স্বপ্নপূরণের সঙ্গী

স্বপ্নপূরণের সঙ্গী

ভাতকাপড়ের থালা নতুন বৌয়ের হাতে তুলে দিয়ে শুভাশীষবাবু আজ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সমস্ত আত্মীয়স্বজনের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রী’কে বলেছিলেন,”আজ থেকে সারাজীবনের জন্য তোমার ভাত,কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম আর সারাজীবন তোমার সমস্ত স্বপ্নপূরণে তোমার পাশে থাকার শপথ নিলাম।” ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠানের কোলাহল মূহুর্তে থেমে গেছিল, সতেরোবছরের শাড়ীপরা জড়োসড়ো মেয়েটি একপলকের জন্য মুখ খুলে তাঁর স্বামীর দিকে তাকিয়েছিল, পরক্ষণেই, এটা ফুলশয্যার রাত নয়, নেহাতই ভাতকাপড়ের অনুষ্ঠান এটা মনে পড়ে যাওয়াতেই বোধহয় সাথে সাথেই মুখটা এত নামিয়ে নিয়ে নিয়েছিল, যে মুখ প্রায় বুকে মিশে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু, ঐ পলকের চাহনিতেই সম্পূর্ণ অপরিচিতা মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে শুভাশীষবাবুর মনে হয়েছিল, এ চাহনি তাঁর চিরচেনা! ঐ চাহনিতে যে কৃতজ্ঞতা মাখানো ছিল তা চিনতে ভুল হয়নি শুভাশীষবাবুর।
ভাতকাপড়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছিল। সবাই বাড়ির ছেলের এরকম অদ্ভুত, বিস্ময়কর শপথ শুনে চমকিত হয়েছিল, তবে কথাটি এতই হৃদয় থেকে উৎসারিত ছিল, যে সেই মূহুর্তে কন্টেস্টও করতে পারে নি কেউ অথবা করতে চাইলেও শুভাশীষবাবুর নির্লিপ্ত মুখ তাঁদের মুখ খুলতে দেয় নি। শুভাশীষবাবু কথাটা এমনভাবেই বলেছিলেন যেন যুগ যুগ ধরে এটা বলাই নিয়ম, এটাই চিরাচরিত রেওয়াজ, তিনি অন্যরকম কিছুই বলেন নি, বা করেন নি।
হ্যাঁ, শপথ তিনি রেখেছিলেন, শপথ শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, তিনি সতেরবছরের পুতুলটাকে নিজের হাতে গড়েছিলেন, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন, স্বপ্ন পূরণ করতেও।
আজ সুপ্রভাদেবীর বাষট্টি বছরের জন্মতিথি। ছেলে, বৌ, ছেলের দিকে নাতনী, মেয়ে, জামাই, মেয়ের দিকে নাতি সবাই আজ উপস্থিত। ছেলে-বউ সুপ্রভাদেবীর সাথেই থাকে, মেয়েরও কাছেই বিয়ে দিয়েছেন। আসে – যায়, কোনো সমস্যা নেই। সুপ্রভাদেবী সার্ভিসে ছিলেন। কলেজে অধ্যাপনা করেছেন, অবশেষে ভাইস প্রিন্সিপাল হয়ে রিটায়ার করেছেন দু’বছর হোলও। এখন অবসর। যদিও অবসরজীবন তাঁর ভালো লাগে না। সারাজীবন এত কাজ করেছেন! তাই এই দু’বছর ধরে একটা বই লিখেছেন, তাঁর বিষয় ছিল বটানি। অধ্যাপনার সূত্রে তিনি অনেকজায়গায় গেছিলেন, যেখানে বেশকিছু লুপ্তপ্রায় বা হাইব্রিড প্রজাতির প্ল্যাণ্ট, অর্কিডের খোঁজ পেয়েছিলেন। বহু রিসার্চের ফল তাঁর এই বইটি। আজ বইটা আনুষ্ঠানিক প্রকাশের দিন। প্রকাশকের ধারণা ডঃ সুপ্রভা সেনের এই বইটা বটানির এক বিশেষ দিককে তুলে ধরবে। প্রকাশক ইচ্ছে করেই ওনার জন্মদিনে বইটা প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। উনি বলেওছিলেন উপস্থিত থাকবেন। বহু সাইন্টিস্ট, প্রফেসরস, রিসার্চফেলোরও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আছেন। কিন্তু্‌ চার পাঁচদিন ধরে শুভাশীষবাবুর অসুখ বেড়েছে, তাই তিনি কাল প্রকাশককে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন, উনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। বিকেলে প্রকাশকরা ওনার বাড়িতে আসবে ওনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে।
সকাল থেকে বাড়িতে সাজো সাজো রব। ষাট বছরে সুপ্রভাদেবীর জন্মদিনের আগে আগে শুভাশীষবাবুর একটা স্ট্রোক হয়। তাই সুপ্রভাদেবীর হীরকজয়ন্তী উদযাপনটা হয়নি তেমনভাবে। গতবছরও ওনার অসুস্থতাতেই কী গিয়েছে সুপ্রভাদেবীর আরেকটা জন্মদিন। ছেলেমেয়ে করতে চাইলেও সুপ্রভাদেবী মানা করেছিলেন দৃঢ়ভাবে। এবছর ওরা আর কিছুতেই ছাড়বে না। মা’য়ের কোনো কথাই আর তাঁরা শুনবে না। তাই সুপ্রভাদেবী প্রায় বাধ্য হয়েই নিমরাজি হয়েছিলেন। তাঁর উপর আজ আবার প্রকাশক বাড়িতে আসবেন। স্পেশাল ব্যাপার। সকাল থেকে ছেলেমেয়ে বউ-জামাই সবাই মিলে বাড়ি সাজাচ্ছে, আলো লাগাচ্ছে, এমনকি নাতি-নাতনীরাও হাতে হাতে সাহায্য করছে তাদের বাবা-মা’য়েদের। সুপ্রভাদেবী নিশ্চিন্তের নিঃশ্বাস ফেলেন। নাহ! কোথাও কোনো গলদ নেই। সব ঠিকঠাক চলছে, ঠিক যেমনভাবে তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর সংসারটাকে দেখতে, শুধু উনি…
সেই যখন বিয়ে হয়েছিল,কত ছোট তখন ছিল সে! সবে তখন এখনকার ইলেভেন পাশ করার পরীক্ষা দিয়েছে। তখনও রেজাল্ট বেরোয়নি। জ্যাঠামশাই বিয়ে দিয়ে দিলেন। জ্যাঠামশায়ের কথার উপর বাবার কথা বলার কোনো অধিকার ছিল না। মা-বাবা না চাইলেও জ্যাঠামশাই ওনার মধ্যে কি দেখেছিলান কে জানে, বাবা’কে বলেছিলান,” এমন ছেলেকে হাতছাড়া করিস নে অমু, সুপু সুখী হবে!” ব্যস! বিয়ে হয়ে গেল। তখন মেয়ের মতামত নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিলো না। এক গা গয়না আর ভারী বেনারসী শাড়ী পরে সে এসে দাঁড়ালো এবাড়ীর চৌকাঠে। ভারী ভয় করেছিলো তার। খুব খুব ভয়। শুভদৃষ্টিতে যখন একঝলক দেখেছিল, ভালো করে চাইতেই পারেনি, শুধু মনে হয়েছিল, ‘এই সামনে দাঁড়ানো মানুষটা তাঁর বর? কি সুন্দর দেখতে!’
ফুলশয্যায় প্রথম ভালো করে দেখা। খোঁপা খুলে চুল দিয়ে স্বামীর পা মুছিয়ে দিতে বলেছিলেন বাড়ির বড়রা, উনি চুল পায়ে ঠেকাতেই দেন নি। বলেছিলেন, ” এসব নিয়ম বন্ধ কর! আমি কোনো ভগবান নই আর চুল পায়ে ঠেকাতে আছে!”
উনি রেগে গেলে মুখটা লাল হয়ে থমথম করত, তখন কারো সাহস হত না ওনাকে কিছু বলার। শুধু তার উপর উনি কোনোদিন অত রাগেন নি। সে দোষ করলে শাসন করতেন ঠিকই, কিন্তু, তার প্রতি ওনার বড্ড মায়া ছিল! ভালোবাসার সঙ্গে মায়া-মমতা যোগ হলে সে সম্পর্ক মধুরতর হয়ে ওঠে, এটা সুপ্রভাদেবীর বিশ্বাস। উনি বয়সে অনেক বড় ছিলেন, তাই বোধহয় অত্ত ছোট্ট একটা কচি মেয়ের প্রতি তাঁর অত মায়া হয়েছিল! নয়তো প্রথমদিনই তো আর অত ভালবাসা জন্মায় না!
ফুলশয্যার রাতে সবাই চলে গেলে উনি যখন দোর বধ করলেন, ভয়ে তো তাঁর বুক ঢিপঢিপ করছে! উনি এলেন, বললেন, ” সারাদিন এভাবে ভয়ে ভয়ে থাকো কেন? বাপের বাড়িতে যেমন ছিলে, এখানেও তেমনি থাকবে, কেউ কিছু বলবে না , আর বললে বলবে, ‘উনি বলেছেন।’ ”
হঠাত করে সব ভয় কথায় যেন চলে গেল, মনে কিরকম সাহস পেল। উনি তার থুতনিটা ধরে মুখটা উঁচু করে তুলে ধরলেন, বললেন, ” নীচের দিকে নয়, দৃষ্টি রাখবে উপরের দিকে, আর মানুষকে দেখবে সোজা চোখে, আর কথা বলবে, চোখে চোখ রেখে। মনে থাকবে?”
ফিক করে হেসে ওনার চোখে চোখ করে কিশোরী সুপ্রভা বলেছিল, ” বাপের বাড়িতে তো গাছে উঠে পেয়ারা পাড়তাম, ডুব সাঁতারে নদী এপার ওপার করতাম, এখানে তেমন পারব?”
উনি হেসে ফেলেছিলেন।
বন্ধুত্বটা সেদিনই হয়ে গেছিল।
সারাজীবন রয়েও গেল অটুট।
নববিবাহিত দম্পতির মধ্যরাতের একান্ত আলাপচারিতার বাকিটুকু নিভৃতে থাকুক…

ছেলে একটা জাম্বো সাইজ ফোন এনে পোজ দিতে বলছে, সেলফি তুলবে! উফ! এঁদের জ্বালায় যদি একটু শান্তিতে বসতে পারেন তিনি। কি আর করবেন, অগত্যা পোজ দিতেই হয়। ছেলে, মেয়ে, বৌ, জামাই সবাই এখন আলাদা আলাদা করে তাঁকে নিয়ে সেলফি তুলবে। ফেসবুকে পোস্ট করতে হবে তো ! এই এক হয়েছে, মানুষের কাজ কর্ম ভুলিয়ে দেওয়ার যন্ত্র। তিনি আধুনিক মনের মানুষ, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছেন, নতুন যৌবনে পা রাখা ছেলেমেয়েদের সাথেই ছিলো তাঁর ওঠাবসা। তবুও যেন মনে হয়, এই ফেসবুক যেন বড় যান্ত্রিক, বড় সুপারফিশিয়াল, মানুষের সাথে মানুষের আসল বন্ধনটাকে ক্রমশ যেন ভুলিয়ে দিচ্ছে, ভার্চুয়ালিটি জায়গা নিয়ে নিচ্ছে রিয়্যালিটির। তবু পোজ দিতে হয়, লাইক করতে হয়, কমেন্টও করতে হয়। ফেসবুকে নোটিফিকেশান আসে, টিং টিং। ছাত্র ছাত্রীরাই করছে। তিনি ফেসবুকে বার্থডেট দিয়ে রাখেন নি। যারা উইশ করছে, তাঁরা স্মৃতি থেকে করছে, দূরে থেকেও হৃদয়ের উষ্ণতা জানাচ্ছে, এই উষ্ণতাটাকে উপেক্ষা করা যায় না। চশমাটা পরেন তিনি। রিপ্লাই দিতে হবে।
ছেলেমেয়েরা দেখতে দেখতে কতবড় হয়ে গেল। নাতি-নাতনিরাই বড় হওয়ার পথে। তাঁরা বুড়ো হয়ে গেলেন। তবু চোখ বুজলে মনে হয় সেদিনের কথা। তখন মাস্টার্স কমপ্লিট করে সবে একটা কলেজে লেকচারারশিপে ঢুকেছেন। কলেজে চাকরী পাওয়ার পর তিনি প্রেগন্যান্ট হন। টুকাইয়ের ছয়মাস বয়স হওয়া অবধি ছূটি এক্সটেন্ড করা গেছিল। তারপর ছয়মাসের ছেলেকে আয়ার কাছে রেখে তাকে জয়েন করতে হয়েছিল। শ্বাশুড়ী রাগ করেছিলেন। পড়াশুনো করেছে ভালো কথা, এখন মাতৃত্ব আগে না চাকরি?
উনি বলেছিলেন, “বাবা তো বাড়ি থাকে না, বাইরে যায় চাকরি করতে, তা’বলে কি সন্তানের বাবার উপর টান কমে যায়! তাহলে মা চাকরি করতে গেলে এত প্রশ্ন কিসের? ছোটবেলা থেকেই ও এভাবেই বড় হয়ে উঠবে যে বাবা-মা দুজনেই কাজ করে আর এটাই স্বাভাবিক। আর আয়া থাকলেও তুমি ত আছ! তুমিই দেখবে নাতিকে! এই বংশের সন্তান বলে কথা! তোমার বয়স হয়েছে, স্টান্ড বাই হিসেবে একজন আয়া থাকুক না!”
মনে পড়ে, সে যখন কলেজে বটানি অনার্স নিয়ে ভর্তি হোলও, কতজনের কতরকম রিয়াকশান। উনি পাশে ছিলেন। মেয়েদের পাশে যদি স্বামী থাকে তাহলে কোনো বাধাই বাধা হয় না, কিছু ভাবতেই হয় না, প্রব্লেম সল্ভ হয়ে যায়! কত প্রবলেম বলতেই হয় নি মুখ ফুটে, উনি বলার আগেই সল্ভ করে দিয়েছেন। কলেজ এক্সকারশানে যেতে হত। শ্বশুরবাড়ির প্রবল অমত, শ্বশুরমশাই শান্ত মানুষ। তিনি অবধি মানা করলেন। খুব ভয় পেয়েছিলেন সুপ্রভা। এক্সকারশানের মার্ক্সটা কি কাটা যাবে? ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছিলেন উনি। বলেছিলেন, “লক্ষ্যের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ না করতে, সে যে-যাই বলুক। আমি চেষ্টা করব বাবাকে কনভিন্স করতে কিন্তু তুমি যাবেই। তোমার ফার্স্ট ক্লাস পাওয়াটা জরুরী।পাশ করাটা নয়।”
যাওয়ার আগের দিন রাতে দেখি ওনার মুখ শুকনো। বললাম,” তবে কি যাব না!”
বললেন,” তাই কি বলেছি নাকি তবে ক’দিন একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। তা আর কি করা যাবে! কাজ সবার আগে! আচ্ছা, যেদিন ফিরবে সেদিন রাতে না হয় একটু বেশী আদর করে দেবে!”
লজ্জায় আরক্ত হয়ে উঠত তার গাল। তারপর এক্সকারশান নিয়ে কলেজে, ইউনিভার্সিটি বা চাকরিজীবনে কেউ আর বাধা দিতে পারে নি।
টুকাই যখন কয়েকমাসের। তখন সবে পিএইচডিতে নাম লিখিয়েছেন। ফেলোশিপ, স্কলারশিপের জন্য ছোটাছুটি করছেন। পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। সকালে লেকচারারশিপ করে এসে ছেলে সামলে রাতে পড়াশুনো করা। উনি অফিস থেকে ফেরা অবধি তাঁকে দেখতে হত টুকাইকে। উনি এলে তাঁর ছুটি। তিনি পড়তে বসতেন। উনি ছেলে সামলাতেন। এক্কেবারে মায়ের মতোই সব পারতেন। দুধ খাওয়াতে, ডায়াপার পাল্টাতে , ঘুম পাড়াতে, কান্না থামাতে-কখনো কখনো তাঁর চেয়েও ভালো পারতেন। সবাই বলত, “বাবারা কি এসব পারে?” উনি বলতেন, “ওমা! বাবারা পারবে না কেন! বাবা বলে কথা! আমার রক্ত, আমার জিন! পারব না বললেই হল!” একবার তার পরীক্ষার আগের দিন টুকাইয়ের হাম বেরোল। ধূম জ্বর। পড়া থেকে উঠতে দেন নি উনি। আমি পড়েছি। উনি সামলেছেন টুকাইকে, কখনো না পারলে শ্বাশুড়ীকে ডেকেছেন। কিন্তু, আমাকে বন্ধ দরজার এপারে আসতে দেন নি। দরজা বন্ধ করে পড়েছি আমি। শুধু মাঝে মাঝে গিয়ে ছেলেকে একবার করে দেখে এসেছি। উনি দশ মিনিট বাদেই ঠেলে পড়তে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উনি বলেছেন, ” আমি তো আছি! মা বা বাবা কেউ থাকলেই তো হোলও! হাম সেরে যাবে কাল ওষুধ খেলেই । এই পরীক্ষা তো তোমার জীবনে আর ফিরে আসবে না!”
তাই-ই হয়েছিল। টুকাইয়ের হাম সেরে গেছিল ক’দিনেই। ঐ পরীক্ষাটাতে তিনি পাশ ও করেছিলেন। ফেলোশিপ পেয়ে রিসার্চও শুরু করার সুযোগ পেয়েছিলেন। পিএইচডিতে ভর্তিও হয়েছিলেন।
তিনি সর্বদাই সর্বক্ষেত্রে মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন, তাঁর ‘উনি’টি না থাকলে, তিনি না পারতেন সন্তান মানুষ করতে, না পারতেন আজকের ডঃ সুপ্রভা সেন হয়ে উঠতে। সমস্ত ক্রেডিট ওনাকে দিয়েই সর্বক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। আজও ।
তাঁর বইয়ের মুখবন্ধেও তাঁর ‘উনি’কে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেন নি তিনি। পারস্পরিক ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতা, যত্ন সব একাকার হয়ে গেছে তাঁদের দাম্পত্য জীবনে।
তাঁর ছেলেমেয়েরা বলে, “আমাদেরও তো বিয়ে হয়েছে বাবা, বাবা-মায়ের মতো এত মিল, এত প্রেম আমরা কোথাও দেখিনি।”
সত্যি, এতটুকু প্রতিবাদ করার কোনো জায়গা নেই। দুজন দুজনের প্রয়োজনে, যেকোনো সমস্যায়, বুক দিয়ে আগলেছে অপরজনকে, আনন্দে হোক ব দুঃখে, ভাগ করে নিয়েছে সমানভাবে। সত্যি বলতে কি, উনি হয়তো একটু বেশীই করেছেন তাঁর থেকেও। এত সাপোর্ট , এত পাশে থাকা, এত ছাতার মতো আগলানো – সবার সত্যিই এমন স্বামীভাগ্য থাকে না, তা তিনি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন, জ্যাঠামশাই রত্ন চিনতে ভুল করেন নি।
মানুষ দৈবত্বে উন্নীত করা ব্যাপারটাকে ‘উনি’ খুবই অপছন্দ করেন, তবুও তাঁর খুব বলতে ইচ্ছে করে, যদিও সামনে বললে উনি ধমকান, তবুও নিজের স্বামীকে তাঁর ‘দেবতা’ বলতেই ইচ্ছে করে। মনে হয় ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া এমন মানুষকে জীবনসঙ্গী রূপে পাওয়া সম্ভব নয়।
হ্যাঁ, ‘ওনার’ কথাই সত্যি হয়েছে, ছেলেমেয়েরা যখন বলে, “You two are the best parents in the world”, তখন সুপ্রভাদেবীর ইচ্ছে করে স্বামীর বুকে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতে, ” তুমি ঠিক বলেছিলে, আমি ‘ভালো মা’ হতে পেরেছি। আমরা সন্তান মানুষ করতে পেরেছি।”
মেয়ে আসে মা’কে সাজিয়ে দিতে। উফ! এই বয়সে আবার বসে সাজার কি আছে! সুপ্রভাদেবী একটু বিরক্ত হন, “ও আমি পরে একটু ঠিকঠাক হয়ে নেব খন, প্রকাশক আসার আগে!” মেয়ে রেগে ওঠে, “আজ তুমি কোনো কথা বলবে না মা! শিগগির এসো!”
অগত্যা জেতেই হয়। মেয়ে আর বৌমা মিলে কিসব মুখে মাখিয়ে দেয়। মেয়ে নতুন শাড়ী কিনেছে। আজকের দিন! পরতে হবে বৈকি! সাজিয়ে গুজিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। ওমা! আয়নায় এ কাকে দেখছেন তিনি! খোঁপায় ফুল লাগিয়ে, মুখে মেকাপ করে, দশবছর বয়স যেন এক লহমায় কমে গেছে তাঁর।
সুপ্রভাদেবী বলেন, “হ্যাঁরে, তোদের বাবাকে সাজিয়েছিস! উনি না থাকলে কিন্তু, আমি কেক কাটব না!” মেয়ে আশ্বস্ত করে, ঐ ডিপার্টমেন্টটা দাদা আর ও সামলাচ্ছে।
মুনাই যখন হয়, ওর তখন পি এইচ ডি চলছে। শেষের দিক। মুনাইয়ের বেলাতেও একই ভাবে পরিশ্রম করে গেছেন। তখন আবার টুকাইকেও দেখেছেন, মুনাইকেও। তিনিও যতটা পেরেছেন, সামলেছেন। আয়ামাসীও ছিল। কিন্তু ওর মতো করে তিনিও পারতেন না। টুকাইয়ের হোমোয়ার্ক অব্ধি চেক করে শুতে যেতেন। রাতে উঠে উঠে মুনাইকে সামলেছেন। তিনি উঠতে গেলে উনি উঠতে দিতেন না, বলতেন, “আমি আছি তো। আমি যখন না থাকি, তুমি তো করই। আমিও তো বাবা, নাকি!”
কোনদিন কোন কাজে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হতে দেখেননি তিনি ওনাকে। সে টুকাই, মুনাইয়ের বেলাতেই হোক, বা তাঁর আগে তিনি যখন কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে যেতেন, তখনই হোক। যখন পরীক্ষার সময়ে রাত জেগে পড়তেন, তখনও কতরাত পাশে বসে থেকেছেন, কখনো হাতের কাছে জল-বিস্কুট এগিয়ে দিয়েছেন, কখনো বা বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। সুপ্রভা তখন ভালো করে শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাপাঢাকা দিয়ে দিয়েছেন। পরেরদিন আবার অফিস গেছেন, অসম্ভব প্রাণশক্তি ছিল, আর ছিল অদম্য উৎসাহ। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে নিজে হাতে ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছেন। বেরোবার আগে শেষবারের মতো আডমিট কার্ডটাও চেক করে রাখতেন। অদ্ভুত কেয়ারিং, অদ্ভুত টান, অপূর্ব একটা বন্ধন! বিবাহের মন্ত্রের জোর নাকি মানুষটাই পুরুষসমাজের মধ্যে ব্যতিক্রমী, কে জানে! এই যে ফেসবুকে এত ফেমিনিস্ট পোস্ট, এই যে পুরুষশাসিত সমাজের অবদমনের বিরুদ্ধে এত লেখালেখি, কই তাঁকে তো কখনো আলাদা করে ভাবতে হয় নি ফেমিনিজম, কখনো তো মনে হয় নি, তিনি তাঁর ও’নার দ্বারা শাসিত। শাসন করেছেন তো, সুপ্রভাদেবী কি জীবনে ভুল করেন নি! বহু ভুল করেছেন। বকুনি খেয়েছেন, শাসন পেয়েছেন, কিন্তু নিজেকে কখনো ওনার দ্বারা শাসিত মনে হয় নি তো! হয়তো যার এমন স্বামীভাগ্য তাঁকে ফেমিনিজম নিয়ে ভাবতেই হয় না, স্বামীরাই এগিয়ে দেয়, বলে, ” যাও এই যে তোমার লক্ষ্য! এগিয়ে যাও, পাশে তাকালেই আমাকে দেখতে পাবে! ভয় নেই!” ভয় জীবনে পান নি সুপ্রভাদেবী। কখনো উনি কিছু মানা করলে কন্টেস্ট করতে হয় নি, এত দূরদর্শী, বিচক্ষণ একজন মানুষ,উনি মানা করলে সঙ্গে সঙ্গে মনে হত, উনি নিশ্চয়ই কিছু বুঝে বলছেন। সঙ্গে সঙ্গে সংবরণ করে নিতেন নিজেকে। সুপ্রভাদেবী বলেন,” আজকের নারীবাদীরা হয়তো নাম সিটকাবেন, কিন্তু, বিশ্বাস করুন, আমাকে কখনো কিছু ভাবতেই হয় নি, অন্ধভাবে অনুসরণ করেছি ওনাকে, জানতাম, এতে নিজের ভালোই হবে।”
যখন প্রথম চাকরি পান সুপ্রভাদেবী, সংসারে টাকা দিতে গেছিলেন, উনি বলেছিলেন,” কখনো ইচ্ছে হলে সবাইকে কিছু উপহার দিও। তোমার ভাত, কাপড়ের আর প্রয়োজনের দায়িত্ব আমার। জমিয়ে রাখো, তুলে রাখো, নষ্ট করো না, কখনো আমার প্রয়োজন হলে চেয়ে নেব।”
সত্যিই মনে কোনো খেদ নেই তাঁর, হয়তো দোকানে গিয়ে কিছু পছন্দ হয়েছে, বলতে পারেন নি, প্রাইস ট্যাগ তাকে হণ্ট করেছে, কয়েকদিন পর ওর থেকেও সুন্দর ওর থেকেও বেশী পছন্দ হবে, এমন কিছু একটা গিফট নিয়ে আসতেন উনি। কি করে বুঝতে পারতেন কে জানে! চোখের ভাষা, মনের কথা বোঝার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওনার! উনি বলতেন, “সাডেন গিফট -র মতো সুন্দর জিনিস আর হয় না, সম্পর্কের বোরডম কাটিয়ে দেয়! কোনো বিশেষ দিনে গিফট নয়, গিফট আনতে হয় হঠাত করে! পছন্দের কিছু হঠাত পেলে মন যত খুশী হয়, তত আর কিছুতে হয় না!”
সত্যিই তাই, কখনো কখনো লো লাগলে, ডিপ্রেসড লাগলে, ঐ সাডেন গিফটগুলো তার মনকে এক নিমেষে তাজা করে দিত।
সুপ্রভাও চাকরী পাওয়ার পর স্বামীকে অনেক সাডেন গিফট দিয়েছেন। উনি খুব ফুল ভালোবাসেন, আজও, ওঁর ঘরে রোজ নতুন ফুল রাখতে ভোলেন না। তাজা নতুন ফুলের গন্ধ ওনার বড় প্রিয়!
আচ্ছা,আজ নতুন ফুল রাখা হয়েছে! সেই যে সকালে ওরা আমাকে নামিয়ে আনল, আর উপরে যেতে দিচ্ছে না! কি নাকি সারপ্রাইজ হবে,উফ! এরা পারেও। ও’নার ওষুধ খাওয়ার টাইম হয়ে যাচ্ছে, ওরা অত পারে! ধড়মড় করে ওঠেন সুপ্রভাদেবী। নাহ,ওপরে একবার যেতেই হবে…
প্রকাশক অনিন্দ্যবাবু জিগ্যেস করছিলেন, কিকরে মাত্র সতেরোতে বিয়ে হয়ে যাওয়া সুপ্রভা সেন আজকের ডঃ সুপ্রভা সেন হয়ে উঠলেন আর ভাইস প্রিন্সিপাল হয়ে রিটায়ার করলেন আবার এই বয়সে রিটায়ারমেণ্টের পর রিসার্চ করছেন, বই লিখছেন। ডঃ সুপ্রভা সেন বলছিলেন তাঁর জীবনের কথা আর তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে যে মানুষটা, তাঁর কথা, সুপ্রভাদেবীর ও’নার কথা,” জানেন, একদিন বললেন, এবার তোমার যা ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, একটা ছোট লোন নিয়ে একটা জমি কেন, আমি তো অবাক! জমি কিনে কী হবে! তা বললেন, জমিটা কিনে রাখো, বাড়ী বানানো হবে, আর ক’বছর পর। আমি বললাম, ‘ বাড়ী বানাব কেন! বাড়ী তো আছে!’ , বললেন, ‘ তোমার বাপের বাড়ি আছে, স্বশুরবাড়ী আছে, নিজের বাড়ী তো নেই!’ বললাম, ‘ তোমারও তো তাই, বাপের বাড়ী আছে, শ্বশুরবাড়ি আছে, নিজের বাড়ী তো নেই!’
তারপর অনেক তরকবিতরকের পর কেনা হোলও, আমাদের জমি, শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতন ওর বড় প্রিয় জায়গা, তাই ওখানেই চুজ করলাম। আমাদের ইকোয়াল কন্ট্রিবিউশান ছিল জমিতে। তা রেজিস্ট্রেশনের সময়ে কিছুতেই নিজের নাম আগে রাখবেন না। আগে আমার নাম, তারাপর ওঁর। আমিও শুনব না। অনেক জেদাজেদির পর ও’নার নাম আগে হল, আমার নাম পরে। উনিই তো আমার সব। আমার নাম আগে দেওয়া কি সাজে, বলুন! উনি পাশে না থাকলে আজ আমি কোথায় থাকতাম বলুন! এই বছর পাঁচেক আগে, দুজনে মিলে বাড়ি বানালাম, আমাদের বাড়ি, ‘খোয়াই’। ভেবেছিলাম আমার রিটায়ারমেণ্টের পর দুজনে ওখানে বিশ্রাম নেব। বটানি ছেড়ে এবার রবীন্দ্রনাথে ডুব দেব। তা আর হল না! বাড়িটা পরেই আছে! তবু মনে জোর পাই জানেন, আমাদের বাড়ি, আমাদের নামে দলিল, এই হলেন উনি। ” চোখটা চিকচিক করে ওঠে ডঃ সুপ্রভা সেনের, ” রিটায়ার করলাম, ওখানে যাওয়ার তোড়জোড় করছি, হঠাত ওনার সেরিব্রাল অ্যাটাক ! আর হল না যাওয়া। এই দুবছর ধরে আমিই দেখাশুনো করছি। ছেলেও আছে। মেয়েও প্রায় রোজই আসে। দেখে যায় আমাদের সবই ঠিক আছে, শুধু ‘খোয়াই’তে আমাদের নিভৃতযাপনটা করা হোলও না। ও’নার শখ ছিল। জানি না, আর হবে কি না!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে হঠাত কেমন বিমনা হয়ে জান ডঃ সুপ্রভা সেন। এমন সময়ে বাবাকে ধরে দ্গরে নিয়ে ঘরে ঢোকে টুকাই আর মুনাই। নাতি আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে, ” কি মজা, দিদুন কেক কাটবে!” সারা ঘরে ফুল, আলো, বার্থডে বেলুন, শিকলি, মাঝখানে টেবিলে একটা বড়সড় কেক!
শুভাশীষবাবু অবাক হয়ে জিগ্যেস করেন, “এসব কী! কি আছে আজ!”
টুকাই বাবাকে ধরে ধরে চেয়ারে এনে বসায়, ” বাবা, আজ তো মা’য়ের জন্মদিন। মা কেক কাটবে!”
বৃদ্ধ শুভাশীষবাবু বিড়বিড় করেন, “জুন্মদিন! সুপ্রভার! ও, আজকাল আর কিছুই মনে থাকে না আমার!” সুপ্রভাদেবী এগিয়ে গিয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। শুভাশীষবাবুর চোখটা ছলছল করছিল, বললেন, “সুপু, আমার কিছু মনে থাকছে না!”
হইহই করে কেক কাটা হল, খাওয়াদাওয়া হল। অনিন্দ্যবাবু দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে ছবি তুললেন। বললেন, ” আপনার স্ত্রী’র আজ বই প্রকাশ হোলও! আজ বড় আনন্দের দিন!”
শুভাশীষবাবু মৃদু হাসলেন, বললেন,”বাহ!”
সুপ্রভাদেবী বলল্বন, ” আটাকের পর আর বেশী কথা বলতে পারেন না! আটাকের পর ও’নাকে নার্সিংহোম থেকে বাড়ী আনার পর কতরাত ঘুম হয় নি আমার। সারারাত পাশে বসে থেকেছি। মাঝে মাঝেই গায়ে হাত দিয়ে দেখতাম, মানুষটা ঠিক আছে তো? নার্স একজন ছিল বটে, তবে ওরা তো প্রফেশনাল, আমিই ওনার দেখভাল করতাম, এখন ও করি, অবশ্য আমাকে হেল্প সবাই করত। একা আমার পক্ষেও হয়তো সম্ভব ছিল না। ছেলে-মেয়ে-জামাই-বউ সবাই ছিল। আমার সবাই খুব ভালো। সবাই আমাকে সাহস দিয়েছে, পাশে থেকেছে! কারোর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই আমার! জানেন, এরকম একদিন, বসে আছি ওনার পাশে।উনি ঘুমোচ্ছেন; হঠাত চোখ খুলে আমায় ডাকলেন। তখন জিভও এড়িয়ে গেছিল, কথা বোঝা যেত না, কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলাম, বললেন, ” বসে আছ কেন? কিছু একটা লেখ!”
বললাম, ” কি লিখব!”
বললেন, “বই!”
আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমার বই লেখা এভাবেই শুরু হয়েছিল। তবে বাইরে গিয়ে আর রিসার্চ ওয়ার্ক করতে পারি না, উনি অসুস্থ! আমারও বয়স হয়েছে! এখন ও’নাকে নিয়েই আমার দিন। বসে থাকি যখন, লিখি, পড়ি!” একটু থেমে বললেন, ” জানেন, আগে আমার এমন একটা জন্মদিনও যায় নি, যেবার উনি আমায় কোনো সারপ্রাইজ দেন নি! আজ অ্যাটাকের পর থেকে সব ভুলে যান। ডাক্তার বলছেন, উনি আসতে আসতে আলঝাইমার্স পেশেন্ট হয়ে যাচ্ছেন।”
হঠাত হাতজোড় করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রণাম করলেন, প্রকাশক অনিন্দ্যবাবু অবাক হয়ে দেখলেন, কলেজের রিটায়ার্ড ভাইস প্রিন্সিপাল ডঃ সুপ্রভা সেনের চোখে জল, অস্ফুটে ধরা গলায় সুপ্রনহাদেবী বললেন, ” এখন আমার একটাই প্রার্থনা, আমার আগে যেন উনি যান, আমি ছাড়া ওনাকে কেউ সামলাতে পারবে না। ওনার বড় অযত্ন হবে। আমি আগে গেলে উনি সহ্য করতে পারবেন না। ওনাকে আগে পাঠিয়ে তবে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে মরতে পারব, নইলে যে আমার মরেও শান্তি নেই।”
অনিন্দ্যবাবু প্রকাশক মানুষ, এত বই পড়েছেন, সাহিত্য পড়েছেন, কাঠখোট্টা মানুষ, চোখে জলটল আসে না তাঁর। বই প্রকাশ আর লেখককে তাগাদা, এই করতে আবেগগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কিন্তু, আজ অনিন্দ্যবাবু হঠাত খেয়াল করলেন, কোত্থেকে যেন একরাশ জল এসে চোখের পাত্রটা যেন উপচে দিচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত