মানবতার প্রতিদান

মানবতার প্রতিদান

আজ আদনানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।আদনানের কবরের পাশে বসে আছে অহনা।অহনার চোখ
দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।সকাল থেকে আদনানের কবরের পাশে বসে কাদছে সে।
সকাল গড়িয়ে এখন বিকেল।অহনার পিছনে দাড়িয়ে আছে জেনি।জেনিও নির্বাক চোখে
তাকিয়ে আছে।এইতো একে একে আসছে রিশা,সরনিকা,আতিফ,জুয়েল ও সীমান্ত।
সকলেই আদনানের কবরের সামনে দাড়িয়ে আছে।সকলের চোখের কোনেই পানি।
.
আদনান:অই সরনিকা তুই কই?

সরনিকা:উমমম আমি তো ঘুমাচ্ছি।
আদনান:রাখ তোর ঘুম।তারাতারি শিমুলতলায় আয়। রিশা কে ফোন দিয়ে আসতে বল।
সরনিকা:উফফ।তুই ও না।আচ্ছা আসতেছি। সরনিকা রিশা কে ফোন দিলো;
সরনিকা:অই জলদি আয় শিমুলতলায়।

রিশা:কি করতে?

সরনিকা:মহৎ মানুষ যাইতে বলছে।
রিশা:আদনাইননার আর কোনো কাজ নেই??? আল্লাহ ই জানে কোন মহৎ কাজ করতে ডাকছে।

তুই গেটের সামনে দাড়া আমি আইতাছি।
সরনিকা:আচ্ছা।আয়।
আদনান আতিফ,সীমান্ত ও জুয়েল কে ফোন দিয়ে আসতে বলছে।জেনি ও আসছে।
আদনান অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র।আর এরা সবাই ওর বন্ধু।পুরো এলাকায় ওদের সবাই এক নামে
চিনে “বন্ধু মহল” হিসেবে।যেকোনো ভালো কাজে সবার আগে ওদের ই দেখা যায়।আদনান
ওদের অঘোষিত টিম লিডার।তবে এর মধ্যে আদনান বেশিই মহৎ যে সমস্যাই হোক না
কেনো তার সমাধানে আদনান আছেই।বন্ধু মহলে আদনান কে সবাই মহাপুরুষ বলে ডাকে।
এদের সাথে আরেকজন আছে অহনা।আদনান আর অহনার রসায়ন টা একটু বেশিই।
বিকেল ৫ টা সবাই শিমুলতলায় হাজির।
সরনিকা:কিরে তোর অহনা কই?
আদনান:অই আমার অহনা মানে???
জুয়েল:অই কি জন্য ডাকছস বল?
আদনান:একটা সমস্যা আছে।
রিশা:তা জানি।আপনি তো আবার উদার মনের
মহৎ মানুষ।বলেন কি হইছে?
আদনান:ফয়সাল মৃত্যুশয্যায়।
আতিফ:কি বলছিস???
আদনান:হ্যা।দুপুরে অহনা জানাইছে।
(ফয়সাল অহনার ছোট ভাই)।
মুহুর্তে শিমুলতলার পরিবেশ নিস্তব্ধ।
আদনান:ডক্টর বলছে ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন ৫
দিন এর মধ্যে।৩ লাখ টাকা ওদের পরিবারে
হাতে আছে।বাকিটা আমাদের দেখতে হবে।
সরনিকা:চিন্তা করিস না।আমরা আছিতো।আজ
থেকেই আমাদের মিশন শুরু।
.
“বন্ধু মহলের”সকলেই নেমে পরলো।লিফলেট ছাপানো হলো।প্রত্যেক স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা
সহ সকল যায়গায় তারা গেলো।সকলে রাত-দিন নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করতে লাগলো।আর ১
দিন বাকি আছে কিন্তু এখনো ৫০ হাজার টাকা বাকি আছে।সকলের চিন্তা একটাই কিভাবে
কি করা যায়।অনেক আলোচনার পরে তারা এলাকার সংসদ সদস্যের নিকট গেলো।তিনি
বাকি টাকার ব্যাবাস্থা করলেন।সকলের মুখেই যেনো রাজ্য জয়ের হাসি।
.
ফয়সালের অপারেশন সম্পন্ন হলো।আল্লাহর রহমতে ফয়সাল সম্পুর্ন সুস্থ হলো।সবাই
আদনানের প্রশংসা করতে থাকলো। বিকেলে সবাই শিমুলতলায় একত্র হয়েছে।
অনেকদিন পর যেনো সবাই সজিব হয়েছে। অহনাও আছে তাদের সাথে।আবার আগের মতো
কাটতে লাগলো তাদের দিন।
.
আদনান এরকম অনেক কাজ ই করেছে।কারো বিপদ দেখে আদনান পাশে দাড়ায়নি কেও
বলতে পারবেনা।
.
আজ সবাই শিমুল তলায় উপস্থিত।কিন্তু আদনানের পাত্তা নেই।
রিশা: অই অহনা আদনান কই রে?
অহনা: বলছিলতো আসতেছে।
সরনিকা: আদনানের ফোন তো বন্ধ।
আতিফ: কি বলিস?অর তো ফোন তো বন্ধ থাকে না।
জেনি: দাড়া আন্টি কে ফোন দিয়ে দেখি।
রিশা: আন্টি কি বললো?
জেনি: আদনান অনেক আগেই বাসা থেকে বের হয়েছে। এখন সবার মুখে গভির চিন্তার ছাপ।কিছু হলো না তো আদনানের।
অহনা: চল খুজে দেখি।
জুয়েল: চল।সামনের রাস্তায় ওর আসার কথা ওখানে দেখি। সবাই খুজতেছে আদনান কে।হঠাৎ সামনে
দেখে কিছু মানুষের জটলা।সকলের মনেই তখন চিন্তা ঢুকে যায়।সবাই ভিড় ঠেলে ভিতরে যায়।
কিন্তু একি আদনান পড়ে আছে!আদনানের সারা দেহই রক্তে ভিজে আছে।
আতিফ: আদনান বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। অহনার অবস্থা তখন পুরোই বেগতিক।
রিশা: আদনান তোর কি হয়েছ ভাই?তোর এই অবস্থা কি করে হলো?
আদনানের মুখে কোনো শব্দ নেই।শুধু সবার দিকে একবার তাকালো।তারপর নির্বাক হয়ে
পরে রইলো।সবাই ধরা-ধরি করে আদনানকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।কিন্তু বড্ড দেরি
হয়ে গেছে যে।আদনান চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে সবার কাছে থেকে।হাসপাতালে
পরিস্থিতি তখন খারাপ।সবাই কাদছে যেনো তাদের নিজেদের ভাই ছিলো আদনান।অহনা
অজ্ঞান হয়ে গেছে আদনানের মৃত্যুর কথা শুনে।
.
আদনান বাসা থেকে বের হয়ে শিমুলতলায় আসার সময় একটি বাস তাকে ধাক্কা দিয়ে
চলে যায়।মুহুর্তেই আদনান লুটিয়ে পরে।কিন্তু অই দিন কেউ তাকে উদ্ধার করে নি।সবাই শুধু পাশ কাটিয়ে চলে গেছে।এই সেই আদনান যে
কারো বিপদের কথা শুনে ঝাপিয়ে পরেছে। আর আজ তার এই সময়ে কেউ তাকে সাহায্য
করলো না।কতই স্বার্থপর মানুষেরা।আদনান ভাবছে হয়তো এটাই প্রাপ্য ছিলো আমার।
আস্তে – আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে আদনান।মানুষের বিপদে পাশে দারানোর
উত্তম প্রতিদান ই পেলো আদনান।
.
আদনান অই দিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেও কখনোই মুছে যায় নি তার নাম।
.
৮ বছর পর;
আজ আবার সবাই শিমুলতলায়।কারন তাদের “বন্ধু-মহল” আজ সরকারি পুরস্কার পাবে।
আজকের প্রধান অতিথি হিসেবে আছেন একজন মন্ত্রি।
শুরুতেই “বন্ধু-মহলের” পরিচিতি দেয়া হলো।
উপস্থিত ভাষনে সরনিকা;
সরনিকা: আমাদের “বন্ধু-মহলের” প্রধান সদস্য
আদনান।তার অনুপ্রেরনাই আমরা আজ এতদুর এসেছি।
প্রধান অতিথি: কোথায় তোমাদের আদনান?
মুহুর্তেই সকলের চোখে পানি।যেনো কালোমেঘ নেমে আছে।মুহুর্তেই আতিফ
চিৎকার করে বলে উঠলো ‘আদনান আছে আমাদের “বন্ধু-মহলের” প্রত্যেকের হৃদয়ে।
আদনান আছে,আদনান থাকবে আজীবন।আদনান একজন বিখ্যাত “মহাপুরুষ”।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত