অতৃপ্ত ছায়া

অতৃপ্ত ছায়া

বাস থেকে নেমেই যেন কেমন লাগছে! আজ বাড়ী ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলো। সামনে অন্ধকার রাস্তা মোবাইলের টর্চ টা জ্বেলে দিলাম! হুট করেই পিছনে তাকালাম! মনে হচ্ছে আমার সাথে কেউ আছে! আমি মনে মনে দুয়া পড়তে শুরু করলাম!
.
অবশেষে আমি বাড়ী পৌছালাম! রাতে ঘুমালাম, কিন্তু শান্তিতে ঘুমাতে পারলাম না! মনে হচ্ছে ছাদে কে যেন হাঁটছে! সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। দুপুরের পর ভার্সিটি গেলাম! বাস থেকে নেমেই আমি রাস্তা পার হবো, ঠিক এই সময় একটা ট্রাক আমার দিকে এগিয়ে আসলো, আমি কিছু বুঝার আগেই কে যেন জোরে আমাকে একটা ধাক্কা দিলো, আমি দূরে জঙ্গলে পড়ে গেলাম।
.
ট্রাক টাও আমার পাশ দিয়ে বের হয়ে একটা গাছে ধাক্কা দিলো।
দৌড় দিয়ে সবাই আসলো। আমাকে সবাই জঙ্গল থেকে বের করলো, অবিশ্বাস্য ভাবে আমার সামান্য কিছু কাটা-ছেঁড়া ছাড়া আর কিছু হয় নি।
.
রাস্তার পাশেই একটা ঔষধের দোকান থেকে আমি একটু স্যাভলন লাগিয়ে আমি ইউনিভার্সিটির পথে হাটা শুরু করলাম।
তখন-ই একজন ফকির বলে উঠলো, তোর কিছু হবে না, ওরা তোর সব সময় সাহায্য করছে, তবে ওরা এটা এমনি করছে না, নিশ্চয় ওদের কোন কাজ অসম্পূর্ণ কাজ আছে যা ওরা তোকে নিয়ে পূর্ণ করতে চাই।
.
আমি কথাটা কানে দিলাম না, কিন্তু আমার মনে মনে কেমন জানি একটা খটকা লাগলো, আমাকে তো ট্রাক ধাক্কা দেয় নি, কারণ সে ধাক্কা দিলে আমি মারা না গেলেও আমার হাত-পা ভেঙ্গে যেতো, কিন্তু আমার তো কিছু হয় নি, আমার এমন মনে হয়েছিলো যেন কেউ কোলে নিয়ে আমাকে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে।
.
ক্লাশ শেষ করে আমি সেই ফকিরের কাছে গেলাম।
ফকির- এসেছিস তুই? আমি জানতাম তুই আসবি!
আমি- আমি যে আপনার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করেছি সেটা কিন্তু না, তবে আমাকে যে ট্রাকে ধাক্কা দেয় নি সেটা আমি বুঝেছি।
ফকির- চল তোর সাথে সেই আত্মাদের কথা বলিয়ে দেয়, তবে এর আগে আমাকে তোকে ভাত খাওয়াতে হবে। আগে পেট ভরে ভাত খাবো, আর তুই ও খেয়ে নে, কারণ আজ রাতে তোর আর বাড়ী যাওয়া হবে না।
.
দু জন মিলে হোটেলে ভাত খেলাম!
আমি- ক্ষমা করবেন, বেশি টাকা ছিল না তাই ভালো ভাবে খাওয়াতে পারলাম না।
ফকির- আমি তোর ব্যাবহারে অনেক খুশী হয়েছি, আর আত্মারা যখন তোকে পছন্দ করেছে তখন তুই খারাপ মানুষ না, আমাদের অনেক কিছু দেখার শক্তি নেই, যেটা তাদের আছে। চল আমার ঘরে।
.
আমি ওনার পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করলাম, অবশেষে ওনার ঘরে গিয়ে পৌছালাম।
উনি ঘরে ঢুকে প্রথমে একটা হ্যারিকেন জ্বালালো, তারপর একটা কাঠের বোর্ড নিয়ে আসলো, ওটাতে কিছু দাগ ছিল, নকশার মতো, তার ওপর উনি কয়েকটা পাথর আর কিছু লিখা অক্ষর রাখলো, তারপর একটা বৃত্ত আকারে দাগ দিয়ে দিলো, ওর মধ্যে আমাকে বসতে বলল,
ফকির- বাবা তুই ভয় পাবি না, ওরা তোর ক্ষতি করবে না।
আমি- জি আচ্ছা। (যদি ও আমার তখন হাত-পা সব ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে)
.
ফকির বাবা কি যেন বলা শুরু করলো, আসতে আসতে বাতাস জোরে করে বয়তে শুরু করলো, জানালার পাল্লা গুলো খুলতে আর বন্ধ হতে শুরু করলো।
ফকির- তোমরা কেন এসেছো?
.
দেখলাম বোর্ডে লিখা দেখা যাচ্ছে আমাদের কিছু অসম্পূর্ণ কাজ আছে, যার জন্য আমারা এসেছি।
ফকির- তো এই ছেলেই কেন?
আবার লিখা দেখা যাচ্ছে, এই ছেলে সবার উপকার করে, এর মন ভালো, তাই এর কাছে এসেছি।
ফকির- তো তোমরা যে এই ছেলের ক্ষতি করবা না তার কি ভরসা?
আবার বোর্ডে লিখা শুরু হলো, ঐ বৃত্ত থেকে ছেলেকে বের করেন, ওকে ভয় পেতে মানা করেন, আমারা মহান সৃষ্টি কর্তার কসম করে বলছি আমারা ওর কোন ক্ষতি করবো না, ঐ বৃত্ত থেকে বের হলে আমারা সরাসরি তার সাথে কথা বলবো।
.
ফকির বাবা আমাকে বৃত্ত থেকে বের হতে বললেন, তারপর ওদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের কথা শুনলাম, তোমাদের পুরো ইতিহাস বলো।
আত্মা- আমারা ৪ বন্ধু এক সাথে ব্যাবসা করতাম, একদিন একটা গাড়ীতে করে আমারা ব্যবসার কাজ শেষ করে আমারা ৩ জন বাড়ী ফিরছিলাম, কিন্তু আমাদের সাথে এক দুর্ঘটনা ঘটে যাতে আমারা সবাই মারা যায়! আমাদের ৪ নাম্বার বন্ধু আমাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে, ব্যাবসার লোন দেখিয়ে আমাদের পরিবারের সব সম্পত্তি সব নিলাম করে দেয়, অথচ এই লোনের সব টাকা এখন ও ব্যাংকে আছে। এখন আমারা চাই, আমাদের পরিবার যে রাস্তায় নেমে গেছে তুমি(আমাকে বলছে) আমাদের সাহায্য করো। বিনিময়ে আমারা তোমাকে কিছু অর্থ ভাগ দিবো।
.
আমি- বলেন আমাকে কি করতে হবে?
একজন- প্রথমে আমি বলি, আমার নাম ফিরোজ! আমার বাড়ী নিলাম হবার পর, আমার বউ এখন পঞ্চগড় চলে গেছে, খুব ভরসা করে মেয়েটাকে নিয়ে ১০ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করে ঢাকায় আসি। এখন বন্ধু আমার এভাবে বিশ্বাস ঘাতকতা করবে কখন ও ভাবি নি, আমার ব্যাংকে সে শেয়ার আছে, ওটাতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হবে, তুমি এই টাকা তুলে ৪৫ লক্ষ টাকা তুমি আমার বউ কে দিয়ে দিবে আর ৫ লক্ষ তুমি নিজের জন্য রেখে দিবে।
.
আমি- টাকা কীভাবে পাবো?
ফিরোজের আত্মা- ব্যাংকের ম্যানেজার কে এই কোড বললে সে একটা লকারে নিয়ে যাবে সেই লকারে ৫০ লক্ষ টাকার সব কাগজ পত্র আছে, তুমি সেটা ম্যানেজার কে দিলে উনি তোমাকে টাকা দিয়ে দিবে।
.
আমি- তাহলে আমাকে প্রথম ঢাকা যেতে হবে, তারপর পঞ্চগড়? ঠিক আছে আমি যাবো।
.
এরপর ফকির বাবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম, পরের দিন এক বড়ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে বের হয়ে গেলাম, আমি ঢাকা গিয়ে সব টাকা পেয়ে গেলাম, কিন্তু ম্যানেজার কে বললাম যে আমি তো পঞ্চগড় যাবো, তো এতো টাকা আমার জন্য বহন করা খুব বিপদ জনক, আমাকে কি চেক দেওয়া যাবে না?
উনি রাজী হলেন।
সে দিন রাতেই আমি ঢাকা থেকে রওনা দিলাম, তারপর পরের দিন সকালে আমি ওনাদের গ্রামের বাড়ী গেলাম, সকালে গিয়ে দেখি, ওনার ২ বছরের বাচ্চাটা আঙিনায় কাঁদছে, আর মা চুলতে কি যেন রান্না করছে,
.
আমি প্রথমে সালাম দিলাম, আমি বললাম আমি একজন জীবন বীমা কোম্পানি থেকে এসেছি, আপনার স্বামী কিছু শেয়ার বীমা হিসাবে রেখেছিলো, আপনার স্বামীর সাথে আমার ২ বছর থেকে পরিচয় তাই যখন শুনেছি উনি আর বেঁচে নাই, আমি আমার স্যারের সাথে কথ বলে এই শেয়ার গুলো বিক্রি করে এর টাকা নিয়ে এসেছি, আপনার কি জনতা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে? উনি বলল জি আছে,
আমি ওনাকে নিয়ে ব্যাংকে গেলাম, তারপর সেই চেক জমা দিলাম, উনি ঢাকায় ফোন করলো, আর সেই চেক পাশ হয়ে গেলো, আমি সেই ভাবীকে বললাম, ভাবী কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতাম, এই রাস্তায় আসতে আর কাজ করতে আমার ৫০০০ টাকা মতো খরচ হয়ে গেছে, আমি এখন ও বেতন পাই নি, তাই যদি আমাকে ৫০০০ টাকা দিতেন তবে আমার খুব উপকার হতো।
.
ভাবী আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ভাই, এই দুর্দিনে তুমি ফেরেশতার মতো আমাদের জীবনে এসে আমার আর আমার মেয়ের একটা পথ করে দিলা, তুমি ১ লক্ষ টাকা নাও।
আমি- না ভাবী এটা ঠিক হবে না, এই টাকা আপনাদের জন্য, আমাকে ৫০০০ টাকা দিন, আর এই আমার নাম্বার, যে কোন বিপদে পড়লে আমাকে নিজের ভাইয়ের মনে করে ডাকবেন, আর ভাইয়া বলেছিল, উনি আমাকে অনেক ভালোবাসে, আর সারা জীবন ভালবেসেই যাবে।
আজ আসি ভাবী।
.
সারা দিনের কাজ শেষ করে আমি তখন একটা হোটেলে উঠলাম, ভাবী অনেক জোর করে আমাকে ১০ হাজার টাকা দিলো, মনে হলো এটা ভালোবেসে দিলো তাই নিলাম। আমার একটা কাজ আমি শেষ করলাম, আর বাকী দুই জন।
.
রাত ১০ টায় আমি খেয়ে ৪ টা মোমবাতি নিয়ে ঘরে আসলাম, ফকির বাবা আমাকে একটা ছোট্ট প্ল্যানচেট দিয়েছিলো, আমি সেটা বের করলাম, তারপর ওনার নির্দেশ মতো কাজ করা শুরু করলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই ওনারা চলে আসলো।
আমি- ফিরোজ ভাই, আমি আপনার বউকে পুরো টাকা দিয়ে দিয়েছি, রাস্তা খরচ বাবদ আমি ৫০০০ টাকা চেয়েছিলাম, কারণ আমি ছাত্র মানুষ এটাও ধার করে নিয়ে এসেছি, কিন্তু আপনার বউ আমাকে জোর করে ১০০০০ টাকা দিয়ে দিয়েছি, ভাই! আমি কি আমার কাজ করেতে পরেছি?
আত্মা- ভাই! এই পৃথিবীতে তোমার মতো মানুষ আছে বলেই আমারা মরে গেলেও আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো। আমার কাজ শেষ! এবার আসিক তুই বল,
.
আসিকের আত্মা- আমি আসিক! সব পাটনার দের মধ্যে সব থেকে ছোট, আমি এখন ও বিয়ে করি নি, আর আমার এতো টাকাও নাই, ঢাকায় আমি বুড়ো মা- বাবাকে নিয়ে থাকতাম, সেই ব্যাংকেএর ৬৫৯ নাম্বার লকারে আমার চাবি আছে, আমার ১৫ লক্ষ টাকা আছে, ওটা বাবা-মায়ের হাতে দিয়ে দিয়ো। এটায় আমার ইচ্ছা।
.
আমি- ঠিক আছে ভাই! ওনারা যেন সুখে থাকে আমি সেই ব্যাবস্থা করবো।
.
পরের দিন সকালে আমি আবার ঢাকা গেলাম, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আমি, আসিকের বাড়ী গেলাম, কিন্তু ওনাদের অবস্থা দেখে মনে হলো, এদের কোটি টাকা দিলেও ইনারা সুখে থাকবে না।
আমি ওনাদের আমার সাথে নিয়ে আসলাম, আমাদের এলাকাই একটা আশ্রমে ওনাদের রাখলাম, আর আশ্রম মালিক কে বললাম প্রত্যেক মাসে ওনাদের যেন উন্নত চিকিৎসা আর খাবার দেওয়া হয়, আমি মাসে ১০০০০ টাকা দিবো, আর ওনারা যদি সুস্থ ভাবে মারা যায়, তবে আমি আপনাদের আশ্রমের নামে ওনাদের যে সম্পত্তি আছে সেটা দিয়ে দিবো।
.
আমি আমার শহরে আসলেও এখন ও বাড়ী যায় নি, কারণ আমি কাজ শেষ করেই যাবো। শহরে আমার আত্মীয়র বাড়ী থাকলেও আমি হোটেলে গেলাম! রাতে আবার প্ল্যানচেট চালু করলাম।
আমি- আসিক ভাই! আমার মনে হয়েছে টাকা দিলে আপনার আব্বু-আম্মু সেবা পাবে না, তাই আশ্রমে নিয়ে গেছি, আমি যদি কোন ভুল করে থাকি তবে ক্ষমা করবেন।
আসিকের আত্মা- ভাই! আমি ছেলে হয়েও আমার মাথায় এতো ভালো বুদ্ধি আসে নি, আমি অনেক খুশী হয়েছি, আমার কাজ শেষ। এবার সাদিকুল চাচা আপনি বলেন।
.
সাদিকুল চাচার আত্মা- আমি সাদিকুল, আমি সবার বড়! আমার কাজ বাবা একটু বড়! প্রথম কাজ ব্যাংক থেকে টাকা তোলা আর সেটা আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া, আর আমার মেয়ের একটা ব্যাবস্থা করা! আমার ভাইয়ের ছেলে গুলো ভালো না, অর্থের লোভে তারা অনেক কষ্ট দেয় আর তারা যদি জানতে পারে যে ব্যাংকে আমার আরও অনেক টাকা আছে তাহলে তো আমার বউ আর মেয়েকে হয়তো ওরা মেরেই ফেলবে।
.
আমি- তো বলেন আমি এখন কি করবো?
আত্মা- প্রথমে টাকা তুলে নাও, তারপর আমাদের গ্রামে যাও। তখন আমাকে বলো, আমি কি করতে হবে বলে দিবো।
আমি- আপনার দেশের বাড়ী কোথায়?
আত্মা- খুলনা!
আমি- আমি তো এই ভাবে বাংলাদেশ ভ্রমণ করে নিলাম, আচ্ছা ঠিক আছে কাল আপনার কাজ করবো।
.

পরের দিন আমি ঢাকা গেলাম ব্যাংক থেকে ওনার কথা মতো প্রায় ৫৭ লক্ষ টাকার একটা চেক নিলাম, তারপর খুলনার উদ্দেশ্য রওনা হলাম। যখন আমি ওনাদের গ্রামে পৌছালাম তখন বেলা সকাল ১১ টা।
কিন্তু ওনার ঠিকানা মোতাবেক যখন বাড়ী পৌছালাম, তখন শুনলাম ওনার মেয়ের নাকি বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাও আবার ওনার ভাইয়ের ছেলের সাথে,
.
আমি চোখ বন্ধ করে আত্মাকে ডাকতে শুরু করলাম।
আত্মা- আমরা তোমার পাশেই আছি।
আমি- এখন কি করবো?
আত্মা- বলো, আমার মেয়ের বিয়ে তোমার সাথে ঠিক।
আমি- কি বলেন মাথা ঠিক আছে তো?
আত্মা- আরে সত্যি সত্যি তো বিয়ে করতে বলছি না, এই পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য বলছি।
.
আমি জোর করে চিৎকার করে উঠলাম!
আমি- এই বিয়ে হবে না, এই মেয়ের বিয়ে আগে থেকেই আমার সাথে ঠিক করা আছে, আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি পুলিশ কে জানিয়ে দিবো। আমি আসার আগেই ওসি স্যারকে সব জানিয়ে এসেছি, উনি বলল, শুধু একটা ফোন করতে, ওনারা চলে আসবে।
একজন- আপনি কে? আর আপনার সাথে কীভাবে বিয়ে ঠিক হলো?
.
আমি- আমি নিলয়! বাসা সিরাজগঞ্জে! সাদিকুল চাচা আর আমার বাবা বন্ধু ছিলেন। আর চাচা বেঁচে থাকতে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়।
একজন- প্রমাণ কি?
.
আমি- প্রমাণ কি চাচা?
চাচার আত্মা- তোমার ব্যাগের চেন খুলো, একটা আংটি পাবা, তুমি বলো, ইরার টেবিলের ডয়ারে সেই রকম একি আংটি রাখা আছে।
আমি- দাঁড়ান প্রমাণ দেখচ্ছি, এই বলে ব্যাগ থেকে আংটি বের করলাম, তারপর, এবার ইরার টেবিলের ডয়ারে দেখেন একি আংটি, এটায় প্রমাণ।
.
একজন – ভাই ছেলেটা ঠিক বলছে। কিন্তু ইরার বাবা যখন নাই, তখন তোমার সাথে বিয়ে দিতেই হবে আমাদের।
আমি- না মানে আমাকে কিছু দিন সময় দেওয়া যেতো না?
একজন- না বাবা! এমনি অনেক সমস্যা! আল্লাহ্‌ এই মেয়ের দুঃখ বুঝেছে তাই তোমাকে ফেরেশতার মতো ঠিক সময় পাঠিয়েছে, নাতো ওর চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে কোন দিন সুখে থাকতো না।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো!
যদিও আমি এখন ও মেয়েটাকে দেখিনি।
.
বিকেলে আমি একটা পুকুর পাড়ে বসে আছি।
এখানে কেউ আসে না, তাই আমি প্ল্যানচেট আঁকালাম!
আত্মা- বলো আমারা এসেছি।
আমি- চাচা আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
আত্মা- আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা! হয়তো ভাগ্যে এই লিখা ছিল! তবে আমার মেয়ে কোন দিক দিয়ে কম না, তাকে আমি সব দিক দিয়েই একটা আদর্শ মেয়ে হিসাবে তৈরি করেছি, বাবা হিসাবে আমি সব চেষ্টা করেছি দেবার জন্য! আমি একটা চিন্তায় ছিলাম যে আমি মরে গেলাম, এখন আমার মেয়েটার কি হবে? কিন্তু আজ বিয়ে হওয়াতে আমার থেকে হয়তো কেউ বেশি খুশী হয় নি। আমি আমার শেষ কাজ টা করে দিয়ে গেলাম, একটা ভালো মানুষের হাতে মেয়েটাকে তুলে দিয়ে গেলাম।
.
আমি- কিন্তু আপনার মেয়ে? সে কি ভাব্বে? তাছাড়া আমার বাবা মা? তারা আমাকে অনেক ভরসা করে।
আত্মা- আমাদের থেকে তুমি ভালো জানো। আমাদের বিশ্বাস তুমি ঠিক উত্তর দিয়ে দিবা।
.
রাতে আমি ইরার সাথে প্রথম দেখা করলাম!
ইরা- দেখেন আমি আপনাকে চিনিনা আর আপনার সাথে আমার বিয়েও ঠিক হয় নি, তবে কে আপনি? আর আমার টেবিলে ডয়ারে আংটি আসলো কীভাবে? আমি সত্যি টা জানতে চাই।
.
আমি- আমাকে আপনার বাবা পাঠিয়েছে, তারপর আমি সব ঘটনা খুলে বললাম, কিন্তু সে বিশ্বাস করলো না, অবশেষে তাকে নিয়ে আবার প্ল্যানচেট তৈরি করলাম, তারপর সব আত্মাকে ডাকলাম, এবার সে বিশ্বাস করলো।
আত্মা- ইরা! মা, আমি তোর বাবা! আমাকে ক্ষমা করে দিস এই বিপদের দিনে তোদের ফেলে রেখে চলে যেতে হয়েছে, কিন্তু কি করবো বল, হয়তো সৃষ্টি কর্তার এটায় ইচ্ছা, তবে সৃষ্টি কর্তা এতটাও নিষ্ঠুর না, বাবা গেছে তো কি হয়েছে একজন আদর্শ স্বামী দিয়ে দিয়েছে, আজ থেকে নিলয়ের সব কথা তুই শুনবি।
ইরা- আচ্ছা বাবা!
আত্মা- আসি মা! নিলয় আমাদের কাজ শেষ। আমারা চলে গেলাম, সুখে থেকো বাবা!

………………………………………. সমাপ্ত …………………………………….

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত