অসহায় একটি মেয়ে

অসহায় একটি মেয়ে

এই যে মিস্টার শুনছেন? জ্বি, বেগম শুনতে পাচ্ছি, বলুন সাহেবা? নতুন ক্যাবিক হচ্ছেন নাকি? কোথায় ক্যাবিক? আপনাকে বলতেছি শুনতে পাচ্ছেন না? আমি কালা নাকি শুনতে পারবো না? হুমমমমম তুমি, কালা, বোবা, হনুমান, হাদারাম, বাদুর, ইঁদুর সবকিছু। (মেয়েটা আজ ভীষণ রেগে আছে। আর একটুতেই মেয়েটা ভীষণ রেগে যায় একদম জালমরিচ। রাগবেই তো আজ জাল মরিচটার জন্য ভীষণ মায়া হয়েছিলো তাই সকাল সকাল অঘটন করে বসলাম। সাহায্য করার জন্য যেই মাত্র পাক রুমে ডুকি এমনি দুর্ঘটনা। না দেখে ওর কাটা সবকটি টমেটো একদম চেপ্টা। সেই শোকে মেয়েটা আমার সাথে জগড়া করতে এসেছে। দেখি জল কতদূর গড়ায়) আর ভাবনা নয় জগড়ায় মনোযোগী হতে হবে। তাহলে এই হনুমান, বাদর, ইঁদুর টাকে ভালোবাসো কেন? কচু বাসি।

তোমার মতো একটা হনুমান কে ভালোবাসবো!! চেহারাটা আয়নায় দেখেছো যত্তসব হনুমান? কি আমি হনুমান? তেজপাতা, কাঁচামরিচ, যদি মেয়ে না,,,, কি আমি মেয়ে? তা নয়তো কি ছেলে? হু হু হু হু হু (কেঁদে দিলো মেয়েটা) আরে দূর কে বলেছে তুমি মেয়ে? তুমি আমার জালমরিচ, কাঁচামরিচ লক্ষি বউ সবকিছু। এই একটু আগে তাহলে আমাকে মেয়ে বললে কেন? ঢং করছি। সত্যি?? হুম তিন সত্যি। ভালোবাসি। কাকে? হনুমানটা কে। আর এই একটু আগে বললে ভালোবাসো না। ঢং করেছি। সত্যি? হুমমমমম তিন সত্যি। হু সকালে কি খাবে? তোমাকে। কচু খাবে জিব্বা দেখিয়ে পালিয়ে গেলো ছোঁয়া। ওহ সরি বলা হয়নি ওর নাম ছোঁয়া। ভাবনায় সেদিন দাড়িয়ে ছিলাম বাসের জন্য হঠাৎ পেছন থেকে,,,, এই যে শুনছেন?(মেয়েলি কন্ঠ) টাস্কি খাইলাম পরক্ষনে সমলে নিয়ে,,,, জ্বি বলেন? আসলে এই শহরে আমি তেমন একটা চিনি না।

যদি আমাকে একটু হেল্প করেন জ্বি বলেন চেষ্টা করবো। (একটা ঠিকানা হাতে ধরিয়ে দিয়ে) আমাকে এই ঠিকানায় যদি ভীষণ তাড়া ছিলো তারপরও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে না করতে পারলাম না। এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমি পূর্বে কখনো দেখিনি মনে হলো। মেয়েটা উজ্জল শ্যামলা মুখে এতো মায়া যে মায়াতে আমি হারিয়ে ছেলেছি নিজেকে। কি রকম একটা মায়া কাজ করলো। এই যে কি হলো? কিছু বলছেন না কেন? চলেন বাসে পাশাপাশি ছিটে বসা মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম কিছু একটা ঘটেছে টেনশন করতেছে মেয়েটা। মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঠিকানায় পৌঁছালাম টেরই পেলাম না। ঠিকানা মিলিয়ে দেখলাম ঠিক আছে।

অতঃপর- এই যে এসে গেলাম আপনার ঠিকানায়। বাসাটা বন্ধ মনে হচ্ছে, চলুন ভিতরে গিয়ে দেখা যাক। হুম চলুন,,, হুমমমমম বাসাটা বন্ধই,, মেনেজার কে জিঙ্গাসা করার পর বললো,,, এই দুইদিন হলো ইনার এখান থেকে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন বলতে পারবেন? না তা বলতে পারবো না। ওকে ধন্যবাদ। মেয়েটার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এতো সুন্দর মায়াবী মুখটা নিমিষে ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। কই চলুন,,,কোনো কথা নেই সারাশব্দ নেই। মেয়েটার এরকম অবস্থা দেখে আমার ভীষণ কষ্ট লাগলো। এই যে প্লিজ আমাকে কিছু বলেন তা না হলে আমি কিছুই করতে পারবো না। শুনবেন আমার এত্ত বড় জীবনের গল্প? হুম বলুন।

আমি গ্রামের একটা মেয়ে। ছোট বেলাতেই আমার মাকে হারিয়ে ফেলেছি। মায়ের আদর, ভালোবাসা কখনো পাওয়া হয়নি। বাবা আরোএকটা বিয়ে করে। ছোটবেলা থেকেই নানির বাড়িতে তাকতাম আমার এক মামা এবং একজন খালা। নানি এই কয়দিন হলো মারা গেেছে। নানি আমাকে ভীষণ ভালবাসতো, মামি আমাকে একটুও ভালোবাসে না। কাল হঠাৎ ঘর থেকে একটা সোনার নেকলেস না কি জানি হারিয়ে গেছে। মামি বলে আমি চুরি করেছি। বিশ্বাস করেন এর সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। মামি সবাই কে বলে বেড়ায় আমি চুরি করেছি। নেকলেস টা ফেরত দিতে।

আমি অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্তহত্তা করতে গিয়েছিলাম কিন্তুপারিনি আত্তহত্তা করতে। তাই বাধ্য হয়ে চলে আসলাম শহরে এখানে আমার খালা থাকেন কিন্তু আজ খালাও নেই। মেয়েটার চোখ থেকে অঝর ধারায় গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তেছে। ভীষণ কষ্ট লাগলো আমার। আর মেয়েটার জন্য কেমন জানি মায়া হলো। কি করবে? কি করা যায়? ভেবে ভেবে হঠাৎ বলে উঠলাম বিয়ে করবে আমাকে? কোনো কথা বলতেছে না মেয়েটা। কিছু একটা বলেন প্লিজ। কোনো কথা নেই চোখের জল ফেলেই যাচ্ছে মেয়েটা। এরকম দু মিনিট,পাঁচ মিনিট কোনো কথা নেই। অতঃপর : ওকে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে লাগবে নাঅন্যকোনো ভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি,,,, আমি কি আপনাকে বলেছি আমার কোনো সমস্যা? না তা নয়। আচ্ছা আপনার নামটা কি? ছোঁয়া, আপনে নয় তুমি করে বলবেন।

অতঃপর : আমরা বিয়ে করে ফেলি।হঠাৎ চিৎকার করে,,, এই যে হনুমানসাহেব চা টান্ডা হয়ে শরবত হয়েছে এখন শরবত খাবেন নাকি? এই এত চিৎকার করে বলতে হয় নাকি? আজ চা, শরবত কিছুই খেতে মন চাচ্ছে না একটা পাপ্পি খাবো দাও না গো। বয়ে গেছে পাপ্পি দেবো হনুমান কে? কোনরকম হাতটা ধরে হাচকা টানে জালমরিচটাকে বুকে নিয়ে আসলাম। বেশি কিছু চাই নি পাপ্পি দিবে তারপর যাবে। এই মা আসতেছে ছাড়ো। কি ভাববে? কি ভাববে আবার আমার বউ কে আমি আদর করতেছি।

এই ছাড়ো,,,, মা,,,,, জ্বি বলেন? সত্যি সত্যি মা নাকি ছেড়ে দিলাম। জালমরিচটা কিছুদূর গিয়ে আমাকে জিব্বা দেখাচ্ছে আমাকে বোকা বানানু হলো। পরে শোধ সহ আসল তুলে নেবো তখন টের পাবি জালমরিচ। আমাদের এতো সুখের মধ্যে চিন্তা ছিলো বাবা, মা কি আমাদের মেনে নেবে? কিন্তু উল্টটা হলো একটা অসহায় মেয়ের পাশে দাড়াতে পরেছি একটা অসহায় মেয়ের মুখে হাঁসি ফোটাতে পেরেছি এর জন্য বাবা, মা আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন।
পরিশেষে : আপনিও দেখেন না একটা অসহায়ের মুখে হাঁসি ফোটাতে পারেন কি না।

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত