গাব্বু ও সাকিব

গাব্বু ও সাকিব

স্কুল থেকে ফিরতেই ভাইয়া ভাইয়া করে ছুটে এলো সাকিব। গাব্বুর খালাত ভাই সে। বয়সে গাব্বুর চেয়ে সমান্য ছোট। তবে দুষ্টুমিতে প্রায় সমান। এক পুটলির অত্যাচারে যেখানে প্রাণ অতিষ্ট হওয়ার দশা সেখানে আবার যুক্ত হয়েছে আরেকজন। আম্মুও সাকিবের সমস্ত দুষ্টুমি কেমন হাসিমুখে প্রশ্রয় দিয়ে যান। ভেবে পায় না গাব্বু, এরকম দুষ্টুমি করলে তাকে তো ঠিকই প্যাদানি খেতে হতো। অথচ সাকিবের ব্যাপারে দারুন ছাড়।

গাব্বুর ঘরের খাটের নিচে থাকা মার্বেলের কৌটাটা চোখে পড়ে সাকিবের। ‘আরেব্বাবা এতো দেখছি বিরাট ব্যাপার!’ গাব্বুর মার্বেলের সংগ্রহ দেখে চোখ ছানাবড়া হওয়ার দশা তার। সে যেনো কোনো গুপ্তধন আবিষ্কার করে ফেলেছে এমনভাবে চেয়ে থাকে। নেড়ে চেড়ে দেখে আর বিষ্ময়ে চোখ বড় হতে থাকে। গাব্বু ঠিকই বুঝতে পারে যে একটু পরেই সাকিব এই মার্বেলে ভাগ বসাতে চাইবে। আর আম্মুও সাকিবের প্যান প্যানানিতে তাকে মার্বেল দিতে বাধ্য করবে। মার্বেল নিয়ে কত কাণ্ড তা কি সাকিব জানে? এই মার্বেলের ভাগ সে তাকে কিছুতেই দিতে পারবে না। এমনিতেই সাকিব এলে তার অনেক প্রিয় জিনিসই নিয়ে যায়। সুতরাং বেশি দেরি না করে সাকিবের হাত থেকে কৌটাটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় লাগায় গাব্বু। পেছনে আহত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সাকিব।

মার্বেল নিয়ে বেশি দূরে যায়নি গাব্বু। বাড়ির কানাচে গিয়ে লুকিয়ে রাখে কৌটাটা। এরপর আরেকপাশ দিয়ে উঁকি দেয় বাড়ির ভিতরে। পুটলিকে খুঁজতে থাকে তার চোখের বাইনোকুলার। ‘ঠিক কাজের সময় উনাকে পাওয়া যাবে না’ বিড়বিড় করতে থাকে সে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে গাব্বু। এখন পরিকল্পনা পাল্টাবে কি না ভাবছে, এমন সময় পুটলি ঘর থেকে বের হয়।

পুটলির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে সে পড়ে আরেক বিপদে। নিচু গলায় ডেকে, সুৎ সাৎ শব্দ করেও লাভ হয় না। তবে পুটলির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বেশ সজাগ। আচমকা সে সরাসরি তাকায় গাব্বুর দিকে। গাব্বু তখন একটা ছোটো মাটির ঢিল নিয়েছে পুটলিকে তাক করে ছুড়বে বলে হাত তুলেছে। ধীরে ধীরে হাত নামিয়ে নিয়ে পুটলিকে কাছে ডাকে সে। পুটলি কাছে যেতেই কানে কানে কি যেনো বলে ফিসফিসিয়ে। পুটলির মুখে হাসি ফোটে। ফোকলা দাঁতের হাসি ধীরে ধীরে তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

পুটলি ফিরে যেতেই গাব্বুও পিছন ফিরতে যায়। এমন সময় পেছন থেকে জোরে ‘হাউ’ করে শব্দ হয়। লাফ দিয়ে দুহাত শুন্যে উঠে যায় গাব্বু। ভয় পাওয়া বেড়ালের রোয়া ওঠার মতো তারও চুলগুলো দাঁড়িয়ে যায়। আর ওদিকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সাকিব। হাসতে হাসতে সে বাড়ির পিছনে দৌড় লাগায়। বুকে একটু থু থু করে থুথু লাগায় গাব্বু। সে খুব ভয় পেয়েছে। এবার তো প্রতিশোধ না নিলেই নয়। সাকিবকে খুঁজতে শুরু করে গাব্বু।

সাকিব আর বাড়ি ঢোকেনি। সে পালিয়েছে। তাকে সারা বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছে গাব্বু। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যখন পেল না তখন নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকে গাব্বু। ওদিকে গাব্বুর মার্বেলের কৌটাটা সুন্দর মতো নিজের ঘরে নিয়ে রাখে পুটলি। পুটলির কাছ থেকে কিছুই খোয়া যাবে না সেটা গাব্বু ভালো করেই জানে।

দুপুর গড়িয়ে গেলে গাব্বু ঘুম থেকে ওঠে। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে সে দূর থেকে সাকিবের কণ্ঠ শুনতে পায়। দৌড়ে গিয়ে আড়াল থেকে দেখে সাকিব বাড়ি ঢুকছে। বারান্দায় পজিশন নেয় গাব্বু। সেখানে মনোপুত না হওয়ায় এবার ঘরের ভিতরে দরজার আড়ালে পজিশন নেয় গাব্বু। ‘এবার বাছাধন যাবে কোথায়? তখনকার মজা এবার দেখবে’। বিড় বিড় করে বলে গাব্বু। ধীরে ধীরে পায়ের শব্দ এগিয়ে আসতে থাকে। গাব্বু উত্তেজনায় শক্ত হয়ে যায়। তার উসখুসানি বেড়ে যায়।

গাব্বুর বাবাকে যমের মতো ভয় পায় সাকিব। নিজের বাবাকেও এতটা ভয় পায় না সে। অথচ কোনো দিন তাকে কিছু বলেনি মানুষটা। একমাত্র পুটলি ছাড়া আর সবাই লোকটাকে ভীষণ ভয় পায়। খালুকে আসতে দেখে সাকিব এক পাশে সরে যায়। সে সরাসরি বাড়ির ভিতরে না গিয়ে সে ঘুরে আসতে থাকে। মূলত লোকটির চোখের আড়ালে থাকতে পারলেই যেনো তার শান্তি। কখন কি কারণে ধমক খেতে হয় তার কি ঠিক আছে?

ওদিকে পায়ের শব্দ দরজার কাছাকাছি আসতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ে গাব্বু। জোরে ‘হাউ’ শব্দ করে নিজেই চমকে ওঠে। সামনে যেন যমদূত দাঁড়িয়ে। বাবা ভীষণ ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠেছেন। আজ ধরতে পারলে খবর আছে। বাবা ধাতস্থ হওয়ার আগেই বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে দৌড় লাগায় গাব্বু। একটু পরই বাবার উত্তেজিত কণ্ঠ কানে যায় তার। বাড়ির সবাই বেরিয়ে এসেছে বাবার চেঁচামেচিতে। ধরতে পারলে কি কি করা হবে সেই ফিরিস্তি শুনতে শুনতে বাড়ি থেকে উল্কার বেগে বের হয় গাব্বু। একই সময়ে বাড়ি ঢুকছিল সাকিব। হুড়মুড় করে তার গায়ের ওপর পড়ে গাব্বু। দুজনেই মাটিতে পড়ে মাখামাখি হয়ে যায়। তারপর উঠে আবার দৌড়াতে থাকে দুজনেই। এবার সামনে সাকিব আর পেছনে গাব্বু। তারা মাঠের দিকে চলেছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত