অপ্সরীর মৃত্যু

অপ্সরীর মৃত্যু

হাসপাতালের বেঞ্চটাতে বসে আছি অনেক্ষণ।অপেক্ষার প্রহর যেন পুরাতেই চায় না।আজ আমি বাবা হতে চলছি।নিজের ভেতর এক অন্য রকম অনুভূতি।কিছুক্ষন পর আমি শুধু একজন পুরুষ থাকব না।সাথে একজন বাবা ও।অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল।আমি একটা রাজকন্যার বাবা হলাম।মেয়েটা নাকি পুরোই তার মায়ের মত।আমার রাজকন্যাকে দেখার জন্য একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ আসেনি।আসবেই বা কি করে?আমাদের সম্পর্ক আজ ও কোন ফ্যামিলি মেনে নেয়নি।

আমি আবির।ও ছিল রিবা।ও ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের পরিচয় সেই ইন্টার হতে।দুইজন একসাথে কলেজ পার করলাম।তারপর ভার্সিটি ও একসাথে।আমাদের সম্পর্ক ছিল শুধুই বন্ধুত্ব।তবে আমরা একে অন্যকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারতাম না।আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের সম্পর্ক টা শুধু বন্ধুত্ব না।তার চেয়ে বেশি।এভাবে শুরু হল আমাদের নতুন জীবন।মাস্টার্স সবে মাত্র শেষ করলাম।আর রিবার ফ্যামিলি উঠে পড়ে লাগল তার বিয়ে দেওয়ার জন্য।দুই ফ্যামিলিকে আমাদের সম্পর্ক জানালাম। তারা মেনে নিল না।বাধ্য হয়ে পালিয়ে বিয়ে করলাম।ছোট একটা চাকরি নিলাম। পরে অন্য একটা চাকরি নিলাম।রিবার ও একটা চাকরি হল।ভালই কাটছে দিন।এর মধ্যে এল আমাদের রাজকন্যা।

রাজকন্যা টাকে পেয়ে আমাদের একাকীত্ব গুছে গেল অনেকটা। আর রিবা সে তো মহা খুশি।শুধুমাত্র মেয়েটাকে সময় দেওয়ার জন্য সে চাকরি ছেড়ে দিল।আমার আর ওর নাম মিলিয়ে আমার মেয়ের নাম রাখল আরিবা।আরিবা ঘিরেই আমাদের পৃথিবী টা সাজাতে লাগলাম।আমরা ভুলে গেলাম আমরা পরিবার বিচ্ছিন্ন দুই জন মানুষ।ভুলটা ভাঙতে বেশিদিন লাগল না।মাত্র ৪ বছর ৫ মাস।সেদিন হঠাৎ রিবা কল করে জানাল আরিবা অসুস্থ। অফিস হতে ফিরে তাকে হাসপাতালে নিলাম।ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিল।রিপোর্ট পাওয়ার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।আমার রাজকন্যার ক্যান্সার। বড়জোর মাস ছয়েক আছে এই পৃথিবীতে।

সেদিন অফিস হতে ফেরার পর
ঃআচ্ছা বাবা,ক্যান্সার কী?
ঃবুঝলাম ও জেনে গেছে।বললাম তুমি ভাত খেতে চাওনা তাই এটা হয়ছে।
ঃপাশের বাসার আন্টি বলছে আমি নাকি মারা যাব।মারা গেলে মানুষ কই যাই??
ঃমারা গেলে মানুষ নতুন একটা জায়গায় যাই।
ঃঐখানে কি আমি একা যাব?তোমরা যাবেনা?
ঃনা।মা।ওইখানে একা যেতে হয়।কাউকে সঙ্গে নেওয়া যায়না।
ঃআমার তো একা থাকতে ভয় করে।আমি কিভাবে একা থাকব?

আর কিছু বলার মত ভাষা আমার জানা নেই।মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া।

কিছুদিন পর….

ঃবাবা আমার মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে কেন?
ঃতোমার মাথায় নতুন চুল উটবে তাই।
ঃতোমার আর মায়ের চুল তো পড়েনা?
ঃআমি চুপ
ঃবাবা ।মা বলেছে আমি মারা গেলে নাকি তারা হয়ে থাকব?
ঃহুম।মা।
ঃতোমরা থাকবেনা?আমার ময়না পাখিটা আমার সাথে যাবেনা?

আর পেরে উঠিনা মেয়ের সাথে। মেয়েটার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।অফিস হতে সপ্তাহ খানেক ছুটি নিছি। মেয়েটাকে জীবনের শেষ সময়টুকু পাশে থাকার জন্য।না পারছি মেয়েটার পাশে থাকতে না পারছি নিজেকে দূরে সরে রাখতে।
ঃবাবা। আমি ভাত খাব।আমি ভাল হব।তুমি ক্যান্সার টাকে দুর করে দাও।আমার কষ্ট হচ্ছে।
আমার রাজকন্যার কথা আল্লাহ শুনেছে।খুব বেশিদিন কষ্ট করতে হয়নি।আল্লাহর কাছেই চলে গেছে আমার মেয়েটা।

কিছুদিন যাবত লক্ষ্য করছি রিবা কেমন জানি শুকিয়ে যাচ্ছে।কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।হয়ত মেয়ে হারানোর কষ্টে। এভাবে মাস দুয়েক কাটল।রিবা প্রচন্ড অসুস্থ। সেও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল।পুরো বাড়িতেই আমি একা।না আমি একা না।পুরো ঘর জুড়ে রিবা আর আরিবার অস্তিত্ব। সেদিন ঘর গুছাতে গিয়ে একটা রিপোর্ট পেলাম।রিবার। সেও ক্যান্সারে আক্রান্ত। কখনো আমায় বলেনি।বুঝতে দেয়নি।হয়ত আমি মেয়েটাকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম।খেয়ালই করিনি।

বারান্দায় বসে আকাশ দেখছি।দুইটা তারা পাশাপাশি বসে আছে।একটা রিবা আরেকটা আরিবা।আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি তাদের কাছে যাওয়ার।যতবার ওই আমি সুইসাইড করতে চাই।পিছন হতে আরিবা ডেকে উঠে।আমি পারিনা তাদের কাছে যেতে।তবে আমি আর পারবনা আমার অপ্সরীদের ছেড়ে থাকতে। হ্যাঁ মা আমি তোর কাছে আসছি আজ নয়ত কাল।

 

★★★ সমাপ্ত ★★★

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত