলতেই থাকুক।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত