প্ল্যান

প্ল্যান

– তুমি যে একটা বেয়াদপ ছেলে তা আমি জানতাম না।
– মানে?
– মানেটা নিজেই বুঝে নাও।

নিজের ডেস্কে বসে অফিশিয়াল কাজ করছি। তখনি জিনিয়া ম্যাম আমাকে এসে কথাগুলো বলে চলে গেলো। কিন্তু আমি কি করেছি? যার কারনে উনি এভাবে কথা বলে চলে গেলেন? ঠিক তখনি শফিক সাহেব আমার ডেস্কে এসে বলতে লাগলেন..
– কেমন চলছে?
– কি কেমন চলছে?
– আপনার আর জিনিয়া ম্যামের প্রেম হিস্টোরি?
– মানে??
– আহ ন্যাকা, যেনো কিছুই বোঝে না।

শফিক সাহবে কথাটি বলে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি চুপচাপ হাবার মত হয়ে বসে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। জিনিয়া ম্যাম কেন এসে এসব কিছু বলে গেলে? আবার শফিক সাহবেও এসে উলটা পালটা কিছু বলে গেলো। কিছুই মাথায় আসছে না।
নিজের কাজেও এদিকে মন বসছে না। সবাই মুচকি মুচকি হাসছে আমাকে দেখে। তাই নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিলাম। কোথাও জামা প্যান্ট ছিড়ে গেছে কিনা সেসব দেখতে। কিন্তু না, সবই তো ঠিকই আছে। কিন্তু সবাই আজ কেন আমার সাথে এমন বিহেভ করছে কিছুতেই বুঝতে পারছি না। সবাই যেন আজ আমাকে নতুন করে দেখছে।

ঠিক তখনি চোখ পড়লো জিনিয়া ম্যামের কেবিনের দিকে। উনি আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই উনি চোখ সরিয়ে নিলেন। কিন্তু কেনো? এর আগে তো এমন হয়নি? আমি তো আজকের ব্যাপারটার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই আমি আর কিছু না ভেবে কাজে মন দিলাম।
(অফিস শেষ)
অফিস শেষ করে আমি যখন বের হয়েছি। তখন দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই তাড়াতাড়ি রিকশার জন্য বাইরে বের হলাম। বাইরে দাড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতেই..
– কাজটা তুমি এভাবে না করলেই পারতে। সবাই হাসাহাসি করছে। (জিনিয়া)

দাড়িয়ে থাকতে কখন যে জিনিয়া ম্যাম এসে পাশে দাড়িয়ে কথাটা বললো বুঝতে পারিনি। আমি তো কথাটার মানেও বুঝতে পারছি না। বারবার মনে হতে লাগলো আমি কি করেছি?
– ম্যাম আমি কি এমন করেছি?
– দেখো, যা করেছে সেটা করেছো। তাই বলে স্বীকার না করাটা কিন্তু অন্যায়। তবে ব্যাপারটা আমাকে সরাসরি বলতে পারতা। এভাবো শফিকের কাছে না লিখে দিলেও তো হত।
জিনিয়া ম্যাম আর কিছু না বলেই উনি ওনার গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। আর আমি হাবার মত দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম। কি দিয়েছি আমি ওনার কাছে? শফিক ব্যাটা তো একটা হারামি। কিছু জিগাস করলেও বলবে না। কিন্তু আমার জানতেই হবে আমি কি করেছি।

আর কিছু না ভেবে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাড়িতে এসে রুমে শুয়ে আছি। তখনি আমার কাজিন আকাশ আসলো..সে এসে বললো
– ভাইয়া তুই কিরে?
– মানে?
– মানে তোকে যে একটা চিঠি লিখে দিতে বলেছিলাম সেটা আজ তিনদিন ধরে চাচ্ছি কিন্তু দিচ্ছিসই না।
– ওহ.. তাই বল, আচ্ছা আমি চিঠিটা লিখেছি আসলে কোথায় যে সেটা রেখেছি বুঝতে পারছি না। আচ্ছা কাল দিবোনি।
– মনে থাকে যেনো।
কথাবলে সে চলে গেলো। আর আমি কিছু আর না ভেবেই ঘুমিয়ে গেলাম।
(পরেরদিন)
– ম্যাম ডাকছে আপনাকে মি. আবির।

ডেস্কে বসে কাজ করছি। তখনি শফিক এসে মুখে শয়তানের এক হাসি নিয়ে কথাটি বললো। আমি ওনার হাসি দেখে বুৃজতে পারলাম। তিনি আমাকে নিয়ে বেশ মজাতেই আছে।
– কেনো ডাকছে?
– সেটা গেলেই বুঝতে পারবেন।
আমি আর কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে আসতেই। শফিক আবার বললো..
– কদিন পরে হয়ত আমাদেরকে ভুলেই যাবেন। তাই আগাম আপনার সাথে খাতির করছি। আবার কিছু মনে করছেন না তো আবির সাহবে?

কথাটি শুনে থমকে দাড়ালাম। বেটা বলে কি? আমি তাদেরকে কেনো ভুলবো? কি হচ্ছে এসব? আমরা তো কিছুই মাথায় আসছে। তবে আগে যায় ম্যাম ডেকেছে যেহেতু..
– ম্যাম আসবো?
কোনো কথা বললো না। ইশারাতে প্রবেশ করার অনুমতি দিলো। আমি যেয়ে ওনার কেবিনে সামনে দাড়ালাম। উনি আমার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।
– ম্যাম কিছু বলবেন? (আমি)
– ওহ. হুম. কাল একটু বাবা আসবে অফিসে। আমি থাকবো না, আপনি বাবাকে নতুন প্রজেক্টের কাজটা একটু বুঝিয়ে দিয়েন তো। আর এই যে নিন, (লাল রঙের একটা ফাইল দেখিয়ে বললো) এটাকে কাল বাবাকে দেখাবেন। যান এখন..আর শুনুন, ফাইলটা খুলবেন না। আমি সব ঠিক করে দিছি। শুধু বাবা আসলেই ওনাকে দিবেন।

– ওকে
জিনিয়া হল অফিসের বসের মেয়ে। তাই বস না থাকায় উনি আমাদের বস। ওনার কাছ থেকে ফাইলটা নিয়ে চলে আসলাম। কিন্তু কেন হুট করে বস আসবে কাল অফিসে বুঝলাম না। যাই হোক, সেটা ওনাদের ব্যাপার। আমি আমার কাজে মন দিলাম।
– ভাইয়া. তোর চিঠি লেখার কি হল? আমার জি এফ যে রাগ করেছে। তাকে চিঠি দিয়ে রাগ ভাঙাবো। তুই লিখে কেনো দিচ্ছিস না? (আকাশ)
বাড়িতে এসে আকাশ এর কথা শুনলাম। কিন্তু চিঠি তো আমি লিখেছি। তবে সেটা যে কোথায় কি করলাম বুৃজতে পারছি না। তাই ঐ রাতেই আকাশকে একটা চিঠি লিখে দিলাম।

(পরেরদিন)
– স্যার আসবো? (আমি)
অফিসে এসে দেখি বস এসেছে আগে থেকেই। ডেস্কে বসতেই সেই লাল ফাইলের কথা মনে পড়তেই সেটা নিয়ে বসের কেবিনে গেলাম।
– হুমম এসো।
– স্যার এই ফাইলটা ম্যাম গত কাল দিতে বলেছিল।
– হুমম জানি, রেখে যাও।
স্যারের কথামত ফাইলটা রেখে আসলাম। রাখার সময় স্যারের দিকে একটু তাকালাম। তাকিয়ে দেখি তিনিও সেই তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে আমাকে দেখছেন। আমি আর কিছু না ভেবেই চলে আসলাম নিজের ডেস্কে।
– আবির সাহেব, স্যার আপনাকে ডাকছে।
কাজ করছিলাম, তখনি শফিক এসেছে কথাটি বললো। তাই আমি আর কিছু না বলেই সোজা বসের কেবিনের দিকে গেলাম।

ভিতরে আসার অনুমতি পেয়ে যখন ওনার সামনে দাড়ালাম। তখনি, তিনি বললেন.
– কতদিন থেকে ভালোবাসো? (স্যার)
স্যারের কথা শুনে আমি হাবার মত চেয়ে রইলাম। কিছুই বুঝতে পারছি না কি বলবো? আর স্যার কেনই বা প্রশ্ন করছে এমন? কি উত্তর দিবো আমি।
– কি হল আবির, বলো তুমি আমার মেয়েকে কতদিন ধরে ভালোবাসো?
আমি আবারো চুপ হয়ে গেলাম। কি হতে যাচ্ছে বা কি হচ্ছে আমি এর কিছুই বুঝলাম না। তাই স্যারকে প্রশ্ন করলাম..
– স্যার, মানে আসলে কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
– তাই?

তখনি স্যার সেই লাল ফাইল থেকে একটি কাগজ বের করে দিলেন। আর বললেন.
– বুঝতে পারছো না? তাহলে এটা কি? এটা কেনো আমার মেয়েকে দিয়েছো?
কাগজটি দেখে, আমার গলা শুকিয়ে গেল। কারন, কাগজটি আর কিছু না হলেও সেটা যে একটা চিঠি তা আমি ঠিকই বুঝে নিলাম। আর সেটার মধ্যে যে কি লেখা সেগুলোও আমার চোখের সামনে সপষ্ট হতে লাগলো। আর সেই লেখাগুলো যে আসার সেটাও বুঝতে বাকি নেই। সুতরাং আমার কপালে খারাপই আছে আজ। কিন্তু এটা স্যারের কাছে কেনো? আর এই ফাইলের মধ্যেই বা কি করছে?

– কি হল কি? কি ভাবছো এত? (স্যার)
স্যার ধমকিয়ে উঠলেন। সেই সাথে মনে পড়ে গেলো গত ৫ দিন আগের কথা।
এই চিঠিটা আমি লিখেছিলাম আকাশের জন্য। আর চিঠিটা লিখেছিলাম এই লাল ফাইলের উপরে রেখেই অফিসের ফ্রী সময়ে। দুর্ভাগ্য বশত আকাশের জিএফ নামও জিনিয়া।
তবে লেখা শেষ করে আমি এর উপরে রেখে বাথরুমে গেছিলাম। ঠিক তখনি এসে শফিক মনে হয় এইটা পড়ে। আর ফাইলের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। আর ফাইলটাতে কাজ শেষ থাকায়। সেই সময় এটা ম্যামের কাছে পাঠিয়ে দিই।
তার মানে তিনিও এটা পড়েছে? হায় হায়, যদিও পড়েছে কিন্তু বেটা শফিক ম্যামের কানে আরো বেশি কিছু লাগিয়েছে সেটা বুঝলাম এখন।

– কি হল, আবির কথা বলছো না কেনো?
– ইয়ে মানে স্যার, আসলে,
– চুপপ..আর তোতলাতে হবে না। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।
স্যারের কথা শুনে এইবার চমকে উঠলাম। অবাকের পালা মনে হয় আরো বাকি ছিলো। তাই ভয়ে জিগাস করলাম..
– মানে স্যার..?

– মানে হল, তোমাকে বেশ লাগে আমার। তোমার কাজের দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। তুমি আর সবার মত না। নিজের দায়িত্বটাকে ঠিক ঠাক বুঝে নাও। সময় মত কাজ করো। আমি এমনই একটা জামাই খুজছিলাম।
– এ্যাঁ..?
– হুমম তাই তোমাকে দেখার জন্য জিনিয়াকে কদিন অফিসে পাঠিয়ে ছিলাম।
– ওকে এখন বাসায় যাও।।সন্ধ্যায় আমরা সবাই তোমাদের বাসায় আসছি।
আমি আর কিছু না বলে এক প্রকার দৌড়ে বের হলাম কেবিন থেকে। ভাবতে লাগলাম, এটা কি হল? সামান্য একটা চিঠি থেকে এত কিছু? তবে শফিকই মেইন লোক, যে কিনা সব কিছুর জন্য দায়ী। তাই সোজার তার ডেস্কে গেলাম। রাগী লুকে তার দিকে তাকিয়ে আছি।

– কিছু বলবেন আবির সাহেব? এভাবে কেন তাবিয়ে আছেন?
আমি কিছু বললাম না। তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বের হয়ে গেলাম। মনে মনে হেসে বললাম, বেটা ঠিক কাজই করেছে শেষমেশ।
জিনিয়া ম্যামকে পটানোর প্যান ছিলো আমারই। শফিকই বেশি হেল্প করেছে। ভাবতেছি আমার বিয়ের সব দায়িত্ব ওর উপরেই দেবো। অবশ্য তাকে আগে একটা হেব্বি ট্রিট দিতে হবে। মনে মনে এক পৈশাচিক হাসি দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

(সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত