ছোট্ট একটি ভুল

ছোট্ট একটি ভুল

প্রতিদিনের মতো বারান্দায় বসে বই পড়ছিলেন অনুপমা। বই পড়েই তার সারা দিন কেটে যায়। বই পড়া ছাড়া কি বা আর কাজ আছে তার।

পৃথীবিতে মিমি(ভাইয়ের মেয়ে) ছারা তার আর কেউ নেই।সেও সারা দিন কলেজে থাকে, তাই বই পড়েই সময় কাটিয়ে দেয়।

অন্যদিকে মিমি প্রতিদিনের মতো ঘুম থেকে ওঠেই আবিরের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। আবির যাকে মিমি অনেক ভালোবাসে,

আবির ও কিছু কম নয়। তবে মাঝে মাঝে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করা যেনো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।

আর এই ব্যাপারটা নিয়ে অনুপমা মানে মিমির ফুফু খুবই চিন্তিত…..
.
–এই শুনো, আমি তোমাকে একটুও অবহেলা করি না। তুমি আমাকে অবহেলা করো। (মিমি)
–ওহ্, তাই নাকি। কে অবহেলা করে সেটা দেখাই যায় (ফোনের ওপাশ থেকে আবির)
–আচ্ছা ঠিক আছে। আমিই অবহেলা করি। আর আমাকে কল দিবা না।(এই বলে মিমি ফোন কেটে মেবাইলটা খাটের উপর ছুড়ে ফেললো)
–সকাল সকাল কি শুরু করলি টা কি। আর ফোনটা কি দোষ করলো?(অনুপমা)
–শুনো ফুফু,,, তুমি তো বিয়ে না করে দিব্যি আছো। আমাকে আর জ্ঞান দিতে এসো না।(মিমি)
–বুঝেছি মাথাটা এখন অনেক গরম আছে তোমার। কোনো কথাই কানে যাবে না। নাস্তা করতে এসো(এই বলে অনুপমা চলে গেলো)
.
দুজনে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো…
.
–কি হলো এতো আস্তে আস্তে খাচ্ছিস যে। কলেজ যাবি না?(অনুপমা)
–না। আজ মন ভালো নেই যাবো না।(মিমি)
–না গেলে ক্ষতিটাতো তোরই হবে।
–ব্যাপার কি ফুফু?আজ তুমি আমার কলেজ যাওয়া নিয়ে এতো করে বলছো?
–না মানে….আমার না পড়ার মতো কোনো বই নেই। কলেজ থেকে আসার পথে আমার জন্য একটা বই আনবি?
–উফ,ফুফু। আচ্ছা তুমি বই পড়ে কি মজা পাও?
–বই…বই এর মতো নিঃস্বার্থ বন্ধু তুই কিন্তু আর একটাও পাবি না। আর তুই তো সারা দিন কলেজে থাকিস। আমি একা একা বসে বসে কি আর করবো?
–তুমি পারোও বটে।
–জানিস কাল রাতে না একটা গল্প পড়েছি।
–ওহ..তুমি এখন আমাকে গল্প শুনাবা তাই তো?
–শুন না। অনেক সুন্দর গল্প!!!
–শুনো তোমার এই সব বস্তা পঁচা সস্তা প্রেমের গল্প বইয়ের পাতাতেই মানায়,বাস্তবে না।
–কি বললি, বস্তা পঁচা সস্তা প্রেমের গল্প? তাহলে তো তোকে আমি এখন গল্প শুনাবোই।
–ফুফু প্লিজ..
–একদম চুপ।
–আচ্ছা ঠিক আছে বলো।
.
গল্পটার নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। তবে হে গল্পে একটা ছেলে ছিলো, খুব শান্ত স্বভাবের,মায়াবি চোখ আর বড় একটা মন।

নামটা ছিলো তার দিপ।আর একটা মেয়ে ছিলো। খুব রাগি স্বভাবের, কথায় কথায় রেগে যাওয়াটা তার একটা অভ্যাস ছিলো, মুন।

মেয়েটির নাম হলো মুন, দিপকে ও অনেক ভালোবাসতো কিন্তু কখনো বুঝতে দিতো না। একদিন বিকেলে মুন দিপের জন্য

পার্কে এককোণে বসে অপেক্ষা করছিলো।
.
–এই নাও।(দিপ মুনের দিকে একটি খালি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে। তবে প্যাকাটটা খালি ছিলো না এতে কিছু বাদাম ছিলো

কিন্তু দেরি হয়ে যাবে বলে দৌড়ে আসতে গিয়ে সব বাদাম রাস্তায় পড়ে গিয়েছে)
–___(খুব রাগ নিয়ে দিপের দিকে তাকিয়ে রইলো)
–সরি!!
–আজকেও তুমি দেরি করে এসেছো। এতোটা বেখেয়ালি কি ভাবে হতে পারো তুমি?
–আজকেও আমি বেখেয়ালি?
–হে তুমি বেখেয়ালি, অনেক
–__(দিপ মন খারাপ করে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে)
–আর তাই এই বেখেয়ালি ছেলের সাথে আমি সারা বিকেল রিকশা করে ঘুরে বেড়াবো।(মুচকি হেসে)
–সত্যি(অবাক হয়ে)
–হুম,চলো।
.
সারা বিকেল মুন আর দিপ রিকশা করে ঘুরে বেড়ায়।বিকেলে দিপ মুনকে তার বাসায় সামনে নামিয়ে দিচ্ছিলো।

এমন সময় রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে মানিব্যাগ পাচ্ছিলো না।
.
–কি হলো ভাড়া দাও(মুন)
–না মানে..(দিপ)
–মানে মানে করছো কেনো?
–মানিব্যাগ পাচ্ছি না।
–মুন তার ব্যাগ থেকে দিপের দিকে তার মানিব্যাগটা এগিয়ে দিলো(একটু রাগ নিয়ে)
–ওহ, তুমি পেয়েছো?
–আমি পাইছি মানে? এটা যে তুমি পার্কে ফেলে এসেছিলে খেয়াল আছে তোমার।
–সরি। কান ধরছি আর এমন হবে না।
–এই নিয়ে কতো বার এমন করছো?
–কতো বার?(রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে)
–তুমি ওনাকে কেনো বলছো। আর হে এক সপ্তাহ এটা আমার কাছে থাকবে। তুমি এক সপ্তাহ টাকা ছাড়া চলবা।

(এই বলে মুন রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিলে চলে যায়)
–আরে আমার গাড়ি ভাড়াটাতো দিয়ে যাও।
–না তুমি পায়ে হেঁটে বাসায় যাবা।(বাসার ভিতর থেকে মুন একটু জোড়ে বললো)
.
এভাবেই কেটে যায় তাদের ভালোবাসার খুনশুটি দিন গুলো। একদিন সকালে মুন কলেজ যাচ্ছিলো এমন সময়

দিপকে একটি মেয়ের সাথে রিকশায় একসাথে যেতে দেখেছিলো। ওইদিন বিকেলে….
.
–ভালোইতো মেয়েদের সাথে রিকশায় ঘুরে প্রেম করো(মুন একটু রাগ নিয়ে)
–তুমি পুরো কথাটাতো শুনো(দিপ)
–শুনো দিপ,,তুমি কি আমাকে বোকা পাইছো? অন্য মেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়াও আবার বড় বড় কথা বলো। লজ্জা করে না তোমার?
–আমি কিছু করি নাই, তাহলে লজ্জা করবে কেনো?
–ভালোইতো তর্ক করা শিখেছো
–আমি তর্ক করছি না। যেটা সত্যি ওটা বলছি।
–থাকো তুমি তোমার সত্যি নিয়ে। আমি গেলাম, আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না(এই বলে মুন চলে যায়)
–মুন প্লিজ আমার কথাটা একবার শুনো।
.
কিন্তু কে শুনে কার কথা। মুন কিছু না শুনেই ওইখান থেকে চলে যায়,এবং তার ফোন অফ করে দেয়।

সারা রাত দিপ মুনের বাসার নিচে দাড়িয়ে থাকে,কিন্তু মুনের দেখা পায় নি। তাকে অনেক এসএমএস ও করেছিলো।

কিন্তু করে কি লাভ? মুনতো তার ফোন অফ করে রেখেছিলো। এইভাবেই দুই এক দিন কেটে যায়।

ইতিমধ্যে মুন বুঝতে পাড়ে যে সব না জেনে দিপের সাথে ওইরকম ব্যবহার করা ঠিক হয় নি। তাই দিপের কাছে ক্ষমা

এবং তাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে তার বাসায় যায়। কিন্তু ওইখানে গিয়ে মুন যা দেখতে পায় সেটা ছিলো তার কল্পনার বাহিরে।
.
–ভাইয়া এখানে এতো ভিড় কেনো?(মুন একটা লোককে প্রশ্ন করলো)
–কাল রাতে একটা ছেলে আত্মহত্যা করেছে তার জন্য(কথাটা বলে লোকটি চলে গেলো)
.
লাশটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিলো। চারপাশে মানুষ দাড়িয়ে ছিলো। মুন আস্তে আস্তে লাশটির সামনে

যেতেই হালকা বাতাসে লাশের উপর থেকে কাপড়টি সরে গেলো। আর যা দেখে মুন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

কারন, সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা লাশটি আর কারো ছিলো না ওটা ছিলো দিপ। জ্ঞান ফিড়ে মুন নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলো।

তার বেডের সাথে দাড়িয়ে ছিলো অনিক(দিপের একমাত্র বন্ধু)।
,
মুনকে একটি চিরকুট দিয়ে সে ওইখান থেকে চলে যায়। মুন চিরকুটটি খুলে পড়তে থাকে….
.
মুন,
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকাই নি। সত্যি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ওই দিন রিকশায় আমার পাশের

মেয়েটি ছিলো অনিকের ছোট বোন। গ্রাম থেকে এসেছিলো, কিন্তু অনিকের পরীক্ষা থাকার কারনে সে তাকে স্টেশন

থেকে নিতে যেতে পারে নি। নতুন শহরে এসেছে রাস্তা ঘাট কিছু চিনে না বলে আমাকে যাওয়ার জন্য অনিক অনুরোধ করেছিলো।

আর আসার পথে তুমি দেখে……বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তোমাকে অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু

তোমার ফোন অফ ছিলো, তোমার বাসার সামনেও গিয়েছি কিন্তু তোমাকে পাই নি। তোমাকে ছাড়া আমার কে আছে বলো?

কি নিয়ে বাঁচবো আমি তুমিই বলো? তাই চলে গেলাম!!! না ফিরার দেশে, ভালো থেকো।।।__দিপ
.
মুন চিরকুট টি পড়ে তার ভুল বুঝতে পেড়ে অনেক কেঁদেছিলো। কিন্তু তখন বুঝে কি লাভ?যা হওয়ার তাইতো হয়েই গিয়েছে।

আর এইভাবেই শেষ দুজনের অসমাপ্ত প্রেমের গল্প।
.
–সরি আবির(মিমি একটু আস্তে)
–কিছু বললি?(অনুপমা)
–না ফুফু। আমি আাসি
–কোথায় যাচ্ছিস??
–আবিরের কাছে,,
–যা, তাড়াতাড়ি যা। না হয় দেখবি অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।
–ধন্যবাদ ফুফু।
–ওই সব পড়ে দিছ। এখন যা তুই।
.
আবির আর মিমির বাসা খুব বেশি দূরে ছিলো না। তাই অল্প সময়েই আবিরের বাসায় পৌছে গেলো।
.
–আরে মিমি আপু তুমি?এতো সকাল সকাল কি মনে করে?(আবিরের বোন)
–আবির কোথায়?(মিমি)
–ভাইয়াতো ছাঁদে।কেনো?
–এমনি(মিমি ছাঁদের দিকে যেতে লাগলো)
–আরে আপু বাসায় আসো।
–আসতেছি
.
মিমি ছাঁদে গিয়ে দেখে আবির ছাঁদের এককোণে মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।
.
–এখানে কি করছো?(মিমি)
–তুমি!(অবাক হয়ে আবির)
–হুম, আমি। এখন বলো এখানে কি করছো তুমি?
–দেখতে পাচ্ছোনা কি করছি?(রাগ নিয়ে)
–এখনো রাগ করে আছো?
–আমি রাগ করার কে?
–জানোনা তুমি কে?
–না..
–সরি। কান ধরছি আর এমন করবো না,প্লিজ।
–মনে থাকবে?
–হুম।( আবিরকে জড়িয়ে ধরে)
.
দরজা বন্ধ করে ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা বক্সটি থেকে চিরকুট টি বের করে চোখের পানি পেলছে অনুপমা।

কারন মিমিকে বলা গল্পটির মুন অন্য কেউ নয়, সে হচ্ছে অনুপমা। যে কিনা নিজের ছোট্ট একটি ভুলের কারনে

আজও লুকিয়ে কাজল কালো আঁখি অশ্রুসিক্ত নয়নে পরিণত করে….

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত