পাগলী মেয়ে

পাগলী মেয়ে

-এই শুনছো (রিমা)
> হ্যাঁ বলো “”ঘুমের ঘোরে বলে রিমন “”(রিমন)
-ঘুম থেকে উঠো,তারপর বলছি (রিমা)
> না এভাবেই বলো,আমি শুনতে পাচ্ছি। (রিমন)
-আমার এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।
> কি বললে,এতো রাতে আইসক্রিম কোথাই পাবো(রিমন)
-আমি কিছু জানিনা, আমার এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে,আমাকে আইসক্রিম এনে দাও।
> এই রাতের বেলা কি আইসক্রিম পাবো।
-জানিনা,তবে খুজে এসো।
> তোমাকে না বলেছি ফ্রিজে আইসক্রিম কিনে এনে রাখি,তোমার যখন মন চাইবে, তখন ফ্রিজ থেকে বের করে খেতে পারবে।
-আমার ফ্রিজে রাখা আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে না ।
> আচ্ছা তুমি এখানে বসো, আমি বাইরে গিয়ে খুজে দেখি।
-সাথে করে চাঁদরটা নিয়ে যাও,তাহলে ঠান্ডা লাগবে না।
.
রিমন একটা চাঁদর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
এই মেয়েটা কখন কি চেয়ে বসে,সেটা রিমন কখনো বুঝতেই পারে না।
এই রাতের বেলা কি কেউ আইসক্রিম খাই,
কিন্তু রিমার ইচ্ছে হলো।
অদ্ভুদ একটা মেয়ে।
তবে তার চাওয়া গুলো ছোট ছোট।
.
অনেক খুজাখুজির পরে রিমন একজনকে দেখলো,এতো রাতেও সে আইসক্রিম বিক্রি করছে।
.
এতো রাতে যারা আইসক্রিম বিক্রি করে তারা তাঁদের পরিবারের সুখের জন্যই এতো রাতভর আইসক্রিম বিক্রি করে।
এমন কষ্ট কইজনে করে,
তবে যারা তাদের পরিবারকে একটু বেশিই ভালোবাসে,ওরাই পারে এমন ভাবে কাজ করতে।
.
রিমন দুটা কোন আইসক্রিম কিনে নিয়ে চলে আসে,সাথে আইসক্রিম বিক্রেতাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসে, এতো রাতভর আইসক্রিম বিক্রি করার জন্য।
নাহলে রিমা অনেক রাগ করতো,আর রিমন চাইনা রিমা কোন কারনে তার উপর রেগে যাক।
.
আইসক্রিম কিনে নিয়ে রিমন বাড়িতে চলে আসে,বাড়িতে এসে দেখে রিমা রুমে নেই।
এতোরাতে রিমা কোথাই যাবে, রিমন পুরো বাড়ি খোজে দেখে,কোথাও রিমাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
রিমন ভয় পেয়ে যায়,
মেয়েটা এতো রাতে কোথাই গেলো।
.
এমন অবস্থা হলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে,এমন অবস্থাই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।
.
শেষে কোথাও না পেয়ে
রিমন ছাদে চলে যায়,ছাদে গিয়ে দেখে, রিমা চুপটি করে বসে আছে।
রিমাকে ছাদে দেখতে পেয়ে রিমনের ভয়টা কেটে যায়।
স্বস্থির একটা নিশ্বাস নেই রিমন।
.
-কি ব্যাপার তুমি এখানে কেনো,তোমাকে পুরো বাড়ি খুজে পাচ্ছি না।
> নিশ্চয় ভয় পেয়ে গেছো।
-জানই তো,তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে।
> একটা প্রশ্ন করি?
– করো।
> তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো ।
– জানিনা।
.
-থাক বলতে হবে না, এখন আইসক্রিম দাও।
> এই নাও।
-দুটো আইসক্রিম কেনো এনেছো।
> একটি তোমার, আর একটি আমার।
-ওটা ফেলে দাও,দুজনে একটি আইসক্রিম ভাগ করে খাবো।
> এতো কষ্ট করে অানলাম আর শেষে ফেলে দিবো।
-হ্যাঁ।
.
কি আর করা,আইসক্রিমটা ফেলে দিলাম।
কখনো রিমার কথার বিরুদ্ধে যেতে পারিনি,এবারো পারলাম না।
.
একটা আইসক্রিম দুজনে ভাগ করে খেলাম।
একটি আইসক্রিম দুজনে ভাগ করে খেতে অনেক আনন্দ আছে,যেটা আজকে বুঝতে পারলাম।
.
-এই কাছে এসে বসো (রিমা)
> কেনো?
-আমরা তো স্বামী স্ত্রী আমাদের মাঝে দুরুত্ব থাকবে কেনো।
> তোমার ঠান্ডা লাগছে না।(রিমন)
-না ।
> মিথ্যা বলো না, এই নাও চাঁদর গায়ে জড়িয়ে নাও।(রিমন)
-আমাকে চাঁদর দিয়ে দিলে তো তোমারও ঠান্ডা লাগবে।
> সমস্যা হবে না।
-তোমাকে না কাছে আসতে বলেছি।
.
.
রিমার কথাই ওর একদম কাছে গিয়ে বসলাম।
.
রিমা ওর চাদরের অর্ধেকটা আমাকে দিয়ে দিলো,আর বাকি অর্ধেক ও নিলো। একি চাদর দুজনে ভাগ করে নিলাম।
এখন রিমা আমার কাধে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখছে।
আকাশের চাঁদটা একভাবে আলো দিয়ে যাচ্ছে। তবে চাঁদের পাশে অনেক তারাও মিট মিট করে জ্বলছে।
.
-এই একটা কথা বলি(রিমা)
> বলো (রিমন)
-আমাদের বেবি হবে কবে?
> রিমার কথা শুনে আমি পুরো অবাক হয়ে গেছি,
তবুও উত্তর দিলাম।
কেনো বেবির কি দরকার?
-আমার মা ডাক শুনতে ইচ্ছে করছে,আমাদের বেবি আমাকে মা ডাকবে,আমার কোলে চড়বে, আমার সাথে খেলবে।
> এই জন্য তোমার বেবি প্রয়োজন।
-হ্যাঁ,তুমি তো আমার সাথে খেলো না,বেবি থাকলে সে আমার সাথে খেলবে।
>ঠিক আছে আমাদেরও বেবি হবে।
-সেটা কবে।
> এখনো এক বছর পরে।
-না আমি এতোদিন অপেক্ষা করতে পারবো না,আমার আরো আগে বেবি চাই।
> এতো আগে তো বেবি হবে না আমাদের।
-আমি এতোকিছু শুনতে চাই না।
সামনের একমাসের মধ্যে আমার একটা বেবি চাই।
> ঠিক আছে সামনের একমাসের ভিতর তোমার একটা বেবি হবে।
-তুমি অনেক ভালো।
> তুমিও।
-থাক তোমাকে আর পাম দিতে হবে না।
তুমি আমার জন্য কতকিছু করো,আর আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনা।
> এখন চলো ঘুমাবে,বেশি রাত করে ঘুমালে সমস্যা হবে।
-আরেকটু থাকি।
> কালকে আরো বেশিক্ষন থাকবো,এখন চলো আমার ঘুম পেয়েছে।
.
.
-তাহলে আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
> আচ্ছা, আমি রাজী।
-এইতো আমার লক্ষী বাবু,উমমমমমমমমা

.
রিমা আমার কপালে একটি চুমু দিলো।
মেয়েটা কখন কি করে আমি নিজেও বলতে পারি না।
.
আমি রিমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে এলাম।
মেয়েটাকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি,সেইজন্য ওর সকল আবদার গুলো হাসিমুখে মেনে নিই।
.
-এই তুমি ঘুমাও নি এখনো(রিমা)
> তুমি না ঘুমালে আমিও ঘুমাবো না। (রিমন)
-আচ্ছা কাছে আসো,দুজনে একসাথে ঘুমাবো।
.
রিমার একদম কাছে চলে গেলাম, রিমার মুখের কাছে আমার মুখ।
রিমার গায়ের সাথে আমার গা লেগে আছে,এমন কাছাকাছি চলে গেছি।
.
রিমা আমার মাথাই চুলে হাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো।
-আমি তোমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
>তবুও আমার ঘুম আসবে না?
-তোমার ঘুম আসবে না কেনো?
> আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার ঘুম আসবে।
.
রিমা আমার কথা শুনে একটু লজ্জা পেলো,তবুও রিমা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
.
জড়িয়ে ধরে বলল
এবার ঘুমাও।
.
রিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,জড়িয়ে ধরার কিছুক্ষণ পরে দেখতে পেলাম রিমা ঘুমিয়ে পড়েছে,
রিমার ঘুমানোর পরে আমি ভাবতে থাকলাম ডাক্তারের কথা।
.
রিমার একটি দুর্ঘটনাতে ওর ব্রেইন এর সমস্যা হয়।
যার কারনে ও সবকিছু এলোমেলো করে ফেলো,কখন কি চাই ওটা সে কিছুক্ষন পর ভুলে যায়।
সবকিছু মনে রাখতে পারে না।
ডাক্তার বলেছে একবছরের মাঝে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,
তবে ওর সব চাওয়া গুলো মেনে নিতে হবে,ও যা বলবে সব কিছু হাসিমুখে করে যেতে হবে।
কখনই ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না।
তাহলেই সে দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
কখনই ওর কোন আবদারে না করা যাবে না।
.
সেইজন্য রিমার সব ইচ্ছা চাওয়া গুলো হাসিমুখে মেনে নিচ্ছি।
মেয়েটাকে আমি একটু বেশিই ভালোবাসি,
সেইজন্য যত কষ্টই হোক,ওর সকল আবদার আমি হাসি মুখে মেনে নিই।
.
রিমা এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,আমিও রিমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছি,
কখন যে আমি ঘুমিয়ে পড়বো সেটা নিজেও জানি না।
কারন মানুষ কখন ঘুমিয়ে পড়ে সেটা মানুষ নিজেও বলতে পারে না।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত