ভার্চুয়াল_রিলেশন_অতঃপর_মৃত্যু

ভার্চুয়াল_রিলেশন_অতঃপর_মৃত্যু

গল্পটা জেরিন নামের মেয়েটির যে এ পৃথিবী থেকে নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গেছে তিন বছর আগে।
ভালোবাসার জন্য বিশেষ বিশেষ নজির রেখে গেছেন এমন কিছু অবুঝ ছেলে মেয়ে।
যাদের কি না এখনো হেসে খেলে বেড়ানোর কথা সবার মন ভালো রাখার দায়িত্ব, অদ্ভুত সব পাগলামি করে।
কিন্তু না এখন আর সে যুগ বা সময় নেই ছেলে মেয়েদের।
মোবাইল নামক যন্ত্রের সাথে পরিচিত হয়ে একাকিত্ব থেকে মুক্তির আশায় ভার্চুয়াল জগতে পড়ে থাকে।
.
জেরিনের মা এর পাগলামির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে,বাবা বাড়ি এসে না কি মা কে তালাক দিয়ে দিবে।
এমন করে সংসার করা তার পক্ষে আর সম্ভব না।একা সব দোষ জেরিন এর বাবা তার মা এর উপর দিয়ে দিচ্ছে। তার স্ত্রী পাগল হওয়ার পিছনে পরোক্ষ ভাবে কি সে দায়ি না?
জেরিনের বাবা সাংসারের বড় ছেলে।
ছোট দুই ভাই কে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া, দুই বোন কে বিয়ে দেওয়া সব উনার উপরে ছিলো।
উনিও বেশ দায়িত্বের সাথে নিজ কর্তব্য পালন করছেন।এ কর্তব্য পালনের মাঝে প্রায় যৌবন কালটা পার করে দিয়েছেন। প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে এসে বিশ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেন। সুখেই সংসার করছিলেন দুজনে। মাঝে এসে বাঁধ সাধলো যখন ছোট দুই ভাই বিয়ে করে শহরে বৌ নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে নিজেরা নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নিয়েছে।
তখন থেকে জেরিন এর মা এর তো চোখের ঘুম হারাম প্রায় তার উপর নিজের স্বামী কে কিছু বললেও সে শুনে না। বলে তোমার অল্প বয়স তুমি কি আমার থেকে বেশি বুঝো? আমি আমার ভবিষ্যৎ ও ঠিক ভালো করে গুছিয়ে নিবো আমার সন্তানদের জন্য।
মুখেই বলতো কিন্তু কাজে তা পরিনত হতো না। উনার আগের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি।
ভাইদের প্রয়োজন পড়তো না তার পর ও বড়ো ভাই কে এটা সেটার অজুহাত দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতো।
কিন্তু এটা চিন্তা করতোনা ভাই এর তো সংসার আছে আমাদের মাও ভাইয়ের সাথে থাকে তার উপর প্রথম সন্তান মেয়ে, মেয়েটাও তো বড়ো হচ্ছে ।
.
জেরিনের বাবা তার মা কে তালাক দিয়ে দিলো বিচার সালিস এর মাধ্যমে। একবার ও ডাক্তার দেখিয়ে চেষ্টা করেনি ভালো হয় কি না।
জেরিন আর তার ছোট ভাইকে ঢাকা তে মেজো চাচার বাড়িতে রেখে গেলো তাদের দাদি সহ। তারপর আবার প্রবাসে পাড়ি দেয় ।
ভালোই কেটে যাচ্ছে দিন, স্কুলে যাচ্ছে ভাইকেও পড়াচ্ছে দাদির সাথে সংসারের কাজে সাহায্য করছে।
দাদি ছোট ভাই ও জেরিন এ তিন জনের একটা ছোট্ট সংসার হয়। জেরিনের সব ক্ষেত্রে মায়ের কথা মনে পড়তো খেতে গেলে বিশেষ করে বেশি পড়তো এ মাথা খারাপ অবস্তায় ও নিজে হাতে ছেলে মেয়েকে খাইয়ে দিতে ভুলতো না।
জেরিনের ছোট ভাই তো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।কোন চিকিৎসায় কাজ হচ্ছে না।
.
এসব শুনে জেরিনের বাবা আবার দেশে আসে।
এসে ছেলে মেয়েদের জন্য বিয়ে করে তাদের কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে।
কিন্তু তা হিতে বিপরীত ঘটে ছেলে মেয়েরা দ্বিতীয় মা কে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।
বাবা বিয়ে করার পর থেকে জেরিনের নিজেকে আরো অসহায় একা মনে হতো পড়ালেখা কিছুতেই মন বসতো না।
তাই সারাদিন ফেবুকে পড়ে থাকতো গল্প পড়তো পরিচিতদের সাথে টুকটাক কথা হতো।
একটা ছেলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথে একটা এসএমএস দিলো বন্ধু হতে পারি? জেরিন ও বেকার সময় কাটাচ্ছে ফেবুকে তাই রিপ্লে দিলো অপরিচিত লোকের বন্ধু হবো না আগে পরিচিত হই তারপর ভাববো।
এভাবে জুনায়েদ এর সাথে পরিচিত হয়ে বেষ্ট ফ্রেন্ড এ পরিনত হয়।
এখন জেরিনের রুটিন এর সাথে যোগ হলো জুনু এর সাথে চ্যাটিং। জেরিন বলতো আমি তোমার এতো বড়ো নাম বলতে পারবোনা।তোমায় জুনু বলেই ডাকবো ঠিক আছে? জুনায়েদ ও মুসকি হাসির একটা ইমু দিয়ে বললো ঠিক আছে।
.
জেরিনের এখন খুব ভালো সময় কাটে সব কিছুতেই ভালো লাগে,হয়তো প্রেমে পড়েছে।
প্রেমে পড়লে না কি পৃথিবীটা খুব রঙ্গিন লাগে বাঁচতে ইচ্ছা হয় শতাব্দীর পর শতাব্দী।
এগুলা সব ফেবুকে গল্প কবিতা আবার অনেকের মনের কথা গুলা যখন পোষ্ট দিতো তখন দেখতো এখন জেরিনের নিজের সাথেই তা হচ্ছে।
ইচ্ছে করছে আরো কয়েকটা বছর আল্লাহর কাছে চেয়ে নিতে।আবার মনে মাঝে একটু ভাবনা ও আছে জুনু কি তাকে ভালোবাসে? তা না জেনে এতো ভালোবাসছি কেনো? ওর তো অন্য কাউকে ভালোলাগতে পারে ভালোবাসার মানুষও থাকতে পারে।
কিন্তু ফেবুকে তো তার সে রকম কিছু দেখছেও না যতোক্ষন থাকে অনলাইনে ততোক্ষণ তো জেরিন এর সাথেই কথা বলে।
হঠাৎ একদিন আবদার করে বসলো জুনায়েদ জেরিনের কাছে।
আমরা তো পাশাপাশি এলাকায় থাকি একদিন দেখা করোনা আর তুমি তো আমায় এমনি দেখতে পারছো আমার কি ইচ্ছা করেনা আর বেষ্ট ফ্রেন্ডকে দেখতে। সাথে মন খারাপের ইমু।
.
আজ জুনায়েদ এর সাথে দেখা করবে কি পরে যাবে তা নিয়ে চিন্তা করে খুঁজে পাচ্ছেনা। শাড়ি পরে যেতে পারলে ভালোলাগতো কিন্তু জেরিনতো পরতে পারেনা তাই কালো রং এর একটা জামা পরে বের হলো বাসা থেকে।
যথা সময়ের আগে গিয়ে জেরিন বসে আছে আর বার বার নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হচ্ছে কেনো এতো তাড়াতাড়ি এলো।
জেরিন মাটির দিকে তাকিয়ে মনে মনে নিজেকে নিজে বকে যাচ্ছে তার সামনে যে একজন জলজ্যান্ত মানুষ এসে দাঁড়িয়ে আছে তার কোন খেয়াল নেই। জুনায়েদ ও পুরা নিশ্চিত না,
ও জেরিন তাই ডাক না দিয়ে অপেক্ষা করছে কখন ধ্যান ভাংগে। জেরিন সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কখন এলো সে বুজতেই পারেনি।
জুনায়েদ জেরিনের চাহনি দেখে বুজতে পারে ও জেরিন।
তাই এক মূহর্ত অপেক্ষা না করে সেই চিরচেনা ইস্টাইলে জেরিনের সামনে হাটু গেড়ে পিছন থেকে হাতে বের করে টাকটকে পাঁচটি লালা গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো অনেক লাভ করি তোকে প্লিজ ফিরিয়ে দিস না।
জেরিন তো এ আশায় প্রহর গুনছে। হঠাৎ পাওয়া আনন্দে জেরিনের চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
সাথে ডান হাত বাড়িয়ে ফুল গুলো নিতে নিতে মাথা নাড়ালো হ্যাঁ সুচক সম্মতিতে।
এভাবেই জেরিন জুনায়েদের ভালোবাসার পথ পাড়ি দেওয়া শুরু দু’জন দু’জনকে প্রচুর ভালোবাসতো এবং বিশ্বাস ও করতো ।
.
জেরিন আর জুনায়েদ এর সম্পর্কের প্রায় বছর হয়ে আসছে। সামনে জেরিনের HSC পরিক্ষা তারপর বাবা চাচ্ছে জেরিন কে বিয়ে দিয়ে দিতে যদি কোন মনের মতো ছেলে পায় তাহলে।
সব দিক ভেবে জেরিন জুনায়েদ কে জানালো সে এখন বিয়ে করতে পারবে?বাবা যদি কোন মূহর্তে বিয়ে ঠিক করে ফেলে তাই আগেই জুনায়েদ এর কথা বাবাকে জানাতে চাচ্ছে জেরিন।
কিন্তু জুনায়েদ সাহস দিচ্ছেনা জেরিন কে হেনতেন বলে কেটে পড়ছে এ বিষয় থেকে।
একদিন ভালো করে ধরে ঝগড়া করে জুনায়েদ এর থেকে কথা আদায় করে নেয় জেরিন।
তারপর বাবাকে ফোনে বলে বাবা আমি একজন কে ভালোবাসি তাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।
জেরিনের বাবা প্রথমে শুনে অনেক রাগ হয় বকাবকি করে কিন্তু মেয়ের আবদারের কাছে হেরে গিয়ে রাজি হয়ে যায়।
মেয়ের জন্য এক বিয়ের সব অলঙ্কার নেয় দেশে এসে মনের মতো করে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিবে।
.
একটা ফোন কলে জেরিনের সব আশা বিশ্বাস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।
এতো বড়ো বিশ্বাস ঘাতকতা যা কে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসে যার উপর নিজের ভবিষ্যৎ উৎসর্গ করে দিয়েছে সে এতো বড়ো একটা সত্য কি ভাবে গোপন রেখে এতো গভীর সম্পর্কে জড়ালো।
তাকে তো আমি কোন কিছুতেই বাধ্য করিনি ।
শেষে বিয়ের জন্য সেই তো বাবার সাথে সব কথা বললো।
তখনও তো বাবার সাথে শেয়ার করতে পারতো।
কিন্তুু কিছু বুঝতেছেনা জেরিন এ সব করে জুনায়েদ কি ফেলো, কোন আশায় করলো একমাত্র সে ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেনা।
জুনায়েদ কে ফোন দিলো জেরিন কিন্তু ফোন তুলছেনা। বারবার দিচ্ছে তিনটা কল দেওয়ার পর রিসিভ হলো, জেরিন শুধু একটা কথা বলছে এসব কি সব সত্যি হ্যাঁ অথবা না বলো।
জুনায়েদ কিচ্ছু বললোনা শুধু চুপ করে ছিলো। কথায় আছে না মৌনতা সম্মতির লক্ষন। জেরিন বললো তোমার সাথে কথা বলতে আমার নিজের উপর নিজেই ঘৃনা হচ্ছে। আমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের স্বামী কে বিয়ে করতে যাচ্ছি যার কি না একটা ফুটফুটে ছেলে আছে।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে তো বিয়ের কথা না করে দিতে পারতে। বলতে জেরিন আমাকে মাপ করে দিস আমি পারবোনা রে আমার একটা সংসার আছে ছেলে আছে তাহলে ও তোকে ক্ষমা করা যেতো হয়তো প্রথমে মেনে নিতে পারতাম না কিন্তু পরোক্ষনে তো নিজেকে সামলাতে পারতাম এ বলে আমি কারো ঘর সংসার নষ্ট করিনি।
একাই জীবন কাটিয়ে দিতাম কিন্তু এখন আমি কি করবো??
বাবা কালকে আসছে। আজ রাত হয়তো আমার জীবনের শেষ রাত এ মুখ আমি বাবাকে দেখাতে পারবোনা।
আর অন্য কাউকেও বিয়ে করতে পারবোনা।
বাবা অনেক করে চাইবে তার এক মাত্র মেয়েকে সুখে সংসার করতে দেখতে।কিন্তু তা আমি পারবোনা ।
বিদায় জুনু সুখে শান্তিতে থাকিস, সংসারটা মন দিয়ে করিস, আর কারো সাথে এমন করিসনা।
.
ফোন কেটে দিয়ে দৌড়ে ছয় তালার ছাদের উপর উঠে গেলো নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এখানে আমি লাশ জেরিন নামে পড়ে থাকবো কিছুক্ষন পর।
.
জেরিনের মৃত্যুর পর থেকে জেরিন এর পাগলি মা কে যতো লোকে বলছে তোর মেয়ে মরে গেছে উনি কিছুতেই বিশ্বাস করতেন না উল্টো বলতেন ওরা দুই ভাই বোন তাদের বাবার কাছে ভালোই আছে।
পাগল হলেও স্বামীর উপর কি বিশ্বাস ছিলো, ভাবতেই অবাক লাগে।
কিন্তু জেরিন মারা যাওয়ার পর থেকে তার পাগল মা কে ঘরে ধরে রাখতে পারতোনা তাই মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়।
বেশ কয়েক মাস হাসপাতালে থেকে ভালো চিকিৎসার কারনে এখন পুরা সুস্থ হয়ে যান তিনি।
.
কিছু পুরুষের ভুলের কারনে সংসার নষ্ট হয়ে যায়।পুরো ছন্নছাড়া হয়ে যায়।
জেরিনের বাবা যদি তার মা কে ভালো করার চেষ্টা করতো হয়তো এই সুখের সংসারটা এমন ছিন্নভিন্ন হতো না।
মেয়েরা এমনি বিয়ের পর তারা চাইবে তাদের সংসারটা নিজের মনের মতো করে গড়তে। সন্তান হওয়ার পর চাইবে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্য কিছু একটা করতে। যখন এগুলার বিপরীত হবে তখন তাদের মাথায় অনেক চাপ পড়ে তার ফলে সংসারটা এলোমেলো হয়ে যায় সাথে কিছু জীবন নষ্ট হয়ে যায়।
…………………………………….(সমাপ্ত)………………………………….

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত