পানি বাবা

পানি বাবা

কিছুদিনের মধ্যেই কলেজে আমার নাম হয়ে গেলো পানি বাবা। আমার এই সুখ্যাতি শুধু কলেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলো না, দূর দূরান্ত থেকে প্রেমিক প্রেমিকারা ছোট ছোট বোতলে পানি নিয়ে আসতে লাগলো আমার কাছে। আমিও অত্যন্ত ভাব ভঙ্গিমার সাথে বিনামুল্যে পানি পড়া দিতে থাকলাম।

আমার দেওয়া পানি পড়ার একটা মাত্র কাজই হলো কারো যদি তার প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়া অন্যকারো সাথে গোপন রিলেশন থাকে আমার পানিপড়া খেলে সেটা প্রকাশ হয়ে যায় আর সেই দুই নম্বুরি মানুষটা তার প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে ধরা পড়ে যায়।

বর্তমান সময়ের এই সন্দেহবাতিক প্রেম সমাজের মাঝে খুব দ্রুত আমার এই অদ্ভুত, রহস্যময় পানিপড়া ছড়িয়ে পড়লো। একই সাথে আমার নাম হয়ে গেলো পানি বাবা।

আমি যে এমন ভয়ংকর ধরনের পানিপড়া দিতে পারি সেইটা আমি নিজেও প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু আমার বন্ধু তুলা (আসল নাম তুলন) আমাকে হাতে নাতে প্রমাণ দিয়েছে আমার এই মহৎ ক্ষমতা আছে।

এমনকি তুলা নিজেই পুরো কলেজে বলেছে আমার দেওয়া পানিপড়া খেয়ে তার প্রেমিকার যে অন্য একটা রিলেশন ছিলো সেটা তার কাছে ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে হুরহুর করে সন্দেহব্যাতিগ্রস্থ প্রেমিক-প্রেমিকারা আমার কাছ থেকে পানিপড়া নিতে লাগলো।

আমার এই মহৎ ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে যেদিন তুলন আমাকে বললো, “দোস্ত রিয়ার ভাবভঙ্গি তো ভালো ঠেকায় না। আমার মনে হয় রিয়া আমাকে রেখে অন্যকারো সাথে প্রেম করতেছে।”

আমি বললাম, “তুই রিয়াকে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিস নাই?”

তুলা বললো, “হ্যা জিজ্ঞাস করছিলাম। রিয়া বলছে এইগুলা নাকি আমার মনের সন্দেহ। তেমন কিছুই না। ”

তখন আমি অনেকটা মজা করেই বলি, “দেখ তুলা আমি তোকে এক বোতল পানিপড়া দিবো। তুই এইটা থেকে রিয়াকে পানি খাওয়াবি। পানি খাওয়ানোর পর রিয়াকে বলবি যে এইটা একজন বড়ো পীর বাবার থেকে নেওয়া পানিপড়া।”

যদি সে তোকে ছাড়া অন্যকারো সাথে প্রেম করে আর তোকে মিথ্যা বলে তাহলে তার বিশাল ক্ষতি হবে। আর যদি সত্যি কথা তোকে বলে দেয় তাহলে তার কোন ক্ষতি হবে না।

তুলা হো হো করে হেসে আমার কথা উড়িয়ে দিলো। হাসার মতই কথা।

কিন্তু তুলার তখন সন্দেহের হৃদয়। পাঁচ মিনিট পরে এক বোতন পানি এনে বললো, “দোস্ত এই নে পানি। প্লিজ পানিটা পড়ে দে।”

আমি তখন বিশাল একটা ভং ধরে ভুং ভাং পড়ে ফু দিয়ে দিলাম। আমি জানতাম এতে কাজ হবে।

তুলনকে বললাম, “আমি যা বলছি একদম সেভাবেই রিয়াকে বলবি।”

দুইদিন পর তুলন প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে আমার কাছে আসলো। মুখে অত্যন্ত ভক্তি নিয়ে বললো, “দোস্ত আমাকে মাফ করে দে!”

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন? কি হইছে?”

তুলন তার ত্যালতেলা মুখে ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বললো, “তোর পানিপড়া কাজে দিছে। রিয়া আদনান হাবিব নামের একটা ছেলের সাথে ফেসবুকে প্রেম করতো। রিয়া আজ সকালে কান্না কান্না হয়ে আমাকে এই কথা বলে মাফ চেয়েছে।”

আমি মনে মনে বিশাল মাত্রার হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “তারপর তুই কি করলি?”

তুলন রেগে বললো, “আর কি করবো। ব্রেকাপ করে দিছি।”

মনে মনে ভাবলাম, আমার প্লান সাকসেসফুল। কিন্তু তুলা ঘটনা এইখানে থামায় রাখলো না। সে পুরো কলেজে এই ঘটনা বলতে লাগলো।

আর এখনকার সময়ের অন্যতম সমস্যা হলো সন্দেহবাতিক প্রেমিক-প্রেমিকা। একজন দুইজন করে সপ্তাহ খানেক পর অনেক মানুষ আমার কাছে পানিপড়া নিতে আসলো।

এদিকা তুলা সবার কাছে আমার নাম বলেছে পানি বাবা। কলেজে আমার নাম পড়ে গেলো পানি বাবা।

এখন ভাবার বিষয় হলো আমার পানিপড়া তো আসলে ভুং ভাং ছাড়া কিছু না। তারপরে তুলনের কাজ হলো কিভাবে?

এর ব্যাখ্যার জন্য এইসব কিছুর শুরুতে ফিরে যাই। তুলন যেদিন বললো, তার প্রেমিকাকে সে সন্দেহ করছে তখুনি আমি সুযোগটা পেলাম।

আমি জানতাম রিয়াকে একটু ভয় দেখালেই সে সত্যি কথাটা তুলনকে বলে দিবে। কারন তুলন ছাড়া রিয়ার আসলেই যে অন্য কারো সাথে রিলেশন ছিলো এটা আমি জানতাম।

তাই যখুনি পানিপড়া খাওয়ানোর পর তুলন রিয়াকে বললো যে, সত্যি কথা না বললে তার ক্ষতি হবে তখুনি রিয়ার মনে ভয় ঢুকে গেলো। ধীরে ধীরে ভয় বাড়তে থাকলো আর একসময় রিয়া তুলনকে সত্যি কথা বলে দিলো।

এখন প্রশ্ন হলো, আমি কিভাবে জানতাম এই পানিপড়া কাজে লাগবে? আর রিয়ার যে আরেকটা রিলেশন ছিলো এ ব্যাপারে কিভাবে এতো নিশ্চিত ছিলাম?

আসলে রিয়া যে আদনান হাবিব নামের ফেসবুক আইডির সাথে প্রেম করতো ঐটা আমারই ফেক আইডি ছিলো।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত