পাত্রী দেখা

পাত্রী দেখা

বর্তমানে আমার বয়স ৩৫। অথচ এখন পর্যন্ত আমার জীবনে বিয়ের ফুল ফোটেনি। চেহারাটাও খারাপ না। আমাকে বট গাছের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বটবৃক্ষ যেমন উদার তার চেয়েও বেশি উদার আমার মন। জীবনে সফলতার সবটুকুই অর্জন করতে পেয়েছি। তবে এই বিয়ে-সাদি বোধ হয় আমার জীবনে নেই। মেয়ে দেখতে দেখতে মাথার চুলে পাক ধরে গেছে তবু বিবাহের উপযুক্ত কন্যাকে পেলাম না। এ পর্যন্ত ৯৯টা মেয়ে দেখেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কারোর সাথেই আমার মতের মিলন হয়নি। যার ফলে এখন পর্যন্ত আমি অবিবাহিত এলাকর ছোট ছোট ছেলেরা যখন তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং করে তখন আমার মনকে শান্তনা দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না।

ঐ যে কথায় আছে “আশায় বাঁচে চাষা” আমিও আশায় আছি। স্থানীয় এমন কোন ঘটক নেই যারা আমাকে চেনে না। এইতো কিছুদিন আগে পুরষ্কার ঘোষনা করেছি… “যে ঘটক আমার বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে খুঁজে দিতে পারবে তাকে আকর্ষনীয় পুরষ্কারে পুরষ্কিত করা হবে” কিন্তু এই আকর্ষনীয় পুরষ্কারটা যে কি সেটা আমারও অজানা আজকে আমার সেঞ্চুরি করবার পালা।মন্টু ঘটকের সাথে শততম পাত্রী দেখতে এসেছি। পাত্র আমি নিজেই। পাত্রীর বাবা যখন আমার পরিবার যখন আমাকে প্রশ্ন করছিলো তখন মনে হচ্ছিলো আমি বোধ হয় BCS এর ভাইবাতে বসে আছি হবু শ্বশুর এমন একটা ভাব ধরেছে যেনো আমি ছাত্র উনি শিক্ষক কন্যাকে দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। একেবারে মনের মতো কন্যা। একেবারে খাপে খাপ জব্বারের বাপ। কিন্তু সমস্যা একটাই কন্যার বয়স কম।যদিও সমাজে ইহাকে বাল্য পাত্রী দেখা বলে তবুও আমার কোনো ফারাক ছিল না।

যে ভাবেই হোক বিয়েটা পাকাপাকি করতেই হবে। তাইতো ঘটকের কানে কানে বললাম, ঘটক মশাই বিয়েটা কিন্তু আজকে পাকা পাকি করেই যেতে হবে। আরে বাপু তুমি এত টেনশন লও কেনো ? তোমার বিয়ে যদি আজ না দিতে পারি তবে আমার নামও মন্টু ঘটক না। ঘটকের এমন প্রতিশ্রুতিতে একটু শান্তি পেলাম। তবুও বিয়ে পাকাপাকি না হওয়া পর্যন্ত আমার মনে শান্তি পাচ্ছে না। কি মশাই তাহলে এবার বিয়ের দিনকাল ঠিক করা যাক। (ঘটক) অবশ্যই। কই গো রান্নাঘর থেকে একবার এদিকে এসো(কন্যার মাকে)। ঘটক সাহেব যে বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করতে চাচ্ছে। (কন্যার বাবা) অতঃপর কন্যার মা রান্নাঘর থেকে এলো। আমাদের আপ্যায়নের জন্য রান্না করতে গিয়ে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছে।

জামাইয়ের সাথে তো আমার কথাই হলো না। আগে একটু পরিচিতি হোক তারপরে নাহয় বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা যাবে। তা বাবা তুমি যেনো কিসের চাকরী করো ?(পাত্রীর মা) জ্বী আন্টি আমি ব্যাংকার। (আমি) ও তুমি ব্যাংকের পাহারাদার বুঝি। জ্বী আন্টি না। আমি ব্যাংকার মানে মহাজন। যাদের টাকার দরকার হয় তাদের ঋন দিই। বাহ! আমার অনেকদিনের সাধ ছিলো আমার মেয়ের জামাই ব্যাংকার হবে। তা বাবা তোমার দেশের বাড়ি কোথায়। কুষ্টিয়া। তুমিতো দেখি আমার জেলার লোক। কোন উপজেলায় তোমার বাড়ি ? কুমারখালীতে।

তোমাকে আমার চেনা চেনা লাগছে ।আচ্ছা তুমি কি রানা,সাকিব,আল-আমিনদের চিনো ? হ্যাঁ। আমরা তো একই এলাকাই থাকি। ওরা আমার সাথে পড়তো। আপনার সাথে পড়তো! হ্যাঁ। ক্লাস সিক্সে আমরা একসাথে পড়তাম ।তারপরে আমার বিয়ে দিয়ে দেয় তাই আর পড়া হয়নি। আচ্ছা আন্টি আপনাকে কি ক্লাসের সবাই মোটু বলে ডাকতো ? আমি ছোটকালে একটু মোটা ছিলাম তো তাই মোটু বলতো। কিন্তু তুমি জানো কিভাবে ? আপনাদের ক্লাসে ১ রোল ছিলো কার বলুন তো ? কার যেনো ছিল ? (অনেকক্ষন ভেবে)না মনে পড়ছে না। সৌরভের ১ রোল ছিল না। হ্যাঁ। ওরই তো ১ রোল ছিল। তা তুমি ওর কি হও? (ওরে মোটু তোরে ক্যামনে বলি আমিই সৌরভ তোর ক্লাসমেট) কিছু বললে নাকি বাবা ? না আন্টি কিছু না।

এখনই যদি এখান থেকে না পালাই তবে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। বললে নাতো ? আন্টি আমার কাজ পড়ে গেছে। আমাকে যেতে হবে। চা টুকু তো খেয়ে যাও বাবা। হাতে সময় নেই। আরেকদিন খাব কথাটি শেষ করতে না করতেই শততম পাত্রীর বাসা থেকে পালিয়ে এলাম।আরেকটু থাকলেই হয়তো কন্যার মা মোটু আমার মুটকি খুলে দিতো। এক সময়ে যে গার্লফ্রেন্ড ছিলো আজকে সে শাশুড়ি হায়রে দুনিয়া,আজব দুনিয়া।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত