প্রাপ্তি

প্রাপ্তি

আজ অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে গেলাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় জুনিয়র একটা মেয়ে এসে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো। এই তুমি এতদিন কই ছিলা? মানে কি? মানে বুঝো নাই?? কানে কম শুনো নাকি? জিজ্ঞেস করছি এতোদিন কই ছিলা? যেখানেই থাকি, তোমায় বলতে হবে নাকি? আর তুমি এমন ব্যাবহার করছো কেন?? ভুলে যেওনা আমি তোমার সিনিয়র। মুখ সামলে কথা বল।“আমি তোমার সিনিয়র,মুখ সামলে কথা বল”! অনেকটা ব্যাঙ্গাতক ভাবেই কথাটা বলল মেয়েটা। মেয়েটা আমার দুই বছর জুনিয়র । নাম বীথি। আর আমি সালমান। কম্পিউটার সায়েন্স এ ডিপ্লোমা করছি । মেয়েটা আমার এলাকা থেকেই এসেছে। সেই সুবাধে আমরা একে অপরকে চিনি। কিন্তু এভাবে ‘তুমি’ করে বলায় একটু রাগই হচ্ছিল তাই দিলাম এক ধমক। ধমক খেয়ে যেন তেলে-বেগুন জ্বলে উঠল ।

ওই তুমি আমায় ধমকাও কেন?? এতো ভাব কিসের তোমার?? তোমারে জিগাইছি এতোদিন কই ছিলা। আর তুমি আমারে ধমকাও?? যেখানেই থাকি তোমার কি? আর তুমি খারাপ ব্যাবহার করতেছ তাই ধমক দিলাম। হইছে হইছে আর ফিনিশিং দিতে হবে না। যাও ক্লাশে যাও। চলে এলাম সেখান থেকে। মাথা পুরা গরম হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষন থাকলে দুই-তিনটা চড় বসিয়ে দিতাম। তবে খুব খারাপ কিছুর আভাস পাচ্ছি। এরপর আরো কিছুদিন কলেজে গেলাম না। কয়েকদিন পর কলেজে গেলাম এবং আবারো একই কেইস!! তবে আজ ভালোভাবেই ডাকল । গেলাম এবং একই প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম। বললাম যে এমনিই আসি নি। এমনি কোনোকিছু হয় না। এতো কথা না বলে কেন ডেকেছ সেটা বল। আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। কি বলবে বল। আমার ক্লাশ আছে।

আজ ক্লাশ মিস দিন না। আমাকে একটু সময় দিন। আমরা কোথাও একটু বসি। চেহারা দেখে মায়া হলো। খুব করুণভাবে কথা বলছে। তাই আর না করলাম না। তবে একটা ভয় বারবার পাচ্ছি। ঠিক আছে চল। একটা সিএনজি নিলো। এবং পার্কের কথা বলল। পার্ক কেন?? সময়টা আমাকে দিয়েছেন তাই আমার কথামতই চলুন। আর কিছু বলার নাই। কিছুক্ষনের মধ্যে পার্কে চলে এলাম। ভাড়াটা বীথিই দিল। চলুন কোথাও বসি। চল। পুরোপুরি বুঝে গেছি সামনের সময়টাতে কি হতে যাচ্ছে। আপনাকে একটা কথা অনেক দিন ধরেই বলবো ভাবছি। কিন্তু বলা হয়ে উঠে নি। আসলে আপনাকে যখনই বলবো বলে প্রস্তুতি নিই তখনই আপনি কোথায় যেন হারিয়ে যান। তাই আর বলা হয়ে উঠেনি।

এতোকিছু না বলে সরাসরি বল কি বলবে। কি বলতে চাইছি সেটা আপনি এতোক্ষনে না বুঝার কথা না। আচ্ছা তারপর ও বলি আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর আর কিছু শোনার ইচ্ছে হয়নি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটা চড় বসিয়ে দিলাম। এটা বলার জন্য এখানে এনেছো?? তুমি আমায় কতটুকু চিনো যে তুমি আমায় ভালোবাসার কথা বলছো?? জানতাম এরকম একটা চড় খাবো তাই ক্যাম্পাসে বলিনি। আর ভালোবাসতে চিনা লাগে না। ভালোবাসা মনের গবীর থেকে হয়। কে কাকে কখন ভালোবেসে ফেলে সেটা সে নিজেও জানে না। এটা হয় না, বীথি । আমি খুব সাধারন জীবন যাপন করি না। আমার সাথে তোমার যায় না। তুমি আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাবে দেখো।

আমাকে আপনি বুঝানোর দরকার নেই। আপনি আমায় ভালোবাসেন না সেটা আমি জানতাম। কিন্তু আমার ভালোবাসাটা আপনাকে জানান দিলাম। আর কিছু বলার সুযোগই দিলো না।। ওর প্রতি যে আমার দুর্বলতা নেই তা না। আমিও ওকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার নিজেরই তো বিশ্বাস নেই। আমার অনিশ্চিত জিবনের সাথে ওকে মিশাতে চাই নি। ও চলে যায়। এরপর আর কোনোদিন আমার সাথে কথা বলে নি। আমিও আর কথা বলতে চাইনি। অযথা ওর মায়া বাড়িয়ে কি লাভ??

বছর খানেক পরে আমাদের ব্যাচ কলেজ থেকে বিধায় নেয়। এরপর একটা নামকরা কম্পানীতে জয়েন করি। মোটামুটি ভালো বেতন। বীথির কথা ভুলেই যাই। চাকরীতে সেটেল হওয়ার পর বাবা-মা বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আমার পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করলে আমি না বলি। তাদের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করি। ৬ মাস পর এই উঠ। আর কতোক্ষন ঘুমাবে। আজ না বলেছিলে শপিং এ যাবে। এইতো উঠছি বাবু, আর একটু ঘুমাই না। না আর না। তাড়াতাড়ি উঠ। নয়তো পানি ঢেলে দিব কিন্তু। এইরে এই মেয়ের আবার কি করে বিশ্বাস নাই। হয়তো ঢেলেও দিতে পারে। রেগে গেলে যে বীথি কি করে সেটা সে নিজেও জানে না।

হুম, বীথি। বীথিই আমার বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়ে। চমকটা বিয়ের দিনই পেয়েছিলাম। তবে আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে যে এই কাজটাতে বীথিরও হাত আছে। আমি যে খুশি হয়নি সেটা কিন্তু না। আমি অনেক খুশিই হয়ে ছিলাম। এখনো সুখেই আছি। বীথিই আমার জীবনের সবছেয়ে বড় প্রাপ্তি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত