খুনশুটির আড়ালে

খুনশুটির আড়ালে

“আজকেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে নিবে,আর অপেক্ষা করতে পারবো না আমরা।” । বাবা-মা,চাচা-চাচী একসাথে সবাই বসে রয়েছে।আমি আর ইরা তাদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছি,তখনি বাবা উপরের কথাটা বললো।আমরাও আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে গত তিনবারের মত আজকেও ইরার রুমে ঢুকলাম। ।

আমি #সাজিদুল ইসলাম আহাদ।আর আমার সাথে যে আছে তার নাম হলো নুসরাত জাহান ইরা। রাগী,বদমেজাজি আর অলসে একটা মেয়ে।কি করে যে এই বদমেজাজি চাচাতো বোনটার প্রেমে পড়েছিলাম ভেবেই পাই না।হুম,আমি আর ইরা চাচাতো ভাই-বোন। ।

রুমে ঢুকেই ইরা ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।তারপর আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বললো: ইরা:এই বিয়েতে কি তোর মত নেই?(রাগীভাবে তাকিয়ে)

আমি:আমার মত থাকবে না কেন?

ইরা:আমারতো মনে হয় যে এই বিয়েতে তোর মত নেই।

আমি:কেন তোর এমন মনে হয়? ইরা:তাহলে আমি যা বলি তুই তার উলটো বলিস কেন?

আমি:তুই যা বলবি তাই শুনতে হবে নাকি? আমার মতামতের কোন গূরুত্ব নেই? ইরা:না নেই।আমি যা বলবো সেটাই হবে।(প্রচন্ড রেগে)

আমি:তাহলে আমি এই বিয়ে করবো না।

ইরা:হারামজাদা,কি বললি?৫ বছর ধরে প্রেম করে বলিস আমায় বিয়ে করবি না,তাই না?(পাড়লে মেরেই ফেলতো) । এখন আর রাগানো যাবে না,তাহলে আর রক্ষে নেই।যেভাবে রেগে আছে,মনে হয় কিছু বললেই এখন উপরে পাঠিয়ে দিবে।

তাই চুপচাপ তার কথা মেনে নেওয়াই ভালো:

আমি:আচ্ছা যা,তুই যা বলবি তাই হবে।
ইরা:এইতো আমার গুড প্রেমিক।(আমার গালগুলো টেনে দিয়ে) আমি:তাহলে গিয়ে বলে দেই যে আমরা রাজী? ইরা:হুহ। । ইরা আর আমার সম্পর্কের ৫ বছর কিছুদিন আগে পূরন হয়েছে,সেদিনই আমরা আমাদের সম্পর্কের কথা বাসায় জানিয়ে ছিলাম।বাবা-মা কিংবা চাচা-চাচী খুশি মনেই আমাদের মেনে নিয়েছিল। । সমস্যার সম্মুখীন হলাম যেদিন আমাদের প্রথম বিয়ে ঠিক হওয়ার কথাছিল।

সবাই মিলে আমাকে আর ইরাকে আলাদা রুমে কথা বলে আসতে বললো।আমরা গিয়ে নিজেদের মদ্ধে আলোচনা শুরু করলাম।আমি যা মত দেই,ইরা তার বিপরীত মত দেয়।

যেমন:বিয়ের পর আমাদের প্রথম সন্তান কি হবে?তার মত ছেলে হোক,আর আমার মত মেয়ে হোক।পরে সেদিন ইরা রাগ করে ছাদে চলে গিয়েছিল।এইভাবে তিনবার আমাদের বিয়ে বাতিল হয়েছে।

এই #খুনশুটির কারনেই আমাদের বিয়েটা এখনো হয় নি। । পরিবারের সকল সদস্যদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি,সাথে যোগ হয়েছে মিরা আপু আর দুলাভাই।ইরার বড় আপুর নাম হচ্ছে মিরা।

এইমাত্র তারা এসেছে।সকলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিলাম যে আমরা বিয়েতে রাজী।ব্যাস,আর কি দরকার।পরিবারের সবাই তারিখ ঠিক করে ফেলল।মাত্র ১৫ দিন পর বিয়ে।মাথাটা খারাপ হলো তখনি,যখন শুনলাম এই ১৫ দিন আমার অন্য বাসায় থাকতে হবে।কারন জানতে চাইলে উত্তরটা ঠিক এই রকম পেলাম: “বিয়ের আগে হবু বউকে দেখতে নেই”। ।

আজ আপুর(মিরার) বাসায় উঠেছি।ইরাও এসেছিল সাথে।সবকিছু গুছিয়ে দিয়েছে।যাওয়ার আগে গালে একটা পাপ্পি উরোফে চুমু দিয়ে দৌড় দিয়েছে।ইরা যতই বদমেজাজি আর রাগী হোক না কেন,আমাকে ভালোবাসায় কোন কমতি দেয় নি।প্রেমিকা হিসেবে সে ছিল একজন আদর্শবান প্রেমিকা☺। ।

সময়ের বেরাজাল বড়ই অদ্ভুত,কখন যে ঘনিয়ে যায় বুঝাই যায় না।সময় প্রকৃতিকেও হার মানাতে সক্ষম।আল্প আল্প করে কেটে গিয়েছে ১৫ দিন।আজ আমার গায়ে হলুদ,এটাও আপুর বাসায় হচ্ছে।না জানি পাগলীটাকে আজ কি রকম সুন্দর লাগছে।তাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।১৫ টা দিন ধরে তাকে দেখি নি।এখানে আসার পর থেকে ইরার সাথে ফোনে কথা হয়েছে।তাই তাকে ভিডিও কল দিলাম,সাথে সাথে রিসিভ করে ফেলল।বোধহয় আমার কলের অপেক্ষাতেই ছিল। । হলুদ শাড়ি,গয়ায় হার,হাতে মেহেদী আর সাথে হালকা মেপআপে(মেয়েদের সাজের বিষয়ে লেখকের ধারনা খুব কম) ইরাকে দারুন লাগছে।অনেকক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।

অপক্ষার করছি ইরাকে বৈধভাবে পাওয়ার।প্রহর গুনছি ইরাকে কাছে পাওয়ার।আর মাত্র একটা দিন পর আমাদের প্রেমের পূর্নতা লাভ করবে। । হ্যা শেষ হয়েছে,অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে।আমার আর ইরার বিয়েটা সম্পূর্ন শেষ হয়েছে।আমরা এখন স্বামী স্ত্রী। । ঘরে ঢুকলাম।আশ্চর্য হয়ে মেয়েটির কাজ দেখছি। আজ একটা পবিত্র রাত,এই রাতকে স্মরণীয় করে রাখা দরকার।আমাদের দুজনেরও স্বপ্ন ছিল এই রাত নিয়ে,খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলাম স্বপ্নটাকে।আর ইরা এখন খাবার খাচ্ছে।

আমি ওর পাশে গিয়ে বললাম: আমি:কিরে,তুই এখন খাবার খাচ্ছিস কেন?আজ না আমাদের বাসর রাত?

ইরা:তো কি করবো?তোর জন্য কতক্ষন ধরে বসে রয়েছি,আর এদিকে ক্ষুদায় আমার পেট জ্বলছিল।তাই খেতে শুরু করে দিলাম।

আমি:ভালো করেছিস।তা মনে আছেতো আজ আমরা কি করবো?

ইরা:হুম,তা কি আবার ভূলে যাবো? । সম্পর্ক থাকাকালীন আমরা এই বাসর রাত কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি।আমি আর ইরা আমাদের বাগানে হাটবো,চন্দ্রবীলাস করবো,বেঞ্চিতে ইরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো আর ইরা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। আজ আমরা আমাদের স্বপ্নকে সত্যি করতে চলেছি। । চুপিচুপি ইরাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম।সবাই অনেক ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পড়েছে,ফলে বেশী কষ্ট করতে হলো না।বাগানে গিয়ে দুজনে দুজনের হাত ধরে হাটছি।অনেকক্ষন হাটার পর ক্লান্ত হয়ে বেঞ্চিতে বসে পড়লো ইরা।

আর আমিও শুয়ে পরলাম ইরার কোলে।আজ আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।চাদের আলোয় আলোকিত হয়েছে পরিবেশ,আর আমার মনের পরিবেশ আলোকিত হয়েছে ইরার নিষ্পাপ মন্ডলটা দেখে,ঠিক যেন কোন অপ্সরী।তাইতো হারিয়ে যেতে চাই তার মনের গভীরে,দখল করতে চাই তার স্বপ্নটাকে,ছিনিয়ে নিতে চাই তার মনটাকে।আমি হতে চাই তার রাজ্যের রাজা,সেই রাজ্যে শুধু আমি ভালোবাসা কুড়াবো।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত