স্বপ্নপূরণ

স্বপ্নপূরণ

-“আচ্ছা মাম্মা বাবার কি হয়েছিলো?আমি জানি আমাকে সত্যিটা বলো নাই”। (আরিসা)
-“তোমার বাবা বলতে না করেছিলো তাই সত্যিটা বলা হয়নি”। (আবান্তিকা)
-“কি হয়েছিলো যে আমাকে জানাতে পারো নাই।আমাকে জানালে কি হতো,তাইলে কি বাবাই মারা যাবার কারনটা কি আমি”? (আরিসা)

-“না তুমি না।তোমার বাবাই না করেছে তাই। আর বলেছে তুমি বড় হবার পর জানাতে তার আগে কিছুতেই যেন তোমাকে জানতে না দেওয়া হয়।আচ্ছা তোমার আর প্রশ্ন করতে হবে না আমি সব বলছি”। (আবান্তিকা)

“প্রথম থেকে বলছি তোমাকে।আমাদের বিয়ে পারিবারিক ভাবেই হয়।আমাকে যেই দিন দেখতে আসে সেই দিন আমার তুষারকে ভালো লাগে।আসলে ভালো লাগে বললে ভুল হবে আমি তখন ভালোবেসে ফেলেছি।আর আমাকেও পছন্দ হয় তুষারের তাই সেই দিন আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করে সবাই ১৫ দিন পর আমাদের বিয়ে”।

“আমার এখনো মনে আছে তুষারকে প্রথম ফোন আমি দিয়েছিলাম।সেই দিন আমাদের তেমন কথা হয় না।দুজনের মাঝেই জড়তা ছিলো তাই।কারণ এটাই আমাদের প্রথম কথা তার জন্য।আসতে আসতে আমাদের মাঝ থেকে জড়তা কেটে যায়।আমরা সময় পেলেই কথা বলতাম এবং দেখা করতাম”।

“আমরা প্রথম যেই দিন দেখা করি সেই দিনের কথা কখনো ভুলবো না। সেই দিন তুষার এতোটা নার্ভাস ছিলো যে ঠিক ভাবে আমার সাথে কথাও বলতে পারেনি,কথা বলার সময় বার বার কথা আটকিয়ে যেতো।এর অবশ্য কারন আছে আগে মেয়েদের সাথে এইভাবে কথা বলেনি তাই।এমন কি মেয়ে বান্ধবি ছিলো একজন সে হচ্ছে তুষারের চাচা তো বোন।সম বয়সি ছিলো দুজন আর এক সাথে পড়তো তাই একদিকে বোন আবার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো দুজনের”।

“তুষার ছিলো খুব চাপা স্বভাবের।কখনো কেউ কে কিছু বলতো না।এমন কি ইরা আপুকেও না।ইরা আপু হচ্ছে তুষারের চাচাতো বোন।তুষারের মা যখন মারা যায় তারপর থেকেই এমন হয়ে যায়। তুষার মায়ের সাথে অনেক ফ্রি ছিলো আর অনেক ভালোবাসতো তাই তার মারা যাবার ধাক্কাটা সামলাতে পারেনি। আমার সাথে বিয়ে হবার পর আসতে আসতে ঠিক হয়।সবার সাথে কথা বলতো আগের মতো চুপচাপ থাকতো না”।

“দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের তারিখ চলে আসে এবং আমাদের বিয়ে হয়। বাসর রাতে তুষার আমাকে একটা কথা বলে যা আগে বলেনি।তুষারের মা মারা যাবার পর থেকেই নাকি সিগারেট খেতো আর মাঝে মাঝে নেশা করতো। কিন্তু একটা সময় নেশা না করে থাকতে পারতো না,তখন প্রচুর নেশা করতো। আর এই নেশা করা থেকেই হার্ট সমস্যা হয়।তখন ঠিক ছিলো।আমাকে বলার পর আমি না করেছিলাম তখনও করতো তেমন না।ধিরে ধিরে নেশা করা ছেড়ে দেয়,তবে মাঝে মাঝে সিগারেট খেতো আমি তেমন কিছু বলতাম না।কারন একটা জিনিসের অভ্যাস হবার পর
ছাড়া খুব কষ্টকর তাই।তবে খুব কম সিগারেট খেতো প্রতিদিন না”।

“আমাদের দিন গুলি অনেক ভালো কাটতে থাকে।একদিন তুষার অফিস থেকে ফোন দিলো”।

-“হ্যালো! আবান্তিকা”।(তুষার)
-“হা!বলো কিছু বলবে”।(আবান্তিকা)
-“না আসলে আমি বলছিলাম আজকে তুমি আর রাতের খাবার বাহিরে খেতে চাচ্ছিলাম। অনেক দিন হলো তোমাকে নিয়ে কোথায়ও যাওয়া হয় না তাই আমি আজকে আগেই অফিস থেকে আসবো তুমি রেডি হয়ে থেকো” (তুষার)
-“আচ্ছা ঠিক আছে।আর এই কথাটা বলতে এতো ভয় পাওয়া লাগে আর যেন এমন না হয়।তুমি আমাকে সব বলবা না তো কাকে বলবা।কথাটা যেন মনে থাকে”।(আবান্তিকা)
সেই দিন রাতে আমরা বাহিরে শপিং করে খেয়ে তারপর বাসায় আসলাম ১১ টায়।”

“কিন্তু ১১.৫০ তুষার কেক নিয়ে এসে আমাকে কাটতে বলে।আমি তো অবাক হয়ে যাই”।
-“এই কেক কাটবো কেনো।আর আজকে তো আমাদের কারো জন্মদিন না তাহলে”।(আবান্তিকা)
-“তুমি ভুলে যাও কিভাবে আজকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী”।(তুষার)
-“আমি খুবি দুঃখিত আমার মনে ছিলো না। আসলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো অথচ তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দিলে।আর একটা বারও আমাকে বুঝতে দিলে না”।(আবান্তিকা)
-“আচ্ছা সারপ্রাইজ দিলে কি বুঝতে দেয় নাকি যে আমি বুঝতে দিবো।আর এখন তোমার সামনে আনো।কোন কথা বলবে না”।(তুষার)

-“তুমি পায়েল কখন কিনলে আমি তো তোমার সাথেই ছিলাম”।(আবান্তিকা)
-“আমি অফিস থেকে আসার সময় কিনেছি। তোমাকে কি গিফট দিবো ভেবেই পাচ্ছিলাম শেষে একটা দোকানে যাবার পর এই পায়েলটা পছন্দ হয় আর নিয়ে আসি তোমার জন্য”।(তুষার)
-“এখন আমি তোমাকে কি দিবো?আমার তো মনেই ছিলো না”।(আবান্তিকা)
-“তুমি আমার সাথে আছো আর কি লাগবে আমার বলো।এইভাবেই সারাজীবন থাকলেই হবে আমার আর কিছু লাগবে না”।(তুষার)
-“আমি আবার তোমাকে রেখে কোথায় যাবো। তুমি তো আমার সব তাহলে।আচ্ছা তোমাকে যদি বাবা বলে ডাকে তাহলে তোমার কেমন লাগবে”।(আবান্তিকা)
-“কি বলো তুমি?আমাকে আবার কে বাবা বলে ডাকবে।আচ্ছা এক মিনিট তাহলে কি সত্যি”।(তুষার)
-“হ্যাঁ!সত্যি তুমি বাবা হতে যাচ্ছো”।(আবান্তিকা)
-“আজকে আমি অনেক খুশি।তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে আমার জীবন পালটে যায়।ভালোবাসি তোমাকে আবান্তিকা অনেক বেশি ভালোবাসি”।(তুষার)
-“আমি মনে হয় ভালোবাসি না,আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবসি”।(আবান্তিকা)
-“আমি জানি,আচ্ছা এখন কেক কাটো”।(তুষার)

“আসলে সব সময় ছেলেরা ভুলে যায় আর আমার ক্ষেত্রে হয়েছে তার উল্টা, আমি নিজেই ভুলে গেছি সারপ্রাইজ দিবো বলে।সেই দিন তুষার অনেক খুশি হয়েছিলো”।

“তুষার আমাকে বাসার কাজ করতে দিতো না।যতক্ষণ বাসায় থাকতো সব কাজ নিজে একা করতো”।
“দেখতে দেখতে সময় চলে আসে,আমাদের জীবন আরও সুখের করতে তুমি আসো।তুমি আসার পর আমাদের জীবন বদলে যায়।আর তুষার তো তোমাকে পেয়ে সব কিছু ভুলে গেছে।তোমার নাম আরিসা তুষার রেখেছে। আমারও আরিসা নাম অনেক ভালো লাগে। দুজনে এই নামটা ঠিক করলাম”।

“আমার মনে পড়ে যখন তুমি প্রথম বাবাই বলে ডাকো তুষার খুশিতে কেঁদে দেয়। তোমাকে নিয়ে তুষায়ের অনেক স্বপ্ন দেখে তুমি বড় হয়ে ভালো কিছু করবে, মানুষের মতো মানুষ হবে।আমার আর তোমার বাবাই স্বপ্ন ছিলো তুমি ডাক্তার হবে আর গরিবদের বিনা টাকায় চিকিৎসা করবে”।

“সব কিছুই ঠিক চলতে থাকে।এক দিন তুষার অসুস্থ হয়ে যায়।সাথে সাথে আমি হসপিটালে নিয়ে যাই আর সবাইকে আসতে বলি।তুমি তখন অনেক ছোট, তোমার মাত্র ২ বছর বয়স।আমি একা সব করতে পারবো না তাই সবাইকে জানাই।ডাক্তার দেখে বললো অনেক দেরি হয়ে গেছে ক্যান্সার হয়েছে শেষ পর্যায়ে যে কোন সময় কিছু হয়ে যেতে পারে।আগেই নাকি ধরা পড়েছে কিন্তু আমি কিছুই জানতাম না”।
“তুষারকে জিজ্ঞেস করার পর বলে কিছু দিন আগে নাকি অসুস্থ হয় যায় অফিসে থাকতে।তাপর যখন ডাক্তার কাছে যায় ডাক্তার নাকি টেস্ট দেয় আর রিপোর্ট দেখে বলে ক্যান্সার হয়েছে।কিন্তু আগে তেমন সমস্যা হয়নি।মাঝে মাঝে একটু অসুস্থ হতো”।

-“আমার একটা কথা রেখো আরিসা বড় হবার পর ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিও, আর কখনো আমার কথা ভেবে কান্না করবে না তাহলে আমি কষ্ট পাবো”।(তুষার)
-“তোমার কিছু হবে না দেখো।আর আরিসা কি আমার একার মেয়ে তোমারও মেয়ে আমি একা কেনো দেখে রাখবো”।(আবান্তিকা)
-“আমি তো আকাশের তারা হয়ে তোমাদের দেখবো দূর দেখে।তুমি কান্না করো না কান্না থামাও”।(তুষার)
-“কোথায় আমি কান্না করছি,আমি কান্না করছি না”।(আবান্তিকা)
“এটাই ছিলো তুষারের শেষ কথা।তারপর কোন কথা বলেনি।চলে যায় আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে”।
“তুমি তো আকাশের তারা হয়ে সব দেখছো তাই না?দেখো আজ আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করেছি তোমার মেয়ে আজ অনেক বড় ডাক্তার। ভালো ছেলে দেখে বিয়েও দিয়েছি। তোমার মেয়ে তোমার মতো হয়েছে,সব সময় সবার সাহায্য করে।আমি পেরেছি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে।কিন্তু তুমি নেই আমাদের মাঝে”।

-“কেঁদো না মাম্মা তাহলে বাবাই কষ্ট পাবে। বাবাইকে কষ্ট দিও না”।(আরিসা)
-“না আমি কাঁদি না,এইটা সুখের কান্না। তোমাকে নিয়ে যে আমি আজ গর্ব করতে পারি তার জন্য”।(আবান্তিকা)
-“অনেক ভালোবাসি মাম্মা তোমাকে”।(আরিসা)
-“আমি আমার মেয়ে অনেক ভালোবাসি”।(আবান্তিকা)
“বাবাই তুমি খুশি হয়েছো তো।আজ তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি আমি।বাবাই আজ তুমি থাকলে অনেক ভালো হতো”।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত