আতিক ও নীলিমা

আতিক ও নীলিমা

আতিক ও নীলিমা স্বামী স্ত্রী তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৮ বছর তাদের সুখের সংসার আর এসুখের মাঝে তাদের আদরের এক্টা মেয়েও আছে। যে সারাদিন বাবা বাবা বলে ডেকে ঘরটা আলোড়িত করে রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাবার কাছে নানান কিছু বায়না ধরে। আজও তার ব্যতিক্রম না ঘুম ভাঙ্গতে না ভাঙ্গতেই

—– বাবা, আমার জন্যে কিন্তু আজকে আইসক্রিম আনতেই হবে, আজ আর ভূলে গেলে চলবে না।

—- আচ্ছা বাবা আনবো, এখন উঠে রেডি হয়ে নাও স্কুলের সময় হয়ে এসেছে এদিকে নীলিমা রান্নায় ব্যস্ত, স্কুলে যাওয়ার সময় মেয়েকে যে সবকিছু গুছিয়ে দিবে সেটাও সময় পায় না তাই আতিক কেই মেয়ের কাজ করে দিতে হয়।

—– ইফতি কে ড্রেস পড়িয়ে, ব্যাগ গুছিয়ে দাও ( ইফতি তাদের মেয়ের নাম) সকালের খাবার না খেয়েই আতিক মেয়েকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসলো।

—– ১ টার সময় ড্রাইভার এসে নিয়ে যাবে ছুটির পর কোথাও যাবে না মনে থাকবে

—– হ্যাঁ বাসায় এসে সেও রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো। অফিসে কাজের চাপ এক্টু বেশি থাকায় শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো প্রায়, অফিস থেকে বের হওয়ার পর মনে পড়লো মেয়ের আইসক্রিমের কথা, তাই দোকান থেকে তিনটা আইসক্রিম কিনলো। বাসায় আসার পরে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে তখন মেয়ে এসে

—– বাবা আইসক্রিম আনছো?

—– আমার আম্মুর কথা কি কখনো ভূলতে পারি এই নাও মেয়ে টা একবারে নীলিমার মতন হয়েছে, সেও আগে আইসক্রিমের বায়না করতো।

—– এই মেয়েকে লুকিয়ে লুকিয়ে আইসক্রিম খাওয়ানো হচ্ছে তুমি জানোনা ওর বেশি আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগে —- না মানে ও বলছিলো তো তাই আরকি তাছাড়া তোমার মেয়ে তো তোমার মতোই হবে, তুমিও তো এরকম ই করতে

—- হয়ছে আজ রাতটা খুব সুন্দর চাঁদনি রাত সাথে হালকা বাতাস।

—- আমার না ঘুম আসছে না চলো না জ্যোৎস্না বিলাস করে আসি ( নীলিমা)

—- মেয়ে উঠে যাবে তো, তখন কান্না করবে

—- উঠবে না চলো তো

—– তোমার কি সেই রাতের কথা মনে আছে যে রাত্রে সারারাত জ্যোৎস্না বিলাস করে কাটিয়েছিলাম

—– হুম মনে থাকবে না কেনো? তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্ত মনে আছে

—- বলতো আমি সেদিন কি রং এর শাড়ী পড়েছিলাম?

—- লাল

—– তোমার দেখি সব মনে আছে।

—– হুম, আমার স্মৃতিতে শুধুই তুমি, অনেক সাধনার পরে তোমাকে আমি পেয়েছি। তুমি তো আগে আমাকে সহ্যই করতে পারতে না

—- হুহ বলছে তোমাকে

—- বলছেই তো, তুমি আমাকে ফেসবুক থেকে তিনবার আনফ্রেন্ড করেছিলে, তবুও আমি নির্লজ্জের মতো তোমাকে রিকোয়েস্ট দিতাম

—- তিন বার!! আমার তো মনে পড়ে না

—- হ্যাঁ তিনবার, তোমার সাথে কথা বলতে গেলেই তুমি রাগ দেখাতে বলতে এখন মন ভালো নেই আসলে আমি জানতাম তোমার মন কেন ভালো থাকতো না।

—– কেনো বলতো

—– তুমি তখন রিলেশনশিপে ছিলে তাই মনের অবস্থা পরিবর্তন হতো যেদিন তুমি ইন এ রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছিলে সেদিন আমি সারারাত কেদেছিলাম

—– আসলে আবেগের বশতো ভূল করে ফেলেছিলাম

—– আচ্ছা আমি যে তোমাকে ভালবাসতাম সেটা তুমি বুঝতে না??

—- অনেকটাই বুঝতাম কিন্তু পরিস্থিতি অন্য দিকে ছিলো

—– তোমার এক্টা ছবি দেখার জন্যে সারাদিন অনলাইনে পরে থাকতাম কখন তুমি ছবি সেন্ড করবে আর কখন দেখবো একদিন তুমি কয়েকটা ছবি দিয়েছিলে কিন্তু সে রাতটা আমার জন্যে শুভ ছিলো না

—– কি হয়েছিলো

—– সেদিন রাত্রে তোমার সাথে অন্য ছেলের ছবি দেখে মনটা ভেঙ্গে পড়েছিলো আর সেদিনি তুমি বলেছিলে আর কখনো ছবি দিতে পারবো না আজকেই লাস্ট

—- মনটা সেদিন খারাপ ছিলো

—– হ্যাঁ জানতাম কিন্তু সেদিন না তুমি সবসময় ই আমাকে এড়িয়ে চলতে মেসেজের রিপ্লাই দেরি করে দিতে অনেক কখনোবা সিন করে রেখে দিতে, তুমি হয়তো জানো না তখন আমার কেমন লাগতো

—- আহারে! তাও আমাকে কেনো বিয়ে করলে

—– তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বউ হিসেবে মানতে পারতাম না তাই

—- তোমার কি সেই বৃষ্টিস্নাত দিনের কথা মনে পড়ে যেদিন দুই ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তোমাকে একনজর দেখার জন্যে?

—– হ্যাঁ কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে অযথা ভূল বুঝেছিলে, সেদিন আমি সারাদিন বিছানায় পরে ছিলাম যখন জানতে পারলাম তোমার কথা সেদিনের পর থেকেই তোমার প্রতি ভালবাসা

—- তোমার অবহেলার কথা মনে পড়লে আজো কান্না পায়

—- তুমি এতো ভালবাসো আমায়

—- হুম নিজের থেকেও

—- আর কোনো দিন এইসব পুরোনো কথা বলবে না। এখন বলো আমাকে কেমন লাগছে

—– হা হা একথা আসাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? আমি তো তোমাকে যতবার দেখি ততবার ই ক্রাশ খাই

—–(লজ্জায় লাল হয়ে গেলো কথা শুনে)

—- আচ্ছা তুমি কিন্তু এতোটা কিউট না হলেও পারতে

—– হয়ছে আর বলতে হবে না মৃদু বাতাসে নীলিমার চুলগুলো উড়ে মুখে পড়ছে, আতিক তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে

—– যেভাবে হা করে তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে কোনো দিন দেখো নাই আমাকে

—– তোমার দিকে সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও ক্লান্ত হবো না এই বলে নীলিমা কে জড়িয়ে ধরলো

— এই কি করছো কেউ দেখে ফেলবে তো

—– কেউ দেখবে না সবাই ঘুমের রাজ্যে এদিকে ইফতি এসে উপস্থিত, পায়ের আওয়াজ পাওয়াতে , নীলিমা পেছন দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েকে

—- এই ছাড়ো মেয়ে আসছে তো

—- তোমরা আমাকে রেখেই এখানে তোমাদের সাথে কথা বলবো না ( রাগ করে)

—- আমার আম্মুটা দেখি অভিমান ও করতে পারে, আচ্ছা অভিমান ভাঙ্গিনোর জন্যে কি করতে হবে ( আতিক)

—– দুজনে কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে

—– আচ্ছা থাক, থাকতে হবে না, তোমরা যে আমাকে ভালবাসো না সেটা বুঝছি

—— বেশি পাকা হয়ে গেছিস ( নীলিমা)

—– তোমাকে আমরা অনেক ভালবাসি, আমাদের থেকেও অনেকটা বেশি এবলে মেয়েকে কোলে নিয়ে কপাকে ছোট্ট এক্টা চুমু দিয়ে চলে আসলো।

গল্পের বিষয়:
সাইন্স-ফিকশন
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত