তবুও একটু

তবুও একটু

তামিম – অনেক খিদা লাগছে । ইশ! তোমার কাছে এইটা কি? দেও না একটু খাই।

সুস্মিতা – এইটা আমার ভাইয়ের জন্য। তোমার জন্য আমি রান্না করে আনি নি। তোমার মতো এতো ফাজিল আমি একটাও দেখি নি। তুমি এমন কেন হা? একটু ভালো ভাবে থাকতে পারো না। তোমার জন্য আমি কত বকা শুনতে হয় জানো? তা জানবে কি করে সারাদিন তো পাগলের মতো করে এ দিক সেদিক ঘুরে বেড়াও।

তামিম – ধ্যাত। খাবার দেও। এখন তোমার লেকচার শুনতে আমার ভালো লাগছে না। তুমি তো পারো শুধু বিনা টাকায় লেকচার দিতে।

সুস্মিতা – যা ইচ্ছা তা খাও। নেও খাও। সারাজীবনের জন্য খাও। আর কোনো দিন বলো না খাওয়ার কথা। খেতে খেতে একেবারে মোটা হয়ে যাচ্ছ।

তামিম – ইশ! কি মজা। তোমার হাতের খাবারের কোনো তুলনা হয় না। তুমি এতো ভালো করে কিভাবে রান্না করতে পারো? এক কাজ করি তুমি আর আমি একটা হোটেল খুলে পেলি। তুমি রান্না করবে আর আমি বিক্রি করব।
সুস্মিতা – ফাজলামি করো না। এমনিতেই ভালো লাগছে না। এখন আমার ভাই স্কুল থেকে এসে কি খাবে? তারজন্য কিছু খাবার করে নিয়ে আসলাম তারপর তুমি কোথায় থেকে এসে সব খাবার খেয়ে নিলে। তোমার কি মায়া বলতে কিছু নাই?

তামিম – ওই আমি কি তোমার কেউ না? তোমার ভাই কি তোমার কাছে সব। শালার এর জন্য ওই মেয়েদের সাথে প্রেম করতে নেই। আমার একটা বউ থাকলে কত মায়া করত।

সুস্মিতা – বউ থাকলে তোমাকে থাপ্পড় দিতে দিতে ঠিক করত। দাঁড়াও কিছু দিন পর সব ঠিক করে দিব। আগে বিয়ে টা হউক তারপর তোমাকে মানুষ করব। ধুয়ে মুছে একদম ভালো মানুষ করে ছাড়ব।

তামিম- তুমি এতো টা ভাগ্যবতী মনে করো না নিজেকে। আমি কিন্তু রাগলে মন মেজাজ সব টাই লাল হয়ে যায়। লাল মরিচ খাইছ কোনো দিন?

সুস্মিতা – খাব না কেন? অবশ্যই খাইছি। লাল মরিচ দিয়ে ওই এই খাবার টা করে এনেছি।

স্কুল থেকে সুস্মিতার ছোট ভাই ক্যান্টিনে আসলো।
অভি- আপু খেতে দাও।

তামিম- কি শালাবাবু খেতে একেবারে পাগল হয়ে যাচ্ছ কেন? আশেপাশের মানুষ দেখলে কি বলবে? বলবে ছেলে টা কত রাক্ষস।

অভি- ওই আপনি আমাকে শালাবাবু বললেন কেন? আপনার মতো কিপটা মানুষ কে আমার দুলাভাই জীবনেও বানাব না।

তামিম- বার্গার খাবে? আমি কিনে দিব। সাথে আইসক্রিম।
অভি- সত্যি দুলাভাই। দেও না দেও না। অনেক দিন পর খাব।

তামিম – শালা। খাবার দিলে দুলাভাই। আর নিজের খাবার খাইলে দুলাভাই না। কি ক্যারেক্টার মাইরি তোমরা দুই টা

ভাই-বোনের।

অভি- দুলাভাই আমি বার্গার নিয়ে আসছি। তুমি দাম দিও।

তামিম- আচ্ছা। আমি দাম দিব । তুমি পেট বড়ে খাও। সুস্মিতা তুমি কিছু খাবে না একদম চুপ হয়ে বসে আছো?
সুস্মিতা – ( রাগ করে মুখ টা অনেক লাল মনে হচ্ছে) ঢং করতে আমার একদম ভালো লাগছে না। সব সময় শুধু ঢং আর ঢং। চাকরীর কিছু হলো?

তামিম – যে বেটা চাকরি দেয় সে বেটার মেয়ে কে আমি বিয়ে করি নি যে চাইলেই চাকরি হয়ে যাবে?

সুস্মিতা – শুনো চাকরি না পাইলে আমার বাপ তোমার কাছে আমার বিয়ে কোনো দিনও দিব না। তারপর রাস্তায় বসে বসে ওই যে পাগল দেখছ তাদের মতো হতে হবে।

তামিম – আমি হব। জীবনেও না। আমি তো তোমার বাপ কে পটিয়ে ফেলছি। তোমার বাপ রাজি।
সুস্মিতা – তুমি পাগল হবে না। পাগল হব আমি। আমাকে পাগল হতে হবে। নইলে তোমার দায়িত্ব নিব কি করে? পাগলের দায়িত্ব নিতে হলে আগে নিজে পাগল হতে হয় তারপর অন্যজনের দায়িত্ব নিতে হয়।

তামিম- তুমি আমাকে পাগল বললা? তুমি কেমন দিন দিন পর হয়ে যাচ্ছ। আগের মতো করে আর মায়া কর না। শুধু বকাবকি করো।

সুস্মিতা – এমন ভাব ধরছ যেমন কিছু চিন না। ভাব ধরা বন্ধ করো। শুনো আমি বাসায় যাচ্ছি। তুমিও বাসায় যাও।

সুস্মিতা ক্যাম্পাসে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমি কি করব? কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আমি দেরি করে সুস্মিতার কাছে আসতেই সুস্মিতা আমার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাকতে বলল। আমি তাকিয়ে তাকলাম।
সুস্মিতা – আচ্ছা তুমি কি সারাজীবন গাধা ওই রয়ে যাবে। একটু চালাক হতে পারবে না। একটু চালাক হলে কি এমন ক্ষতি। তুমি আমাকে বলো।

তামিম- (মন খারাপ করে) আমি গাধা না। শুধু তোমার চোখে আমি গাধা। অন্য সবার চোখে আমি অনেক ভালো একটা ছেলে।

সুস্মিতা – ( রাগ দেখিয়ে ) ইচ্ছা করছে আমার কপাল টা পাঠিয়ে দেই। তোমার কপাল তো পাঠাতে পারব না।
তামিম- ( হাসি দিয়ে ) একটা বাঁশ এনে দিব। তাইলে সহজে কপাল টা পাঠাতে পারবে। ডাক্তারেরও কিছু আয় হবে।

সুস্মিতা – লজ্জা করে না। একটু তো লজ্জা তাকা উচিৎ।
তামিম- তুমি কি অপরিচিত মেয়ে যে লজ্জা থাকবে।

সুস্মিতা – হায় রে আমার কপাল। আমার এমন একটা ভাগ্য তোমার মতো ছেলের সাথে ঘর করতে হবে। তুমি অন্য

কোনো মেয়ে পাইছিলে না। আমাকে ওই প্রপোজ করতে হতে হয়ে ছিল।
সুস্মিতা – তোমার লাল রঙের ড্রেস দেখে প্রেমে পড়েছিলাম।
সুস্মিতা – আজ থেকে কোনো লাল ড্রেস পড়ব না।
তামিম – আচ্ছা না পড়লে নাই।

রাত বাজে দুই টা সুস্মিতা কে ফোন দিলাম। সুস্মিতা ঘুম ঘুম চোখে বলল কে? আমি বললাম ” আমি। তুমি তাড়াতাড়ি তোমার বাসার ছাদে উঠো। ” সুস্মিতা রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিল। সকালবেলা সুস্মিতা আমাকে দেখতে পায় তাদের ছাদে নাক টান দিতে দিতে ঘুমাচ্ছি। আমার মাথার কাছে কেক আর মোমবাতি। কেক টা অবশ্য পিপড়া মামারা খেয়ে খেয়ে অর্ধেক করে ফেলছে। মোমবাতি টা জ্বলে জ্বলে শহীদ হয়ে গেছে। সুস্মিতার চোখ থেকে একটু পানি পড়ল। হয়তো আমার জন্য একটু সুখ দিবস পালন করল। ভালবাসি তো তাই একটু আলাদা সব কিছু করি। সুস্মিতা আমাকে ডাক দিয়ে তুলে ফেলল।

সুস্মিতা – খুব কষ্ট হচ্ছে রাতে এখানে ঘুমাতে ? আসলে আমি বুঝতে পারি নি। তুমি আমার জন্য এতো বড় একটা জন্মদিন পালন করতে যাচ্ছ।

তামিম- আমি তোমার কে হা? যে আমার কথা শুনবে? আমি তো পাগল একটা ছেলে। আমার জন্য কেন তোমার মায়া তৈরি হবে? যাই আমি বাসাই যাই।

সুস্মিতা – ( অভিমানী কন্ঠে ) এভাবে বলছ কেন? সরি বললাম তো। তুমি ছাড়া আমার কে আছে। তুমি তো আমাকে খুব ভালবাসো এইটা আমি জানি। আর তুমি একটা কথা জানো না সেটা হলো আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি।

তামিম- বললেই হলো। তাইলে আমার জন্য এক কাপ চা করে নিয়ে আসো। আমি খাব।

সুস্মিতা – হিহিহি। তুমি দাঁড়াও। আমি করে নিয়ে আসছি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত