পরম যত্নে

পরম যত্নে

সম্প্রতি বিয়ে হওয়া মিলি,
তার মা অনেকটা বিচলিত হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আন্টি’কে বলছে,

–জামাইর অনেক টাকা পয়সা ! বিদেশ থাকে।আমার মাইয়া কপাল কইরা এমন জামাই পাইছে । মাইয়া আমার মেলা সুখে থাকবো আপা।

উনার কথা শুনে যতটা না অবাক হয়েছি, ঐ আন্টির কথা শুনে তারও বেশি অবাক হলাম।কারণ আন্টিটা ছিলো খুবই সচেতন।যার জন্য তার চিন্তা দ্বারাও আমার খুব ভালো লেগেছিলো।

আন্টিটা বললো,

–জামাইর টাকা পয়সা দেখে মেয়ে বিয়ে দিলেন আপা ? সুখতো স্বয়ং আল্লাহর হাতে।টাকা পয়সায় যদি সব সুখ থাকতো তাহলে নিম্ম মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো টিকে থাকতো না।সব সুখ ধনীদের ভান্ডারে গিয়েই জমা হতো।একটু চোখ বুলিয়ে দেখুন না আপা,
ধনী পরিবারগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে কয়টা টিকে আছে ?

উত্তরে মিলির মা কিছুই বলতে পারলো না।চুপ করে ঘরে ঢুকে গেলো ।

আসলে বর্তমানে আমরা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে টাকাই সবকিছু।আমাদের চিন্তাদ্বারাগুলো টাকার মোহে আটকে গেছে।বেশিরভাগ মেয়ের মায়েরা, মেয়ের বিয়ের জন্য বিদেশী পাত্র খুঁজে ।

মানুষ সারাজীবন পাশাপাশি থেকেও একে অপরকে চিনতে কষ্ট হয়।সেক্ষেত্রে ধরুন আপনি একজন বিদেশী ছেলেকেই বিয়ে করলেন।মানুষ বাঁচে কয়দিন ? জীবনের বেশিরভাগ সময় আপনার প্রিয় মানুষটি আপনার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকবে।তাকে আপনি কতটুকু চিনবেন বা জানবেন ? আপনার সন্তান কতটুকুই বা তার বাবার স্পর্শ পাবে।টাকাতেই যদি সবকিছু হয় তাহলে তো আদিযুগ থেকে এখন পর্যন্ত সবাই টাকাকে বিয়ে করতো।

আমাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রম নামক আশ্রমটির সদস্য সংখ্যা কেবল বাড়ছেই। কেন ?
যেই বাবা-মা’কে সন্তান মাথায় করে রাখার কথা তাদের স্থান কেন বৃদ্ধাশ্রমে হচ্ছে ?

একবার ভাবুন ,
আপনার সন্তানকে আপনি কতটুকু সময় দিতে পেরেছেন ? আপনার স্পর্শ যখন আপনার সন্তানের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিলো, তখন কি সে তা পেয়েছে ?

যখন সে আপনার হাত ধরে হাঁটতে চেয়েছিলো তখন কোথায় ছিলেন আপনি ? কোথায় ছিলো আপনার সেই হাত ? হ্যাঁ, আপনি তখন আয় করতে ব্যস্ত । কার জন্য? সেটা অবশ্যই আপনার সন্তান পরিবার সবার জন্য।কিন্তু অতটুকু বয়সে কি আর আপনার সন্তান বুঝে যে আপনি তার জন্য ব্যস্ত ?

তখন তো তার কচি মন।মা-বাবার হাত ধরে ছুটোছুটি করার বয়স।কিন্তু সেদিক থেকে ঐ সময় সে তার প্রিয় দুজন মানুষের হাত ধরে হাঁটার সুযোগটা পর্যন্ত পায় না।একবার খেয়াল করে দেখুন, বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া বেশিরভাগ বাবা মা হলেন ধনী।

সন্তান যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন সে দেখে তার বাবা মা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।তার সময় কাটে ঘরের এক কোণে।তার পরম আপনজন হয়ে উঠে বাড়ির কাজের লোক।তখন থেকেই তার অভ্যাস হয়ে যায় বাবা মাকে ছেড়ে থাকার।আর সন্তানের সেই অভ্যাস এক পর্যায় মা-বাবার জন্য অভিশাপ হয়ে নেমে আসে।আমি সবার কথা বলছি না । কারণ সব সন্তান বা সব বাবা মা এক নয়।

এবার মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে কিছু কথা বলি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা অভাব জিনিসটা খুব ভালোই বুঝে।তারা দেখে তাদের বাবা যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করে তাদের মুখে খাবার জোগায়।মায়ের দিনের বেশিরভাগ সময় রান্নাঘরে কাটাতে হয়।মা বাবার স্পর্শ তারা কিন্তু প্রতিনিয়ত পায়।

তখন তাদের মধ্যে একটা আদর্শ কাজ করে।মা-বাবাকে সুখে রাখার পণ তারা সেই ছোট বেলা থেকেই করে আসে।কারণ সেই বীজ সন্তানের মনে আপনাআপনি বুনে যায়।আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ছোট ছোট সুখ আর দুঃখগুলো মিলিত হয়ে এক একটি বড় গাছ হিসেবে পরিণত হয়।যার ছায়াতলে বৃদ্ধ বয়সে বাবা মা শান্তিতে থাকতে পারে।

মূলত আপনি আপনার সন্তারে জন্য যেমনটা করবেন ঠিক তেমন ফল আপনার জন্য ভবিষ্যৎে তৈরি হবে।

তবে ধনী বা মধ্যবিত্ত অথবা গরিব সেটা বড় কথা নয়।আমাদের প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠাটাই হলো বড় । বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের ঢাল হিসেবে নিজেকে তৈরি করাই হলো আমাদের বড় দায়িত্ব।যা কিছুই হোক , বাবা মা তো।তাদের ছাড়াতো আর আল্লাহ্ আমাদের পৃথিবীতে পাঠাতেন না।

দোয়া করি,সব সন্তান এবং আমিও যেন বাবা মা’কে পরম যত্নে আগলে রাখতে পারি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত