অফুরন্ত ভালবাসা

অফুরন্ত ভালবাসা

কিছুদিন ধরে মাথায় একটা চিন্তা নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। চিন্তাটা তুলিকে নিয়ে। আমার কাছে তুলির দাম নেই! একটু ও নেই! আমি কি সেরকম কিছু করেছি যে

তুলির ওরকমটা মনে হল। কদিন ধরে খুব করে ভেবেছি। ভাববার পর একটা রেজাল্ট আসলো। সেটা হল সাথী!
.
সাথীকে নিয়ে বললে বলতে হয়, শান্তশিষ্ট আবেগপ্রবণ একটা মেয়ে। নিজের মতো করে চলে, নিজের মতো করে সবাইকে ভাবে। তার আচার আচরণ দেখে

অন্যকেউ কি ভাবলো না ভাবলো তাতে কিছু যায় আসে না। সে যা বলবে, করবে তাইই সঠিক। আমার কাছে মেয়েটিকে বড় অদ্ভুত লাগে। মাঝেমধ্যে

সাথীর সাথে সময় কাটাতে বোর লাগে। তবে আমি তা প্রকাশ করি না। ভালই সময় কাটছে, এরকমটা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশ করি।
.
তুলির তাহলে সাথীকে নিয়েই মাথাব্যথা! তুলি কি জানে না আমরা যেহেতু ভাল বন্ধু সুতরাং একসাথে সময় কাটাতে পারি। ওকে ডান! আর সাথীর সাথে ঘুর

ঘুর করবো না, অপ্রয়োজনে কথা ও বলবো না। এই জিনিসগুলা তুলিকে জানিয়ে দিতে হবে। তাহলে হয়তো আমাকে নিয়ে আর নেগেটিভ ধারণা জন্মাবে না।
.
তুলিকে আমার ভাল লাগে। কলেজের মাঝে দু’টা সুন্দরী মেয়ে যদি থাকে তাহলে একটা তুলি আরেকটা সাথী। দু’টাই আমার ভাল বন্ধু। সাথী আমার সাথে

গণিত ডিপার্টমেন্টে পড়ে আর তুলি হিসাববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে পড়ে। আমার সাথে পড়ে বলে সাথীর সাথে বন্ধুত্ব হওয়া অটোমেটিক বিষয়। কিন্তু তুলির

সাথে বন্ধুত্ব হওয়া একটু অন্যরকম। ফেসবুকে গল্প লিখি সেটা সাথী জানে ভাল করে। আমার প্রতিটা গল্প খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। আমার কোনো গল্প

কখনো সাথীর ভাল লাগে নি। একেকটা গল্প লিখার পর কলেজে গেলে সাথী সেই গল্পের মাঝে অসংগতিগুলো আমাকে ধরিয়ে দেয়। সেইটা খুব ভাল

ব্যাপার। অসংগতি ধরিয়ে দেওয়া খারাপ কিছু না। কিন্তু তারপরই শুরু হবে তিরস্কার। খুব বাজে গল্প, ছিঃ ছিঃ এগুলা গল্পে কেউ দেয়! লুতুপুতু, নিজেকে দিয়ে

আর কতো প্রেমের রচনা – এই হচ্ছে সাথীর তিরস্কারের কয়েকটা উদাহরণ। আমার খুব রাগ হয়। এমন ও হয়েছে গল্প লিখার পর পরেরদিন যথাসম্ভব

সাথীকে এড়িয়ে চলতাম। পাছে আমাকে ধরে ফেলে, আর শুরু হবে লেকচার। ডাকলে না শুনার ভাণ করি। কিন্তু ঠিকই সাথী ধরে ফেলে। রাগ করে গল্প

লিখা বাদ দিয়ে দেই, তখন শুরু হয় ক্লাসে সবার সাথে সাথীর খুঁচিয়ে কথাবার্তা। সেগুলা আমার গায়ে তীরের মত বিঁধে। আবার বাধ্য হয়ে লিখি।

.
সেইরকম করে একদিন সাথীর সাথে কলেজ থেকে ফিরছি। সেদিন পাশে ছিল সাথীর উচ্চ মাধ্যমিক লাইফের ফ্রেন্ড তুলি। ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি

হয়েছে দু’জন। আমি তুলিকে আগেও দেখেছি সাথীর সাথে কলেজে কথা বলতে। কিন্তু একসাথে যাচ্ছে এই প্রথম। দুই বান্ধবীর রূপে পার্থক্য পাই না। দু’টা

সুন্দরী মানবীর সাথে আমি একা। আর সুন্দর করে বললে, দুই রূপসীর সাথে শালা নিঃসঙ্গ একটা ক্ষ্যাত পড়ে আছি! নতুন কিছুর উপর আমার আগ্রহ বেশি।

ধীরেধীরে পুরাতন হওয়ার সাথে সাথে আগ্রহটাও সমানুপাতিক হারে কমে। সাথীকে প্রথম দেখার পর যেই আগ্রহ ছিল। এখন আর নেই। সাথীকে নিত্য

দেখতে দেখতে এখন আর প্রথম কিছুদিন দেখার সময় যেরকম অনুভূতি কাজ করেছিল এখন আর সেইরকম অনুভূতি পাই না। কেন এরকম হয় জানি না।

আমি জানি সাথী দেখতে ভাল। কিন্তু তুলির কাছে কেন যেন বড্ড বেমানান লাগছে। তুলিকে নিয়ে আগ্রহ এখন আকাশচুম্বী। সাথী পরিচয় করিয়ে দিল।

প্রথমেই বলল, “ফেসবুক লেখক! ভালুপাসার!”

সাথী নিন্দার্থে বললেও তুলি বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো। বলল, ” তাই নাকি! আমি লাভ স্টোরি খুব পছন্দ করি। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা হবে?”

আমি একটু হেসে সম্মতি দিলাম। কিন্তু আমার মানটা বেশি সময় থাকলো না। সাথী সাথে সাথে বলে দিল, ” হা হা হা। আরে লুচু মার্কার লেখক নিজেই

মানুষকে রিকু দিয়ে শত শত মানুষের ফলোয়ার হয়ে পড়ে আছে। দেখ ফলোয়িং লিস্ট। অনুরোধ করার প্রয়োজন নেই জায়গা হবে কি বলে।”

সাথী, তুলি হাসলেও আমার মন খারাপ হয়ে গেল।
.
রাতে ” দীপান্বিতা তুলি” নামের আইডি থেকে রিকুয়েস্ট পেলাম। এক্সেপ্ট করার পর ম্যাসেজ দিল, ” গল্প ভাল না লাগলে কিন্তু সাথীর মত আমিও বলবো। ”

আমি বললাম, ” আচ্ছা। বলিয়েন।”

পরেরদিন কলেজে ঢুকতেই তুলির সাথে দেখা। আমার কথা বলার ইচ্ছা হল। জানতে ইচ্ছে হল কেমন লাগলো গল্প। তুলিই আসলো । এসে বলল, ” বাহ!

আমার ভাল লাগছে। সত্যি দারুণ ছিল!

আমার মন ভাল হয়ে গেল। সাথীর মতো তো বাঁশ দেয় না! কতো সুন্দর করে কথা বলে! কতো সুন্দর করে নিজের এক্সপ্রেশনটা তুলে ধরে! তুলিকে নিয়ে

আগ্রহ বাড়লো এভাবে।
.
আস্তে আস্তে ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম। একেকটা গল্প লিখার পর সাথীর মন্তব্য ভুলে যাবার চেষ্টা করে তুলির মন্তব্যগুলো নিয়ে ভাবি। খুব করে ভাবি। ভেবে

ভেবে ভাবনাগুলো জড়ো করে একটা রেজাল্ট আসলো। রেজাল্টটা হল, সারাজীবন তুলির মন্তব্য শুনতে চাই! তুলির জন্য লিখতে চাই বাকিটা কাল!

দু’দিন ভাবলাম। আমি কি বেশি আশাকরি ফেলছি! সাথীকে বললে কেমন হয়! ইতোমধ্যে সাথী ও তুলির কি এক বিষয় নিয়ে যেন তর্কাতর্কি হয়েছে তাই

একজন আরেকজনের সাথে আর কথা বলে না। এই সময়ে যদি তুলিকে নিয়ে সাথীর কাছে কিছু বলি সাথী সেটা পছন্দ করবে না। আমি বড় সংকটে

পড়লাম।
.
কাউকে কিছু না বলে দু’জনের সাথেই বন্ধুত্ব চালিয়ে যেতে লাগলাম। তুলিকে একটু বেশিই সময় দেই। সাথী রাগে কি না বুঝি না, কিছু বলে না। তুলির সাথে

খুব আবেগ, ভাব নিয়ে যেখানে কথা বলি সেখানে সাথীর সাথে রুক্ষ, বিদ্বেষ নিয়ে কথা বলি।
.
তবুও তুলির মন ভরে নি। বলল, ” আমার কাছে তার দাম নেই! একটু ও নেই। সব দাম অন্যের জন্য। আমি অভিনয় করছি। ”

এই কথাগুলো নিয়েই গতকিছুদিন ধরে ভেবেছিলাম। আর ভাবনার ফলাফল “সাথী! ”
.
তুলিকে বলে দিতে চাই, “বিশ্বাস করো তুলি তোমার দাম আছে আমার কাছে। তোমাকে যে আমার খুব ভাল লাগে! তুমি কি জানো সেটা? আমি অভিনয়

করছি না। সত্যি বলছি!
.
কয়েকদিন তুলির বলা কথাগুলো ভাববার পর আজ কলেজ আসলাম। এসে দেখলাম তুলি ওর বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমাদের

ডিপার্টমেন্টের দিকে চেয়ে দেখলাম সাথী খুব হাসতে হাসতে ফোনে কথা বলছে। তুলির কাছে গেলাম। বললাম, ” তুলি শুন কথা আছে। ”

” বলো।”

” সাথে আসো।”

তুলি বিরক্তি নিয়ে উঠলো। বলল,” কি হল?”

বললাম, ” তুমি যা বলছো তা ঠিক নয়।”

” ঠিক কি তাহলে? সবার মন যুগিয়ে চলবে, তাই না? ”

” সবার মানে?”

” বাদ দেও। বুঝাতে পারবো না।”

” বুঝেছি!”

” কি? ”

” সাথী! ”

তুলি আমার কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। আমি যা ভাবছিলাম তাহলে সেটা নিয়েই তুলির সমস্যা। সাথীর সাথে চলাফেরা তুলি পছন্দ করছে না। কি আজব

ঘটনা! দু’জন ভাল বন্ধু ছিল। এখন একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারে না।

” কিন্তু তুলি, সাথী তো আমার ক্লাসমেট পাশাপাশি ভাল বন্ধু। তার সাথে তো চলাফেরা করতে হবে। ”

” হুম। আমি আসি তাইলে। বাই।”

” দাঁড়াও।”

” ওকে আর সাথীর সাথে চলাফেরা করবো না। খুশি?”

তুলি আমার কথা শুনে মৃদু হাসলো। তারপর বলল, ” চলো ঘুরতে যাই। ”

.
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। সাথী ইদানীং আমার সাথে আর কথাই বলে না। অবশ্য আমি তেমন আগ্রহ দেখাইনি। তুলির কড়া মানা যেন বেশি মেশামিশি

না করি। আজ সকালে যখন ক্লাসে সাথীর কাছে গিয়ে বললাম , ” তোর নোট খাতাটা দিবি? আমার কয়েক চ্যাপ্টারের অংক নাই। ”

সাথী একটু রাগলো। বলল,” আমার খাতা অজায়গায় দিয়ে খাতার অপব্যবহার করতে চাই না। ”

আমি তখন বুঝতে পারিনি সাথী হঠাৎ এভাবে রাগলো কেন। এতো রাগার কি আছে। আমি কি এমন করেছি যে যার জন্য আমার উপর এতো রাগ দেখাবে।

এমন আচরণে আর কিছু না বলে চুপচাপ ওর কাছ থেকে চলে আসি।

কিন্তু, এখন বুঝতে পারছি কারনটা আসলে তুলি। তুলির সাথে সাথীর মিল নাই তাই সাথী চায় তার সবচে’ প্রিয় বন্ধুটিও যেন তুলির সাথে না মেশে। এরকমটাই

হবে হয়তো। আর কিছু তো ভেবে পাইনা। সাথীর সাথে তো খারাপ কোনো ব্যবহার করিনি। দারুণ কাণ্ড! তুলি চায় না সাথীর সাথে মিশি, সাথী চায় না তুলির

সাথে মিশি। দুই দিক থেকে দুই নেত্রী, মধ্যখানে চিপায় আমি পড়ে আছি। অবশ্য সাথীর সাথে তেমন কথা না বললেও হবে। বোরিং টাইপের যুক্তি কথাবার্তা

নিয়ে হাজির হয়। তুলির সাথে কথা না বললে চলবে না।
.
সাথীর এমন আচরণের পর আর ক্লাস করিনি। রাগ করে চলে আসি। ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার পর ফেসবুকে ঢুকি। নিউজফিডে ঢুকতেই দেখি তুলি একটা পোস্ট

দিছে আর সেটায় সাথীর রিপ্লাইয়ের নোটিফিকেশন আসছে। আগ্রহ নিয়ে পোস্টটা পড়লাম। লিখা ছিল, “feeling happy with Sathi sr ”

“সরি রে ভুল বুঝায়। ক্ষমা করে দে। ”

এইটুকু লিখে অনেকগুলো স্টিকার দেওয়া। সাথী কমেন্ট করল ” জুতা মেরে গরু দান। ”

একটু হাসি হাসলেও সাথীর উপরে রাগের জন্য তুলি যাতে ভাল করে খোঁচা দেয় সেটা দেখার জন্য রিপ্লাইগুলো পড়লাম। রিপ্লাইয়ে একে অপরকে বন্ধুত্বের

গালি গালাজ। একটু হিংসা হল। তুলির ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়ে বললাম, ” তোমরা তো এক হয়ে গেছ!”

” হুম। কেমন আছো। আজ কলেজে গিয়েছিলে? ”

” আরে আমার কথা রাখো। সাথীকে বড়রকমের বাঁশ দিলে। যাইহোক কি হয়েছিল তোমাদের?”

” এমনি ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে। আমাদের এরকম হয় মাঝেমাঝে। নতুন গল্প লিখলে?”

” শুধু গল্পের কথা সবসময় বলো কেন? অন্যকিছু বলা যায় না? যা শুনতে আগ্রহী। খুব আগ্রহী আমি! ”

” কি? আমি তো গল্প পড়ার জন্য এড হয়েছি। তাই খোঁজ নেই।”

” হু। ”

” কি বলতে চেয়েছিলে? কি শুনতে আগ্রহী?”

” কিছু না। কাল কলেজ আসবে?”

” হুম।”

” আচ্ছা। ”
.
কলেজে আসার পর আমি অপেক্ষায় ছিলাম বোরিং টাইপের মেয়েটা বলবে ” সরি রে গতকাল রাগ দেখিয়ে খাতা দেই নি বলে। মন খারাপ ছিল।”

সেইরকমটাই আশা করেছিলাম যেহেতু ওরা দুই বান্ধবী এক হয়ে গেছে। কিন্তু সাথী কথা বলেই না। এড়িয়ে চলে। কি অদ্ভুত মেয়ে একটা! আমার কি? যাক

আমিও বলবো না কথা। ক্লাস শেষে যখন বেরিয়ে দেখলাম তুলিদের ও ক্লাস শেষ। তুলিকে ডাক দিলাম। আমার দিকে চেয়ে হাত নাড়াল। এসে বলল,” সাথী

কই?”

” আসছে। আমিতো আর সাথীর সাথে মিশি না তুমি মানা করার পর। ”

” আরে তখন ঝগড়া ছিল তাই সাথীকে দুর্বল করতে চেয়েছি বলে মিশার কথা বারণ করেছিলাম। অবাক হলাম তোমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে

দিলে আমার কথায়!”

” তুমি বললে আমি…..!”

সম্পূর্ণটা বলতে পারিনি। সাথী চলে আসলো। ধ্যাত আসার আর সময় পেল না। কিছুক্ষণ নীরব তিনজন হাটার পর তুলি বলল, ” জানিস সাথী তোর আর

আমার বিবাদের সময় আমি শুভ্রকে তোর সাথে চলাফেরা করতে মানা করেছি বলে সে সেটাই করলো। দেখ কিরকম বন্ধু তোর!”

সাথী আমার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ” হা” বলেই চুপ করে রইলো।

তুলি আমাকে সাথীর কাছে বাঁশ দিলো! আমিও কম যাব কেন! আমি বললাম, ” আসলে বন্ধুত্বের চেয়ে প্রেমে- ভালবাসার দাম বেশি হয়। ”

আমার কথাশুনে তুলি বলল,” মানে!”

সাথী চুপ ছিল।এবার আরো ক্লিয়ার করে বললাম, ” দেখো নি সিনেমাতে নায়ক নিজের বন্ধুকে শত্রু বানিয়ে দেয় প্রেমিকার জন্য!”

আমার এই কথাও তুলি বুঝে নি। সম্ভবত আর বুঝবেও না। না বুঝার ভাণ করে নাকি! সাথী সম্ভবত বুঝেছে। মুখ আরো গম্ভীর করে ফেললো।

তুলিকে যে কি করে বুঝাই!
.
বাসায় এসে কিছুক্ষণ ভাবলাম। সাথীকে কাজে লাগালে কেমন হয়! তুলিকে যে পছন্দ করি সাথীকে দিয়ে বলানো যায়।এটা একটা ভাল আইডিয়া। রাতে

সাথীকে একটিভ দেখে নক দিলাম।

” জানিস তুলির কথামত কেন তোকে এভয়েড করেছি?”

সিন কিরে বেশ কিছুক্ষণ পর বলল,” জানি। তুলিকে তোর পছন্দ হয়।”

” গ্রেট! সরি রে তোকে এভয়েড করার জন্য!”

” ইটস ওকে। ”

” একটা কাজ করে দিবি?”

” বল।”

” তুলিকে বলবি আমার যে পছন্দ হয় তাকে?”

“আচ্ছা।”
.
কলেজে আসার পর সাথী তুলিকে সেসব কিছুই বলল না। আমি আর কিছু বললাম না সাথীকে। রাতে ফোন দিলাম।

” বললি না কেন?”

” আমি পারবো না।”

” কেন পারবি না?”

” দেখ, তোর রিলেশন তুই ম্যানেজ কর। আমার এসব ভাল লাগে না। আমি কিছু করতে পারবো না।”

এইটুকু বলেই লাইন কেটে দিলো। যাক! এই মেয়েকে দিয়ে হবে না। ওর সাহিত্যে প্রেম বলে কিছু নেই, প্রেমের বড় খরা।আমার সাহিত্যে প্রেমের বড় ঢেউ,

বাঁধ দেবার নাই কেউ।
.
এভাবে দুইমাস কেটে গেল। এরমাঝে অনেক কিছুই ঘটে গেল। পরীক্ষার জন্য গল্প লিখা বাদ দিয়ে দিতেই তুলিকে দেখতাম কেমন আগ্রহ হারিয়ে ফেললো

আমার থেকে। কথা বলতো না ঠিকমতো। এড়িয়ে চলার গন্ধ পেতাম। প্রথম দিকে ভাবলাম, ব্যক্তিগত সমস্যায় হয়তো ভুগছে তাই ঠিকমতো কথা বলে না।

পরে অনুমান করলাম সেইরকম কিছুই না।আমার গল্পকে পছন্দ করে আমাকে নয়। আমার উচিৎ ওর থেকে কেটে পড়া। জোরাজুরি করার মানে হয় না।

এখন গল্প লিখি না। ইচ্ছা হয় না লিখতে। নতুন নতুন গল্প লিখার জন্য তুলির প্রশংসা অনুপ্রেরণা দিতো। এখনো লিখলে হয়তো তুলি প্রশংসা করবে। কিন্তু

সেই প্রশংসায় কেন যেন আবেগ, অনুভূতিতে সাড়া দেয় না। পরীক্ষা শেষ তাই কলেজে যাওয়া হয় না বলে তুলির সাথে সপ্তাহ, দশদিন পর টুকটাক কথা

হয়। যাস্ট ফর্মালিটি।
.
তুলির সাথে দূরত্ব বেড়েছে যে সেটা সাথীকে বলেছিলাম একদিন। সাথী বলল,” এখন দেখলি ভালবাসা মানে কি? কাউকে নিঃস্বার্থ ভালবাসার পর সেই

ভালবাসার দাম পাওয়া যায় না। অবহেলাই শুধু পাওয়া হয়। তাইতো আমি প্রেম – ভালবাসায় বিশ্বাস করি না।

সেইদিন শেষ পরীক্ষার দিন ছিল। প্রায় একমাস হয়ে গেল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। একমাস ধরে কারো সাথে দেখা হয় না। সাথী আরেকটি কথা বলেছিল,”

চকচক করলে সোনা হয় না। সোনা আলাদা গুণ নিয়েই দামী জিনিস। চকচকের প্রয়োজন নেই। বুঝতে ভ্রম না করলে দূর, সেই ভ্রমের আঘাত যাবে

বহুদূর।”
.
এইকথাগুলোর মানে বুঝিনি। সাথীকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর বলেনি তখন। আমি আর জোর করিনি। হয়তো তুলিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলছে। সাথীর সাথে

প্রতিদিনই কথা হয়। তুলির ব্যাপার জানানোর পর সাথীকে আলাদা করে চিনলাম। এখন আর এতো খোঁচা দিয়ে কথা বলে না।আসলে আগে সাথীকে খুব

বোরিং লাগতো। এখন আর লাগে না।

এখন আর আগের মতো ঝগড়া করতে চায় না।অল্পস্বল্প টেক কেয়ার, সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়।

আমি অনেক পরে বুঝলাম যে সাথীই তুলির চেয়ে বেশি গুরুত্বের বিষয় ছিল আমার কাছে।তুলি আসায় আড়ালে পড়ে গেলেও ঠিকই আমাতে যুক্ত ছিল।

তুলির কথানুযায়ী সাথীর সাথে কথা যখন বলতাম না তখন সাথীর এড়িয়ে চলা আমাকে রাগালেও, আমাকে হার্ট করলেও তুলির জন্য সেগুলা ভুলে যেতাম।

স্বাভাবিক মনে করতাম। মানুষ ভালোটা খুব পরেই বুঝতে পারে। খারাপটার চাকচিক্যতে হার মানে।
.
আমি কি এবার তুলির পর সাথীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি! সাথীকে এখন ভালবেসে ফেলেছি! খুব স্বার্থপর আমি। এটা আর হবে না। এটা কোনোভাবেই সম্ভব

নয়। সাথী যখন বলবে,” হা হা। শুভ্র তুই খুব অদ্ভুত। নিজের স্বার্থসাধন করতে এক তীর থেকে অন্য তীরে ঘুরাঘুরি করিছ। ভাবলি কি করে আমার তীরে

তোর নৌকা ভিড়াতে দিব? তুই তো আগাছা। যার নুন খাছ, তার গুণ গাছ। ভাবিছ না এইটুকু যে তোর মনিবের ছায়ায় আমিই নিয়ে এসেছিলাম রে। ভুলে গেলি

সব? ”

তখন এই কথাগুলো আমি কোনোভাবেই নিতে পারবো না। কোনোভাবেই না! পরীক্ষার পর থেকে এই একমাসে সাথীকে অন্যচোখে দেখা শুরু করেছি।

মোটেও ঠিক হচ্ছে না। অনেক হয়েছে। সাথীকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখতে চাই না। এগুলা ভাবতে ভাবতে কখন যে অভিমানী চোখের অভিমান ঝড়ে পড়ছে

বুঝতেই পারিনি। চোখ মুছে দেখলাম সাথী ফোন দিছে। রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। সাথীর অস্তিত্ব দেখলে, অস্তিত্বের নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ অনুভব করলে ,

অস্তিত্ব থেকে ভেসে আসা ধ্বনি শুনলে সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ে যাব। তখন আর অবাধ্য মন কে থামাতে পারবো না। ফোন ধরিনি বলে ম্যাসেজ দিল ফোন

ধরার জন্য একটা।

ফোন ধরলাম ।

” ফোন ধরিছ না কেন? ভাব নিস? ”

” ঘুম লেগে গেছিল। আর সাইলেন্ট ছিল তাই বুঝতে পারি নি। ম্যাসেজ আসার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।আর এখন ধরলাম। কি বলবি বল?

” বলবো তো। তার আগে বল সাইলেন্ট থাকলে ফোন বাঁজে না , ম্যাসেজ বাঁজে কিভাবে! ”

” ওপস! মিস্টেক! আসলে আমার বোন ডাকছিল ফোন আসছে। ভাবছিলাম ম্যাসেজে শব্দ হয়েছে।”

” হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না। তোকে আমি চিনি। একটা খুশির খবর দেই?

” দে।”

” আমার চান্স হয়ে গেছে। একটু আগে ম্যাসেজে জানিয়েছে। তাই সবার আগে তোকে বললাম। তুই খুশি হয়েছিস তো?”

” হুম। খুব খুশি হয়েছি।”

সাথী একটা ভার্সিটিতে সেকেন্ড টাইম এক্সাম দিয়েছিল। চান্স পেয়ে গেল। আমি কি সত্যি খুশি হয়েছি! সাথীকে যে আর নিত্য দেখতে পাবো না। খুশি হই

কিভাবে! নতুন নতুন বন্ধু পাবে। হয়তো দীর্ঘ পথচলার সঙ্গীও পেয়ে যাবে। আমাকে কি আর মনে রাখবে? আমার মতো আগাছাকে কে মনে রাখবে শুনি?

.
পরেরদিন। সাথী খুব করে দেখা করতে বলেছিল গতকাল। তাই দেখা করতে এসেছি। সাথী কিছুক্ষণ তার ইচ্ছাপূরণের সংগীত শুনালো। আমি তাল দিয়ে

গেলাম। তারপর বলল,” তুই কিভাবে খুশি হলি আমিতো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না! ভর্তি হবার পর আর কবে দেখা হবে ঠিক নাই। তারপরেও এখন তোর

হাসিমুখে দেওয়া উপদেশগুলো তো আমার বেঢপ লাগছে।”

সাথী মন খারাপ করে ফেললো।বললাম, ” আরে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হলে দূর থাকলেও চুল পরিমাণ কমবে না। যদি তুই বন্ধন রাখতে চাস।”

” কি? আমি বন্ধন রাখবো না! আমি কেন রাখবো। তোর তুলিই রাখবে। যা এখান থেকে। আমি তোর কেউ না।”

সাথীর কথাশুনে হেসে ফেললাম। সাথীও আমার সাথে হাসলো। কারো হাসি বেদনাময়, কারো হাসি অবজ্ঞাময়।

সাথী চলে গেল আমাকে একা রেখে। যাবার দিন হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল চলে এসেছিল। সাথীর চোখ এড়িয়ে যায় নি। ফোন দিয়ে বলল,” তুই

কাঁদছিস? আমি গাড়ি থেকে নেমে যাব? ”

” আনন্দ অশ্রু রে! পৌঁছাইয়া ফোন দিছ। ”

” হুম। ”
.
সাথীর সাথে কথা বলা এখন ফেসবুক আর ফোনেই সীমাবদ্ধ। কলেজে গেলে তুলির সাথে মাঝেমাঝে দেখা হয়। আগে যেমন সাথীকে বোর লাগতো

দেখলেই, এখন তুলিকে সেরকম লাগে। দু- একটা কথা বলে কেটে পড়ি। সাথীকে বড্ড মিস করি। ভালই ছিল সেইদিন গুলো যখন গল্প লিখে পরের দিন

কলেজে সাথী কাঁটাছেড়া করে ভুল ধরতো আর গালি দিতো, আমি বড় বিরক্তি নিয়ে হজম করতাম কথাগুলো। আমি অনুভব করলাম দিনের পর দিন আমি

নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। আর পারছি না। সাথীকে প্রচণ্ড ভালবেসে ফেলেছি। সাথীকে বলেই দিবো ভালবাসি কথাটা। আমি আর পেইন নিতে পারছি না। যদি

এক্সেপ্ট না হয়! যদি বলে,” তোকে কতো ভাল বন্ধু ভেবেছিলাম আর তুই কিনা…..!”

ধ্যাত যা হবার হবে।মেয়েটি এতো দূরে থেকেও কেন এতো টেক কেয়ার করে, কেন এতো খোঁজখবর নেয়। কেন এতো মায়াভরা কথা শুনিয়ে দ্বিধায় ফেলে

দেয়। কেন অনলাইনে না পেলে রেগে যায়। কেন ফোন বন্ধ থাকলে পরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ” স্টুপিড মানুষ হবি না। বুঝবি না আমাকে?” একটা ছেলে

এবং একটা মেয়ে বেষ্ট ফ্রেন্ড বুঝি এরকমই হয়! নাকি তাদের মাঝে উভয়পক্ষ থেকে না বলা ভালবাসার টান এরকম করে।
.
এভাবে একমাস কেটে গেল। সকালে সাথী ফোন দিয়ে বলেছিল ভার্সিটিতে গণ্ডগোল হয়েছে তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাসায় চলে আসবে। আমি যেন

রেলস্টেশন থেকে রিসিভ করি। সাথীর কথামতো রেলস্টেশনে আসলাম। ট্রেন স্টেশনে ঢুকলো। আমার হার্টবিট বেড়েই চলছে। কতদিন পর সাথীকে

দেখবো! অন্য এক সাথী। যতই ফোনে, ফেসবুকে যোগাযোগ হোক না কেন বাস্তবে কথা বলার সাথে অনেক তফাৎ আছে। সাথীর সাথে মানিয়ে নিতে

পারবো তো! ভার্সিটি পড়ে বলে আলাদা ভাব নিবে না তো!

” ওই ভুত আমাকে রিসিভ করতে আসছিস না ধ্যান করতে আসছিস? কি ভাবছিস?”

কখন যে সাথী আসলো টেরই পেলাম না। সাথী তো একমাসে চেঞ্জ হয়ে গেছে! আরো সুন্দরী হয়েছে।

” তুই তো আরো কিউট হয়ে গেছিস?”

সাথী হাসলো। কিছু বলল না।কিছুক্ষণ হাটার পর বলল,” তারপর কি অবস্থা? ক্লাস ঠিকমতো করিস? তুলির সাথে মিল হয়েছে? ”

আমি কিছু বললাম না। চুপ থাকলাম। চুপ থাকা দেখে আবার বলল,” কি হল?”

” তুলি নাম আনলি কেন? জানিছ না?”

” ওকে বলব না আর। পরশু যেই মেয়ের পিক দিছিলাম ইনবক্সে তাকে কেমন লাগে?”

” ভালই। তবে তোর থেকে না। ”

” প্রেম করবি?”

” কার সাথে? তোর সাথে না মেয়েটার সাথে?”

” ওরে গাধা ওই মেয়ের সাথে। ওই মেয়ের সাথে মানাবে তোকে। আমার সাথে বলবো কেন?

” আমার প্রেম নিয়ে তোর মাথাব্যথা উঠলো কেন হঠাৎ? ”

” এমনি। বাসা চলে আসছে। কাল ঘুরবো তোর সাথে।নিবি তোর সাথে ঘুরতে? ”

আবদারের মাঝে কেমন প্রবল আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট! একটু ভেবে বললাম।

” আচ্ছা।”
.
পরেরদিন সাথীর সাথে ঘুরতে এসেছি। আমি গতরাতে অনেক ভেবেছি। সাথী মানুক আর না মানুক আমি ভালবাসি কথাটা বলে দিবো সাথীকে। সরাসরি না

পারি ইংগিত দিয়ে বুঝাবো। বলতেই হবে আমাকে। এই মেয়ে আমাকে বড় বুঝা বুঝে। আমাকে বড় চিনে। আমি তাকেই চাই।

সাথী পাহাড় দেখবে। চা বাগান দেখবে। শ্রীমঙ্গলের চা- বাগান খুব মিস করে। আমি কিছু বলবো কি নার্ভাস হয়ে যাই। সাথী কথা বলায় অমনোযোগী। একের

পর এক চা- বাগানের পিক তুলছে।

” আচ্ছা আমরা কি খুব ক্লোজ হয়ে একটা পিক উঠতে পারি? ”

সাথীর কথাশুনে একটু অবাক হলাম। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আস্তে আস্তে চিকন সুরে বলল,” না মানে পিকটা সাথে সাথে রাখবো তোর সাথে সেরা

মুহূর্ত হিসাবে।”

” কেন নয়!”

মুখটা কালো করে ফেলেছিল। আমার কথাশুনে চোখেমুখে হাসির আভা ফুটে উঠলো। কাঁধে মাথা রেখে পিক তুলল। আমি কিছু বলিনি। চুপ ছিলাম। সাথীর

স্পর্শ খুব ভাল লাগছিল। আমার অস্বস্তি কোন লেভেলে আছে তা আমার হার্টবিটই প্রমাণ করতে পারবে।

” আচ্ছা সাথী ভার্সিটির নতুন বন্ধুদের পেয়ে তবুও আমাকে এতো গুরুত্ব দিছ কেন? ”

পিক তোলা থামিয়ে দিয়ে আমার দিকে চেয়ে একটু হেসে তারপর ক্যামেরা সোজা বাঁকা করতে করতে বলল,” ওরা তো আপন নয়। আপন তো তুই। আপন

কে ভুলে যাব তোর মতো করে এমন স্বার্থপর আমি নই।”

এই হয়েছে। কথাটা শুনে ভাল লাগলেও স্বার্থপর শব্দ শুনে আর প্রেম নিবেদন করা হবে না হয়তো। নিবেদন করবো আর বলবে , ” স্বার্থপর তুই! তোরে বন্ধু

ভাবি আর তুই….!”

না।না। আমার দ্বারা হচ্ছে না। এফবিতেই বলা যাবে। বাস্তবে বড় সাহসের দরকার হয়।যা আমার মাঝে নেই।

” আমি সত্যি স্বার্থপর? ”

” হুম।”

লাউয়াছড়ায় বানরের বড় উপদ্রব হয়েছে কিছুদিন থেকে। হঠাৎ বানরের কেচর-মেচর শুনে সাথী আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বলল,” খুব ভয় করে তো!”

আমার খুব ভাল লাগলো। আমিও দুহাত বাড়িয়ে দিলাম। কিভাবে যেন বলে দিলাম, ” এভাবে সারাজীবন ধরবি রে?”

সাথী ছাড়িয়ে নিলো। মাথা নিচু করে বললো,” বাড়ি চলে যাব।”

সারা রাস্তায় কিছু বলল না। মুখ কালো করে রাখলো। আমার কি দোষ! আমার সাথে এরকম আচার- আচরণ করলে তো ভালবেসেই ফেলবো। যতই স্বার্থপর

হই না কেন। ধ্যাত আর কথাই বলবো না। হারিয়ে যাব কোথাও। ভাল লাগে না আর!
.
আজ প্রথম নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। কেন এতো মায়ায় ফেলার দরকার ছিল? সাধারণ একটা ক্লাসমেটের মতো থাকতো তাহলে তো আর মায়ায়

পড়তাম না। বাসায় এসেই কেন আমার সাথে ঘুরতে যেতে হল? কেন আমার সাথে ক্লোজলি ফটো উঠতে হল? কেন বানরের ভয়ে জড়িয়ে ধরতে হল? আমি

না হয় স্বার্থপর বলে যে নদীতে স্রোত বেশি সেই নদীতে তরী ভিড়াই যাতে স্রোতের সাথে তরী দূরে ভেসে যেতে পারে। অন্যকেউ হলে তো ঠিকই আমার মতো

প্রেমে পড়তো। স্রোত থাক আর না থাক।
.
দু- তিনদিন কেটে গেল। সাথীর সাথে আর যোগাযোগ হয় নি। যাক আমি তাইলে ফ্রেন্ডশিপ শেষ করে দিলাম। ভাল হল না খারাপ হল নির্ণয় করতে বেগ

পেতে হচ্ছে আমাকে। ভাল মনে হল এই ভেবে যে, নিশ্চিত হয়ে গেলাম সাথী আমাকে বন্ধু হিসাবে পছন্দ করে, জীবনসঙ্গী হিসাবে চাইবে না। খারাপ মনে

হয় এই ভেবে, সাথীর সাথে আর কথা হয়তো হবে না, আর বলবে না,” এতো অনলাইনে কি!” বলবে না, “গতকাল কলেজ গেলি না কেন?” বলবে না , ”

তোকে মিস করি রে!” বলবে না, ” তুই গল্প লিখবি নাকি আইডি ডিএক্টিভ করবো!”। এগুলা ভেবে খুব খারাপ লাগে।

এগুলা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। চেয়ে দেখি সাথী ফোন দিছে। হঠাৎ করে না পাওয়া জিনিস ফিরে পেলে যেই অনুভূতি হয় সেই অনুভূতি

হচ্ছে। ভুল করে কল কেটে দেওয়ার অপশন স্লাইড করে দিলাম। উত্তেজনায় হয়তো এরকম হচ্ছে। দ্বিতীয়বার অনেক সতর্কতায় ধরলাম।

” কই তুই? ফোন কেটে দিস কেন?”

” বাসায় বসে টিভি দেখছি। ভুল করে হয়ে গেছে রে!”

” বেশি করে টাকা নিয়ে আস। কাল বেড়ানোটা পূর্ণ হয় নি। আজ আবার ঘুরবো। ”

” আজ মাধবকুণ্ড যাব। ঝর্ণার জলে ভিজবো। খুব ইচ্ছা। করবি না আমার ইচ্ছাপূরণ? ”

ইচ্ছা ছিল “পারবো না” বলে দিতে। কিন্তু পারিনি। “হ্যা” বলে দিলাম।
.
ঠিকানা বড়লেখার মাধবকুণ্ড। সাথীর খুব ইচ্ছা হল মাধবকুণ্ডের সুউচ্চ পাহাড় শৃঙ্গ থেকে শুভ্র জলরাশি অবিরাম গড়িয়ে পড়া দেখবে, সেই জলে নিজেকে

ভিজিয়ে দিবে। কিন্তু আমার মনে শান্তি নেই। সাথী আমাকে নিয়ে নিশ্চয় যা-তা ভাবছে! তাইতো বাসে একটু ও কথা বলে নি। জানালা দিয়ে সারাটা পথ বাইরে

তাকিয়েছিল। আমার খুব অস্বস্তি লাগছিল সাথীর পাশে বসতে। আগে এরকম কখনো হয় নি। মেয়েটাকে খুব অপরিচিত লাগছিল।
.
” দেখ কিরকম কুয়াশার মতো হয়েছে!”

সাথী আমার একটু সামনে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে জল পড়া দেখছিল। নিচে থাকা সাজানো পাথরের উপর জল প্রবল বেগে পড়ে কুয়াশার সৃষ্টি করছে।

” হুম। জানিস কুয়াশা দেখতে পাচ্ছি পাথরের গুণে। কিন্তু পাথরকে কেউ মনে রাখে না!”

আমার কথা বুঝলো কি না জানি না তবে মৃদু হাসলো। সাথী পানিতে নামতে চাইলো। আমি মানা করলাম। নামা চাই,চাই। বলে,”পরে রোদে গা শুকিয়ে

নিবে।” সাথী নামলো। আমি নামলাম না। আমি পিক তুললাম। কিছুক্ষণ পর পাড়ে উঠলো। বললাম,” শখ মিটেছে?”

” হু। তুই এতো আনরোমান্টিক কেন? নামলে কি হতো!”

” এমনি। আমার ভাল লাগে না। ”

ভিজা চুল ডান চোখটা ঢেকে দিয়েছে। আমি চুলগুলো কানের দিকে গুঁজে দিলাম।

” ভিজা চুলে তো তোকে দারুণ লাগছিল?”

কথাটা বলে চুপ করে গেলাম। মনে হলো দু’দিন আগের মতো কাণ্ড শুরু করছি। তারপর আবার স্বার্থপর বলবে। সাথী একনাগাড়ে আমার দিকে চেয়ে

আছে। আমি তিন-চারবার চোখ নামিয়েও দেখি এখনো চেয়ে আছে। আমার অস্বস্তি লাগলো।

” সরি রে!”

” কেন?”

” তোকে দেখলে, তোর পাশে থাকলে, তোর কথাশুনলে আমি কেমন জানি হয়ে যাই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমার এমন আচরণে তোর

অস্বস্তির কারণ হলে ক্ষমা করে দিস আমাকে। চল বাড়ি যাই।”

নিচের দিকে চেয়ে কথাগুলো বলে সামনের দিকে ঘুরে গেলাম। নিশ্চিত এখন চোখ দিয়ে অভিমান ঝড়বে। সাথী আমার ডান হাতটা ধরে ঘুরালো আমাকে।

আমি স্বাভাবিক হয়ে তাকালাম। বলল,” আমি কিছু বলি?”

” বল রে!”
.
” ছেলেটি আমার সাথে কথা বলার জন্য আশেপাশে ঘুর ঘুর করতো। আমি পাত্তা না দেবার ভাণ করতাম। ফেসবুকে কলেজ গ্রুপ চ্যাটে খোঁচা দিয়ে কথা

বলতো। জানিস আমি খুব মজা পেতাম! আমার মনে হল ছেলেটি অন্যছেলেদের থেকে আলাদা। একটু অন্যরকম। তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা যায়। করলাম

ফ্রেন্ডশিপ। যখন ফ্রেন্ডশিপ করার হাত বাড়িয়ে দিলাম, তখন ছেলেটির চোখেমুখে বিশ্বজয়ের আভা ফুটে উঠেছিল। জানিস আমার দেখে খুব ভাল

লেগেছিল। গ্রুপ চ্যাটে একদিন বলল, ” আমার গল্পে নতুন নায়িকার নাম দিবো, কারো নাম দিতে চাইলে বলতে পারো। ” সেইদিন তার আইডি ঘুরে ঘুরে গল্প

গুলো পড়লাম। জানিস আমার খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু আমি স্বভাবসুলভ বান্দরনী। তাই কলেজে আসলে তাকে রাগিয়ে বলতাম,” গল্প বিচ্ছিরি, এইটা

ভুল, এইটা হওয়া উচিৎ ছিল। ” জানিস তখন তার অসহায় মুখ দেখে খুব ভাল লাগতো। মায়া ও হতো তবে প্রকাশ করতাম না। সব ঠিক ছিল, কিন্তু একদিন

আমার এক বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর দেখলাম ছেলেটি আমাকে ভুলে যাচ্ছে

আগেরমতো কথা বলে না, অবহেলা করে। জানিস এগুলা আমাকে খুব কাঁদাতো। ইচ্ছে হতো খুব দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। কেন যেন মনে হতো ছেলেটির

বন্ধু মানে যেন সাথীই, আর কিছু হতে পারে না। ”
.
সাথী এবার বসলো। আমিও পাশে বসলাম। বললাম,” তারপর? ”

” তারপর ছেলেটি ভুল বুঝতে পারলো। আবার আমার সাথে নিয়মিত কথা বলতো। আমাকে সময় দিতো। কিন্তু কাছে থেকেও মনে হতো যেন ছেলেটি

নিজেকে ঘুটিয়ে নিয়েছে, সবসময় হাসিখুশি থাকা মুখটার পিছনে কষ্টের চাপ স্পষ্ট। জানিস আমি খুব কষ্ট পেতাম তার এমন অবস্থা দেখে। আমি সমাধান

করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আরো একটা খবর আসলো আমি ভার্সিটিতে চান্স পাইছি। আমার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। ঠিক করলাম আমি ছেলেটিকে ছাড়বো না।

দূরে থেকেও আগলে রাখবো। কারো হতে দিবো না। ভার্সিটি আসার দিন মুখের দিকে চেয়ে বুঝলাম সে খুশি হয় নি, খুশি থাকার অভিনয় করেছে। প্রতিদিন

খোঁজ-খবর নিতাম, টেক কেয়ার করতাম। আমি একটা জিনিস বুঝে গেলাম আমি সম্ভবত তাকে ভালবেসে ফেলেছি ! কিন্তু ভয় হল সে কি ভালবাসে? নাকি

আমার বান্ধবীর কাছ থেকে পাওয়া ব্যথা ভুলে থাকার চেষ্টা করে আমার সাথে সময় কাটিয়ে! ভার্সিটি বন্ধ হবার পর তার সাথে আমার যেখানে যেখানে ঘুরার

ইচ্ছা হল সেখানে ঘুরতে এলাম। জানিস তখন তার চোখে আমার প্রতি প্রেম- ভালবাসার অস্তিত্ব অনুভব করলাম। যা আগে কখনো মনে হয় নি। তার সাথে

ক্লোজ হয়ে ফটো উঠলাম, মিথ্যে ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরলাম। জানিস তার প্রতিটা হৃদ স্পন্দন আমাকে বলে দিল, ” সাথী তোমাকে এখানেই মানায় ! এটাই

তোমার সঠিক জায়গা!” ছেলেটি বলে দেয় সারাজীবন তার বুকে এভাবে গুঁজে থাকবো কি না। বুঝে গেলাম ছেলেটি আমাকে নিয়েই তার রাজ্য রচনা

করেছে। কি করে তাকে ঠকাই বল? জানিস তখন মনে হয়েছিল আমি পৃথিবীর সবচে’ সুখী মানুষ। আমি খুশিতে কিছু বলতে পারিনি। বাসায় চুপচাপ চলে

আসি। তারপর…!
.
সাথীকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ” জানিস মেয়েটা ও ভাবে চলে আসাতে ছেলেটা ভাবলো মেয়েটার মনে ছেলেটার জন্য একটু ও জায়গা নেই। শুধুমাত্র

বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ। ছেলেটা খুব কষ্ট পেল। নিজেকে নিখোঁজ করে দিতে চেয়েছিল, পারে নি। মেয়েটার চঞ্চল চাহনি, মৃদু হাসি, মিষ্টি চিকন কণ্ঠ আরো

দেখবে, আরো অনুভব করবে বলে হারায় নি। কিন্তু ছেলেটি এভাবে শেষ হয়ে যাবে। কষ্ট সইতে ছেলেটির বড় মানা যে!”
.
” মেয়েটা আর কষ্ট দিবে না তো!”

” কেন দিবে না শুনি?”

” বুঝে গেছে।”

” কি বুঝে গেছে?”

” বলতে যে লজ্জা লাগে!”

” ওকে বলিছ না। শুধু সারাজীবন পাশে থাকিছ রে।”

” হুম।”

” সাথী , তোকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য সরি রে! মানুষ চিনতে বড় ভুল করি আমি! ”
.
সাথী চুল চিবে পানি ফেলতে ফেলতে বলল,” একবার ভুল বুঝেছ বলে কিছু বলিনি। আরেকবার শুধু ভুল বুঝে দেখো, আরেকবার আমাকে কাঁদিয়ে দেখো কি

করি তোমাকে!”

সাথীর মুখ থেকে তুমি ডাক এই প্রথম শুনতে খুব ভাল লাগলো।
.
বাসে উঠেই সাথী ঘুমিয়ে পড়ে। আমার কাঁধে মাথা রেখে। অনেক যাত্রী কিরকম চোখে যেন তাকাচ্ছিলো। আমার অস্বস্তি লাগছিল। সাথীকে বারবার সরিয়ে

দিয়েও কাজ হয় নি। আরো শক্ত করে ধরে। ধরুক তাইলে! নিরাশার বালুচরে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। মরুঝড়েও সে চর ভেঙ্গে পড়বে না। অনেক

ত্যাগের ফলে, কষ্টের ফলে যে চর গড়ে উঠেছে সে কি ভাঙ্গতে পারে! ভেঙ্গে পড়লে নিঃশেষ হয়ে যাব সাথে সাথে। জানি সাথী সেটা হতে দিবে না। খুব যে

বুঝে আমাকে! খুব যে চিনে! আর খুব যে ভালবাসে!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত