শুভ জন্মদিন

শুভ জন্মদিন

– আমাকে তুমি একটা চড় দিতে পারলে আমিও তোমাকে দুইটা চড় দিয়ে বুঝিয়ে দেব যে আমিও পারি ( মিম)
মিমের মুখে এমন একটা কথা শুনে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো । কোনোদিন ভাবতেই পারিনি ও এরকম কোনো কথা বলতে পারবে ।
– ……… ( আমি )
– হ্যালো ?
– ………
– কি হলো কথা বলছো না কেন ? কথা বলতে ভালো লাগছে না ?
– টুট টুট টুট

কেটে দিলাম ফোনটা । নিঃশব্দে এখনো পানি ঝরছে চোখ দিয়ে । আটকাতেই পারছিনা । প্রায় দুই বছর হতে চললো সম্পর্কের । আমাদের এ অবস্থার জন্য মিম সবসময় আমাকেই দায়ী করে । আমি শুধু চুপ করে শুনি যে ও কতদূর বলতে পারে । নাহ । যতটুকু ভাবতাম তার চেয়ে অনেকবেশি বলে ফেলে । পরিবর্তন কি এটাকেই বলে ?? রিলেশনের শুরুতে যখন আমি একটা কিছু বলতাম , তখন কোনো কথার তোয়াক্কা না করে আমার কথাটা শুনতো ও। আর আজ ? আগে যখন ধমক দিতাম তখন আমি বুঝতে পারতাম যে ও কাঁদছে । তাই যতটা পারতাম নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতাম । আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতাম যাতে ও কখনো কষ্ট না পায় । একদিন হঠাৎ ফোনে কিছু একটা নিয়ে তর্ক হচ্ছিল । কেউই হার মানতে রাজি না । তাই , কথায় কথায় সেটা থেকে বড় ঝগড়ার সৃষ্টি হলো । ঝগড়ার পর ফোনটা কেটে দিয়ে সাথে সাথে ফোনটা অফ করে ফেল্লাম । খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে । ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে আছি একা একা । গান শুনছি । গান হচ্ছে আমার ২য় অক্সিজেন । এটা ছাড়া আমার চলেই না । রাত তখন ১.৩০ । ফুল সাউন্ডে rock zircon এ গান বাজছে ।

বুঝতে পারছি কষ্ট হচ্ছে । বুকের বাম পাশটা চিন চিন করছে । মেয়েটাকে এভাবে বলা উচিৎ হয়নি । তবে ঔ তো কম যায় না । আমি একটা কথা বল্লেই ওর দুইটা কথা শুনায় দিতে হবে ? আমি আগেই বলেছিলাম যে , আমার যখন রাগ হবে , তখন তুমি একটা কথাও বলবানা । চুপচাপ শুনবা শুধু । মেয়েটার একথা মনেই নেই । তাই আমিও বকে দিয়েছি ইচ্ছে মতো । এখন বুঝুক মানুষকে কষ্ট দিলে কেমন লাগে । রাত ২ টা । কি ভেবে জানি ল্যাপটপটা নিলাম । ভালো লাগছে না কিছুই । রেখে দিলাম । পরদিন ঘুম থেকে উঠলাম দুপুর ১ টায় । ফোন তখনো বন্ধ । আর খুলবোনা আমি । থাক এভাবে । ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম । খাওয়া শেষ করে বের হলাম । কাজ আছে একটু । কাজ শেষ করে ফিরতে রাত হয়ে গেল।
– কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? আর ফোন বন্ধ কেন তোমার ? ( আম্মু )
– ফোনে চার্জ শেষ ( শার্ট খুলতে খুলতে )
– ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও । খাবার টেবিলে রাখা আছে । আমি ঘুমালাম ।

খাওয়ার কথা ভুলেই গেলাম । খুব ক্লান্ত লাগছে । বিশ্রাম নিতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই বুঝতে পারিনি । উঠে দেখি রাত সাড়ে তিনটা । হঠাৎ মিমের কথা মনে হলো ।  ও খেয়েছে তো ? সারাদিন কোনো কথা হয়নি ওর সাথে ।  ফোনটা অন করলাম । ভাবলাম অনেকগুলো অভিমান ভরা মেসেজ আসবে । ওর যখন কষ্ট হয় তখন ও এরকম ই করে ।

কিন্তু একটা মেসেজ ও দেয়নি আমাকে । আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছিলাম তার থেকে বেশি অবাক হলাম । একটা মেসেজ ও দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি ও ? উঠে বসলাম । টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে ছাদে গেলাম । চারিদিকে অসম্ভব নিঃস্তব্ধতা । ঝি ঝি পোকারা নিজেদের ভাষায় কথা বলছে । চাদের আলোটা ঠিক মাথার উপরে । একটু একটু শীতল বাতাস একাকীত্বটাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে । আকাশে তারা নেই একটাও । আমার মনের মতো আকাশের মনেও মেঘ জমেছে । সম্পর্কটা তো এমন ছিল না আমাদের । অন্যদের মতো আমরাও একে অপরকে ভালোবাসতাম । খুব বেশিই ভালোবাসতাম । আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি প্রথম দিনগুলোর কথা । প্রথম যখন কথা হতো তখন আমাদের এরকম ঝগড়া হতো না । একটু রোমান্স , একটু ভালোবাসা , একটু রাগ , একটু অভিমান নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের ভালোবাসা ।

আগে আমার সাথে কথা না বলে এক দিন তো দূরে থাক , এক ঘণ্টাও থাকতে পারতো না । তখন ওর সবকিছুই ছিলাম আমি । ও কখন কি করবে , কিভাবে করবে সব আমার কথায় হতো । খুব ভালোবাসতাম আমি মিমকে । আমি না খেলে ও কখনো খেতে চাইতো না । আমি ওর একটা কথা না শুনলে অভিমানে কথা বলা বন্ধ করে দিত । এককথায় ওর সব ছিলাম আমি । আমিই ছিলাম ওর জীবন । এসব কথা ভাবতে ভাবতে বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো । ভালো লাগছে না । শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেয়া । তাই রুমে চলে এলাম । ঘুম আসছে না । খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে মিমের সাথে । ও আমাকে সারাদিনে একটা মেসেজ দেয়ারও প্রয়োজন মনে করলো না ? এতটাই দূরের হয়ে গেছি আমি ? শুধু তো রাগে একটু বকে দিয়েছি , তার জন্য এত বড় শাস্তি ? শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ।

ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল এগারোটা । আজ প্রাইভেট মিস । ৯ টায় ছিল প্রাইভেট । এভাবে আজকের দিনটিও কেটে গেল । পরদিন রাতে ফোন অন করলাম । তখন ও মিমের কোনো মেসেজ নেই । কষ্ট পাবো নাকি অবাক হবো , বুঝতে পারছিলাম না । এভাবে ৬ দিন পার হয়ে গেল । কোনো যোগাযোগ নেই মিমের সাথে । একটা কথাও হয়নি । আমি কেমন আছি ওর কি একবারো জানতে ইচ্ছে করে না ? এতদিন এ ও আমাকে একটা ফোন বা মেসেজ কিছুই দেয়নি । দেখছিলাম, কতদিন ও কথা না বলে থাকতে পারে । ৬ দিন পর হঠাৎ ও নিজেই ফোন দিলো । ১৮ তম কল হওয়ার পর রিসিভ করলাম –

– ………… ( মিম) ( কাঁদছে )
– ………… ( আমি )
– রবি আমাকে এত কষ্ট দেয়ার আগে একবারো ভাবলানা ? মরে যাবো আমি । আর নিতে পারছিনা ।
– …………
– কথা বলোনা কেন ? এতদিন একটা ফোন , মেসেজ কিচ্ছু দাওনি । কেন ? আমি এর উত্তর জানতে চাই
– এমনি
– এমনি মানে কি হ্যাঁ ? উত্তর দাও আমার । উত্তর চাই
– আমি তোমাকে উত্তর দিতে বাধ্য না
– কেন না ? আমাকেই দিতে বাধ্য তুমি ( কান্না আরো বেড়ে গেছে )
– কান্না থামাও
– ………….
– বলছিনা কান্না থামাতে ? ( একটু জোরেই বল্লাম )
– …………
– কান্না থামিয়ে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো । পরে ফোন দিও।

ফোনটা কেটে দিলাম । এই মূহুর্তে ওর সাথে কথা বলার একটু মাত্র শক্তিও আমার অবশিষ্ট নেই । ওর কান্না আমার একদম সহ্য হয় না । তাই ফোনটা রেখে দিলাম । খুব কষ্ট হচ্ছে । একটু পর ফোন আসলো । কথা বল্লাম । এখন সব ঠিকঠাক । সময় এগোতে লাগলো । পরিবর্তনটা শুরু তখন থেকেই । আমি কিছু বল্লেই ও রেগে যেত । পাল্টা উত্তর শুনিয়ে দিত। ওর এরকম ব্যবহারে সত্যিই খুব খারাপ লাগতো । তবুও কিছু বলতাম না । আমি সবকিছু এমনভাবে ওকে বোঝাতাম যেন , আমি কিছুই মনে করিনি ।

বুঝতে পারছিলাম , আমার আর কোনো কথায় ই কাজ হবেনা । পুরোনো হয়ে গেছিলাম তো !  আপনি যখন একটা নতুন আইফোন কিনবেন , তখন সেটার উপর ভালোবাসা , গুরুত্ব ও যত্ন সবই সমান থাকবে । দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আইফোনটা একই থাকবে , তার প্রতি ভালোবাসাটাও একি থাকবে , শুধু সেটাকে সময় দেয়াটা একটু কমে যাবে । সে সাথে কমে যাবে গুরুত্বটাও । একটা সময়ে এক প্রকার জীর্ণ শীর্ণ হয়েই পড়ে থাকবে বিছানার কোণে । ভালোবাসাটাও এরকম , ভালোবাসাটা একই থাকবে , শুধু তাকে সময় দেয়াটা কমে যাবে ।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম এসব কথা । সবটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম । এই মূহুর্তেই ফোন আসলো মিমের। রিসিভ করলাম ।

– আমার আইডিটার কি যেন হয়েছে । একটু দেখবা ? ( মিম)
– কি হয়েছে ?
– কাউকে মেসেজ করতে পারছিনা ।
– IP প্রবলেম । ঠিক হয়ে যাবে ।
– ওহ ওকে । কি কর
– কিছুনা
– টুট টুট টুট

একটু পর মেসেজ আসলো , আম্মু আসছে । মেসেজ করো । মিথ্যা ভরা মেসেজটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম একা একাই । ফোন দিলাম সাথে সাথেই । সাথে সাথে অচেনা এক যান্ত্রিক নারী কণ্ঠ বলে উঠল -” your call is now in wai কেটে দিলাম । আর ইচ্ছা করছে না শুনতে । আমি জানি মিম আমাকে খুব ভালোবাসা । তবে কেন ও আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে ? ও কি বুঝতে পারছেনা কিছুই ? ১৭ ই মার্চ ওর জন্মদিন । আর এখন আমাদের অবস্থা । এসব ভাবতে ভাবতে বের হয়ে এলাম । রাত সাড়ে ১১ টা । বসে আছি একা একা রেললাইনে । হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো । আম্মু ফোন দিয়েছে । কেটে দিলাম । বুঝতে পারলাম দেরি হয়ে গেছে । তাই উঠে হাটা শুরু করলাম । আবার ফোন আসলো । এবার বাজতেই থাকলো । রিসিভ করলাম না ।

বাসায় পৌছে দেখি আব্বু । আব্বুকে একটু বেশিই ভয় পাই । রাতে বাসা থেকে বের হওয়া একদম পছন্দ করেনা আব্বু । কিন্তু সেদিন কিছুই বললো না । আমি ফ্রেশ হতে যাবো , তখনি আম্মু বলে উঠলো – মিম ফোন দিয়েছিলো ।
কথাটা শুনে এক মূহুর্তের জন্য দাড়িয়ে গেলাম । কথাটা আব্বুও শুনলো । আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম । এসে খেয়ে নিলাম আব্বুর সাথে । সবসময় আব্বুর সাথেই খাই । আমি ভাবছি হঠাৎ মিম কেন ফোন দিতে যাবে । খাওয়া শেষ করে ছাদে গেলাম । শীতকাল হলেও হালকা গরম পড়েছে । গান শুনছি । এর মধ্যে মেসেজ আসার শব্দ পেলাম । এত রাতে যে কে মেসেজ দিতে পারে সেটা বোঝার বাকি রইলো না । কথা বলা শেষ করে রুমে চলে এলাম । এভাবে আর থাকতে পারছি না । ফোন দিলাম মিমকে ।

– একটু দেখা করতে পারবা ? ( আমি )
– এখন ? কিভাবে ? ( মিম)
– আজব । আমি কি এখন দেখা করতে বলেছি ?
– তাহলে ? কবে ?
– কাল বিকেল ৫ টায় ।
– কোথায় ?
– সেটা আমি পরে বলে দেব ।
– আচ্ছা ।

অনেক হয়ে গেছে । এভাবে আর চলতে পারেনা । সব নতুন করে শুরু হবে । তাই হঠাৎ করে দেখা করতে চাওয়া ।পরদিন বিকেলে বসে আছি একটা পার্কে । আমার সামনে নদী । একটা বেঞ্চে বসে আছি । আমার আশেপাশে কাপল ঘুরাঘুরি করছে । ভাবতাম আমিই বোকা । এখন তো দেখছি পুরো উল্টো । ছাত্রজীবনে প্রেম করা মানে অন্যের বউকে পাহাড়া দেয়া । নিজেই তো দিচ্ছি , আবার মানুষকে বলছি । এসব ভাবছি আর আশপাশটা দেখছি । হঠাৎ করে হাসিমুখের একটা মেয়ে কোথাথেকে এসে বলল –

– বসতে পারি ভাইয়া ?
– ( দেখতে তো খারাপ না , ভাইয়াও বলছে । ব্যাপারটা কি ? আজকালকার মেয়ে , কোনো বিশ্বাস নেই )
– কি ভাবছেন এতো ? বসবো নাকি দাড়িয়েই থাকবো ?
– ( দেখতে তো সরলই লাগছে , তবুও কোনো চান্স নেয়া যাবে না ) জ্বী অবশ্যই । ( আমি বেঞ্চের এক কোণায় এসে বসেছি ) ( আমার এরকম আচরণে মেয়েটিকে একটু অবাক দেখালো ) এসব উপেক্ষা করে , মেয়েটা বলে উঠলো –

– আসলে ভাইয়া , আমার বয়ফ্রেন্ড আসার কথা ছিল । আমার ফোনের চার্জ শেষ । তাই তার সাথে একটু কথা বলবো। আপনার ফোনটা কি একটু দেয়া যাবে ?

– এই নিন ( ফোন দিতে দিতে )
( কোনোদিকে না তাকিয়ে , তাড়াতাড়ি ফোন নাম্বার ডায়াল করে ফোন দিল । ওপাশ থেকে কি কথা হলো কিছুই শুনতে পেলাম না । শুধু হাসিমুখে মেয়েটার আচ্ছা শব্দটি শুনে ফোনটা রেখে দিতে দেখলাম )

– আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো ভাইয়া । ( ফোন আমার কাছে দিতে দিতে )
– ধন্যবাদ লাগবে না । It’s ok.
– আচ্ছা ভাইয়া . আসি ( মুচকি হেসে ) ( আমি শুধু তাকালাম , কিছু বল্লামনা )

চলে গেল মেয়েটি । ১ ঘণ্টা ধরে বসে আছি , তার আসার নামই নেই । কত নাটক সিনেমায় , ফেসবুকের গল্প গুলোতেও পরেছি যে , গার্লফ্রেন্ড আগে এসে বসে থাকে , বয়ফ্রেন্ড এসে রাগ ভাঙ্গায় । আমার বেলায় তো ঠিক উল্টোটা হচ্ছে । খুব রাগ হচ্ছে মিমের উপর । না পেরে ফোন দিলাম । ফোনটা কেটে দিল । তার মানে এসে গেছে । দেখতে পেলাম ও আসছে । এসে আমার পাশে বসলো । কিন্তু একটু দূরে । ২ ঘণ্টা ধরে বসে আছি , এমনিই মেজাজ খুব খারাপ । তার উপর এরকম ব্যবহার মোটেই সহ্য করার মত নয় । তবুও কিছু বল্লাম না । আমি কিছু বলতে যাবো , তার আগেই ও বলে উঠলো –

– মেয়েটি কে ছিলো ? ( হালকা রাগে )
– চিনিনা । আমার ফোন দিয়ে কথা বল্লো ( শান্ত হয়ে )
– ও আচ্ছা । তুমি চিনোনা ? কিন্তু ফোন করার জন্য তোমার ফোন তাকে দিয়ে দিলে ?
– তেমন কিছুই না . ওনার ফোনো চার্জ ছিলো না , তাই ওনার বয়ফ্রেন্ডকে ফোন দেয়ার জন্য আমার কাছে ফোনটা চাইলো । আমি দিলাম ।
– ও আচ্ছা । সেটা তো অন্যকারোর ফোন দিয়েও দিতে পারতো । পার্কে কি অন্য মানুষ ছিল না ?
– ( ওর এরকম কথা শুনে আস্তে আস্তে মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে ) এটা কেমন কথা ? আমাকে সন্দেহ করছো ? এরকম করে বলছো যেন ঐ মেয়ের সাথে আমি প্রেম করি ?

– এই তো সত্যি কথা বের হলো
– মানে
– আর কয়টা মেয়ের সাথে এরকম করেছ ? ঠাসসসসস !!

– কি সমস্যা তোমার ? হু ? আজকাল দেখছি তুমি সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে সন্দেহ করছো । মেয়েটাকে আমি চিনিনা । এর মধ্যে প্রেম আসলো কোথা থেকে ?

– প্রেম ই তো করো । আমার মতো আরো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছো তুমি । মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা করো ।
ঠাসসসস!

– খেলা তো তুমি আমার সাথে করছো । যেদিন থেকে আমাদের ঝগড়া হয়েছে ঐদিন থেকে তুমি আমার সাথে এরকম সন্দেহ করা শুরু করেছো । আমি কি ক্ষমা চাইনি ঐ ঝগড়ার জন্য ? তারপরোও কেন এসব ? সারাদিনে কয়টা ছেলের সাথে কথা বলো তুমি ? কি করো সারাদিন ফেসবুকে ? আমার মেসেজগুলোর তো রিপ্লে আসেনা । কিছু বুঝিনা আমি ? কিন্তু ফেসবুকে তো ঠিকই সারাদিন থাকো , কয়টা ছেলেকে ছবি দিছো ? চেন একটা ছেলেকেও ? না করিনি অচেনা ছেলেদের ছবি দিতে ? আমি চ্যাট গুলো দেখিনি ভাবছো ? প্রত্যেকটা ছেলের সাথে চ্যাট দেখেছি আমি , আর সবাইকেই তুমি ছবি দিয়েছ । আর কয়টা আইডি চালাও ? কোনোদিন দেখেছো যে একটা মেয়ের সাথে আমি কথা বলেছি ফেসবুকে ।

তোমার জন্য আমি ফেসবুকে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছি । ইমেইলটাও তোমাকে দিয়েছি , তারপরও তুমি আমাকে বলছো আমি প্রেম করি ? লজ্জ্বা হয় না তোমার ? আমার মেসেজগুলোর রিপ্লেও দেরি করে দাও , সারাদিন চ্যাট করো অন্য ছেলেদের সাথে , কিছু বলেছি সে জন্যে ? আমাকে আর ভালো লাগে না সেটা বল্লেই তো পারো । ঝগড়ার পর আমি তোমাকে বলিনি যে , এরকম না করতে ? সম্পর্ক ঠিক করতে চাইনি আমি ? তোমার জন্য আম্মুকে দেয়া প্রতিজ্ঞাও ভঙ্গ করেছি । আর কি চাও তুমি ? সারাদিন অন্য ছেলেদের সাথে মেসেজ , চ্যাট , ছবি দেওয়া , আর আজ আমাকে বলছো যে আমি কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করি । আগে নিজে ঠিক হও তারপর অন্যকে বলো একবারে কথা গুলো বলে শেষ করলাম । চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মিমের । এতক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে । আমার কাছ থেকে এরকম কোনো কথা আশা করেনি ও । দাড়িয়ে আছি বেঞ্চের একপাশে । মিম উঠে চলে যাচ্ছে । আমি তাকিয়ে আছি অন্যদিকে । বুঝতে পারছি চোখের কোণে পানি জমেছে ।

– কোথায় যাচ্ছো ? ( আমি )
– মিম দাড়াও । যেও না  ( ও কথা শুনছেই না , হেঁটেই যাচ্ছে )
– মিম দাড়াও বলছি

আমার কথা শুনলোই না । গাড়িতে উঠে চলে গেলো । আর পারলাম না ধরে রাখতে , চোখ থেকে এক ফোটা পানি গাল বেয়ে পড়লো । আমি দাড়িয়ে আছি এখনো । ২ বছরে এই প্রথম মিমের গায়ে হাত তুললাম । রাগটাকে কন্ট্রোলে রাখতে পারিনি । কাল মিমের জন্মদিন । ও এখনো পরিবর্তিত হয়নি । আগের মতোই আছে । আমিও আর কিছু বলিনি । যে যেভাবে খুশি থাকতে চায় , তাকে সেভাবেই থাকতে দেয়া ভালো । ১৬ ই মার্চ , রাত ১০ টা । ওর সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছি । ওর মেসেজগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ও খুব খুশি । তবে কষ্টও পাচ্ছে । আমার সাথে দেখা হবেনা বলে । এভাবেই কথা হচ্ছে ।  রাত ১১.৩০ – আর আধঘণ্টা বাকি । সবার আগের Wish টা ও আমার কাছ থেকে পেতে চায় । ঠিক ১২ টার সময় ফোন দিতে বললো ।

আমি বললাম আচ্ছা । রাত ১১.৪০ -আমি ফেসবুকে ঢুকলাম । দেখলাম চ্যাট লিস্টের সবার উপরে মিমকে একটিভ দেখাচ্ছে । রিফ্রেস করলাম । দেখলাম – ” Active 1 minute ago ” ভাবছি আমাকে দেখেই চলে গেল নাকি , চ্যাট turn off করে ফেল্ল । ও তো আমাকে বলেছিল যে , ও চ্যাট turn off করতে জানেনা । তাহলে কি হলো ?? কি ভেবে আমি ওর আইডিতে ঢুকলাম । দেখলাম দিব্যি ৪ টা ছেলের সাথে চ্যাট চলছে । চ্যাট Turn off করা । একটা একটা করে মেসেজ দিচ্ছে আর ডিলিট করছে । একইসাথে ৪ জনের সাথে সুন্দর ভাবে চ্যাট চলছে । তার মধ্যে একজনের নিকনেম ” জানু ” চোখে পানি জমতে শুরু করেছে । বুঝতে পারছি আর কিছুক্ষণ এগুলো দেখলে আমি ঠিক থাকতে পারবোনা ।

১২ টা বাজতে আর ১ মিনিট বাকি । আর দেখার ক্ষমতা নেই আমার । ওর আইডি থেকে বের হয়ে , সিমটা খুলে ফেল্লাম । তখন ঠিক বারোটা । চোখের পানিগুলো ভারী হতে শুরু করেছে । সিমটা ভেঙ্গে জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম । আজ জন্মদিনের মতো এমন একটা দিনেও চেয়েছিলাম যে , তোমাকে একটুও কষ্ট দেবনা । একটুও না । পারলাম না মহারাণী । আজ তোমাকে Wish করার জন্য অনেকেই আছে । আমার wish টার অভাব , আজ অনেকের wish দ্বারা পূরণ হয়ে যাবে। সেদিনের মতো আজও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! তবে আজ আর সেটা দেখার কেউ নেই ! মুছে দেয়ারও কেউ নেই !!

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত