কৃষ্ণকলি

কৃষ্ণকলি

দোস্ত,,এখন ও অফিসে বসে আছিস।। বাসায় ফিরবি কখন(নিলয়)
নাহ রে।। কিছু কাজ বাকি আছে (সাইফ)
রাখ তোর কাজ,, ভাবি নিঃশ্চয় তোর জন্য অপেক্ষা করছে (নিলয়)
হুম।,,বিরক্তিকরভাবে বলে(সাইফ)
বিয়ে হুট করে করলি,, আমার মায়ের শরীর খারাপ থাকায় যাইতে পারি নি।।কই বিয়ের পর তো আর আমাদের দাওয়াত ও দিলি নাহ।।ভাবিরে পাই আমাদের ভুলে গেছস নাহ(নিলয়)
নাহ,, হুট করে সব হলো,, তাই বলা হয়নি,, যাবি আর কি একদিন (সাইফ)
হুম,,যাবো মানে কি,, অব্যশই যাবো,, ভাবির হাতের রান্না খায়তে হবে নাহ।।।ভাবি দেখতে অনেক সুন্দরী নাকি (নিলয়)
সুন্দরী নাহ ছাই।।কালির কালি একটা।। ভুত।।। ভুত নাহ পেত্নী।।। মনে মনে বিড়বিড় করছে (সাইফ)
কি হলো,, কি ভাবছিস এতো (নিলয়)
কিছু নাহ।।তুই বাসায় যাবি নাহ (সাইফ)
হ্যা,,আমার বউ তো অপেক্ষা করছে আমার জন্য।।(নিলয়)
হুম,,যা তাইলে,,আমার কাজ শেষ হলে আমি চলে যাবো (সাইফ)
ঠিক আছে দোস্ত।। ভালো থাকিস,, আসি রে(নিলয়)
উপরে যার সাথে কথা হচ্ছিল নিলয়,, সাইফের ক্যলিক।।আগে সাইফ নিজে ব্যবসা করতো।। ব্যবসা করতে গিয়ে প্রচুর লোন নেয় ব্যাংক থেকে।। ব্যবসা লস যাওতে।। লোন দায়ে দিশেহারা হয়ে পরে।। সাইফের বাবার তেমন সামর্থ্য নাহ থাকায়।। প্রচুর যৌতুক নিয়ে এক ব্যবসায়ীর কালো মেয়েকে বিয়ে করতে হয়।।।গায়ের রং কালো হলে ও চেহারা খুব মায়াবী ছিলো,,চোখের দিকে তাকালে অন্যরকম একটা মায়া ছিলো নিহার।।নিহা অবশ্য অনার্স (২বর্ষের ছাত্রী ছিলো)বিয়ের পর থেকে University যাও হয়নি।।
পরিবারের সবাই এই বিয়ে মেনে নিলে ও সাইফ নিহাকে মেনে নেয় নি।।
বিয়ের পর থেকে অবহেলা,, আর মানসিক নির্যাতন।।
টিং টুং।।। দরজা খোলতে এতোক্ষন লাগে।। করছিলিটা কি।।। (সাইফ)
কিছুনা।।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।। টেবিলে খাবার দিচ্ছি।।আমার খিদে নেই।। খেয়ে আসছি।।। আর তোকে নাহ বলছি এই চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসবি নাহ।।তোর এই চেহারা আমার ভালোলাগে নাহ।।কানের পাশে এসে ঘ্যানঘ্যান করবি নাহ(সাইফ)
বিয়ের পর থেকে প্রতিদিন বাসায় আসে রাত ১টায়।।প্রচুর নেশা করে।। রাতে বাসায় আসে নিহার উপর নির্যাতন।।
সাইফের এক বন্ধু ছিলো। সায়ন।। সায়ন অবশ্য অনেক বার বলেছিল।।
বউ এর উপর নির্যাতন নাহ ,,, কালো হলে ও তোহ তোর বিয়ে করা বউ।।(সায়ন)
তোর তোহ কোনো চিন্তা নেই,, বাসায় গিয়ে দেখবি সুন্দরী বউ তোর জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে।। আমার জায়গাই নিজেকে একবার ভাব।। তারপর বুঝবি।।জ্ঞান দিবি নাহ আমাকে একদম(সাইফ)
নিহা চুপচাপ সয়ে যেতো সব।। নিজেকে আড়াল করে করতো সাইফের কাছ থেকে।।হাসিমুখে সব কাজ করতো।।
সবার সামনে এমন ভাব নিয়ে থাকতো যেন অনেক সুখি।।বাসার সব কাজ।। সবার দেখাশোনা সব নিহায় করতো।।
সাইফ কখনো জিজ্ঞেস করেনি নিহাকে।। তুমি খেয়েছো।। বা তোমার কি চাই।।।
বিয়ের ৬মাস পর,,,,
হঠাৎ একদিন নিহা শরীর খারাপ।।
সাইফ তুই কই।। বৌ’মা অসুস্থ।। তারাতারি বাসায় আয় (সাইফের মা)
মা,,অফিসে,, এখন ব্যস্ত পরে কথা বলি।।মিটিং আছে আমার।। আসতে পারবো নাহ।।(সাইফ)
সাইফের মা শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।।
রাতের বেলা,,,
বাবা আসার সময় মিষ্টি নিয়ে আসিস।।। সুখবর আছে (সাইফের মা)
কেন,, মা।। কি হয়ছে (সাইফ)
তুই বাবা হচ্ছিস।। মিষ্টি খাওয়াবি নাহ(সাইফের মা)
হুম,(সাইফ)
কল কেটে দিলো।।
সাইফ বাবা হচ্ছে জেনে অনেক খুশি।।
বাসায় আসে।।।নিহা আমি যে কতোটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ।।(সাইফ)
সাইফের কথা শুনে নিহা অবাক হয়ে যায়।।
নিহা ভাবে তাকে করুণা করছে।।
আমি এই বাচ্চা রাখতে চায় নাহ(নিহা)
কেন(সাইফ)
আমি চায় নাহ।। আমার গায়ের রঙের জন্য আমাকে যা সহ্য করতে হয়েছে।। আমার বাচ্চাকে তা সহ্য করতে হোক।।(নিহা)
সাইফ নিহার হাত ধরে।।
আমাকে এতোবড় শাস্তি দিও নাহ।।।আমার বাচ্চার সাথে এমনটা করো।।। আমি জানি,, আমি অপরাধী,, যা করার আমাকে করো।। দূরে কোথাও চলে যাবো আমি।।। কিন্তু আমার বাচ্চা কে মেরে ফেলো নাহ।।আমি তোমার পায়ে পরি।(সাইফ)
কান্না করছিলো খুব,,,
সেদিন রাতে সাইফের কান্না দেখে নিহা আর বাচ্চা নষ্ট করেনি।।
সাইফ এখন আগের চেয়ে অনেক পাল্টে গেছে।।
অফিস থেকে ৯টায় ফিরে আসে।।
সব কাজে হাতে হাতে সাহায্য করে।। নিহার যত্ন নেয়।। কোনো কাজই করতে দেয় নাহ নিহাকে।।
তখন অজানা একটা ভয় নিহার থেকে যায়।।বাচ্চা যদি আমার মতো হয়।। তাইলে সাইফ বাচ্চার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে।।। তাই,, সমস্তটা সুখের মধ্যে ও অজানা ভয়।।
বেশ কয়েকমাস পর,,,
বাবা তারাতারি হাসপাতালে আয়।। (সাইফের মা)
কেন মা।।।(সাইফ)
বৌ’মা বাথরুমে পরে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে,, তারাতারি চলে আয়(সাইফের মা)
হাসপাতালে গিয়ে,,
ICU তে ভর্তি নিহা।। সবাই বাইরে দাড়িয়ে।।
রোগীর প্রচুর রক্ত লাগবে।। আপনারা রক্তের জোগাড় করুন(নার্স)
নিহার রক্তের গ্রুপ রিয়ার হওয়াতে।। অনেক কষ্টের পর রক্ত জোগাড় হয়।।
৫ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে নিহার।।
আপনাদের রোগীর খেয়াল রাখা উচিৎ ছিলো।। রোগীর এই অবস্থায় কিছু হয়ে গেলে বাঁচানো কষ্টের হবে (ডাক্তার)
হুম।।আমি অফিসে ছিলাম।। তাই।। (সাইফ)
২৪ঘন্টা নাহ যাও পর্যন্ত ICU তে রাখতে হবে,,কোথাও নিয়া যাবে।। যা অবস্থা।।(ডাক্তার)
হুম।।আমি কি যেতে পারি ভেতরে।। (সাইফ)
হ্যা।।জোরে কথা বলা।। বা চিৎকার করা যাবে নাহ।। এখনও অবস্থা তেমন ভালো নাহ।। কেয়ারফুলি কথা বলবেন।। (ডাক্তার)
,,,,
নিহার হাত ধরে প্রচুর কাঁদছে সাইফ।।।
বিয়ের পর থেকে কি নাহ যা-থা করেছি,, ওর সাথে ভালো করে দুটি কথা,,কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া।। ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো।। কিছু উপহার দেওয়া।। কিছুই করিনি,, শুধু অবহেলা ছাড়া।।আর নিহা আমার জন্য রাত জেগে খাবার নিয়ে বসে থাকা।। সব দরকারী জিনিস গুছিয়ে রাখা।। আমার যখন যা চাইতো।। সব ঠিক করে রাখা থেকে সব করেছে আমার জন্য।।। আমি আসলে নিহার স্বামী হওয়ার যোগ্য ছিলাম নাহ।। এইসব ভাবছে আর নিরবে চোখে পানি গড়িয়ে পরছে নিহার হাতে ।।
আজ সাইফ মন থেকে ভালোবেসে নিহার হাত ধরেছে।।
এতোকিছুর পরও নিহা আমার কথা রেখেছে।। সব সহ্য করে গেছে নিরবে।।প্রতিদিন নির্স্বাথ ভাবে ভালোবেসেছে আমাকে।। ৫ওয়াক্ত নামাজে আমার আয়ু বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছে আর আমি কিনা দিনকে দিন,,,,কথা শেষ নাহ হতে।।
আপনি কাঁদছেন কেন।।(নিহা)
নাহ।। নিহা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও(সাইফ)
আপনি এইভাবে বলবেন নাহ।।।আমার পাপ হবে (নিহা)
পাপ তোহ আমি করেছি (সাইফ)
আপনি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।। আমি মনে হয় আর বেশিক্ষণ বাঁঁচবো নাহ (নিহা)
দু’জনে খুব কাঁদছে।।
জানেন অনেক ইচ্ছে ছিলো,, আপনার সাথে পূর্ণিমার চাঁদ দেখবো।।একসাথে হাতে হাত ধরে নির্জন কোনো রাতে হাটবো।। আপনি আমার একটা কথা রাখবেন।। আমি যদি মরে ও যায়।। আমার বাচ্চাকে কখনোও আমার অনুপস্থিতি বুঝতে দিবেন নাহ। আমার আদর দিয়ে আগলে রাখবেন।।কথা দেন আমাকে।।
সাইফ খুব কাঁদছিলো।।
হ্যা,, রাখবো।। (সাইফ)
আমাকে একবার বউ বলে ডাকবেন।।।। খুব ইচ্ছে ছিলো আমাকে কেউ বউ বলে ডাকবে।। শুধু একবার।। বলুন নাহ।।
সাইফ নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলো না।। খুব কাঁদছিল।। নিহার হাতটা ধরে।।
কিছুক্ষণ পর নিহার চিৎতকার ।।।
কি হয়ছে।।। (সাইফ)
আমার খুব ব্যাথা করছে (নিহা)
রোগীর অবস্থা খারাপ।। OT তে নিতে হবে।। আপনি এই পেপারে স্বাক্ষর করুন।।
প্রায়কিছুক্ষন পর কান্নার ওয়াজ।।।
আপনার মেয়ে হয়েছে।।। (ডাক্তার)
আমার বউ (সাইফ)
সরি।।। উনাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।।।প্রচুর ব্লেডিং কারনে।। (ডাক্তার)
চিৎতকার করে কাঁদছে ,, আর বলছে আমার শেষ রক্ত দিয়ে হলেও কেন বাঁচালেন নাহ(সাইফ)
৬বছর পর,,,
সাইফ প্রতিদিনই নিহার কবরের পাশে এসে কান্না করে।।
নিহা দেখ,, আজ আমি কাকে নিয়ে এসছি।। আমাদের মেয়ে রিয়া।।
কতো বড় হয়ে গেছে।।। তুমি দেখ।।।খুব কাঁদছিল সাইফ।। কেন আমাকে এতোবড় শাস্তি দিলে নিহা।।আমি আর পারচ্ছি নাহ (সাইফ)
বাবা,, মা কি তোমাকে খুব দেখতে পারতো (রিয়া)
হ্যা,, মা।। আমি সবচেয়ে খারাপ ছিলাম।।তুই আমাকে তোর মায়ের মতো ছেড়ে যাবি নাহ তোহ।। (সাইফ)
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে থাকে।।
প্রত্যক সমর্পকই সুন্দর।। কৃষ্ণকলির মধ্যে ও সৌন্দর্য থাকে।। রূপ দিয়ে নয় অন্তঃদৃষ্টি দিয়ে দেখুন।। যেন অবহেলায় হারাতে নাহ হয় প্রিয় মানুষটিকে।।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত