সবার সব চাওয়া হয়তো পুরন হয়না

সবার সব চাওয়া হয়তো পুরন হয়না

আজকেও কলেজ থেকে ফেরার সময় আবিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লিজা।ছেলেটাকে দেখলেই ওর কেমন যেন রাগ হয়।একদম অগোছালো, উড়নচণ্ডী

স্বভাবের।মাস্টার্স শেষ করেছে অথচ চাকরি করার কোন ইচ্ছাই নেই।এমনিতেই এ যুগে চাকরি পাওয়া যায়না তার উপর আবিরের কোন চেষ্টাও নেই।

সারাক্ষণ ফালতু ছেলেদের মত ওকেই ফলো করবে। এত বার বারণ করার পরেও পিছু ছাড়ছে না।ওর ভাইকেও কিছু বলতে পারছে না। কারন আবিরের

বোন আলেয়া লিজার প্রিয় বান্ধবী। আলেয়াও অনেকবার বুঝিয়েছে যে লিজা আবিরকে একদম পছন্দ করেনা।কিন্তু আবির কারো কথাই শুনবে না

লিজার পিছনেই পড়ে আছে। আলেয়া ছোট থাকতেই ওর মা মারা গেছে।আবিরের বাবা ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেননি।

ছোটখাটো একটা চাকরি করতেন কিন্তু আবির আর আলেয়াকে কখনো কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি।মা নেই বলেই হয়তো আবিরকে শাসনও করতে পারেনি। আবিরকে নিয়ে ওর বাবার অনেক স্বপ্ন। ছেলে বড় হয়েছে।ভালো একটা চাকরি করবে,টুকটুকে একটা বউ বাড়ি আনবে।আর ওদের বাচ্চাকাচ্চা হলে তাদের সাথে উনি খেলা করবেন।কিন্তু ছেলেটা তার মনের

কথাটা বুঝতেই চায়না।বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে যে আলেয়ার পড়াশোনা চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেদিকে আবিরের কোন খেয়ালই নেই।ও ওর মত বিন্দাস আছে।সারাদিন ঘুরবে ফিরবে,সিগারেট খাবে আর গভীর রাতে এসে না খেয়েই শুয়ে পরবে।

ওর বাবা ওকে নিয়ে আশা করাটা ইদানীং ছেড়ে দিয়েছেন।আলেয়া কিন্তু বাবার কস্টটা ঠিকই বুঝতে
পারে।কিন্তু আবিরকে বুঝানোর সাধ্য ওর নেই। ছোট বোনের প্রতি যে ভাইয়ের একটা দায়িত্ব আছে সেটাও আবির বোঝেনা।তবে লিজার প্রতি ওর

ভালোবাসাটাও সত্যি।কিন্তু লিজা বড়লোকের মেয়ে ওকে ভালোবাসা যে আবিরের মানায় না। আর সব থেকে বড় কথা লিজা ওকে ভালোবাসাতো

দূরে থাক।ঘৃণা করে।কিন্তু আবিরও নাছোড়বান্দা।

আলেয়া ওর বাবাকে খাবার খাইয়ে,ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।উনি ঘুমিয়ে পরেছেন।আলেয়া পড়ছিল।
এমন সময় আবির ওর ঘরে এসে ওকে ডাক দিলো। আলেয়া প্রথমে চমকে গিয়েছিলো।এতো রাতে আবির।ওতো সারাদিন ভালো করে বাড়িতেই

থাকেনা তাই আলেয়ার সাথে বেশি কথাও হয়না।

_আসলে তোকে একটা কথা বলতে এসেছি।তুইতো আমার একমাত্র বোন।তোর ভাইকে সাহায্য করতে পারবি না একটু?

ওর কথা শুনে আলেয়া অবাক হয়ে যায়। আজ এমন ছোট মানুষের মত আবদার করছে কেনো আবির।ও
আনমনেই উত্তর দেয়

_হুম বল।আজ তাহলে মনে হয়েছে যে তোর একটা ছোট বোন আছে।তা কি কথা বল।শুনি।
_আমি লিজাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।প্লিজ তুই একবার ওকে বলে দেখ।ওকে ছাড়া আমি বাচতে
পারব না মনে হয়।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। একদিন দেখতে পাবি তোর এই ভাইটা আর নেই।প্লিজ বোন।
আলেয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।নিজের পরিবারের চিন্তা নেই,বাবার চিন্তা নেই,বোনের চিন্তা নেই,একটা মেয়েকে নিয়ে পরে আছে।

আলেয়ার চোখে পানি চলে আসে।ও শুধু মাথা ঝাকায় যে হ্যা ও বলবে লিজাকে। আবির এইবার ছোট বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে চলে যায়। আলেয়া বসে বসে কান্না করতে থাকে।ওর মায়ের কথা খুব মনে পরে।ওর মা থাকলে হয়তো আজ ওর ভাই এমন

বখে যেত না।আবির খুব ভালো ছেলে।কিন্তু ইদানীং লিজার পিছনে থাকতে থাকতে এমন হয়ে গেছে। চাকরি করলে অনেক ভালো মেয়েকেই হয়তো বিয়ে

করতে পারবে।কিন্তু ওর সেদিকে কোন নজর নেই।

পরের দিন আবির সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে।দেখে আলেয়া রান্না করছে।ওকে আবার মনে করিয়ে দেয় লিজাকে কথাটা বলার জন্য।ওর বাবার ওষুধ শেষ হয়ে গেছে আলেয়া আবিরকে বলে একটু নিয়ে আসতে।আবির দৌড়ে চলে যায়। আলেয়া ভেবেছিল

প্রতিদিনের মতই না করে দিবে। আলেয়া বুঝতে পারে যে লিজাকে ও কতটা ভালোবেসে ফেলেছে।
আলেয়া লিজার সাথে কথা বলে আবিরকে জানায় যে লিজা বলেছে ও যদি ভালো একটা চাকরি পায়
আর ওকে ফলো না করে তাহলে ভেবে দেখবে।এই কথাটা শুনে আবির খুব খুশি হয়।ও নিজেকে বদলে ফেলার ডিসিশন নেয়।একবার লিজার সাথে কথা বলতে চায়।

লিজাকে আজ আলেয়া ওদের বাসায় নিয়ে এসেছে। আবিরকে ওর ঘরে যেতে বলল লিজার সাথে কথা বলার জন্য।আবিরের যেন আর দেরি সইছে না। রুমে গিয়ে দেখে লিজা বসে আছে ও কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না।পাশে রাখা চেয়ারটা

টেনে লিজার সামনে বসল।লিজা যে ওকে দেখে অসস্তি ফিল করছে এইটা বুঝতে পারল।আবির ভাবল কিছু একটা বলে কথা শুরু করা যাক।

_কেমন আছো।
_জ্বি ভালো।আপনি?
_আমাকে কি তুমি করে বলা যায়না?
_না মানে।আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।জানিনা কথাটা আপনি কীভাবে নিবেন।

_হ্যা বলো।কি কথা।

আবির কথাটা শুনার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।কি যে বলবে।লিজা বলতে থাকে..

_আসলে আলেয়া আমার খুব ভালো বান্ধবী। কিন্তু আপনারতো আদরের বোন। আমি চাইনা ও কোন ভুল
কাজ করুক।আপনিও নিশ্চয়ই সেটাই চান।

এই কথাটা শুনে আবির অবাক হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার আলেয়া আসলো কোথা থেকে।কিছু বুঝতে
পারছে না ও।তারপরেও কথাটা শুনতেতো হবে।তাই কিছু না বুঝে শুধু “হুম” বলল।লিজা এইবার বলতে শুরু
করল।

_শুনুন তাহলে।আসলে আলেয়া মিজান ভাইকে অনেক ভালোবাসে।আপনিতো জানেন মিজান ভাই বেকার আর সারাদিন কোন কাজকর্ম করেনা শুধু ঘুরে বেড়ায়। আপনি কি চান এমন একটা ছেলের হাতে আপনার বোনকে তুলে দিতে?

আবির রাগে ফেটে পরছে বোনের নামে এই কথাটা শুনে।শেষ পর্যন্ত কিনা মিজানের মতো একটা ছেলের হাতে বোনকে তুলে দিবে।আলেয়া ওর বাবা

আর ভাইয়ের কথাও একবার ভাবল না।লিজাকে ও পছন্দ করে বলে লিজাকে দিয়ে কথাটা বলাচ্ছে। এতো সাহস ওর।ও উচু গলায় আলেয়াকে ডাকতে

থাকে।আলেয়া ওর পাশে এসে চুপ করে দাঁড়ায়। আবির জিজ্ঞেস করে যে লিজা যা বলছে তা সত্যি কিনা।আলেয়া মাথা নাড়ায় যে হ্যা সব সত্যি ও এইটাও বলে যে তাতে আবিরের কি।ও ভাইয়ের কোন

দায়িত্ব পালন করছে যে ওকে শাসন করবে।কথাটা আবিরের কলিজায় গিয়ে আঘাত করে ও থাকতে না পেরে আলেয়াকে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়।

আলেয়ার চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।ও কিছু বলেনা।এইবার লিজা বলতে থাকে।

_বাহ।বোন একটা খারাপ না,বেকার ছেলেকে ভালোবাসে শুনেই ভাইয়ের দায়িত্ব হিসেবে ওকে মারধর শুরু
করলেন।আর আমার ভাইয়েরা আমার সব।তারা যদি জানতে পারে যে আমি আপনার মতো একটা উড়নচণ্ডী টাইপের ছেলেকে ভালোবাসি তাহলে

তাদের কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছেন।
আবির চুপ করে ওর কথা শোনে।কিন্তু বলে যে.

_আমিতো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি কথা দিচ্ছি কয়েকদিন চেষ্টা করলেই দেখো একটা না একটা চাকরি ঠিকই পেয়ে যাবো। আর মিজান ভাইয়ের সাথে তুমি আমার তুলনা দিচ্ছ।
লিজা আবার বলতে থাকে।

_হ্যা দিচ্ছি।কারন আলেয়া মিজান ভাইকে ভালোবাসেনা।ওতো আপনার বাবা আর আপনাকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে আর

আপনি আমার পেছনে পরে আছেন।সত্যি কথা বলতে কি আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।আর আমার বিয়ে
অলরেডি ঠিক হয়ে গেছে।আমি আলেয়াকে বলেছি কাল।কিন্তু তারপরেও আপনার সাথে দেখা করার
অনুরোধ করায় আমি আপনাকে এটাই বলতে এসেছি যে আমার আশা বাদ দিন।প্লিজ আপনার বাবা আর বোনের কথাটা একবার ভাবুন।প্লিজ। আপনি যদি সত্যি আমাকে ভালবেসে থাকেন তাহলে আমার এই অনুরোধটা রাখুন।
আবির কিছু বলেনা।আলেয়ার দিকে একবার তাকায় তারপর রুম থেকে বের হয়ে যায়। ওর বাবা এতোক্ষন
ওদের কথা শুনছিলো।উনিও কিছু না বলে ওখান থেকে মুখ নিচু করে চলে যায়। লিজা আলেয়াকে শান্তনা দিতে থাকে যে আল্লাহ চাইলে সবকিছুই

ঠিক হয়ে যাবে।সেদিন লিজা চলে যায়। জানালা দিয়ে লিজার চলে যাওয়াটা আবির দেখতে থাকে। তার ভালোবাসা যে শুধুই মরীচিকা।

আজ আলেয়ার বিয়ে।লিজা ওর বরের সাথে এসেছে। আবির দেখে কি সুন্দর মানিয়েছে লিজাকে ওর বরের সাথে।অনেক ভালো আছে লিজা।হ্যা আবিরও অনেক ভালো আছে।ভালো একটা চাকরি করে। ভালো একটা ছেলের সাথে বোনের বিয়ে দিচ্ছে।

ভালই আছে।লিজা স্বাভাবিক ভাবেই আবিরের সাথে কথা বলছে কিন্তু আবির পারছে না।কেননা লিজাতো কখনওই আবিরকে ভালোবাসেনি।কিন্তু

আবির যে লিজাকে অনেক ভালোবাসত।ওইতো ওকে শিখিয়েছে পরিবারের জন্য ভালোবাসাই বড়
ভালোবাসা।

আলেয়া এইবার ওর বাবা আর ভাইয়ের থেকে বিদায় নিচ্ছে নতুন জীবন শুরুর উদ্যেশ্যে।কান্নাজড়িত কন্ঠে ও আবিরকে বলতে থাকে।

_প্লিজ ভাইয়া এইবার তুই একটা বিয়ে কর ।বাবার শেষ ইচ্ছাটা পুরন কর।আমি চলে যাচ্ছি বাবার খেয়াল রাখবে কে।
_কেনো মেয়েরাই শুধু বাবাকে ভালোবাসতে পারে, ছেলেরা বুঝি পারেনা।আমি আছি কি করতে।

_প্লিজ ভাইয়া।আমার একটা কথা রাখ।তুইতো বলেছিলি আমাকে বিয়ে দিয়েই তুই বিয়ে করবি। রাখবি না আমার কথা।

আবির এইবার হেসেই ফেলে বোনের কথা শুনে। বোনকে বিদায় দিতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও মুখে হাসি নিয়ে বলে।
_অবশ্যই তোর কথা রাখবো।তোর পছন্দ করা যে কোন মেয়েকেই আমি আমার করে নিয়ে আসব।তুই আর

বাবাইতো আমার সব।

আলেয়া চলে যায় আর আবির বিয়ে বাড়ির হাজার ভীড়ের মধ্যেও নিজেকে কেমন একা অনুভব করে। আবির ভাবে জীবনটাই এমন।একজীবনে সবার সব
চাওয়া হয়তো পুরন হয়না।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত