★এতিম মেয়েটি★

★এতিম মেয়েটি★

মেয়েটির নাম নুহা।সে অনেক সুন্দর একটি মেয়ে।তার মুখটা অনেক মায়াবী। অনেক মিষ্টি।পড়া লেখায় অনেক ভাল।
সে হল অনেক খোদা ভীরু।ইসলাম প্রিয়।
,
মেয়েটির দিকে তাকালেই যেন খোদার সৃষ্টির কথা মনে হয়ে যায়।কি অপরুপ তার সৃষ্টি।কতইনা নিখুত ভাবে সৃষ্টি করেন তার একটা মাখলুককে।কতইনা মায়াবীয়তা রাখতে পারেন কার চেহরাতে।কত সুন্দর হতে পারে কোন মানুষের চরিত্র।সকল গুন গুলোই যেন তার কাছে একত্র।
,
কিন্তু কেন যেন মেয়েটা সারাটিদিন একা বসে তাকে।কি যেন শুধুই ভাবে।মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে দেখা যায়।তার কিছু ছাপ ও পড়েছে তার চেহারায়।কখন ও তার দিকে তাকালে মনে হয় যেন বড় কোন বিষন্নতা তাকে চেপে ধরেছে।চিন্তা যেন তাকে খেয়েই ফেলতেছে।
,
মেয়েটা এমন ছিলনা।সে অনেক হাসি খুশির একটা মেয়ে। ছোট্টকালে বাড়ির সবাইকে একাই খুশিতে রাখত সে।সে ছিল বাবা মায়ের সব থেকে অাদরের সন্তান।
,
তারা ছিল পাঁচ বোন।বাবার ভালবাসা তাদের প্রতি এতটাই ছিল যে,যার নেই কোন অন্ত।মেয়েদের প্রতি একটা মানুষের এতটাই ভালবাসা তাকতে পারে। তা গাঁয়ের লোকদেরকে রীতি মত অবাক করে দিত।
,
নুহা বাবার কাজ শেষে বাড়িতে অাসার পথে দাড়িয়ে তাকত।বাবা যখন দেখতেন তার মেয়েটা দাড়িয়ে অাছে তার জন্য।তার ভালবাসায় যেন জোয়ার উঠে যেত।কাঁদে তুলে নিতেন মেয়েকে। অার চলা শুরু করতেন বিভিন্ন মার্কেটে।কিনে দিতেন নানান কাপড়।অার মজার সব খাবার।
,
নুহা যেন ছিল তার বাবার হৃদয়ের এক টোকরা।বাবা ও ছিলেন তার প্রাণ।এভাবে দিনগুলো যেতে লাগল।নুহা ও পড়া লেখা শুরু করে দিল।চলে গেল সে কলেজে।কলেজটা ছিল বাড়ী থেকে অনেক দুরে।তাই চলে যায় সে হোষ্টেলে।
,
এভাবেই দিন গুলো যেতে লাগল।সে যখন বাড়ীতে অাসত।বাবা তার জন্য কত কিছুইনা কিনে রাখতেন।কত জায়গায় যে ঘুরতে নিতেন।বাড়ীটা হাসি খুশিতে ভরে উঠত।
,
একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ নুহার মোবাইলে ফোনে রিং বেজে উঠল।তখন নুহা ছিল পড়ায়। তাই সে খেয়াল করেনি।এভাবে কয়েকটা ফোন এসে গেল।এবার নুহা ফোনটা হাতে নিল।দেখল বাড়ী থেকে ফোন এসেছে।কিন্তু হঠাৎ করে এত ফোন কেন?
,
ফোন ধরার সাথেই অপাশ থেকে কে যেন বলল।নুহা চলে অাস বাড়ীতে।বাবা অনেক অসুস্থ।উনাকে নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে।তা শুনতেই তার দেহটা যেন অবশ হয়ে যায়।কোন রকম ভাবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ীতে।সে দেখল বাবাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে মেঝেতে।
,
ঢেকে দেওয়া হয়েছে তার মুখ।তা দেখেই নুহা বুঝে নিল তার বাবা অার নেই।চলে গেছেন না ফেরার দেশে।বাবার মুখটা দেখেই সে অার কিছুই বলতে পারেনা।এভাবে চলে যায় তিন ঘন্টা। অাবারও হুশ ফিরে এল। কিছুক্ষন পর অাবারও বেহুশ হয়ে গেল।
,
এরপর থেকেই শুরু হয় তার জীবনের দুঃখ।নুহা এতিম হয়ে যায়।চাচারা ও শুরু করে দেন তাদেরকে কষ্ট দিতে।শুরু করেন তাদের সাথে বিভিন্ন মানষিক নির্যাতন।চোখে জ্বল নিয়ে শুধু সয়ে যেতে হয়।
,
টাকা অাসার সকল পথ সংক্ষির্ণ হয়ে যেতে শুরু হয়।ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের চিন্তা।ভেঙ্গে যেতে থাকে তাদের সকল স্বপ্ন।
কিন্তু নুহা হার মানার মত মেয়ে নয়।সে চলে যায় কলেজে।
,
বুকে হাজার কষ্ট চাপা দিয়ে বন্ধুদের সাথে চলতে থাকে।মাথায় থাকে হাজার চিন্তা।কিভাবে চালাবে তার পরিবারটা।কিভাবেই বা দিবে বোনের পড়ার খরচটা।কখন সে হারিয়ে যায় নিজের কাছে।কিন্তু অাবারও সে অাত্ম বিশ্বাস নিয়ে জেগে উঠে।
,
কখন বাবার কথা বড্ড বেশি স্মরন হয়।বাবার স্মৃতি গুলা কিছুতেই ভুলে যেতে পারেনা সে।কখন বাবা তাকে দেখতে অাসার অপেক্ষায় তাকে।
,
সে যখন শুনে তার বন্ধু প্রিয়ার বাবা অাসছে।তখন তার হৃদয়টা টোকরো টোকরো হয়ে যায়। অার ভাবতে থাকে। হায়! যদি অামার বাবা থাকতেন তিনি ও অাসতেন অামায় দেখতে।নিয়ে যেতেন কত অজনায় ঘুরতে।কত কথাই না বলতেন ভালবেসে।তার মায়াবী মিষ্টি মুখটা দিয়ে।
,
অাজ মাস চলে যায়। চলে যায় বছরের পর বছর। কেহই যে অাসেনা তাকে দেখতে।তা ভেবেই নুহা লুকিয়ে লুকিয়ে। শুধুই কাঁদে।অার চিৎকার করে বলে। তুমি কি অাসবেনা ফিরে।কেন তুমি চলে গেলে অামায় এতিম করে। নিষ্টুর এই ভুবনটাতে। অামায় একা করে।অামি একা। বড়ই একা।একটি ডাকে সাড়া দাওনাগো বাবা।দেখনা তোমার এই এতিম মেয়েটা কেমন অাছে।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত