জীবন পথ

জীবন পথ

আমি রাস্তা দিয়ে অফিসে যাচ্ছি। আমি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরী করি। প্রতিদিন আমি একটা রাস্তা দিয়ে অফিসে যাই। একটা মেয়ে ভার্সিটি তে এই রাস্তা দিয়ে যায়। দেখতে একেবারে বদমেজাজি। কোনোদিন বাদ নাই যে কারো সাথে ঝগড়া করে না। কেন ঝগড়া করে সেটা তো জানবেন। মেয়েটা দেখতে একদম লাল সাদা কালো না। তবে দেখতে শ্যামলা রঙের। সবাই মেয়েটাকে প্রপোজ করে। তাই মেয়েটা রেগে গিয়ে ঝগড়া করে। মেয়েটাকে দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু কোনোদিন সাহস হয় না মেয়েটাকে ভালো লাগার কথা বলতে। শ্যামলা রঙের মেয়েদের অনেক মায়াবী চেহারা। তাই তাদের দেখতে ভাল লাগে।
মেয়েটা আমাকে দেখে বলতে লাগল।

— এই যে মিয়া প্রতিদিন এই রাস্তায় কি? আপনার ভাব তো বুঝতে পারলাম না। কি সমস্যা হা?
— নাতো। আমি এই রাস্তা দিয়ে অফিসে যাই। অফিস তো আমার সামনেই।
— ও। তাইলে ঠিক আছে। কিন্তু খবরদার অন্য কোনো মতলব নিয়ে এই রাস্তায় আসবেন না। নইলে অফিসে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

আমি কিছু দূর যাওয়ার পর দেখলাম মেয়েটা লুকিয়ে আমার একটা ছবি তুলল। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে অফিসের দিকে রওয়ানা হলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা আমাকে পুলিশের বাদাম না খাইয়ে ছাড়বে না।

অফিস শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মানুষ বলে না – যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। মেয়েটাকে বাসে দেখলাম। তাও আবার মেয়েটির কাছের সীট ফাকা। অন্য কোনো সীট ফাকা নেই। আমি দাঁড়িয়ে যেতে লাগলাম। এমন সময় কন্টাক্টটার আমাকে মেয়েটির কাছে বসিয়ে গেল। মেয়েটি আমার দিকে চোখ মোটা করে চেয়ে রইল। আমি ভয়ে ভয়ে মাথা দিয়ে বললাম ” আমার কোনো দোষ নাই। সব দোষ ওই বেটার। ”

মেয়েটি অন্য দিকে চেয়ে মুচকি হাসি দিল। কিন্তু আমি দেখি নি। আবার হাসি বন্ধ করে আমার দিকে রাগি মুখ নিয়ে তাকাল।

— বুঝি বুঝি। মায়াবী চেহারার মেয়ে দেখলে সবাই কাছে বসতে চায় । এই টা আবার নতুন কি? বইসেন ভালো কথা আমার দিকে চাইবেন না। নইলে চোখ থেকে চশমা সরিয়ে দিয়ে চশমা টা একদম ভেঙে দিব।

আমি এই ভয়ে একদম নিরব হয়ে গেলাম। কি জানি মেয়েটার কি রাগ কে জানে। আমার চশমা টা যদি ভেঙে দেয়। বাসে একটা মেয়ে উঠল। একদম লাল। আমি মেয়েটির দিকে একবার তাকালাম। বাসের সবাই মেয়েটির দিকে তাকাল। আমি যেই তাকালাম আমার কাছে বসে থাকা মেয়েটি আমাকে একটা চিমটি দিল।

— জীবনে কোনো মেয়ে দেখ নি? এই মেয়েটার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? একদম সোজা তাকিয়ে থাকো।
— মেয়েটা খুব সুন্দর।
— ইশ! মন টায় কয় কি করতে যাচ্ছে যানেন?

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম। মেয়েটার সমস্যা কি? আমি যা ইচ্ছা তা করব। মেয়েটা আমার সাথে এ রকম ব্যবহার করছে কেন? আমি মেয়েটাকে বললাম ” আপনার নাম কি?

মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল ” সুস্মিতা। ” তারপর বাস টা আমার বাসার সামনে থেমে গেল।

আমি আজ বাস না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। আমাকে কে যেন ডাকতে শুরু করল। আমি পিছনে থাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে। মেয়েটি আমার কাছে এসে বলে ” আমি সুস্মিতার বোন হই। ”
আমি খুবি অবাক হলাম। আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখি ৪২০ টাকা আছে। তারপর ২০ টাকা দিয়ে মেয়েটিকে ফুচকা কিনে দিলাম। মেয়েটিকে বললাম ” তোমার বোনের নাম্বার আছে।
মেয়েটি হাসি দিয়ে বলল ” আছে। ” তারপর আমাকে নাম্বার টা দিয়ে মেয়েটি চলে গেল।
আমি রাতে ফোন দিলাম। সুস্মিতা ফোন টা ধরে কিছু সময় চুপ থাকল। আমি হ্যালো বলে চুপ তাকলাম। সুস্মিতা আমাকে বলল ” আপনি কেন আমাকে ফোন দিয়েছেন। ”
আমি তো বুঝতেই পারলাম না সুস্মিতা কিভাবে আমার কণ্ঠা টা বুঝতে পারল।
আমি ভয় পেয়ে বললাম ” সরি। ”

সুস্মিতা রাগি কণ্ঠে বলল ” আচ্ছা ঠিক আছে। কি করেন? আমি আমতা আমতা করে বললাম ” এইতো আপনার কথা ভাবি। ”

এই কথা টা বলতেই সুস্মিতা রেগে যায়। আমাকে বলে ” এই আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে নিয়ে ভাবতে? ”
আমি পুরাই ভয় পেয়ে গেলাম। তারপর আমি ফোন টা কেটে দিলাম।

সকালবেলা দেখতে পেলাম সুস্মিতা বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি কিছু টা লজ্জা পেলাম। তারপর সুস্মিতা কে লুকিয়ে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকলাম। প্রথমে একটা বাস আসল। সুস্মিতা বাসে উঠতে গিয়ে অনেক দিকে থাকাল। আমি বুঝতে পারছি কাউকে মনে হয় খুঁজতে লাগল। এভাবে আমি প্রায় অনেক দিন লুকিয়ে তাকলাম। সুস্মিতাকে আমার খুব মনে পড়ছে। দেখতে ইচ্ছা করছে কিন্তু তবুও আর দেখব না।
সুস্মিতা কে দেখলাম কলেজে এসেছে। আজ একটা অনুষ্ঠান। অনেক সাজসজ্জা করে এসেছে। মনে হচ্ছে মনের মধ্যে পহেলা ফাগুন এসেছে। অনেক ছেলে সুস্মিতার সুন্দরের প্রশংসা করল। শুধু আমি করি নি। একটা বটগাছের কাছে গিয়ে বসলাম। আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম। এক ফুটা চোখের পানি পড়ল। আমার ইচ্ছা টা না হয় মরে ওই যাক।

মনে হয়েছিল সুস্মিতা কে ডিস্টার্ব করব না। কিন্তু আমি একদিন একটা নদীর পাড়ে বসে আছি। এমন সময় দেখলাম সুস্মিতার ছোট বোন আমার কাছে এসে বসল। আমি গালে হাত দিলাম। ও মা মেয়েটিও গালে হাত দিল। আমি হাত সরালাম। ও মা মেয়েটিও হাত সরাল। আমাকে বলতে শুরু করল ” আপু অনেক কান্না করেছে?
আমি বললাম ” কেন? ”
মেয়েটি উত্তরে বলল ” তোমার জন্য। ”
সুস্মিতা আমার কাছে বসে বলল ” এতো অভিমান। ”
আমি শুধু মাথা টা নাড়ালাম। সুস্মিতা আমার গাঁধে মাথা টা রাখল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত