অসম্পুর্ণ

অসম্পুর্ণ

আজ বৃষ্টি হচ্ছে,বাইরে টপ টপ করে বৃষ্টি পড়ছে।ইচ্ছে করছে বাইরে গিয়ে মনটা ভরে ভিজি।কিন্তু ইচ্ছেগুলো যে মৃত।

আধার কালোয় ছায়ায় ভরা।তবুও বিছানা থেকে উঠে,জানালার পাশে দাড়ালাম।জানালা’টা খুল্লাম,হাত দুটো বাইরে দিতে যাব,

সেই সময়ে ফোন’টা বেজে উঠল,একটু অবাক হলাম,মনে মনে বলতে শুরু করলাম,–“আমায় তো কেউ ফোন দেয় না?

কে আবার ফোন দিলো?ধির পায়ে হেটে গিয়ে ফোন’টা রিসিভ করলাম,অপর পাশ থেকে মেয়ে কন্ঠে ভেসে এলো,–

“বাইরে কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে,হাত দিয়ে স্পর্শ করছিলেন বুঝি?’একটু আচমকা মন,কে হতে পারে?গলাটাও তেমন চেনা নয়,

তবে মিষ্টি।মনটা সায় দিলো,তাই একটু ভারি গলায় বললাম,–“হাত দুটি বৃষ্টির সংস্পর্শে প্রায়ই গিয়েছিলো,

সেই মুহুর্তেই আপনার ফোন।তাই বৃষ্টিকে স্পর্শ করতে পারি নি।–“কেমন আছেন?চিনতে পারছেন কি সেই চেনা গলা?’

আমি জানি এটা পরী’র গলা।তবুও কেন জানি অচেনা সাজতে ইচ্ছে করে।কারন মেয়েটি আমায় মায়ায় পড়ুক,আমি তা কখনও চাই না।

আমি জানি পরী আমাকে ভালোবাসে।সেই প্রথম দেখা/কথা হবার এক সপ্তাহপর থেকেই।আমিও বাসি,তবে জানতে দেইনি কখনও।

এক সাথে মেঠো পথও হেসেছি দুজন।বৃষ্টিতে ভিজেছি।সেই সব মুহুর্তেই আমি পরী’কে ভালোবাসি।আমি যে অসম্পুর্ণ,

তাই তাকে কখনও বলিনি।হৃদয়ের অব্যক্ত কথা।আজ চারটি মাস পর পরী ফোন করেছে।এসব কথা ভাবনার পান্তরে চলছিলো,

হঠাৎই পরী বলে উঠল,–“কি হলো চিনতে পারছো না আমায়?’আমি সত্যটা বলব কি না ভাবছি,কারন পরী’র কাছে থেকে দূরে সরে এসে,

ফোন নাম্বার চেন্জ করে ফেলছিলাম।তবে নাম্বারটা কই পেলো?এসব না ভেবে উওর দিলাম পরী’কে,–“এতো অচেনা গলা নয়,চেনাই।

তুমি পরী।–“যাক তাহলে চিনতে পারছো?একটা কথা ছিলো?–“বলতে পারো!’পরী একটু থেমে গেলো,হয়ত অনেক কথা জমা রয়েছে তার মনে।

কোথায় থেকে শুরু করবে ভাবছে।তবে আমি কৌতহল নই।ইচ্ছাটাইত নেই।পরী আচমকাই বলে উঠল,–“ভালোবাসলে কি কাঁদতে হয়?

কাউকে পাবার আশা করা কি পাপ?’কেন এসব কথা বলছে পরী,তা আমার জানা।তবুও তাকে সান্তনা দিতে হবে।আমি জানি সে প্রতিটি

রাত কেঁদেছে।কিন্তু আমি যদি তার জীবনে থাকি,তাহলে পরী আরো কাঁদবে।আমার শুন্যতা পরীকে কাঁদাবে।এর জন্য নিজেলে লুকিয়ে

রেখেছি,একাকিত্বের দেয়ালে।চলে এসেছি তার শহর ছেড়ে।এসব ভেবে চলেছি,অন্য দিকে একজন উওর পাবার আশায় ব্যকুল,-

-“ভালোবাসলে শুনেছি কাঁদতে হয়।তবে জানা নেই।আর কাউকে পাবার আশা,কোন পাপ নয়।’পরী এবার কেঁদে দিলো,আমি কিছু বল্লাম না,

সান্তনাও দিলাম না।কারন আমি চাই সে আমাকে ভূল বুঝুক।কান্নাটা থামিয়ে পরী বলল,–“আমার সাথে এমন কোরছো কেন তুমি?কেন চলে এসেছো?

ও খুব ভালোবাসি বলে?’কি উওর দিব?এটার তো কোন উওর নেই আমার কাছে।শুধু পরী কে এটা বললাম,–

“ভূলে যাও,স্বপ্ন ভেবে।অসম্পুর্ণতা কখনও জীবন নয়,ভালোবাসার।এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম।.আমি চাইনি পরী কখনও আমার জীবনে আসুক,

শুধু চেয়েছি,একটা ভালো জীবন সঙ্গি পাক।কিন্তু যত দিন পরীর সাথে ছিলাম,ততোদিন শুধু পাগলামি করতো,আর বলতো,–

“আমি শুধু তোমাকে চাই,অন্য কোন ভালো জীবন সঙ্গী আমি চাই না।আমার এই দুটি হাত শক্ত করে ধরে দেখো?

আমি তোমায় কখনও ছেড়ে যাব না।’খুব জোর করতো পরী,তার হাত দুটি ধরার জন্য।তবে ভয় ছিলো বলে হাত ধরিনি,

যদি মায়ার পরিমানটা বেশি হয়ে যায়।তাই পরী যখনই বলতো আমার হাতটি ধরো,তখনই আমি অন্য প্রসঙ্ঘে নিয়ে যেতাম।

এবং পরী সেটা বুঝতে পেতো, আর বলতো,–“কথাগুলো কিন্তু এরিয়ে গেলে,এমনটা করে বুঝি খুব শান্তি পাও?–“ধূর কি সব বলো না,

চলো আজ উঠি,বাসায় গিয়ে বাজার করতে যেতে হবে।–“এখনই?আচ্ছা চলো।’চার মাস আগে এভাবেই প্রায় দিনগুলি চলে যেতো।

সময় তেমন দিতাম না,কারন আমার পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই।যা আছে,তারা আপনজনই,কিন্তু দয়া করে রেখেছে।

তাদের বাসার সব কাজ কর্ম আমাকে দিয়েই করায়।আর একটু দেড়ি হলে বলে,–“এতক্ষন বাইরে কি করছিলে?যদি সময় মতো কাজ না করো,

তাহলে আমরাতোমাকে বসিয়ে খাওয়াতে পারব না।’আমি শুধু মাথা নিচু করে শুনতাম।কারন তাদের খাচ্ছি।কথাতো শুনতেই হবে।

আর এইসব কথা দিন দিন বেড়েই চলছিলো।কথাগুলো শুনে যখন রুমে যেতাম,তখন মনে হতো।

পরী কে যদি ভূল করেও তার হাত দুটি ধরতে রাজি হই?তাকে খাওয়াব কি?থাকতে দিব কোথায়?ভালোবাসার কথা বলি নাই ঠিক আছে,

তবে মায়াটা তো সব সময় কাজ করে।যদি আবেগ এর বসে বলি দেই,অব্যক্ত কথাটা।তখন পরী আরো পাগলামু করবে।কিন্তু পরী এটা চিন্তা করছে না,

তার হাত না হয় ধরলামই।হয়তো কিছু দিন সুখি থাকবে।তার পর দরিদ্রতা তাকে দূর্বল করে দেবে।পেটে ভাত না থাকলে,রাগটা বেশি হয়।

তখন কি থেকে বলে ফেলব তখন দুজনারি ভূল বোঝাবুঝি হবে।পক্ষান্তরে সম্পর্ক শেষ।তাই আমি কখনই চাই নি এমনটা হোক।

পাওয়ার চেয়ে না পাওয়ার মাঝে ভালোবাসা লুকায়িত থাকে,না হয় সেটা নিয়েই বেঁচে থাকব।তাই তাকে ছেড়ে,তার শহর ছেড়ে দূর কোথায় চলে এসেছি।.

পরী’র সাথে কথা বলার পর,ফোন থেকে সিমটা খুলে ভেঙে ফেল্লাম।নাম্বারটা বোধ হয় আঁকাশ এর কাছে থেকে নিয়েছে।

একমাত্র আঁকাশই জানে আমার নাম্বারটা।গ্রামে মাঝে মাঝে খোজ খবর নেই,আঁকাশ গ্রামেই থাকে।হয়তো পরী সেখানে গিয়েছিলো।

তবে আঁকাশ সহজে নাম্বারটা দেইনি,কান্না করেছে হয়ত পরী।এর ফলেই আঁকাশ নাম্বারটা দিয়েছে।যাই হোক ঘুমিয়ে পড়ি, বৃষ্টিও স্তব্ধ হয়ে গেছে।

কাল আবার আরেকটা সিম কিনতে হবে।এটার নাম্বার আর কাউকে দিব না।.সকালে আর ওঠা হলো না।বিষন্নতার চোখ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম,

কিছুটা অশ্রুও ঝরেছিলো।তাই আর কি ঘুমটা জরুল ভাবেই হয়েছে।ফোনটা অন করে,টাইম এর দিকে চেয়ে দেখি ১২:১৩ বাজে।

একটু হাসিই পেলো,কারন এমন ঘুমতো আগে কখনও হয় নি। আগে সকাল সকাল চাচি বাজারে যাওয়ার জন্য ডেকে তুলতো।

এখানে এসেও এমন ঘুম হয়নি,অফিস ছিলো ৭:৩০ টায়।অফিস এর কথা মনে করতেই,মন বলে উঠল”আজ না অফিস ছিলো?

তার পর আযান এর শব্দ কানে ভেসে আসল।তার পর মনে হলো,আজ শুক্রবার।তাই বিছানে ছেড়ে ফ্রেস হতে গেলাম।

হালকা কিছু খেয়ে গোসল এ গেলাম।গোসল করে নামায পড়তে বের হলাম।.নামায পড়ে,বিকাল এর দিকে রওনা দিলাম।

মূল উদ্দেশ্য সিম কিনব।পরিচিত কোন দোকান নেই,আর শহরটাও অপরিচিত।রাস্তার বাম পাশে একটা দোকান ছিলো,

মাঝে মাঝে ফ্রেক্সিলোড দিতাম।সেই সুবাদে কিছুটা মুখ চেনাচিনি।অতঃপর সেখানে গেলাম,গিয়ে দেখি মামা বসে কম্পিউটার এ কাজ করছে,

তাকে বল্লাম,–“মামা একটা সিম কেনা লাগত?আছে কি ভালো সিম?–“ওহ্ তুমি,বসো বসো,বলো কি সিম কিনবে?’একটু ভাবলাম,

কি সিম কেনা যায়,হ্যাঁ এয়ারটেল কিনব।প্রয়জনে ছাড়াতো আর কাউকে তেমন ফোন দেওয়া হয় না।–“এয়ারটেল সিম কিনব,আছে?–

“আরে মিয়া সিম এর ব্যবসাই করি,আর সিম থাকব না।এন আইডি কার্ড আনছো?–“না মামা,ভূলেই গেছি,আপনি দাড়ান।

আমি বাসায় থেকে নিয়ে আসছি।.আমার তো মনেই ছিলো না যে এন আইডি কার্ড ছাড়া সিম কেনা যায় না।মন ভূলা একটা মানুষ হয়ে গেছি।

এন আইডি কার্ড নিয়ে গিয়ে সিমটা ক্রয় করলাম।তার পর বাজার এর দিকে গেলাম।বাসায় বাজারও নেই।টাকা আছে,যে চাকরি করি,

একজন খুব ভালো করেই চলে যায়।অতঃপর কিছু বাজার করে বাসায় ফিরলাম।.রাতে একটু তারাতারি খাওয়া শেষ করলাম।

কাল অফিস আছে তাই।ঘুমানোর চেষ্টায় হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিলাম,ক্লান্ত শরির আর বিষন্ন মন নিয়ে।ফোনের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো।

একটু রাগই হলো।কাচা ঘুম ভাঙলে শান্ত মানুষেরও একটু না একটু রাগ হবেই।ফোনটা খুজে খুজে বের করে ফোন টা ধরলাম,

ওপাশ থেকে সেই পরিচিত কন্ঠে ভেষে এলো,–“একটু মোড় এ আসতে পারবে?’একটু অবাক হলাম।মোড়?কোথায় পরী?

একটু কৌতহল নিয়ে বললাম,–“কেন?কই আছো?–“যেখান থেকে সিম কিনেছো সেখানে,একটু আসতে পারবে?’ঘুমের ঘোরটা আর রইলো না,

এই মেয়ে কি পাগল নাকি।এখানেও চলে এসেছে।মন কে প্রশ্ন না করে রওনা দিলাম।এখন রাত প্রায় ৯ নাগাতহবে।

আর সেখানে যদি না যাই সারারাত ওইখানেই থাকবে।আর শহরটা তেমন ভালো না।যদি কিছু হয়ে যায় পরীর।তাহলেত আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।

.একটু দ্রুতই সেখানে গেলাম।বাসা থেকে ১কিঃমিঃ হবে।রিক্সা নিয়ে গেলাম।রিক্সা থেকে নেমে চোখ পড়ল পরীর ওপর।

সিম যে দোকান থেকে কিনেছি,সেই দোকানের বেঞ্চে বসে আছে।তার পর একটু ক্লিয়ার হলাম,আমার নাম্বারটা কোথায় থেকে পেয়েছে।

কিন্তু পরী আমায় এখনও কেন ফলো করে?এসব এর উওর আজ নিব।সেখানে গেলাম,মাটির দিকে চেয়ে পরী বসে আছে।

একটু ভারি গলা নিয়ে বল্লাম,–“এখানে কেন এসেছো?’পরী এবার দাড়িয়ে,আমার চোখের দিকে দু চোখ রেখে,বলল,–

“মায়ার টানে,’তার পর হাতটি ধরে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গেলো।তার পর দুজন সেখানে পাশাপাশি বসলাম।

পরী কাছে থাকলে আমি কেমন জানি হয়ে যাই,শুধু ইচ্ছে করে তার পাশে হাটতে,বসতে।পরী একটু হেসেই বলে উঠল,–

“সামনেই ১৩ তারিখে আমার বিয়ে।’কথাগুলো হাসি মুখে বল্লেও,কথাগুলোরমাঝে লুকিয়ে ছিলো অস্রয্য যন্তনা।

আমিও একটু হাসির অভিনয় করে বললাম,–“খুব ভালো কথা,দেখো ছেলেটা খুব ভালো হবে,তোমায় খুব ভালোবাসবে।

‘পরী আমার দিকে অশ্রু ভরা চোখ নিয়ে বলল,কিন্তু তার চোখে অশ্রুনেই,তবে আমি দেখছি,তার অশ্রুশিক্ত মুখ,চোখ।–

“আমি এখানে এসেছি কেন জানো?–“কেন?–“আমার হাত দুটি কি এখনও ধরতে পারবে না তুমি?এই কথার উওর জানতে।–

“আমি কখনই চাইনি তোমার জীবনটা কষ্টে মেতে উঠুক,সেই প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত।যাকে বিয়ে করছো সে ভালো হবে,

তাকে আমার মতো করে ভালোবেসো, দেখবে সেও তোমায় ভালোবাসবে।’পরী এবার চোখের অশ্রু হয়ত আটকে রাখতে পারল না,

তাই কেঁদে কেঁদে বলল,–“আমি চাইনা সেই ভালোবাসা,আমি শুধু তোমাকে চাই,(জরিয়ে ধরে)।’আমি জানি এখন এটা আবেগ,

বাস্তব তো অন্য কিছু।অনেক কঠিন।যেটা পার করতে গেলে পরীর অনেক কষ্ট হবে।আমি চাইনা সেই কষ্ট পরী পাক।

মনে আরেকটা প্রশ্ন জাগল,পরী কোথায় এসেছে?তাই ওইসব বাদ দিয়ে পরী কে বললাম,–“কোথায় উঠেছো?–

“এখান থেকে দশ টাকার ভাড়া,একটা কাজিন এর বাসায়।–“ওআমি আরেকটা সিদ্ধান্ত নিলাম,এখন চলে যাব।

পরীর সাথে থাকলে আমার মায়া ততো বাড়বে।তিন দিন পর পরীর বিয়ে।হয়ত আমি যদি তার হাতটি এখন ধরতে চাই,

তাহলে সে আর বিয়ে করবে না।কিন্তু আমি তা চাই না।চাই না আমার অসম্পুর্ণতা পরী কে কষ্ট দিক।তাই সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে,

বসা অবস্হা থেকে উঠে দাড়ালাম।পরী তখন বলে উঠল,–“উঠলে কেন?–“চলে যাচ্ছি,ভালো থেকো।–“আমার উওরটা?–

“সেটা আমার কথায় বুঝে নিও’এই বলে পথ হাটা শুরু করলাম।পিছনে তাকাইনি,শুধু কান্না জরিত শব্দে ভেষে আসছিলো,–

“তোরিয় আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভাসব,বেসে যাব।’পিছনে তাকাইনি একটি বারও।যদি তাকাতাম,পরীর চোখের জল মুছে দিতে যেতাম,

কিন্তু আমি চাইনা আর পরীর ওপর আমার মায়াটা বাড়ুক।তাই চলছি,অসম্পুর্ণতা নিয়ে পথ।হয়ত একদিন অসম্পুর্ণতার শেষ অবসান হবে।

তবে ভালোবাসায় ছিলো সম্পুর্ণতা।আমি জানি পরী জানতো, তাকে আমি ভালোবাসতাম।তাই হয়তো বার বার কাছে আসত।

আমিই দূরে ঠেলে দিয়েছি।তবে ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাক,এতেই আমার ভালো থাক

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত