অপেক্ষা

অপেক্ষা

– কিরে খোকা।অফিস যাবি না?
– যাবো মা।দেখো।না সকাল থেকে কি যে বৃষ্টি হচ্ছে।বের হতে ইচ্ছে করছে না।
– না করলে যাস না।
– যেতে হবে খুব জরুরি মিটিং আছে।
– খোকা
– জানি মা। তুমি কি বলবে।

আমার একা একা থাকতে ভালো লাগেনা।একটা বিয়ে কর।বউ আন ঘরে।ঘরটা একটু পরিপূর্ণ হোক।সারাদিন ঘরে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াক।কথার খই ফুটুক।

– সব তো বলেই দিলি।তবু কেন বুঝিস না মায়ের দুঃখ।
– মা এটা কোন দুঃখ না।আমরা মা ছেলে বেশ আছি। কেন শুধু শুধু খারাপ থাকতে চাও?
– বউ এলে বুঝি খারাপ হবে?
– মা এতকথা জানি না।শুধু জানি তোমার মাথা থেকে এসব বাদ দাও।
– বুঝবি আমি মরলে বুঝবি।সারাদিন একা ঘরে কখন কি হয়।আমার তো বয়স হয়েছে খোকা।এত চিন্তা নিতে পারি?
– ঠিক তো। ডাক্তার তোমাকে টেনশন নিতে মানা করেছে।
– তুই একটা বিয়ে করে বউ এনে দে।দেখবি আমি ভালো হয়ে গেছি।
– মা আমাকে এবার বের হতে হবে।
– এসব বললেই তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে চাস।আমিও দেখবো,,,,, তোকে বিয়ে করাবোই আমি।
– মা গেলাম।নিজের খেয়াল রেখো।

আর সাবধানে থেকো। মা কে এখনো বুঝাতে পারিনা।আর কতদিন বুঝাবো।নিজ থেকে তো পালিয়ে পালিয়ে বাঁচছি।কিন্তু মা’র কাছ থেকে।আর কত নিজেকে লুকাবো।আমি জানি মা আমাকে নিয়ে অনেক টেনশন করে।আর এটা করাই স্বাভাবিক।আমাকে মাফ করে দিও।তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি বলে।আমি ই তো নিরুপায়। ওকে এখনো ভুলতে পারছিনা।আর এটাই জানি ও তাঁর ভালোবাসার মানুষ কে নিয়ে সুখে আছে।আমি নিজে নিজে কষ্ট পাচ্ছি।

– এই থামাও তো গাড়ী।
– স্যার এখানে কেন থামাবো?অফিস যাবেন না?
– বলছি তো গাড়ী থামাও।তুমি সামনে গিয়ে পার্কিং করো।আমি একটু পরে আসছি।
– জ্বি স্যার।

নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা।প্রায় চার বছর পর কাজলকে এখানে দেখবো।ও কি আমাকে চিনতে পারবে? গিয়ে কথা বলি।হয়ত চিনতে পারবে।

– তুমি কাজল না।
– আপনি?
– আমি সায়ান।চিনতে পারোনি?
– আরে সায়ান ভাই আপনি এখানে কি করছেন।আমাকে কিরে চিনলেন।
– এই পথ দিয়ে আমি প্রতিদিন অফিস যাই।হঠাৎ চোখ পড়ল।তুমি গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছো।তাই ভাবলাম এতবছর পর দেখা।একটু কথা বলি।

– জ্বি ভালো করেছেন। আপনি এখন কি করছেন?
– এই তো নিজের বিজনেস আছে।ওটা চালাই।তুমি?
– আমার একটা বুটিক হাউজ আছে।অবশ্যই এটা বেশী দিন হয়নি।নতুন শুরু করেছি।
– নতুন থেকে তো আস্তে আস্তে বড় হবে।তোমরা এখন কোথায় থাকছো?ইমন সহ।
– ইমন?হুম,,,,,আমি বাবার বাড়ী থাকি।
– আচ্ছা। বুঝলাম।
– সায়ান ভাই আমার গাড়ী এসে গেছে।আমার বুটিক হাউজের কার্ড টা রাখুন।সময় পেলে একদিন চলে আসবেন কথা হবে।
– ঠিক আছে।

এই বলে বিদায় নিলো কাজল।সময় পেলে মানে কি আমার তো ইচ্ছে করছে এখুনি চলে যাই।ওকে ছাড়তে মন চাচ্ছিলো না।কি করে মন চাইবে?আমার ভালোবাসাকে এতদিন পর দেখলাম।কাজল তো জানে না।আমি এখনো ওর অপেক্ষায় আছি।কি অদ্ভুত তাই না।আমি জানি ওর সংসার আছে।তাও আমি ওকে এখনো,, বড্ড বোকা রয়ে গেলাম আমি।

যে আমার কখনো হওয়ার না তাঁর জন্য অপেক্ষা। সায়ান তুই মানুষ হও।এখনো গাধা রয়ে গেলি।মানুষ শুনলে আমাকে নিয়ে হাসবে মজা করবে।না না সত্যি কাজলকে ভালোবাসি আগের মত।প্রথম দিনের কথা খুব মনে পড়ছে।ভার্সিটি তে ও আমার দু’বছরের জুনিয়র। আমাদের প্রথম দেখা একটা আবৃত্তি প্রোগ্রামে।ওর আবৃত্তি শুনে আমি সেদিনই প্রেমে পড়ে হাড়গুড় ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে প্রায় দেখতাম।সারা ভার্সিটি তে ও যেখানে যেখানে যেতো আমিও পিছু পিছু থাকতাম।এভাবে প্রায় দু’বছর।ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি।তবে আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্ক ছিলো।এদিকে আমার পড়াশুনা শেষ।যেদিন ভার্সিটি থেকে বিদায় ওকে সেদিন ভালোবাসার কথা জানালাম।কাজল আমাকে হতাশ করে দিয়ে বললো ও নাকি একজনকে ভালোবাসে।আমার প্রস্তাব টা সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দিলো।আমি একবুক হতাশা নিয়ে বাড়ী ফিরলাম।পরে শুনেছি ওর বিয়ে হয়েছে ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে।আমি আর খবর নেইনি।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
আর এখনো পাচ্ছি।

– আরে সায়ান ভাই।আসেন খুব খুশি হলাম।আপনি এলেন।
– আসলে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম।ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।( এটা ডাহা মিথ্যা কথা আমি এটা খুব পারি।আসলে কাজলকে ই দেখতে আসলাম।এটা শুধু একটা বাহানা)

– কি ব্যপার চুপ কেন?কি ভয়বছেন।
– হুম,,,, হ্যাঁ,,,,
– সায়ান ভাই আপনি আগের মতই আছেন। বিয়ে করেছেন?
– না তো কখনো করিনি।সময় পাইনি তাই।
– কি বলেন এসব? সময় পাইনি।এটা বিশ্বাসযোগ্য কোন কথা হলো।
– তাহলে???তুমি বলো কি কথা হবে।
– আচ্ছা আপনার মা কেমন আছেন?
– মার শরীর টা বেশী ভালো নেই।ডায়াবেটিক প্রেসার সব মিলিয়ে একদম অসুস্থ।
– তাহলে বিয়েটা করছেন না কেন?
– বাদ দাও তো আমার কথা। তুমি ইমন তোমার সংসার কেমন চলছে?
– আপনি সত্যি কিছু জানেন না।আমার কোন ফ্রেন্ড আপনাকে কিছু বলেনি?
– না তো কোন ব্যাপার নিয়ে?
– আমার আর ইমনের বিয়েটা হয়নি।
– ওমা কেন?( যাক ভালোই হলো আমার চান্স টা এখনো আছে)

– ওকে তো খুব ভালোবাসতাম আপনি জানেন।আমাদের বিয়ের ডেট ও ঠিক হলো।খুব অল্প প্রোগ্রাম করে বিয়ে টা হবে কথা ছিলো।যেদিন আমাদের বিয়ে।সেদিন ওর জন্য আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম।ও এলো না। দিন শেষে সন্ধ্যা সন্ধ্যা শেষে রাত।কিন্তু ও এলো না।সবার সামনে আমি কতটা ছোট হলাম।পরদিন ওর বাসায় গেলাম ওর বন্ধু বললো।ও নাকি কাউকে কিছু না বলে ইউ এস চলে গেছে ওর চাচার কাছে।তাহলে আমাকে কেন ঠুকালো?একবার বলতে পারতো।বিশ্বাস টাই উঠে গেলো।এরপর আমি ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স করতে মাদ্রাজ চলে গেছি।ভেবেছিলাম ওখানে থেকে যাবো।কিন্তু একা একা ভালো লাগেনি।দেশে ফিরে এলাম।এখন ভালোই আছি।

– কি বলবো?আমি জানি না তোমার জীবনে এতকিছু যে হয়ে গেছে।
– এবার বলেন আপনার কি সমস্যা?
– কই নাতো আমার কোন সমস্যা নেই।
– আমি জানি আপনি খুব চাপা স্বভাবের।ভার্সিটির সেরা স্টুডেন্টও আপনি ছিলেন।কিন্তু জীবন টাকে কেন এখনো থেমে রেখেছেন?কারো জন্য কেন এত কষ্ট পাচ্ছেন।আর কত নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন।
– থাক না কষ্ট গুলো একান্ত ই আমার।
– জানি।ভাগ দিবেন না।আর আমি কোন মুখে তার ভাগ নিতে চাইবো।
– কাজল এখনো আবৃত্তি করো?
– না।সে কবেই ছেড়ে দিয়েছি।
– ছাড়লে কেন?তুমি ভালো আবৃত্তি করো।
– আর ওসব হবেনা।
– একটা কথা বলবো? রাখাটা তোমার কাছে।হয়ত আজকে শেষ বারের মত বলবো।
– জ্বি বলেন।
– আমি আগের মত তোমাকে এখনো ভালোবাসি।আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।এখনো পেয়ে যাচ্ছি। বিশ্বাস করো এখনো তুমি আমার মন জুড়ে আছো।কাউকে সে জায়গা দিতে পারেনি।আর কখনো দিতে পারবোনা।তোমাকে ছাড়া।আজকে আমাকে ফিরিয়ে দিও না কাজল।খুব ভালেবাসি তোমাকে।

– আমার সে সাহস টুকু আজ আর নেই আপনাকে ফিরানোর।তবে আমি আপনার যোগ্য কিনা জানি না।আমি শুনেছিলাম আপনার এক বন্ধুর কাছ থেকে।আপনার ভালোবাসার কথা।আপনার সামনে দাঁড়ানোর সাহস ছিলো না।তাই নিজেও নিরবে কষ্ট পাচ্ছিলাম।

– ওসব কথা সব বাদ। আমি কি মাকে পাঠাবো?তোমাদের বাড়ীতে?
– জানি না।
– আজকে অন্তত মুখ ফুটে কিছু বলো।
– বললাম তো আপনার খুশি।আমারও খুশি।

সেই খুশিতে আমি আর কাজল বিয়ের পিঁড়িতে বসে গেলাম।ভাবতে পারেনি ওকে ফিরে পাবো।তবে বিশ্বাস ছিলো নিজের ভালোবাসার উপর।ইমন কে ধন্যবাদ।ও সেদিন ইউ এস না গেলে আমি হয়ত কাজলকে পেতামই না।অপেক্ষা এটা খুব কষ্টের। তবে অপেক্ষার ফল মধুর হয়।কাজল কে পেয়ে সেটাই বুঝলাম।মার আশাই পূরণ হলো।
সারাদিন ঘরের মধ্যে বউ আমার ছুটাছুটি করে।কথার খই ফুটায়।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত