সারাজীবন অটুট থাকুক অামাদের ভালোবাসা

সারাজীবন অটুট থাকুক অামাদের ভালোবাসা

রাত ১১ টা। বিয়ের পাঞ্জাবী পাজামা পরে ছাদে দাড়িয়ে অাছি। বাসর ঘরে বউ বসে অাছে, হয়তো তার সাথে কেউ বসে গল্প করছে,নয়তো একা একা বসেই অপেক্ষা করছে অামার জন্য।
ঝিলিক বাতির মিটমিট অালো অার মৃদু শীতল বাতাসে ভালোই লাগছে ছাদে। তবে মাথার মধ্যে যেনো পুরো পৃথিবীটা ভর করে অাছে। সেটা বিয়ের কারণেই,তবে বউ পছন্দ হয়নি এমন না।
.
অার অাট-দশটা ছেলের মত অামিও প্রেম করতাম। তবে একাধিক না,জীবনে একটাই মাত্র প্রেম করেছিলাম। ভেবেছিলাম যার সাথে প্রেম করবো তাকেই বিয়ে করবো। সেই পরিকল্পনাটাও বাস্তবায়ন হচ্ছিলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এংগেজডম্যানের ৪ দিন অাগে অামার ভালোবাসার মানুষটি মারা যায়। গাড় দুপুরবেলা বান্ধবীকে এংগেজডম্যানের দাওয়াত দিয়ে বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে রোড এক্সিডেন্টে শিকার হয় তন্নী। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে সক্ষম হইনি ওকে। সেদিন অামি অনেক কেঁদেছিলাম,অনেক
। কত স্মৃতি মিশে অাছে ওর অার অামার। কিভাবে ভুলবো সেগুলো, মাত্র ৩ মাসে কিভাবে এত সুন্দর মূহুর্তগুলোকে ভুলে যেতে পারি। অামিতো অার পাথর নই।
.
ওকে কথা দিয়েছিলাম ওকে অামার জীবনসঙ্গিনী করবো,ওর সাথেই কাটাবো বাকিটা জীবন। অথচ অাজ,অামার ঘর দখল করে বসে অাছে অন্য এক মেয়ে। মেয়েটির নাম রিয়া। দেখতে যেমন সুন্দর চরিত্রেও লক্ষী একটি মেয়ে। ঠান্ডা স্বভাবের গোছালো একটি মেয়ে। হাজারো ভালো বৈশিষ্ট বিরাজ করছে ওর মাঝে। কিন্তু অামিতো ওকে ভালোবাসতে পারছিনা। কিভাবে বাসবো? ওর দিকে তাকালেই তন্নীর সাথে কাটানো মধুর মূহুর্তগুলো কড়া নেড়ে উঠে। মনে পরে সেই কথাগুলো, “অামার বাকি জীবনটা তোমার সাথেই কাটাবো। এ মনে কেউ অার স্থান পাবেনা”।
তাহলে কি অামি অামার কথার বরখেলাফ করবো?
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই রাত ১২ টা বেজে গেছে। ছাদ থেকে নেমে রুমে এলাম। রুমে ঢুকতেই রিয়া খাট থেকে নেমে এসে পায়ে ধরে সালাম করলো। একাই বসে বসে অপেক্ষা করছিলো সে। অামি তখন কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। না পারছি ওকে ভালোবাসতে,না পারছি ঘৃনা করতে।
অামি গিয়ে খাটের এক কোনায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। তারপর সে অার কি করলো জানিনা। হয়তো হতাশ মনেই কাটিয়ে দিয়েছিলো সারাটি রাত।
.
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো রিয়ার ডাকে,
–এই উঠেন,অনেক বেলা হয়ে গেছে। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
রিয়া চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কথাগুলো বলছিলো। ও একটি কাপড় পরে অাছে, চুলগুলো ভিজা, একটু অাগেই গোসল করেছে হয়তো। সবকিছু যেনো স্বাভাবিক। কোনো কষ্ট নেই ওর মনে।
.
তারপর সবাই মিলে নান্তার টেবিলে নাস্তা করার সময়ও দেখলাম ও সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই করছে। যেনো সে অনেক সুখে অাছে।
রাতে ওকে প্রশ্ন করলাম,
–তুমি কি অামার অতীত সম্পর্কে কিছু জানো? (অামি)
–জ্বী,সব জানি। (রিয়া)
–এতকিছুর পরও তুমি এতোটা স্বাভাবিক কিভাবে থাকতে পারছো?
–অাপনি অামার স্বামী। ” স্বামীর সেবা করলে সহজে বেহেশত লাভ করা যায়”। অামি সেই বেহেশতের অসম্মান করতে পারিনা। অাপনি অামার সাথে যাই করেন,অামি সবসময় অাপনার এবং অাপনার পরিবারের খেয়াল রাখবো এবং স্বাভাবিকভাবেই দিন কাটাবো।
.
ওর কথাগুলো শুনে অামার কেনো জানি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিলো। অাসলেইতো ওর সাথে অামি অপরাধ করতেছি। অামার জন্য ও কেনো ওর স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। ও অামাকে এতো ভালোবাসে, অার অামি কিনা ওকে ঠকাচ্ছি।।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বারান্দায় চলে এসেছি। রিয়াও অামার সাথে অাসলো। দুজনে পাশাপাশি দাড়িয়ে অাছি। ইচ্ছে করতেছে ওর হাতটা ধরতে,অাবার সংকোচও করছে।
অনেক কষ্টে ওর হাতে উপর হাতটা রাখলাম, তাকিয়ে অাছি অন্যদিকে। তারপর হাতটা শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে রইলাম অনেক্ষন। দুজনেই অাকাশের পানে চেয়ে অাছি। অাকাশের বুকে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারাগুলো যেনো গোনার চেষ্টা করছি দুজনে। ঐ চাঁদটার মতোই অটুট থাকুক অামাদের ভালোবাসা।
.
তখন মনে হচ্ছিলো “শারিরীক মিলনেই ভালোবাসা হয়না। ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে অাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাতেও সীমাহীন ভালোবাসা বিরাজ করে”।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত