একটি ছেলে

একটি ছেলে

~প্রিয়তা, এই প্রিয়তা এখনো ঘুমাচ্ছিস? তাড়াতাড়ি দরজাটা খুল দরকার আছে।
মা ১০ মিনিট ধরে দরজাতে শব্দ করছে আমাকে ঘুম থেকে তুলার জন্য। আমার ঘুম ভেঙেছে ঠিক কিন্তু দরজা খুলতে ইচ্ছে করছে না।কারণ এত সকালে ডাকাডাকি করা মানে আমাকে কেউ না কেউ দেখতে এসেছে। মা আমার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে আমাকে বিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু আমার যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে মার কি হবে। আমি ছাড়া তো মার আর কেউ নেই। তাই আমিও কিছু না কিছু অঘটন ঘটিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়।

~প্রিয়তা দরজা খুল বলছি।
না আর দেরি করা যাবে না। এখন যদি দরজা না খুলি তাহলে মা হয়তো দরজা ভেঙে ফেলবে।
আমি দরজা খুলে কোন কথা না বলে দিলাম এক দৌড়। আমার দৌড়ানো দেখে মা আমার পিছন পিছন ছুটতে লাগলো মার পিছন পিছন দেখছি এক ভদ্রলোক আর এক ভদ্রমহিলাও ছুটছে।
আমি বাসার নিচে এসে দাঁড়াতেই মা বললো,
~কি হলো প্রিয়তা? তুই এইভাবে দৌড়ে নিচে নেমে আসলি কেন?
–মা তুমি যেভাবে দরজায় ধাক্কাধাক্কি

করে আমায় ডাকছিলে আমি তো ভাবলাম ভূমিকম্প হচ্ছে তাই তো নিচে নেমে আসলাম।
আমার কথা শুনে মা রাগী রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন তারপর ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বললেন,

~আমার মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন একটু আধটু দুষ্টামি করে আর কি। খুব আদরের মেয়ে তো.
ভদ্রলোক হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,

-যে মেয়ে কোন কারণ ছাড়া আমার মত বুড়ো মানুষকে ৪ তলা থেকে দৌড়িয়ে নিচে নামাতে পারে সেই মেয়ে যদি আমার পুত্রবধূ হয় তাহলে দেখা যাবে আমাকে দৌড়িয়ে কবরস্থানে নিয়ে গিয়ে মাটি চাপা দিয়ে রেখে এসে পড়বে।
আমি তখন ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম,

–না না আংকেল আমি এতটা নিষ্ঠুর না যে জীবিত মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে আসবো। আমি আপনাকে প্রথমে মারবো তারপর মাটি চাপা দিয়ে আসবো।
আমার কথা শুনে ভদ্রলোক কিছু না বলে ভদ্র মহিলাকে সাথে নিয়ে দ্রুত চলে গেলেন।
মা আমার দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
~তুই এমন করলি কেন?
আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,
–এমনি.
~তুই আগামী ৩ দিন আমার সাথে কোন কথা বলবি না।

মার রুমে উঁকি দিয়ে দেখি মা গোমরা মুখ করে বসে আছে।অনেকক্ষণ হলো মা আমার সাথে কোন কথা বলছে না।তাই আমি মার পাশে এসে বসে বললাম,

— মা আমার চুলে একটু তেল দিয়ে দিবে?
মা আমার কথা শুনেও চুপ করে আছে।

— মা আমার বান্ধবী লিমা আছে না ও বলেছে আমার চুল না কি ভি কাটিং দিলে খুব মানাবে। তাই চিন্তা করছি পার্লারে গিয়ে চুল কেটে ভি কাটিং দিবো।

~একটা থাপ্পড় দিবো। একদম চুল কাটবি না।
— কি করবো এত লম্বা চুল রেখে? আমার তো চুলে তেল দিবার মত কেউ নেই।
~যা তেলের বোতল নিয়ে আয়।
–I love u baby
~চুপ এত ঢং করবি না। আর কখনো এমন করলে সত্যি সত্যি আর কথা বলবো না।
তার বেশ কয়েকদিন পর বাসা থেকে বের হবো এমন সময় মা বললো,
~ প্রিয়তা বাসায় ফেরার সময় ২ টা দেশি মুরগি আনতে পারবি?
— দেশি মুরগি কেন?
~ বাসায় বিকালে মেহমান আসবে তো তাই।
–আমার জানা মতে আমাদের তো তেমন কোন আত্মীয় স্বজন নেই তাহলে আসবেটা কে?
~এত বেশি বুঝিস না তকে আনতে বলছি তুই আনবি।
আমি বুঝতে পারছিলাম আবারও মা কাউকে না কাউকে ধরে নিয়ে আসবে আমাকে দেখানো জন্য।
তাই বিকালে বাসায় ফেরার সময় শরীরে আর জামাতে কাদা পানি লাগাচ্ছি এমন সময় কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমায় বললো,
-আরে এ কি করছেন আপনি? সারা শরীরে কেন কাদা পানি মাখছেন?
–আমার ইচ্ছা তাই মাখছি।আপনার ইচ্ছে হলে আপনিও মাখেন।
আমার কথা শুনে ছেলেটি মুচকি হেসে বললো,
-আপনি বুঝি রোজ কাদামাটি মেখে এত সুন্দর হয়েছেন?
–আরে মশাই যান তো আপনি আপনার কাজে আমায় কেন ডিস্টার্ব করছেন?
বাসায় ঢুকতেই মা আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললেন,
~কি রে, তোর এ কি অবস্থা? কি হয়েছে তোর?

— আসলে মা তুমি তো আমায় দেশি মুরগি আনতে বলেছিলে। মুগরি যখন নিয়ে আসি তখন দেখি মুরগির পা গুলো দড়ি দিয়ে বাধা। দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছিল। তাই ভাবলাম বাঁধনটা খুলে দেয়। আমি তো ভেবেছিলাম বাঁধন খুলে দিলেও দেশি মুরগি বয়লার মুরগির মত চুপচাপ বসে থাকবে কিন্তু কে জানতো বাঁধন খুলে দিলে দেশি মুরগি ছুটে পালাবে। এই দেশি মুরগির পিছনে ছুটতে ছুটতেই আমার এই অবস্থা।

আমার কথা শুনে কে যেন জোরে হা হা হেসে উঠলো।তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা সোফাতে বসে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় ছেলেটা মা কে বললো,

-আন্টি আপনার মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
~আলহামদুলিল্লাহ্, বাবা তোমরা কথা বলো আমি খুশির সংবাদটা তোমার বাবাকে দিয়ে আসি।
আমার সাথে কি হচ্ছিল আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।আমি তখন ছেলেটিকে বললাম,
–কিসের পছন্দ হয়েছে? আপনি আমায় চিনেন না জানেন না কিভাবে পছন্দ করে ফেললেন? তাছাড়া আপনার শুধু পছন্দ হলে হবে আমারও তো আপনাকে পছন্দ হতে হবে।
-এখন আর আমাকে অপছন্দ করেও লাভ নেই।আপনার মা আর আমার বাবা ২ জন ২ জনকে আগেই কথা দিয়ে ফেলেছে।

–দেখেন আমি কিন্তু খুব বাজে মেয়ে।
-তারপরেও আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
–আমি কিন্তু অনেক ছেলের সাথে প্রেম করে ইয়ে ইয়ে… করেছি।
-তারপরেও আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
–আমি কিন্তু পাগলি টাইপের বিয়ের পর আপনাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারি।
-সমস্যা নেই আমি তারপরেও আপনাকে বিয়ে করবো।
এই ছেলের এইসব কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমি রেগে গিয়ে বললাম,
— আপনি কি মেরুদণ্ডহীন যে অন্য মেয়ে বিয়ে করতে পারবেন না? আপনি অনেক সুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে পারবেন। শুধু শুধু আমার মত একটা খারাপ মেয়েকে কেন বিয়ে করবেন?

-বিয়ে করবো এজন্যই যে আপনি যা বলছেন তার একটাও সত্যি না। কারণ খারাপ মানুষ কখনো তার খারাপ দিক গুলো মানুষের সামনে সহজে তুলে ধরে না। তারা মানুষের সামনে তার ভাল দিক গুলোই তুলে ধরে।

আমি ছেলেটির কথা শুনে কিছু বলতে পারছিলাম না। হঠাৎ ছেলেটি আমার পাশে এসে চোখে চোখ রেখে বললো,

– বিয়ের পর প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন তুমি তোমার মায়ের সাথে থাকবে। প্রিয়তা আমার মা নেই। আমি কি তোমার মাকে মা বলে ডাকার অধিকার পেতে পারি?

জানি না আমার মাঝে কি হলো।শুধু একফোঁটা জল যখন চোখ থেকে গড়িয়ে পরছিলো তখন ছেলেটি আমার চোখেরজলটা মুছে দিয়ে বললো,
– আমি বেচে থাকতে এই কান্নাটা যেন তোমার জীবনের শেষ কান্না হয়..

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত