এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না

এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না

কুয়াশা মাখা রাতের চাঁদটা আজ বেশ আলো জ্বালিয়েছে।চারদিকে আজ কোথাও কোন অন্ধকারের ছিটেফোঁটাও নেই। চাঁদের আলোয় পুরো পৃথিবীতে জুড়ে তৈরি হয়েছে এক অপরূপ মায়াবী দৃশ্য। তবুও একা একা আনমনে পুকুরপাড়ে বসে নিরবে কি যেন ভাবছে আর অঝোর ধারায় দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছে রুমা। কত স্বপ্ন ছিলো দুচোখ জুড়ে,মনে ছিলো অফুরন্ত এক আশা।কিন্তু এমন হলো কেন, কি অপরাধ করেছিলাম আমি, নিজের সর্বস্বতো দিয়ে দিয়েছিলাম তারপরেও?

রুমা গ্রামের সহজ সরল এক প্রাণবন্ত মেয়ে। বাবা মার তিন সন্তানের মধ্য রুমা সবার বড়। দেখতে যেমন অনেকটা অপরূপা তেমনি অসাধারণ গুণের অধিকারী। পড়ালেখায় অনেক মেধাবী ছিলো রুমা।তাইতো বাবা মার স্বপ্ন ছিলো রুমাকে ঘিরে।একমাত্র মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবেন। বাবা মার স্বপ্ন পূরণে রুমাও চলছিলো তাদের মত করে।বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছিলো রুমা।

মেয়ের এমন স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে রুমার বাবা রুমাকে ভর্তি করিয়ে দেয় প্রাইভেট ভার্সিটিতে।হঠাৎ করেই গ্রামের আবহাওয়া ছেড়ে শহুরের আবহাওয়া মানিতে নিতে অনেক কষ্ট হয় রুমার। তবুও অল্প কয়েকদিনের মধ্য নিজেকে মানিয়ে নেয় স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্য। সবার সাথে খুব সহজে মিশে যায়। নিজ ডিপার্টমেন্টর সবার সাথে তৈরী হয় মধুর এক বন্ধুত্ত্ব।
ভার্সিটি জীবনে দ্বিতীয় মাসে পা দিতেই পরিচয় হয় নিজ ডিপার্টমেন্ট এর এক বড় ভাইয়ের সাথে। বড় ভাই বেশ রসিক একজন মানুষ ছিলেন।

অনেক সুন্দর সাবলীল ভাবে কথা বলতেন। প্রতিদিন কোন না কোন বাহনা নিয়ে রুমার সাথে কথা বলতেন। রুমাও তার সাথে কথা বলে বেশ আনন্দিত হতো। এভাবে একদিন, দুদিন করে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই সেই বড় ভাইয়ের জন্য নিজের মনের ভিতরের অপূর্ণ যায়গাটা পূরণ করে ফেলে। তাইতো হঠাৎ করেই দেয়া বড় ভাইয়ের ভালোবাসার প্রস্তাবটা কোন প্রশ্ন না করেই,কোন কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই সাদরে গ্রহণ করে। মনটা দিয়ে দেয় সেই বড় ভাইকে। সেই বড় ভাই ছিলো রুমার থেকে এক বছরের সিনিয়র। তার নামটা ছিলো রবিন।

রবিনের সাথে রুমার বেশ চলছিলো। রুমার সব বন্ধু বান্ধবরা তো সবসময় রুমাকে ভাবি বলে ক্ষ্যাপাতো।রুমা মাঝেমাঝে রাগ হতো , আবার খুশি না হয়েও পারতো না।তারা তো সবসময় সত্যি টা বলতো। দুই একজন আবার ঘোর বিরোধীও ছিলো সম্পর্কটার ব্যাপারে। তবে বেশিরভাগ বন্ধ বান্ধব ছিলো রুমার সম্পর্কটার পক্ষে। আর আধুনিক যুগে এসে কেউ কি সম্পর্কে না জড়িয়ে পারে।

রুমা আর রবিন ক্লাস শেষে সারাদিন গল্প আর গুজবে মাতিয়ে থাকতো। রবিন খুব সুন্দর করা কথা বলায় রুমা পাশ থেকে যেতেই চাইতো না।রুমা সবসময় চাইতো রবিনের কাছাকাছি থাকতে।বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়ত কোথাও না কোথাও।ঢাকার অলিগলিতে সোডিয়ামের আলোর নিচ দিয়ে হাত ধরে হাটতে। ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত থেকে ফুসকা, চটপটি খেত আর ভালোবাসায় মেতে থাকতো। এভাবে বেশ ভালোয় চলতে থাকে।ভার্সিটির তো প্রায় সব মানুষের কাছে তারা প্রেমিক যুগল হিসেবে পরিচিত ছিলো।

দুজনের মাঝে গড়ে উঠা সম্পর্ক বেশ গভীর হয়। এতটাই গভীর হয় যে রুমার পিছনে ফেরার কোন পথ থাকেনা। বুঝতেই পারছেন কি বোঝাতে চাচ্ছি। আবেগের বসে রবিনের সাথে একটা অনৈতিক কাজ করে ফেলে। এই অনৈতিক কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেসময় কোন ভাবনাও মাথায় আসেনি দুজনের।

এভাবে সম্পর্কটা এগুতে থাকে। সম্পর্ক চলতে থাকে তার আপন গতিতে,পাশাপাশি পড়ালেখা চলছে পড়ালেখার মতই। দুজনের সম্পর্কের তিন বছর পার হয়ে যায়। রবিন কিছু না বলেই হঠাৎ করে ঢাকা শহর ছেড়ে নিজ গ্রামে চলে যায়। রুমা তখন ফাইনাল বর্ষের ছাত্রী। রবিন বাসায় গিয়ে মোবাইলে রুমার সাথে কথা বলে নেয়।রুমাও খুব সহজে রবিনের কথা মেনে নেয়। রবিন আবারো ঢাকায় ফিরবে এমন আশ্বাস দেয়,বিশ্বাস রাখতে বলে। রুমাও ভালোবাসার প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখে।এভাবে চলছে মোবাইলে কথোপকথন,সাথে ভালোবাসা। একমাস দুমাস করে পার হয়ে যায় প্রায় ছয় মাস।রবিন বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে রুমাকে দিনের পর দিন বোঝায়।আর রুমাও ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা রেখে সব মেনে নেয়।

হঠাৎ করেই একদিন রবিনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয় রুমার। কোন ভাবেই রুমা যোগাযোগ করতে পারে না।কাঁদতে কাঁদতে ব্যাকুল হয়ে যায় রুমা।কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না,কারো সাথে বিষয়টা শেয়ার করতে পারেনা। সম্পর্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আর একটা সম্পর্কের কথা কাউকে জানাতে পারেনা। একা একা নিজে নিজেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কোথায় খুঁজে পাবে সে রবিন কে। চিন্তায় চিন্তায় চেখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়,পড়ালেখাও প্রায় বন্ধ করে দেয়।একথায় সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগতে থাকে। বন্ধু বান্ধবীরা বিষয়টা খেয়াল করে । তারা তাদের সাধ্য মতে বোঝাতে থাকে। রুমাকে তারা মানসিক ভাবে সাহায্য করে। অনেক কষ্ট করে রুমাও অনার্স শেষ করে। মানসিক ক্ষতটা কিছুটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে। সবার কাছ থেকে গোপণ রাখে সেই অনৈতিক কাজের কথা।

এভাবে মার্স্টার্স পাশে করে যায় রুমা। রুমা এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছে।আর রবিন ইউরোপেের একটা দেশে পড়ালেখার পাশাপাশি একটা জব করছে। রবিনের এই খোঁজটা অনেক দিন পর কোন এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পায় রুমা। রুমার বাবা রুমার বিয়ে ঠিক করেছে। হাতে একদিন বাকি আছে বিয়ের।তাই রুমা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাসায় এসেছে। আর মাএ একটা দিন হাতে আছে রুমার। বাড়ি ভর্তি মানুষ,পুরো রাতের আকাশে আজ জোৎস্নার ছড়াছড়ি । তাইতো রুমা একা একা পুকুর পাড়ে বসে চাঁদের আলোয় নিজেকে ভেংচাচ্ছ আর অতীতের কথা মনে করে একান্ত নিরবে চোখেরজল ঝরাচ্ছে। এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না,কথা ছিলো এই পূর্ণিমারাতে একসাথে জোৎস্না বিলাস করার।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত