তোমায় চিনতে পারিনি

তোমায় চিনতে পারিনি

সম্পর্কর শুরু থেকেই নিলয় আমার সাথে রাতে কথা বলতোনা।ওর রাতে ঘুম পায়,রাতে বাসার সবাই সজাগ থাকে অনেক রাত পর্যন্ত এসব বলে কাটিয়ে নিতো।এতোকিছুর পর ও আমি প্রায় রাতে কল দিতাম।ভাবতাম ও মনে হয় আমাকে ঠকাচ্ছে।অন্য কারো সাথে কথা বলছে কিন্তু না।ওর ফোন আমি ওয়েটিং পেতাম না।
তখন নিজের কাছে খুব শান্তি লাগতো যে না ও আমায় ঠকাচ্ছেনা।

নিলয়ের সাথে সম্পর্ক হয়েছে ফেইসবুকের মাধ্যমে।কেন যেন ছেলেটার সাথে আমার সারাদিন কথা বলতে ভালো লাগতো খুব। কোন অনিয়া আসতোনা আমার কথা বলতে।সবসময় আমার প্রশংসা করতো। মেয়েদের এই একটা দূর্বলতা আছে,সে প্রসংসা নিজের প্রসংসা শুনতে ভালোবাসে।
আর ছেলেরা সেই দূর্বলতাকেই কাজে লাগায় বার বার।
নিলয় কারো ছবিতে মন্তব্য না করলেও আমার ছবিতে করতোই।ধীরে ধীরে ১মাস-দু মাস, তিন মাস গড়িয়ে গেল আমাদের ফ্রেন্ডশিপ এর।হঠাৎ ই আমার জন্মদিন এ আমার ফোন নম্বর চেয়ে বসলো।আমিও আর না করতে পারিনি।

প্রথম কথা শুনেই আমি ওর প্রেমে পরে যাই। ও দেখতে যতটা সুন্দর ছিল তার থেকেও ওর ভয়েস এ একটা জাদু ছিল।যে জাদু খুব সহজেই ঘায়েল করতে পারে।২মাস কথা বলতে বলতে কখন যে তা ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে,কখন যে তা নিত্যদিনের খোঁজ খবর নেয়ায় পরিনত হয়েছে তা বুঝতে পারিনি।আমি ভালোবাসার চেয়েও ও আমার অভ্যাস এ পরিনত হয়েছিল।
সারাদিনে বেশ কয়েকবার কথা হতো তবে রাতে নয়।রাত ১২টা পর্যন্ত আমার সাথে চ্যাটিং করতো তারপর সে ঘুমিয়ে যেত। আমার ও ইচ্ছে হতো বাকি সবার মতন রাত জেগে ফিস ফিস করে কথা বলি ওর সাথে।আমার ও ইচ্ছে হতো বাকি প্রেমিকার মতন ভোরের সূর্য ওঠা এক সাথে দেখতে।কিন্তু তা হতনা তবুও আমি নিলয়কেই ভালোবাসি।অন্ধের মতন ভালোবাসি।একই শহরে ৬মাস সম্পর্ক হবার পর ও নিলয় দেখা করতে চাইতো না।আমার ইচ্ছে হতো একসাথে ঘুরে বেড়াতে।

নিলয় কে বললাম সামনে পহেলা বৈশাখ…আমি শাড়ি পরে বের হবো।

নিলয়: হুম হও।

আমি: তোমার সাথে।

ও অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলে দেখি।

আমি বললাম দেখি আবার কি?তুমি কি আমায় ভালোবাসনা?সত্যি করে বলো তাহলে প্রমিস..আমি আর বিরক্ত করবোনা।

নিলয়: আরে পাগলি,ভালোবাসবো না কেন?তুমি তো আমার।লক্ষি বউ।চেয়েছিলাম বিয়ের আগে দেখা করবোনা।ভালোবাসা বাড়বে। আর আজকাল ছেলে মেয়েরা দু দিনের রিলেশন এই লিভ টুগেদার এ যায় আমি ওমন নই ইলা।

ওর এই কথায় আমার ওর প্রতি ভক্তি পাহাড় ছুঁই হয়ে গেল।

নিলয় শোন,দেখা করতে চাওয়া অন্যায় না।আর আমাদের একবার দেখা হওয়া উচিৎ।

নিলয়: আচ্ছা যদি আমায় পছন্দ না হয়?

আমি হেসে বললাম পাগল আমি কি তোমার পিক দেখিনি?পছন্দ না হবার কি আছে?

নিলয়: আচ্ছা ইলা যদি আমার চেহারা কোন কারনে নষ্ট হয়ে যায় ভালোবাসবে আমায়?

আমি: কেন না?আমি তো নিলয়কে ভালোবেসেছি।ওর কথা কে ভালোবেসেছি।ওর চেহারা তো শুধু চেনার মাধ্যম।ভালোবাসার মানুষ যেমন হোক তাকে ফিরিয়ে দেয়া যায়না। এখন বলো দেখা করবে?

নিলয়: আচ্ছা।

আমি: আমি সাদা শাড়ি পরে আসবো আর তুমি নীল পাঞ্জাবি।

নিলয়: আমার ও রঙের নেই।কালো চলবে?

আমি হেসে বললাম আচ্ছা।

ধীরে ধীরে দিন গুনতে থাকলাম।সাদা শাড়ি পরে বার বার আয়নায় দেখতাম নিজেকে।নিলয় কি আমায় দেখে সুন্দর বলবে?এই ভয় লাগতো নিজের কাছে।সময় ফুরিয়ে গেল বলতে বলতে।কাল পহেলা বৈশাখ।নিলয়ের সাথে কথা বলে জায়গা-সময় সব ফিক্সড করলাম।

সকাল ১০টা নাগাত আমরা দেখা করবো।এই প্রথম সামনাসামনি দেখা হবে দুজনের।ভাবতেই শরীর বল শূন্য হয়ে যায় বার বার।মনের ভিতর কিসের ভয়-না লজ্জা কাজ করছে নিয়েই বুঝছিনা।বার বার গলা শুকিয়ে আসছে।শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে নামলাম।পার্কের ভিতর ঢুকতেই মনে হচ্ছে নিলয় আমায় দূর থেকে খেয়াল করছে।ভয়ে আমি ওকে চারপাশ খুঁজতেও পারছিনা।লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছি।সামনে এক বেঞ্চ পেয়ে বসে অপেক্ষা করছি।

কতক্ষণ যাবত এক ছেলে বেঞ্চ এর চারপাশে ঘুরঘুর করছে।মনে হয় কিছু বলবে আমায়।ব্যাগ থেকে ফোনটা নামিয়ে নিলয়কে কল দিতে নিবো এর মাঝেই ছেলেটি এসে বলে কিছু কথা ছিল।

আমি রেগে বলি আপনাকে আমি চিনি না।

ছেলেটি বললো আপনি যার জন্য অপেক্ষা করছেন হয়তো আমি তাকে চিনি।

আমি মনে মনে ভাবছি এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমি।
নিলয় কে কল দিতেই ওই ছেলের পকেট এ রিং বেজে উঠলো।

আমার সামনেই ফোন টা রিসিভ করে বললো কি আমি ভুল বলেছি?
আমি কানে ফোনটা নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি।একে তো আমি চিনিনা।এ তো নিলয় না।নিলয়ের বহু পিক আমি
দেখেছি ও তো এমন ছিলনা।তাহলে উনি কে?আর ওনার হাতেই বা নিলয়ের ফোন কেন?ভাবতে ভাবতে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

ছেলেটি আবার বললো কি ইলা কি ভাবছো?

ছেলের মুখে আমার নাম শুনে আমি চমকে গেলাম।উনি আমার নাম কি করে জানে তার উপর হবহু নিলয়ের মতন কথা।আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা আমার সমস্ত দুনিয়া থেমে যাচ্ছে…

আমি কিছুক্ষন থ হয়ে তাকিয়ে বললাম কে আপনি?

ছেলেটি তার গায়ের পাঞ্জাবী দেখিয়ে বলে,ইলা আমার এই কালো পাঞ্জাবী দেখেও তুমি আমায় চিনতে পারোনি?
আমি ই নিলয়।

আমি বেঞ্চিতে বসে পরলাম।

এসব কি বলছেন আপনি?আমি আপনাকে চিনিনা।
আপনি নিলয় না।প্লিস আমার সাথে ফান করবেন না।

ছেলেটি আমার পাশে বসে গরগর করে রিলেশন এর ভিতর অনেক কথা বলতে লাগলো।এগুলো বাইরের কারো জানা সম্ভর নয়

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম তাহলে আইডিতে এতো পিক,আমাকে মেসেজ এ যে পিক দিতা ওগুলো কার?

-ওগুলা আমার না।আমি নেট থেকে নামিয়েছি।আসলে আমি আমার পিক দিতে সাহস পাইনি।যদি পছন্দ না করো।

আমি উঠে চলে আসতে নিলাম।

ছেলেটি উঠে এসে আমার সামনে দাড়ালো।
দু হাত দু পাশে নিয়ে আমার পথ আগলিয়ে বলে তুমি না বলেছিলে আমার চেহারাকে ভালোবাসনা?

আমি: লজ্জা করেনা এসব বলতে?আপনার মরা উচিৎ। এতো খারাপ ভাবে আমার সাথে প্রতারণা করলেন আপনি?ঘৃনা করি আপনাকে।

নিলয়: দেখো আমি ভুল করেছি।তাই আমি আর মিট ও করতে চাইনি এই ভয়েই।তুমি চেয়েছো তাই এসেছি।

পকেট থেকে সাদা চুড়ি বের করে আমায় দিয়ে বলে এটা এনেছি তোমার জন্য।

আমি ওটা ফেলে দিয়ে চলে আসলাম।এভাবে প্রতারণার জন্য ওকে কেউ ফাসি দিবেনা।কেউ জেলে নিবেনা।তবে আমার মন ওকে মেরে ফেলেছে।
বাসায় আসার পর থেকে নিলয় অনেকবার কল দিয়েছে।প্রায় ৫দিন কথা না বলে থেকেছি।পরে আর থাকতে পারিনি।কল রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ।
নিলয়: ইলা চেহারাটাই কি সব?

আমি চুপ করে আছি।

নিলয়: আমায় শেষবারের মতন ক্ষমা করে দেও প্লিস।

অনুনয় করার এক পর্যায় আমি ওকে ক্ষমা করে দেই।
এর পর সব আগের মতন ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল।মাঝে মাঝে দেখা করতাম।একদিন রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়। নিলয়কে কল দিতেই এক মহিলা রিসিভ করে।আমি রীতিমত ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,কে আপনি?

ওপাশ থেকে বললো এতো রাতে একটা ছেলের ফোন কে রিসিভ করে?
এই বলে কেটে দিলো।

আমি ভাবতে পারছিলাম না একটা মানুষ চিনতে আমি এতোটা ভুল করলাম।

সকালেই নিলয় কল।এতো ভোরে ও কখনো কল দেয়না।

আমি রিসিভ করতেই নিলয় ভাঙা কন্ঠে বলতেছে ইলা কাল কল দিয়েছিলা?

আমি: উনি কে?তুমি ম্যারিড?

নিলয়: কি বলো এসব?উনি আমার ভাবি।উনি ফান করছে, দেখছে তুমি কি বলো।পাগলি মেয়ে ভয় পেয়েছো?

আমি: ভাবি এতো রাতে তোমার রুমে?

নিলয়: ফোন তার রুমে চার্জ দিয়ে এসেছিলাম।আমার ভাইয়ের ছেলেও আছে দারাও পিক দিচ্ছি এই বলে বাচ্চার পিক দিল।
আমি ও আস্থা রাখলাম

প্রায় ১মাস পর এক ভিন্ন নম্বর থেকে কল।
রিসিভ করতেই এক মহিলা আমায় অনেক আজেবাজে ভাষায় গালি দিয়ে যাচ্ছে।
আমি বুঝে উঠতে পারলাম না উনি কেন গালি দিচ্ছে।

আমি: আচ্ছা কে আপনি?

মহিলা: তুই আবার জিজ্ঞেস করিস কে আমি?আমি নিলয়ের স্ত্রী। আমাদের বাচ্চাও আছে।আর তুই মেয়ে হয়ে আমার সংসার ভাঙতে চাস?

আমি এ কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারলাম না।
আমি তবুও ওর উপর ভরসা রেখে বললাম কি প্রমান আছে?

উনি বললো আচ্ছা দেখা কর সাহস থাকলে।
আমি ওনাকে কলেজের সামনে আসতে বললাম আর নিলয়কেও আসতে বললাম তবে নিলয়কে বলিনি যে ওই মহিলা আসবে।

গিয়ে সামনাসামনি হতেই নিলয় বাজে বিহেভ শুরু করে দিল।এক পর্যায় সে মেনেও নিল যে সে বিবাহিত এবং ওই বাচ্চা তার।তবে সে আর ওই মহিলার সাথে সম্পর্ক রাখতে চায়না।
যে নিজের বিবাহিত স্ত্রী, বাচ্চাকে ভুলে আমায় বিয়ে করতে চাইতে পারে সে দুদিন পর আমায় ছাড়বেনা এর নিশ্চয়তা কি?

আমি বাসায় চলে এসে সব ফোন নম্বর পরিবর্তন করে ফেললাম।এই নোংরামি থেকে সরে যেতে চাই।এরপর অনেকদিন ও কলেজ এর সামনে দাড়িয়ে থাকতো,আমায় বলতো বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করেছে, এখন আমি তালাক দিয়ে দিব।আমি এর পর অনেকদিন কলেজ ও যেতাম না।

প্রায় ৪মাস পর কলেজ এ যেতেই দেখি নিলয়ের বউ দাড়িয়ে আছে।আমায় দেখেই আমার কাছে আসলো।

আমি: কি বেপার?

সে আমায় সবার সামনে চড় মারলো।কলেজের অনেক এর সামনে আমায় নষ্টা মেয়ে বললো।আমি তার সংসার ভাঙতে চাই তাই বললো।আমি কিছু বলতে পারিনি।শুধু নিচু হয়ে কেঁদেছি।একজন মেয়ে হয়ে আরেক মেয়েকে এতোটা অপমান করতে পারে!

কলেজে আমি সবার চেনা হয়ে গেলাম এরপর।সবাই আমায় দেখলেই পিছনে কথা বলা শুরু করে দিতো। এরপর প্রায় ই দুইটা গুন্ডা প্রকৃতির ছেলে আমায় হুমকি দিত নিলয়কে ছেড়ে না দিলে আমায় রাস্তার সবার সামনে তারা অপমান করবে।আমার বাসায় হামলাও করবে।কিন্ত আমি যে নিলয়ের সাথে যোগাযোগ রাখিনি তা তাদের বুঝাতে পারিনি।আমি আবার আগের নম্বর ওপেন করে নিলয়ের বউ কে কল দিলাম।
সে আবার আমায় অনাবরত গালি দিয়ে যাচ্ছে। তারমনে নিলয় রাতে আমার সাথে কথা বলে।আমি এতো বললাম আমি নই সে বিশ্বাস করছেই না।আমি বললাম নিলয় অনেক খারাপ,ও মনে হয় অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করছে।আপনি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিন।

সে আমার উপর রেগে গিয়ে বলে আমার স্বামী খারাপ না,তোর মতন মেয়েরা খারাপ বানাস।আমার স্বামী তোদের নিয়ে ঠিক ই ফুর্তি করলেও ভালো আমাকেই বাসে।

ভাবছি মেয়েরা কতটা অবুজ।তারা মেয়ে হয়ে আরেক মেয়েকে গালি দিতে পারে তবুও নিজের স্বামীকে খারাপ ভাবতে চায়না।এতোকিছুর পর ও স্বামীর সাপোর্ট করছে।

আমি: শুনুন,নিলয়কে জিজ্ঞেস করেন আমি ওর সাথে আর কথা বলিনা।

সে আবারো গালি দিতে লাগলো।আমি আসলেই নিজের লেভেল এতো নিচে নামিয়ে ফেলেছিলাম সবাই কিছু বললেও আমার কিছু বলার ছিলনা।খারাপ লাগে মানুষ চিনতে আমি ভুল করেও নিজেকে গুটিয়ে ফেলার পর ও আমায় কেউ চিনতে বা বুঝতে পারছেনা।

প্রায় ২মাস পর নিলয়ের বউ এর কল।আমি বার বার কেটে দিচ্ছি।একসময় রিসিভ করে বললাম আর একবার গালি দিবেন তো আমি পুলিশ এর কাছে যাব।

ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ।

কি হয়েছে?

সে কেঁদে বললো নিলয় বাসা থেকে পালিয়েছে তাদের প্রতিবেশীর সাথে।

বেপারটা হবার ই ছিল।ওর মতন প্রতারক রা এভাবেই প্রতারণা করবে।

আমি তাকে বললাম আপনার হেল্প লাগলে কোন আমি করবো।আমি পুলিশ এ দিতে পারেন ওকে।তবে ওকে আর না ফিরিয়ে আনাই ভালো। আপনি ওকে ছাড়া বাচতে শিখুন।

মেয়েটি সেদিন অনাবরত কেঁদেছিল। কি কঠিন মেয়েটিও ঠকে গিয়ে কুকড়ে গিয়েছিল।

আমি তারপর মাঝে মাঝেই মেয়েটির খোঁজ খবর নিতাম।
সে নিলয়কে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।এইতো সেদিন মেয়েটি হেসে হেসে বললো নিলয়কে সে এখন একেবারেই মুছে ফেলতে পেরেছে।

৭মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে ইভান এর সাথে, আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি এবং খুব ভালো একজন মানুষ পেয়েছি তবে এখন মানুষদের আমি আর আগের মতন বিশ্বাস বা আস্থা রাখতে পারিনা।আমার বর কে আমি প্রায় ই ভুল বুঝি।আমার অতীত আমায় এগুলো করতে বাধ্য করায়।
সেদিন রাতে ঘুম ভেঙে দেখি সাড়ে ১১ টার দিকে ইভান কার সাথে যেন কথা বলছে ধীরে ধীরে।আমি বারান্দায় লুকিয়ে দেখছি ও মুখের কাছে হাত নিয়ে কথা বলছে।আমার হৃদস্পন্দন থেমেই যাচ্ছিলো।

ইভান কার সাথে কথা বলছো বলে কেঁদে দিলাম।

ইভান চমকে উঠে কল কেটে দিল।

ও চুপ করে আছে।ভাবলাম আমার কপালে মনে হয় সুখ ই নেই।

রুমে এসে বিছানায় বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। ইভান আমার পাশে এসেই বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।একবার কাঁদতেও বারণ করছেনা।
হঠাৎ কলিংবেল এর শব্দ।
আমি: কি বেপার খোল গিয়ে দরজা।

ইভান: তুমি খোল যাও।

আমি: আমি খুললে আর ঘরে আসবো না কিন্তু।আমি চলে যাব।

ইভান: আচ্ছা যেও।

আমি রেগে রুম থেকে বের হয়ে দরজা খুলতে গেলাম।মানুষটা কি সহজেই আমায় চলে যেতে বললো।
দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলাম।ফুল-কেক নিয়ে ইভান এর বন্ধুরা হাজির।সবাই চেঁচিয়ে শুভ জন্মদিন বলতে লাগলো।

ইভান আমার পিছনে দাড়িয়ে বললো, সবার সাথে কথা বউকে জানিয়ে বললে, বউকে সারপ্রাইজ দেয় কিভাবে হুম?

সবাই চলে যাবার পর ইভান আমার আঙুলে আংটি পরিয়ে দিয়ে বললো নেও এটা উপহার এই জন্মদিনের।

আমি: আমিতো আমার জন্মদিন ভুলেই গিয়েছিলাম।

ইভান: আমি কি করে ভুলি?একমাত্র বউয়ের জন্মদিন বলে কথা।

আমি: একমাত্র মানে কি হুম?

ইভান: ঘাড়ে কটা মাথা যে দুমাত্র করি?

আমি কেঁদে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমি আবার মানুষ চিনতে পারিনি।
আমি এবার ও মানুষ চিনতে ভুল করেছি।এখন আর আগের মতন প্রতারক নয়, আমি ভালো মানুষ চিনতে ভুল করেছি।

……………………………………………………..*সমাপ্ত*…………………………………………………

গল্পের বিষয়:
দু:খদায়ক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত