স্বর্গোদ্যানে একরাত

স্বর্গোদ্যানে একরাত

নীলার কলটা আমার সেলফোনে ভেসে ওঠার সাথে সাথে আমি একটু অবাক হলাম। ও তো এর আগে আমাকে নিজে থেকে কখনো কল করেনি। আমিই বরং কল করছি বেশ কয়েকবার। এরমধ্যে একবার প্রয়োজনে, অন্য কবার আলাপে কুশলাদি বিনিময় আর হালকা রসিকতা ছাড়া অন্য কিছু হয়নি। বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারহিট নায়িকা নীলাঞ্জনা নীলা তাহলে নিজে থেকে আমাকে কল করল। ঘটনা কি?
আমি ফোন তুলে নিলাম।
‘এই আসাদ?’
‘হ্যা’, বললাম। ‘ফোন করেছ কেন?’
‘না মানে…তুমি এখন কোথায়?’
‘কেবল বাসায় আসলাম,’ বললাম। ‘তা দিয়ে তুমি কি করবা?’
‘না মানে…তোমার বাসায় কি আজ রাতে থাকা যাবে?’
ওর কথা শুনে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। বলে কি মেয়ে। এখন রাত সোয়া এগারোটা। মেয়ে কিনা বলে এই মাঝরাতে আমার বাসায় আসবে। থাকবে। ওর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।
‘ব্যাপার কি নীলা? বলতো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!’
‘তোমার বুঝতে হবে না। তুমি তো এখানে একলাই থাক। আমার বাসায় একটা ঝামেলা হয়েছে…মানে সমস্যা আছে। থাকা যাবে কিনা তোমার ওখানে বলো?’

এক মুহূর্ত আমি ভাবলাম। মেয়েটাকে আমি প্রথম থেকেই বন্ধু হিসেবে দেখে এসেছি। ওর সাথে দেখা সিনেমার শুটিংয়ের সময়ে। আমি সামান্য এক সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখক। নীলা বর্তমানে যে সিনেমার শুটিং করছে, ওটার কাহিনী আমারই লেখা। তাই একটু সখ্যতা। শুটিং ইউনিটে কাজ করা অনেকের মতোই আমাদের মধ্যে তুমি-তুমি সম্পর্ক। তবে, এখনও বলা যায় না ও আমার বন্ধু, বা আমি ওর বন্ধু। কোনো একটা সমস্যার কারণে ও হয়তো আমার এখানে আসতে চাইছে। তাই না করি কি করে?
‘যাবে না কেন? চলে আস…তা কখন আসছ তুমি?’
আমি গুলশান থেকে এখনই রওয়ানা দেব। আসতে যতক্ষণ লাগে আরকি?’
আমার বাসা বারিধারায়। এখানে একটা স্টুডিও এপার্টমেন্ট ভাড়া করে থাকি আমি। তবে, এটার ভাড়াতে আমি একা নই। আমার এক বন্ধু রনি মালয়েশিয়ায় থাকে। ও ঢাকা আসলে মাঝে মাঝে বউ নিয়ে এখানে থাকে। আর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমি লেখালেখি সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় আসলে এখানে থাকি। এখানে আসতে ওর ঘণ্টাখানেকের বেশি লাগার কথা না।
বললাম। ‘নো প্রবলেম…চলে আসো!’ বলে ফোন নামিয়ে রাখলাম আমি।

ভাবতে লাগলাম কি এমন সমস্যা হয়েছে যে ও রাতে ওর থাকার জায়গা বদল করতে চাচ্ছে। আল্লাহই মালুম! ও মেয়ে হিসেবে সুবিধার না, যদি ক্যারেক্টারের কথা বলা হয়। ও যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিনেমায় ঢুকেছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সেলিম চৌধুরি ভাইয়ের সাথে ওর সম্পর্কের কথা সবখানে রটে গিয়েছিল। তবে, যাদের ঘটে ন্যূনতম বুদ্ধি আছে, তারা সবাই জানে যে সেলিম ভাই, অন্য অনেক মেয়ের মতো, ইচ্ছেমতো ওকে খেয়ে একের পর এক সিনেমায় চান্স দিয়েছে। সেটা ছিল যেন পুরো দেশবাসির কাছে ওপেন সিক্রেট। কিন্তু, এগুলো বিষয় নিয়ে কেউ তো মাথা ঘামায় না। এমনকি মাথা ঘামায়নি জনৈক ছেলের সাথে নীলার থ্রিএক্স যখন বের হলো, তখনও। এরপর নীলা সরাসরি সবাইকে বলেছে, এটা ও ছিল না (যেমনটা অন্য সেলিব্রিটিরা তাদের থ্রিএক্স বের হওয়ার পর বলে আরকি!)। আমার বর্তমান বয়স ৩২।

লেখক, অনুবাদক হিসেবে দেশে মোটামুটি একটা নাম করতে পেরেছি। খালি বাকি ছিল সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা নিতে দুমাসের জন্য বাংলাদেশে এসেছি অস্ট্রেলিয়া থেকে। আমার বউ রিমি এক্ষেত্রে খুবই উদার। বউকে পেতে আমার টানা সাত বছর ওর পেছনে লেগে থাকতে হয়েছিল। এরপর বরফ গলেছে। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় এখন সুখেই আছি। এদিকে নীলারও একবার বিয়ে হয়েছিল। নাকি দুবার! শোনা যায়, এর আগেও একটা ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়েছিল। মিডিয়ায় টানা কয়েকদিন এনিয়ে মুখরোচক খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তবে, তারপর সব যথারীতি ঠাণ্ডা। নীলা বিয়ের পর স্বামী মাহফুজের সাথে ‘ভালোভাবেই’ সংসার করতে লাগল। আসলে, কেউ ভাবেনি নীলার মতো টপ ফর্মের একজন নায়িকা এভাবে বিয়ে করে ফেলবে। ঘটনাটা সবাইকে অবাক করেছিল। তবে, বিয়ের পর নীলা যখন ঘোষণা দিল তার কাছে সংসার সবার আগে, পরিবার চাইলে সে সিনেমায় অভিনয় করবে – তখন সবাই আরো অবাক হয়েছিল। কিন্তু, নীলা সবাইকে বেশিদিন অবাক করে রাখেনি। আবার ফিরে এসেছিল সিনেমার জগতে। তার স্বামী মাহফুজকে দেখে টাকা-পয়সাওয়ালা এক আলাভোলা ছেলেই মনে হয়েছিল আমার। টাকা আছে, তাই একটা সুন্দরি মেয়েকে বউ হিসেবে পেলেই তার চলে। মেয়ে কেমন বা কি করছে – সেটা নিয়ে যার খুব একটা মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু, সম্প্রতি স্বামীর সাথেও ওর একটু গ্যাঞ্জাম চলছে সম্ভবত। চাটগাঁইয়া স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে গুলশানে নতুন কেনা ফ্ল্যাটে থাকছে।

নীলা আসতে আরো বেশ কিছুক্ষণ যেহেতু আছে, আমি ওকে কিভাবে আপ্যায়ন করা যায়, সেটাই ভাবলাম। হয়তো ও রাতে খেয়ে এসেছে। তবু, ফ্রিজ থেকে ভাত-তরকারী বের করলাম। ওভেনে দিয়ে গরম করলাম। আমার নিজের হাতের রান্না এটা। আমি নিজে ভালো রান্না পারতাম না বছরকয়েক আগেও। তবে, রান্না যে এখন ভালো পারি, তার পিছনে কাজ করেছে আমার বউয়ের অনুপ্রেরণা। বউকে হাতের রান্না খাইয়ে খুশি করার ইচ্ছা থেকেই রান্নাটা ভালো করে শিখেছি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে। বউ আমার অস্ট্রেলিয়ায় ভালো চাকরি করে। অত্যন্ত টপ মোস্ট একটা মাল্টিন্যাশনাল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। আমি ওখানে গিয়ে বউয়ের আর্থিক সহাহতায়ই একতা ছোটোখাটো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চালাই, সিডনির শহরতলিতে। ওখানকার বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেই আমরা থাকি। এমন বউয়ের সেবাযত্নের তো কোনো কমতি রাখা উচিত না। তাই বউকে ভালো রান্না করে খাওয়াতে হবে, এমন অনুপ্রেরণাতেই আমি ‘সুগৃহিনী’ হয়ে উঠেছি। আর একটু পর আমরা দুই বিয়াইত্তা মিডিয়ার বন্ধু বসব, আমারই রুমে।

বারিধারা পৌঁছেই নীলা আমাকে ফোন দিয়ে ভালো করে বাসার লোকেশনটা জেনে নিল। এরপর বাসার সামনে এসে ফোন দিল। আমি নিচে নেমে গেলাম। অর পরনে কালো একটা লেসওয়ালা স্কার্ট, ওটার ঝুল হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত। ওর সুগঠিত পায়ের বেশ খানিকতা দেখা যাচ্ছে। আর উপরে কালো টপস। এই রাতে নীলাকে কালো পোশাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে – স্বীকার না করে পারলাম না। ও আমাকে দেখেই ওর শয়তান মার্কা হাঁসিটা দিল। হাসিটা আসলে ওর স্বাভাবিক মৃদু মিষ্টি হাসি; তবে আমার কাছে কেমন যেন ‘শয়তানী মার্কা’ হাসিই লাগে। এই হাসিটা ওর দুষ্টু ব্যক্তিত্বের সাথে মানিয়ে যায়।

‘আমাকে কিন্তু অবাক করে দিলে!’ বললাম। ‘এনিওয়ে…আসো, ভিতরে আসো।‘
আমি ওকে নিয়ে আসলাম আমার স্টুডিও এপার্টমেন্টে। আমার ফ্ল্যাটটা দুই কামরার। একটা বেডরুম, একটা ডাইনিংকাম ড্রয়িং, আরেকটা স্টুডিও বা কাজ করার রুম। স্টুডিও রুমটাতেই আমি থাকি। বাকি রুমটাতে রনি আর ওর বউয়ের মালপত্র। রনির রুমটাতে দরকার হলে নীলা থাকতে পারবে, মনে মনে ভাবলাম।

‘বাহ! তুমি তো বেশ ভালো ফ্ল্যাটেই থাক!’ বলল নীলা। তা ফ্ল্যাটে আর কেউ থাকে না।’
‘আমার বন্ধুর ফ্ল্যাট বেসিক্যালি। ঢাকায় থাকলে আমি ভাড়া দেই থাকার। আর বন্ধু আর ওর বউ দুজনই এখন মালয়েশিয়া। সে তো তোমাকে বলেছিলামই।’ ধারণা করলাম, এই সুবিধা জেনেই নীলা এখানে থাকার কথা চিন্তা করেছে।
‘হুম! তাহলে তুই তো পুরাই স্বাধীন। কটা দিন থাকলে তো সমস্যা নাই!’ আবারও ওর ‘দুষ্টু হাসিটা’ হেসে বলল নীলা।
খুব জানতে ইচ্ছে করছে ও আসলে কি এমন সমস্যায় পড়ল যে এত রাতে আমার দ্বারস্থ হতে হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘রাতে কি কিছু খেয়েছ?’

‘কিছু না খেলেও চলবে। সন্ধ্যার পর নাস্তা টাইপের কিছু একটা করেছিলাম।’
‘এখনও হালকা কিছু খেয়ে নে,’ বললাম। ‘আমি রেঁধেছি।‘
“ওয়াও! তাহলে তো খেতেই হয়। তা কি রেঁধেছিস?’
‘সিম্পল ভাত তরকারি…খেয়ে আমাকে কৃতজ্ঞভাজন করুন, ম্যাডাম!’ বলে আমি ওকে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললাম। ও সাথে করে একটা ব্যাগ এনেছে। আমি ওটা নিয়ে রনি আর ওর বউয়ের ফাঁকা রুমে রেখে আসলাম, সাথে ওকেও। অপেক্ষা করতে লাগলাম ওর ব্যাক করার। কিছুক্ষণ পরই ও ডাইনিংয়ে চলে আসল। সিম্পল সালোয়ার-কামিজ পরেছে ও। সাদা সালোয়ার আর ফুলের নকশা করা মেরুন রঙের কামিজ। তবে, ওর গায়ে ওড়না দেখলাম না। হাসলাম আমি।
‘কিরে হাসছিস কেন?’
‘না, তোকে সালোয়ার কামিজে একেবারে সুবোধ বালিকা লাগছে তো…!’
‘অ…আমি কি অসুবোধ বালিকা নাকি’
‘না, তা নোস! তবে, এখন বেশিই ভালো লাগছে। বসে পড় টেবিলে।’
আমরা দুজন টেবিলে বসলাম। ওকে খাবার বেড়ে দিলাম। ক্ষিদে না থাকলেও ওর অনুরোধে আমিও একটু প্লেটে নিলাম। আমি কিছু বলার আগেই ও ওর সমস্যার ফিরিস্তি বলা শুরু করে দিল।

‘আরে বলিস না, এক বুড়া বেটা এসে আমার সাথে থাকতে চায়। আমি বারবার এড়িয়ে যেতে চাইলেও বেটা আমার পিছু ছাড়ে না। আজ তো সে রাতে নাকি আমার বাসায় চলে আসবে বলে রাখছে। সেজন্যই, আমি বাসা তালাবদ্ধ করে পালালাম।’
‘কে এই লোক?’ জিজ্ঞাসা করলাম আমি।
উত্তরে ও যার নাম বলল তাকে আমিও চিনি। মিডিয়ার এক মোটামুটি প্রভাবশালী লোক বলা যায় তাকে। বয়েস ৫০’র মতো!
শুনে আমার একটু হাসি পেল। ‘তা ব্যাটা যা চাইছে, সেটা দিয়ে দিতি। বুড়ো বলে তার কি স্বাদ-আহ্লাদ নেই?’
শুনে একটু গম্ভীর হয়ে গিয়ে ঠোঁট বাঁকাল ও। ‘তুই মজা নিচ্ছিস? আমি কি জনে জনে দিয়ে বেড়াই নাকি?’
‘না, তা নোস! তবে, অস্বীকার করতে পারিস শোবিজে মেয়েদের এটা করতে হয়…তুই নিজেও তো এটা করেই উপরে উঠেছিস! নাকি…?’ কথাটা বলার সময় খুব সতর্কভাবে ওর দিকে তাকালাম। মনে হলো ও আবার রাগ করে হয়তো ধুম করে আমার ফ্ল্যাট থেকে বের হয় যেতে পারে। তবে, ও যদি তা করে, আমি যেভাবে হোক ওকে অনুনয়-বিনয় করে মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করব। হাজার হলেও ওর বন্ধুত্বটা আমি হারাতে চাই না।
তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে সে ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না ও। কেবল কয়েক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে ফেলল। এরপর মাথাটা উঁচু করে বলল, ‘তোরা ছেলেরা তো মেয়েদের সাথে ইয়ে করার জন্য মুখিয়ে থাকিস। সুযোগ পেলে কোনো এট্রাকটিভ মেয়েকে ইয়ে করতে চাইবে না এমন কোনো পুরুষ আছে নাকি? আমরা না দিলে তোরা পুরুষরা আমাদের উপরে উঠতে দিতে চাস না। আবার দোষ হয়ে যায় আমাদের মেয়েদের…সবাই বলে বেড়ায়, “এই মেয়ে তো আস্ত একটা মাগী!”

‘হুম! তবে, সব ছেলেরা এরকম নয়। সুযোগ পেলে সবাই যে মেয়েদের সাথে ইয়ে করতে চায়, সেটা ঠিক না!’
‘যা যা…কত দেখলাম! তোরা সব ছেলেই এক!’ বলে ও মাথা নিচু করল। একটু যেন কষ্টের ছোঁয়া অনুভব করলাম ওর অভিব্যক্তিতে। তবে, তারপরই আবার ওর সেই দুষ্টু হাসি আবার ফিরে আসল ঠোঁটে, ‘তা তুই কি কোনো মালকে ইউজ করার সুযোগ পেলেও ছেড়ে দিবি।’
‘কেন নয়…কমিটমেটমেন্টবিহীন যৌনতার বিপক্ষে আমি সবসময়। আর সীমা লঙ্ঘন এক্ষেত্রে আমি কখনো করিনি, করবোও না।‘
এরপর তেমন কোনো কথা হলো না। ওকে রনি আর ওর বউয়ের ঘরে এগিয়ে দিয়ে আসলাম। ওদের ঘরের টিভিটা ছেড়ে দিলাম। আমরা দুজন বসলাম বিছানার উপর। বললাম, ‘তুই যতদিন ইচ্ছে এখানে থাকতে পারিস।’
শুনে ও হাসল। হেসে বলল, ‘যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকলে তো সবাই রটিয়ে দেবে বাংলা সিনেমার অমুক নায়িকা একজনের সাথে লিভ টুগেদার শুরু করেছে!’
শুনে আমিও হাসলাম। বেনসনের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ওকে দিলাম। আমিও একটা ধরালাম। সিগারেট টানছে আমার বন্ধু নীলা। ওর পাতলা গোলাপী ঠোঁটের কাছে সিগারেটের আগুনটা এক মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আসলেই, এমন মেয়েকে ইয়ে করার সুযোগ পেলে কেউ হাতছাড়া করতে চাইবে না, ঠিকই বলেছে নীলা।

সিগারেট খেতে খেতে টুকটাক আলাপ হলো আমাদের। সময় এখন প্রায় ১:৩০। তাই আমি বললাম, ‘দোস্ত, রাত অনেক হয়েছে; তুই তাহলে ঘুমা।‘
ও মাথা ঝাঁকাল। আমি উঠে আমার রুমের দিকে হাঁটা দিতে যাব। তখনই রাতের সবচেয়ে বড় চমকটা উপহার দিল নীলা। ও পিছন থেকে আমার হাত পাকড়ে ধরল।
‘কি হলো?’ বললাম আমি। দেখলাম ও ঠোঁটে আবার সেই দুষ্টু হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘কই যাচ্ছিস?’
‘ঘুমোতে। আবার কই যাব!’
‘এখানেই তো শুতে পারিস।‘
‘মানে?’
‘মানে আমার সাথে…আমরা দুই বন্ধু গল্প করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ব।’
ওর হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলাম। ‘তা কেমনে সম্ভব, বল?’
‘কেন, তোর কি লজ্জা করছে?’
‘দেখ, আমি ছেলে মানুষ…!’
‘তুই-ই তো বললি, সব ছেলে এক না। সবাইই মেয়েদের সাথে ইয়ে করার জন্য বসে থাকে না…’
‘তুই কি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছিস?’
‘তা মনে করলে তাই!’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল ও।
‘ঠিক আছে, তুই যদি চাস তাই হবে…’ বলে ওর পাশে বিছানায় বসে পড়লাম। আরেকটা সিগারেট ধরালাম। আমার পাশেই বসে আছে নীলা।
‘তুই কি টেনশনে পড়ে গেলি?’ সিগারেটে আমাকে জোরে জোরে টান দিতে দেখে বলল ও।

‘টেনশনের কি আছে?’ ভেতরে উত্তেজনা থাকলেও তা বাইরে ওকে দেখাতে চাইলাম না। ‘তা কখন ঘুমোবি?’
‘সারাদিন বহুত হ্যাসল গেছে,’ হাই তুলে বলল ও। ‘এখনি ঘু…ঘুম…!’ বলে বোঝালো ও ওর ক্লান্তির অভিব্যক্তিটা। শুয়ে পড়ল ও। চোখ বন্ধ করল। আবার খুলল, আমাকে দেখল। দুষ্টু হাসি হাসল।

‘দেখিস, তুই আবার পালাইস না। সারারাত তোকে আমার পাশেই চাই।’ ঘুজড়ানো কণ্ঠে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল ও। তারপর আবার চোখ মুদল।
আমি চিন্তায় পরে গেলাম। ও তো সত্যিই আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আমি কি চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করে সারারাত এখানে থেকে যাব? নাকি একটু পরই উঠে আমার রুমে যাব চলে? ভাবছি…!

দেখলাম, ও ঘুমের ঘোরে। ওর ভরাট বুকটা ওঠানামা করছে। ওর মুখটার দিকে তাকালাম। ওর ছবি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম রাস্তার পাশে লাগানো পোস্টারে, ওর ঠোঁটটা আলাদাভাবে নজরে এসেছিল। শুধু ওর ঠোঁটটা আলাদাভাবে দেখলে আমার কেবল আদুরে একটা মেয়ে বলেই মনে হয়েছে। আশা ছিল, একদিন ওর বন্ধু হবো। আজ সেই মেয়েটাই আমার পাশে একই বিছানায় শুয়ে আছে। মনে হলো আলতো করে ওর গালে টুক করে চুমু খেয়ে ফেলি। আমার মেয়ে বন্ধুদের আমি এভাবেই দেখি। অনেকটা নিজের বোনের মতো। তবে, একই বিছানায় তাদের কারও সাথে শোয়ার চিন্তা কখনও করিনি। রাতের বেলা তো নয়ই। অনেকে বলে, বড় হওয়ার পর রাতের বেলা নিজের আপন বোনের সাথেও শোয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, রাতের বেলাতেই, বিছানার শোয়ার পর মানুষের অবচেতন মন বা নফস শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ যায় কমে। সেইক্ষেত্রে, ওর পাশে শোয়াটা কি নিরাপদ? তবে, আমি কি ওর দেওয়া চ্যালেঞ্জে হেরে যাব? ভেবে দেখলাম, ওর চ্যালেঞ্জটা নেব। একটা রাতেরই তো ব্যাপার। সকালেই তো সব শেষ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ঘুমিয়েই পাড়ি দেওয়া যাবে।

আমি উঠে গিয়ে লাইটটা বন্ধ করে দিলাম। ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে বিছানায় উঠে পড়লাম। দেখলাম, নীলা বেশ ভালোভাবেই ঘুমোচ্ছে। আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম। বেশ খানিকটা টান দিয়ে সেটাকে নিভিয়ে ফেললাল। তারপর শুয়ে পড়লাম। নীলার ভরাট বুকটা এখনও ওঠানামা করছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোয় কামিজের উপর দিয়ে উপচে পড়া বুকের ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে। এমন একটা মেয়েকে রাতের বেলায় যে কেউ পেতে চাইবে। মনে পড়ে গেল আমার বউয়ের কথা। রিমিকে যে পছন্দ করেছিলাম, তার অন্যতম কারণ ওর ভরাট বুক। এই জিনিসটার উপর আমি সাবালক হওয়ার পর থেকেই দুর্বল। রিমির সাথে যখন এক হই, তখন ওর বুকের ঐশ্বর্য্যদুটো নিয়ে এমনভাবে মেতে উঠি যে ও আমাকে মাঝে মাঝে বলে, ‘তুমি তো তোমার বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য কিছু রাখবে না…!’ (যদিও আমাদের এখনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি।) চিন্তা করলাম, রিমি যদি জানে, আমার এক ফ্রেন্ড, যে কিনা আবার বাংলা সিনেমার এক দারুণ আবেদনময়ী নায়িকা, তার সাথে আমি শুয়ে রয়েছি, তাহলে কি ভাববে! চিন্তা করলাম, এখন কি নীলা আসলেই গভীর ঘুমে, নাকি ওর অবচেতন মন এখনও কাজ করছে? ও আমাকে নিয়ে কি ভাবছে?

আমি চোখ মুদলাম। আমার চোখেও ঘুম আসতে লাগল। তবে, অস্বস্তিটা মন থেকে যাচ্ছে না। বিছানায় রাতের বেলায় ফুটখানেক দূরত্বে এরকম একটা সুন্দরী মেয়ে ঘুমিয়ে থাকলে এরকম হওয়াই স্বাভাবিক। তবে, আমি স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করলাম। ধীরে ধীরে তন্দ্রা ভাব আসতে লাগল। পুরোপুরি নয়। তবে, ধীরে ধীরে ঘুমে ঢলে পড়লাম আমি।

কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখলাম ফুটখানেকের দূরত্ব মোচন করে ঘুমের ঘোরে আমার একেবারে গা ঘেষে অবস্থান করছে ও। ওর মুখের দিকে তাকালাম। বুঝলাম, ও আধো-ঘুম আধো-জাগরণে এখন। ওর ঠোঁটটার দিকে তাকালাম চোখ পিটপিট করে। বড় করে শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। খেয়াল করলাম, আমার লিঙ্গ শক্ত হয়ে আছে। রাতে ঘুম থেকে একটু সজাগ হওয়ার পর অনেকবারই এরকম দেখেছি। হাত দিয়ে ওটাকে স্পর্শ করে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। খুব দুর্বল একটা মুহূর্ত নিঃসন্দেহে! পাশে যখন এরকম একটা ‘মাল’ রয়েছে! মনে পড়ে গেল ওর থ্রিএক্সটার দৃশ্যগুলো – ওখানে ছেলেটা ওকে শুইয়ে নিজে হাঁটুগেঁড়ে বসে সমানে ঠাপিয়ে চলেছে ওকে…! এরকম অবিরাম ঠাঁপানো আমি খুব কম বাংলা এক্সেই দেখেছি।

মন থেকে খারাপ চিন্তা সরিয়ে দিলাম। কাত হয়ে ওর দিকে তাকালাম। ওর প্রতি যেন আমার স্নেহের ফল্গুধারা হঠাৎ করে বইতে লাগল। ও যদি আমার নিজের বোন হতো! টুক করে ওর আদুরে ঠোঁটটায় চুমু খেয়ে ফেললাম। যেন বাবা তার ছোট্ট মেয়ের ঠোঁটে টুক করে একটা চুমু খেয়ে ফেলেছে, যা অনেক বাবাই করে থাকে। ওর গালেও টুক করে একটা চুমু খেয়ে ফেললাম। হাতটা ওর গালে নিয়ে বুলোতে লাগলাম। ও জেগে উঠল। ওর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়ে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি করছিস?’
‘কিছু না… তোকে আদর করার ইচ্ছে হলো’, বললাম।
‘শুধু কি আদর?’ দুষ্টু হাসি উপহার দিয়ে বলল ও।
‘হ্যা,’ বলে ওর কপালে চুমু খেলাম। ও হেসে উঠল। আমি ওর গালে হাত বুলিয়ে আদর করা অব্যহত রাখলাম।
‘এমনভাবে আদর করছিস যেন আমি ছোট বাচ্চা!’
‘ছোট তো বটেই! আমার চেয়ে তো ছোট হবিই। আমার নিজের ছোট একটা বোন থাকলে কি ওকে এভাবে আদর করতাম না?’
ও হাসল আবারও। ‘তুই আসলেই অন্যরকম, আসাদ মিয়া! আমি তো ভাবতে পারিনি আমার চ্যালেঞ্জ তুই গ্রহণ করবি আর এভাবে তা টপকাতে পারবি।’

ঘড়ির দিকে তাকালাম। রাত সোয়া চারটা। ‘চ্যালেঞ্জ তো পুরো জিততে পারিনি। রাত আভি ভি বাকি হ্যায়, মেরে দোস্ত। আর চ্যালেজটা কি শুধু আমার জন্যই ছিল? তুইও তো স্বাভাবিক আছিস!’
খিলখিল করে হেসে উঠল ও। ‘কপাল ভালো আমাকে তুই চেপে ধরিস নাই। তাহলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম কিনা জানি না!’
আমরা দুজন দুজনের দিকে মুখে হাসি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। ও এক হাত দিয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরল। ওর মুখটা আমার বুকের কেবল ইঞ্চি দুয়েক সামনে। আমিও সাড়া দিয়ে আমার এক হাত দিয়ে ওকে আঁকড়ে ধরলাম। দেখলাম ও চোখ মুদে দিয়েছে। আমিও চোখ বন্ধ করলাম। ওর শরীরের গন্ধটা আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি। যেমনটা আমার বউয়ের সাথে শোয়ার সময় পাই, পাই কোনো মেয়ে পাশে বসলে, কাছ দিয়ে হেঁটে গেলে। এই গন্ধ যেকোনো ছেলেকে মাতোয়ারা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে, আজ কোনো শয়তানী বুদ্ধি আর আমাদের মধ্যে আসতে পারবে না।

‘নীলু,’ ডাক দিলাম আমি। আবার ডাক দিলাম। ‘নীলু!’
‘হুম,’ ও সাড়া দিল। ‘আমার সবসময় বিশ্বাস ছিল তুই শোবিজের অন্যান্য মেয়েদের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। শোবিজের বর্তমান দুনিয়ার চেয়ে তুই বেশিই ভালো। শোবিজ ছেড়ে দে!’
‘উম,’ বলল ও। ‘তুই আমার পাশে থাকবি তো?’
‘থাকব রে! আলবৎ থাকব। তোর সাথে ক্লোজ ফ্রেন্ডশিপ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির একটা হিসেবে দেখতে চাই। ঢাকায় পথশিশুদের জন্য একতা স্কুল খোলার ইচ্ছে আছে রে! তুই ওখানে সময় দিতে পারবি?’
‘ঠিক আছে,’ ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল ও।
‘আর মাফফুজের সাথে মিটমাট করে নে! ও ছেলেটা বোকাসোকা হলেও তোকে মনে হয় সত্যিই ভালোবাসে রে। ওর কাছে আবার ফিরে যা!’
‘তুই বলছিস তাহলে…?’
‘হ্যা! বিয়ে তো করেছিলি ওকে, তাই না! বিয়েটা কোনো সাধারণ বিষয় না রে! আর তুই শোবিজ ছেড়ে ওর কাছে ব্যাক করলে তোদের সংসার আগের চেয়ে স্ট্রং হবে!’
‘ঠিক আছে, বড় ভাই!’ বলে ও চুপ থাকল।
আমি ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম। এরপর আমি ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। সকালের মিষ্টি রোদ আমার চোখে লাগার আগে আর ঘুম ভাঙ্গল না আমার।

ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওর কপালে টুক করে চুমু খেয়ে আমি ওয়াশরুমে গেলাম। তারপর গেলাম কিচেনের দিকে। বন্ধুর জন্য এককাপ গরমা-গরম বেড-টি না বানালেই নয়।
কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, স্বর্গের বাগানে আদম-হাওয়া একসাথে থাকত। উদোম অবস্থায়ই তারা স্বর্গের বাগানে ঘুরে বেড়াত। তখন শয়তান এসে তাদেরকে ‘গন্দম ফল’ খাওয়ালো। অনেকেই বলে, গন্দম ফল খাওয়াটা নাকি যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারটাই ছিল। তারপরই তাদের লাজ-লজ্জার অনুভূতি জন্ম নিলো। তবে, আজ আমরা দুজন আদম-হাওয়ার মতোই নিষ্পাপভাবে একসাথে একরুমে কাটিয়ে দিয়েছি। কোনো লাজ বা-লজ্জা বা শয়তানি বুদ্ধি আমাদের মধ্যে আসেনি। শয়তান বলে কেউ যদি থেকেও থাকে, সে এখানে নিশ্চিতভাবে পরাজিত হয়েছে।
কিচেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, সূর্যটা আকাশের বেশ উপরে ইতোমধ্যে উঠে গেছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত