যার ম্যাঁও সেই বুঝুক

যার ম্যাঁও সেই বুঝুক

জামাইবাবাজী রীতিমত ভদ্রলোক হয়ে গেছে।
গলায় সোনার চেন। পরনে বারমুন্ডা প্যান্ট। গেঞ্জীর কলার তুলে মটোর সাইকেল চালায়।
বুক ভরে ওঠে আমোদ সেখের। সেই সাথে দীর্ঘশ্বাসও পড়ে বুক চিরে। এই জামাইকে কত দিন গরুপেটা করেছে সে।

জামাইয়ের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় আমোদের ভটভটি। জামাই চোখ তুলে দেখেও না। মটোর সাইকেল চালালেই বুঝি অমন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাব আসে ভটভটি ওলাদের প্রতি। নাকি পুরোন মারের কথা ভুলতে পারে না জামাই?

মার কি আর শুধু শুধু দিতো আমোদ। কখনই না। সে মারত গায়ের ঝাল মেটাতে। মনের রাগ কমাতে। হাতের কাছে চটি,জুতো,পাঁচন যা পেত তাই ছুঁড়ে মারত।তাতেও রাগ না মিটলে দড়িতে বেঁধে মারত। সে এক দিন গেছে।

জামাইকে মারত আর গাল দিতো আমোদ,আমার সাদাসিধে বিটিটাকে কেনে নিয়ে পালালি?
জামাই উত্তর দিত না।ঠোঁটের কষ গড়িয়ে রক্ত পড়ত। মেয়ে এসে হাতেপায়ে ধরত।
তবেই নিস্তার।

সময়ের হেরফেরে কত কী হয়ে যায়। সেদিনের কয়লা চোর,ওয়াগেন ব্রেকার,যার উপরে রেল পুলিশের গুলি অর্ডার ছিল,সে এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন। ভটভটি চালক শ্বশুরকে গুরুত্বই দেয় না সে। থানা-পুলিশের লোকজন নাকি তার বাড়িতেই
নিমন্ত্রণ খায়। সে এখন ঠিক কী ধরনের কাজ করে জানে না আমোদ।

মেয়ে এখন মাঝেসাঝে ছানাপোনা নিয়ে বাপের বাড়ি আসে।মায়ের হাতে এটা-সেটা দেয়। লুকিয়ে টাকাও দেয় হয়ত।
মেয়ের মা জামাই-গরবে আল্হাদিনী,গুদি-গুদি স্বরে বলে,আমার বিটি সুনার থালিতে ভাত খায়। সমুন্ধ করে অত ভাল বিহ্যা দিতে পারতা না তুমি।

আমোদ শোনে আর ঢেউ-ঢেউ করে ঢেঁকুর তোলে।

নাতিটা হয়েছে বাপের মত পেটমোটা। সে আসে,নানাকে জড়িয়ে ধরে হাসে।বলে, এই নেন নানা,পাঁচশ টাকা।

—টাকা,টাকা কুথা পেলি?

—আব্বার পকেট থেকে চুরি করসি।

চোরের পেটে চোরই হয় তাহলে?

আমোদও একসময় কয়লা চুরি করত। পুলিশের গুলির ভয়ে প্রথমে ট্রলি পরে ভটভটি কিনেছে। জামাই হল চোর, যদিও এখন সে ভদ্রলোক। তার ছেলেও নিশ্চয় চোর হবে। যা হবে হোক,যার ম্যাঁও সেই বুঝুক।

পাঁচশ টাকার নোটটা পকেটে ভরল আমোদ।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত