কাব্য আর গল্প

কাব্য আর গল্প

কাব্য আর গল্প দুজন খুব ভালো বন্ধু।
সেই প্রথম শ্রেণী থেকেই একসাথে পড়াশোনা করে।
দুজন ই খুব ভালো ছাএ।
কাব্য সবসময় ই প্রথম আর গল্প দ্বিতীয় হতো।
তবে তাদের সম্পর্ক কেউ ই কখনও ফাটল ধরাতে পারতনা।
তাড়া গ্রামেই থাকতো।
যখন ওরা s.s.c. পাশ করলো,তখন তাড়া দূরে গিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার ডিশিসন নিলো।তাদের দুজনের রেজাল্ট ই খুব ভালো ছিলো।
তারা কখনই দূরে কোথাও যায় নি।
এই প্রথম তাড়া দূরে কোথাও যেতে চলেছে,কিন্তু তাদের পরিবার রাজি হচ্ছে না।কারণ আগে তাড়া কখনও পরিবার ছেড়ে দূরে গিয়ে থাকেনি।

কিন্তু কাব্য আর গল্পের চাপাচাপি তে অবশেষে ওদের পরিবার রাজি হলো।তাছাড়া কাব্যের পরিবার গল্প কে,আর গল্পের পরিবার কাব্যকে ভরসা করে তাদের কে যেতে দিলো।
ওরা চলে ও গেলো।
ওইখানে তাড়া কলেজে ভর্তি হলো।স্মনামধন্য কলেজ, তাই পড়াশোনার চাপ ও বেশি।
কাব্য স্বভাবতই একটু চুপচাপ স্বভাবের ছিলো।আর গল্প ছিলো একটু চঞ্চল টাইপের।
কাব্য সবার সাথে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলতো না,শুধু গল্পের সাথে ছাড়া।
দুজন একটা রুমেই থাকতো।

নতুন কলেজ,নতুন পরিবেশ সব মিলিয়ে ভালো ই চলছিলো।
একদিন কলেজে গেলো। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে গল্পের খুব ভালো লেগে গেলো।
পরে কথা বলতে বলতে তিনজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।
কলেজে গেলেই তিনজন আড্ডা দিতো।তবে কাব্য তেমন কথা বলতো না।
রেস্টুরেন্ট থেকে শুধু করে,ক্যাম্পাসে পার্কে সব জায়গায় তিনজন এক সাথেই আড্ডা দিতো।
ফোনে ও কথা বলতো তাড়া তিনজন।তবে শুধুমাএ বন্ধুত্ব ছিলো তাদের মধ্যে।

এমন কথা বলতে বলতে গল্প খুব ভালোবেসে ফেলল অধরা কে।সে ডিশিসন নিয়ে নিলো অধরাকে তার ভালোবাসার কথা বলেই দিবে।
সে রিতিমত স্বপ্ন ও দেখতে শুরু করে দিলো অধরা কে নিয়ে।
বেশি বেশি করে অধরাকে কল করতো।সে খেয়েছে কিনা,কি করে নানা রকম অজুহাতে কল করতো।
তবে কাব্য এতো কল করতো না।সে কেবল প্রয়োজনেই কল করতো।

গল্প যে অধরাকে ভালোবাসে তা কাব্য কে বলল ই না।ভাবলো প্রেম শুরু হলে কাব্য এমনি জেনে যাবে।
গল্প অধরাকে কল করে বলল,
অধরা তোমায় বিশেষ কিছু বলার ছিলো।
..হুমমমম। বলো।
এখন না।
..তবে??
সরাসরি বলতে চাই।তাই কালই ক্যাম্পাসে দেখা করতে চাই।
…আমি ও তোমাদের কিছু বলতে চাই।
তবে এখন না কাল।

পরের দিন গল্প একাই একটা লাল গোলাপ নিয়ে পৌঁছে গেলো ক্যাম্পাসে।তবে গোলাপ টা লুকিয়ে রাখলো।
ঠিক তখনি অধরাও এসে পড়েছে।ওর হাতেও একটা লাল গোলাপ।
তখনও কাব্য আসেনি।
দুজনই ক্যাম্পাসে বসে আসে।
হঠাৎই কাব্য আসছে।
তাদের দুজন কে একসাথে দেখে বলল,তোরা থাক আমি আসছি।
বলেই চলে যেতে নিলে।তখনই গল্প দৌড়ে গিয়ে কাব্যকে ধরলো,
বলল,আজকে আমার জীবনে একটা বিশেষ দিন,আর তুই কিনা চলে যাচ্ছিস??
জানিস না,তোরে ছাড়া আমার কোন শুভ মহূর্ত ই শুভ না।
তোর আজকে বিশেষ দিন মানে??
আরে কিছুনা।আয় তো তুই। আসলেই দেখতে পাবি।
বলেই কাব্যকে অধরার কাছে টেনে নিয়ে গেলো।

এখন তিনজন ই বসে আছে।
তখন গল্প বললো,অধরা তোমায় আমি কিছু বলতে চাই।তখন গল্প কে থামিয়ে অধরা বলল,
আগে আমি কিছু বলতে চাই।
বলেই কাব্যের দিকে গোলাপ টা এগিয়ে দিয়ে বলল,আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তোমার নিরবতা আমার মন কেড়েছে।তোমার এই শান্ত ভাবটার জন্যই আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।এখন আমি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা।
কাব্য কিছুই বলল না।শুধু ওইখান থেকে চলে আসলো।
কাব্য কিছুই না বলে ওইখান থেকে চলে আসলো।
গল্প ও নিজের মতো করে বাড়ি চলে আসলো।
পরে অনেক ভাবে বুঝিয়ে অধরা কাব্যকে তার সাথে প্রেম করতে বাধ্য করলো।কাব্যের ও অধরা কে ভালো লাগতো।তাই সে ও প্রেম শুরু করে দিলো।
কাব্য জানতেই পারলো না, গল্প যে অধরা কে ভালোবাসতো।
তবে যেদিন থেকে কাব্য আর অধরার সম্পর্ক শুরু হলো,সেদিন থেকে গল্প কাব্যের থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে।এখন আর আগের মতো মন খুলে কথা বলেনা।
সারাক্ষণই কেমন জানি ঝগড়া লাগার চেষ্টা করেনা।
যেকোন ব্যাপারেই কাব্যকে দোষী করার চেষ্টা করে।তবে এর কারণটাই কাব্য জানতো না।জিঙ্গাসা করলেও বলতো না।
এসব দেখতে দেখতে কাব্য ও বিরক্ত হয়ে গেছে।
তাই এখন কাব্য ও গল্পের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে।প্রয়োজন ছাড়া কথা ও বলেনা।
সারাক্ষণ পড়াশোনা আর অধরাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
এখন আর কাব্য আর গল্প কে এক সাথে দেখা যায় না।
তবে এইসব বাড়িতে কেউ ই জানতো না।
গল্প সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকতো।
তবে কাব্যের দিন গুলো ভালোই কাটছিলো অধরাকে নিয়ে।গুড়াগুড়ি আড্ডা দেওয়া নানা রকম ভাবে ভালোই কাটছিলো দিন গুলো।আগের চুপচাপ কাব্য এখন আর চুপচাপ নেই।অনেকটাই চঞ্চল হয়ে গেছে।

হঠাৎই একদিন সকালে কাব্য আর গল্পের মধ্যে ঝগড়া হলো।
গল্প ঝগড়া করতে করতে, এক পর্যায় এইটা বলে ফেললো,তুই আমার থেকে সব সুখ কেড়ে নিয়েছিস।এখন আমিও তোর থেকে সব সুখ কেড়ে নিবো।
বলেই সেজে গুজে বের হয়ে গেলো।

সেদিন থেকে আর অধরাকে খুজেঁ পাওয়া যাচ্ছেনা।
ফোনটা ও বন্ধ।
তাই কাব্য গল্পের বিরুদ্ধে পুলিশ কেস করেছে।
পরে পুলিশ গল্প কে থানায় ধরে নিয়ে গেছে।
কাব্যের ধারণা গল্পই অধরাকে কিছু করেছে। তাই ও কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু গল্প বলছে সে কিছুই করেনি।নিখোঁজ হওয়ার দিন নাকি অধরার সাথে গল্পের কোন দেখা ই হয়নি।
এইদিকে পুলিশ অনেক খুঁজছে,কিন্তু কোন ভাবেই অধরাকে পাচ্ছেনা।
সেদিনের পর কাব্য আর রোম থেকে বের ই হয়নি।একদম চুপচাপ হয়ে গেছে।যেই খাট টাতে ঘুমাতো, সেই খাট টার কিনারায় ই বসে থাকতো।
বাইরে ও বের হতোনা।শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়তো।

তারপর সাতদিন পর গল্পের বিরুদ্ধে কোন প্রমান না পেয়ে গল্প কে ছেড়ে দিলো।
গল্প মেসে এসে দেখলো দরজা বন্ধ।অনেক ধাক্কাধাক্কির পর ও দরজা খুললো না।তাই গল্প পুলিশ কে ডাকলো।
পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে গেলো।
ভিতরে গিয়ে দেখলো,কাব্য ফাসিতে ঝুঁলে আছে।
সবাই তো পুরাই অবাক।এটা কি হলো।আর কেন ই বা হলো??
হঠাৎই একজনের চোখ পড়লো কাব্যের হাতের চিঠিটার উপর।
চিঠিটাতে লিখা ছিলো…

আমি প্রথমে খুব চুপচাপ ছিলাম।প্রেম ভালোবাসার তেমন প্রয়োজন বোধ করেনি।অধরা আমায় খুব বুঝিয়ে, নানা ভাবে প্রেমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিয়েছে।
চুপচাপ আমাকে চঞ্চল করে তুলেছে।
খুব ভালোবাসতাম ওরে।
ও কিনা আমায় ঠকালো??
অধরা গল্পের সাথেও চ্যাট করতো।প্রেম করতো ওরা।
তবে গল্প রং নম্বর হিসেবেই প্রেম করতো ওর সাথে।অধরা জানতো না এইটা গল্প।
নিখোঁজ হওয়ার দিন ওরা দেখা করবে ঠিক করেছিলো।সেজন্যই গল্প ওইদিন আমায় বলেছিলো,আমার থেকে ও সব সুখ কেড়ে নিবে।কারণ আমার সুখের মূল কারণ ই ছিলো অধরা।
কিন্তু গল্প বের হওয়ার সময় ভুলে ফোনটা বাসায় রেখে চলে গিয়েছিলো।
তখনই গল্পের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি অধরার নম্বর থেকে এসেছে।
পরে একে একে সব গুলো ম্যাসেজ ই দেখলাম।
ম্যাসেজ গুলো দেখে আর বুঝতে বাকি রইলোনা ওদের মধ্যে কি চলছে।
খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।
গল্প ছিলো আমার ছোট বেলার বন্ধু।ও কেমন করে পারলো এমন টা করতে??
আর অধরা,,ও আমায় নিয়ে এইভাবে খেললো।
তখনই সাথে সাথে অধরাকে কল করে ডাকলাম।
আসার পর ম্যাসেজ গুলো দেখালাম।ও তো পুরাই আকাশ থেকে পড়লো।
ও নাকি গল্প কে চিনে সম্পর্কে জড়ায় নি।
আরে সম্পর্কে তো জড়াইছে,এইটা জেনে ই হোক,আর না জেনেই।আমি তো ঠিকই ঠকিতেছিলাম।
এতই যদি অন্য ছেলেদের সাথে প্রেম করার ইচ্ছা,তবে কেন আমায় প্রেম সিখিয়েছিলো।
তাই একদম বিষ খায়িয়ে মেরে ফেললাম তাকে।অধরার লাশ টা আমার খাটের নিচেই আছে।
আমার প্রিয় ব্যক্তিটার লাশ পড়ে আছে আমার খাটের নিচে,তাই খাট থেকে সরতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না।
তবে গল্প ও আমায় ঠকিয়েছে।শুধুমাএ একটা মেয়ের জন্য আমায় এইভাবে ঠকালো???
তাই ওরে ও ফাঁসিয়ে দিলাম।
৬ টা দিন ওর লাশটা দেখে রেখেছি বুকে পাথর চাপা দিয়ে।
আর কেদেঁছি।কাদঁতে কাদঁতে চোখের জ্বল প্রায় শুকিয়েই যাচ্ছিলো।
ভেবে দেখলাম বেচেঁ থেকে আমি কি করবো এই স্বার্থপর দুনিয়াই??
তাই আমি ও বিদায় নিলাম এই নির্মম পৃথিবী থেকে।
ভালো থাকুন গল্প।
চিঠিটা পড়ে সবার চোখ থেকেই পানি পড়ছিলো।
গল্প ও খুব কেদেঁছিলো।

……………………………………(সমাপ্ত)………………………………….

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত