খুনসুটি ভালবাসা

খুনসুটি ভালবাসা

>তুমি সুন্দর। কিন্তু ক্রাশ খাওয়ার মতসুন্দর না(রাসু)
>>তাই? তাহলে আমার পিছনে লাইনমারতা কেন?(মীম)
>আমি কই লাইন মারতাম? তুমিই তোবাসায় এসে আমার রুমে উকিঝুকিমারতে
>>সেটাই আমার ভুল ছিল
>শুধু ভুল না মহাভুল
>>আমি বলেই তোমার মত ইয়ে ছেলেকে বিয়ে করছি
>ইয়েটা কিয়ে?
>>জানি না যাও তো
>উহু বলই না
>>ঝগাড়াটে পোলা
>ও আমিই শুধু ঝগড়া করি? আর আপনি রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করেন?
>>জ্বি না। আমি একটা কিউট লক্ষ্মী একটা মেয়ে
> একহাতে যে তালি বাজে না। নিশ্চই জানো?
>>মানে কি? তুমি বলতে চাও আমি ঝগড়া করি?
>চোরের মায়ের বড় গলা
>>এই শুনেন আপনার সাথে আর কথা নাই। আর কথাই বলবনা। হুহ
>দেখাই যাবে
>>কি??
>হুম। মার্কেট করতে গেলে ঠিকই আমার কথা মনে পরবে। তখন কই যাবে কথা না বলে?
>>পকেট কাটবো
>পকেটমারের জায়গা নাই আমার বিছানায়
>>কি বললা? তোমার বিছানা? সারাদিন কে এত সুন্দর পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে? আমার বিছানা হু
>এহ! এবাড়ির সবই আমার। বিছানাও আমার

এবারে মীম অভিমানী মুখ করেভারী গলায় বলল,”হ্যা তাইতো। সবই তো আপনার। আমি এবাড়ির কে? আমার তো কোনঅধিকার নেই এসবের উপর। সরিমিস্টার রাসু। আমি আসলে ভুলেগিয়েছিলাম আমি কে! মাফ করবেন”বলেইড্রেসিংটেবিলের সামনে ধপ করেবসে পরলো

রাসু বুঝলো মহারাণী বেশ অভিমানকরেছে। মহারাণী হয়তো জানেইনা যে অভিমানী মুখে তাকে কতটা
সুন্দর লাগে। দেখলো হঠাৎ করে চোখদিয়ে টুপ করে এক ফোটা বৃষ্টি পরলো। বুঝলো মহারাণী কষ্টও পেয়েছে।

কি নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো করে রেখেছে মুখটা। এখনি অভিমানভাঙাতে হবে মহারাণীর।
.
>এই শুনো
>>…. কথা নেই। চোখ দিয়ে বৃষ্টি পরছেই
>জানু
>>….
>বাবুই পাখিটা?
>>….
>এই যে সোনাপাখিটা
>>….
রাসু বুঝলো এভাবে হবে না

>জান আমার ময়নাটা শুনো না। তোমাকে না কাঁদলে কেমন বাচ্চাবাচ্চা লাগে নিষ্পাপ লাগে
>>….
>উহু বাবুই কথা বলো। সরি আর এমন বলবো না। শুনো! একটু কথাতো বলো

মীমের হাত ধরে বললো রাসু। হাত ধরতেই বারুদ বিস্ফোরণ করলো মীম। ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বললো

>>কাঁদাতে ভাল লাগে তোমার। তাই না? কথা নাই তোমার সাথে কোন। কাঁদাও যত খুশি
>এই শুনো কেদোনা আর। কাঁদলে তোমার ওই চোখের কাজল লেপ্টে পেত্নীর মত লাগে তোমায়
>>এখন তো পেত্নীই লাগবে তাইনা? পুরোনো হয়ে গেছি তো
>ছি ছি কি বলে আমার জান? তুমিতো আমার একমাত্র মহারাণী। তোমাকে অনেক ভালবাসি। সারাজীবন বাসবো
>>হু কচু। সবই ঢং। কিছুক্ষণ পর এসবের কিছুই খুজে পাওয়া যাবে না
>উহু সত্যি খুব ভালবাসি। চলো তোমার কাজল মুছে গেছে লাগিয়ে দেই

রাসু হাতের তালুর মধ্যে শার্টেরহাতা গুটিয়ে ওর লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দিয়ে নিজ হাতে কাজল লাগিয়ে দিল। যদিও খুব ভালভাবে দিতে পারেনি রাসু। তবুও মীমেরকাছে এটাই সবচেয়ে আনন্দের বড় পাওয়া মীম আনন্দ মনে চেপে রেখে রাসুকেকঠোর গলায় বললো
>>কাজল লাগিয়ে দিয়েছো বলে ভেবো না আমি গলে গেছি
>আবার কি হলো?
>>কই কি হলো? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য শাস্তি পেতেই হবে আপনাকে
>যথা আজ্ঞা মহারাণী
>>আজকে রাতের খাবার বন্ধ থাকবে তোমার
>কি বলো তুমি? জানো না আমার ক্ষুধার সময় না খেলে বুক ব্যাথা করে?
>>তাতো আর আমি জানিনা মীম নির্লিপ্ত স্বরে জবাব দিল

>হুহ্ পারো আর কি? এই রান্নাটাই জেনে এত তালুকদারি!
>>বেশ তো কে মানা করছে তোমায় তালুকদারি করতে। একটা ডিম ও তো ভাজতে পারো না। অকর্মার ঢেঁকী
>এখনি দেখাবো কে অকর্মার ঢেঁকী
>>না লাগবে না। আমি জানিতো তুমি অনেক পারো সব পারো
>না দেখাতে হবে তো পারি না পারিবলেই রাসু রান্না ঘরে গেল ডিমভাজি করতে।

একটু পর পরই রান্নাঘর থেকেএটা কই ওটা কই বলে হয়রান রাসু
>ডিমটা কোথায় গো?
>>ফ্রিজে
>পিয়াজ?
>>কুচি করা আছে ফ্রিজে
>কড়াই?
>>আছে পাশেই দেখো
>দিয়াশলাই?
>>উপরেই দেখো
রাসুর একের পর এক প্রশ্নের জবাবদিচ্ছিল আর মিটিমিটি মুখ টিপেহাসছিলো

হঠাৎ মৃদু একটা আতর্নাদ এলোরান্নাঘর থেকে। মীম দৌড়ে গিয়ে দেখল রাসু ডান হাত এলোমেলো ঝাঁকাচ্ছে।

তারাতারি রাসুর আঙুল মুখে নিয়ে নিল মীম। চোখে শাসন নিয়েতাকিয়ে আছে মীম। আর রাসু ভয়ার্ত
চোখে তাকিয়ে আছে মীমেরদিকে।.

একটু পর ভর কাটিয়ে মীমের ভুবনজয়করা একটা হাসি দিল রাসু। মিম সাথে সাথে ছেড়ে দিল রাসুর হাত।

>>শয়তানটা আবার হাসে
>কি করবো বলো
>>যদি বেশি কিছু হতো তবে কিহতো ভাবছো?
>কিছু হয়নি তো চিন্তা করো না
>>আমি কিন্তু একদিক থেকে খুশি হইছি
>কি? আমার কষ্টে তুমি খুশি?
>>হুম। কারন এখন আর অফিস থেকে ফেরার সময় কেরাম খেলতে পারবে না। তারাতারি বাসায় চলে আসবা। আমার বাসায় একা থাকতে বুঝি ভয় করেনা রাত করে আসো?

>থাক তুমি খুশি তো তাতেই ভালো
>>আহারে বাবুটা রাগ করছে মনে হয়। চলো ভাত খাবে চলো
>যাবো না। ক্ষুধা নেই।
>>আমি বলছি যাবে
>হাতে ব্যাথাতো
>>অসুবিধা নাই। চামিচ দিয়ে খাবেহাত ধরে তুলে নিয়ে গেল মীম

রাসু ভাবছিল মীম নিজ হাতেখাইয়ে দিবে। না তাহলো না।।খাবার টেবিলে….
>>হইছে থাক। অনেক হইছে। দেখিএদিকে আসো। হা করো মীম খাইয়ে দিচ্ছে।
>>আমার থেকে একটু বেশি আদায় করে নিতে এসব করো। বুঝিতো সবআমি
>ক্ষতি কি তাতে?
>>আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি এসব করবা?
>উহু। সরি। নাও এবার তুমি একটু খাও
>>এই কি করো? জ্বলবে তো
>কিচ্ছু হবে না। তুমি মিষ্টি দিয়েদিবা তখন
>>যাহঃ পাজি বদ দুষ্ট কোথাকার
>শুধুই তোমার
>>ঢং
>ঢং!! ভালবাসি তো
>>কচু বাসো। শুধু আমিই বাসি
>আমি বাসি না?
>>দেখি নি তো কখনো কিছু করতে
>কি করতে হবে?
>>ভালই বাসো নি কখনো। কি করবা?
>তাই?
>>হুম

>একটা গল্প শুনবা তাহলে?
>>হুম বলো
>একটা মেয়ে ছিল
>>কি?
>না না। শুধু মেয়ে না ছেলেও ছিলো
>>তারপর?
>মেয়েটা ছিল ছেলেটার বোনের বান্ধবী। চেনা মনে হচ্ছে গল্পটা?
>>একটু একটু

>কলেজ ড্রেস পরে প্রতিদিন আমাদের বাসায় এসে তার বান্ধবীকে দেখার ছলে রুমে ঢুমেরে দেখতো একটা ছেলেকে
>>কি করবে বলো? ছেলেটা তো গাধা ছিল। মস্ত বড় গাধা। তাই নিজ থেকেই মেয়েটা লাইন দিতো
>হুম প্রতিদিনই দেখা হতো তাদের।শুক্রবারে দেখা হতো না বলে তার বান্ধবীকে পার্কে আসতে বলতো।
আর একাতো যাবে না তার বান্ধবী। বান্ধবীর সাথে দেখা করার ছলে ছেলেটাকে দেখতো তাইনা???
>>ঠ্যাকা পরছে আমার? হুহ্
>আহা শুনোই না
>>কি শুনবো? ভালইতো বাসো নি কখনো। ভীতু কোথাকার
>এইযে আমি মোটেও ভীতু না হুহ্
>>দেখলাম ই তো যখন আলভির সাঙ্গপাঙ্গরা এলো। ভয়ে ভো দৌড় দিলে
>হু হু জানতান এটাই বলবা
>>নাতো কি? ভাগ্যিস শা’নকেকেফোন দিয়েছিলাম নাহয় সে যে কি হত কল্পনার বাহিরে
>হুহ্ হিরো এলো তারপর কি করলো? ধুমধাম দিয়ে হিরোয়িন কে উদ্ধারকরলো
>>আরে নাহ্ ওরা তো শা’ন বেবিটাকে দেখেই পালালো
>হ্যা খুব ভাল। ভেবে ছিলে তখন চলে গেছে বলে আর করবে না? শোন ওরা তোমাদের অনেক আগে থেকেই পিছু নিতো। তাইনা?
>>হুম
>পরেরদিন কলেজ যাওয়ার আগে ওরা রাস্তায় ছিল। তখন কানের গোড়ায় দিয়ে বলে দিয়েছি “ওটা আমার বা পাজোরের হাড়। একদম যেন না দেখি আর আশে পাশে ঠিক আছে?
>>তাই বলি পরেরদিন থেকে ওরা আপু আপু করে ডাকে কেন?
>হু সব তো বেবির ক্রেডিট। অন্যদিকে ঘুরে মন খারাপ করে বললো রাসু
>>সরি বাবু। কে বলছে এই গাধা ভীতু?সে হিরো মীমের পৃথিবীর একমাত্র হিরো। আই লাভ হিম সো মাচ
>ঢং করতে হবে না। সে তো ভালই বাসে নি কখনো। আর ভালবাসা প্রকাশ করতে হিরোগিরি দেখাতে
হয় তাই না? ভালতো
>>না। অনেক ভালবাসে। কপাল আমার ওই ভূতটার নজর পরে আজ আমার এই দশা
>এক্সকিউজ মি…! আমি নজর দেইনি। একটা পেত্নী নজর দিয়েছে। আর আমার কপাল। একটা মেয়েও পটাতেপারলাম না
>>লজ্জা করেনা? বউয়ের সামনে আরেক মেয়ের নাম? লুচু কোথাকার
>আমি লুচু? প্রকৃত লুচু তো সে ই যে আশেপাশের সবাইকে লুচু ভাবে
>>কে লুচু জানাই আছে। অফিসের প্রত্যেকটা মেয়ে কলিগ কে লাইন মারতে না?
>একদম না।
>>কথা লুকাবে না। গাছের ও খাবে আবার তলায় ও কুড়োবে লুচু লুচু
>একটুও না। শুধু তোমারই আমি
>>কচু
>সত্যি তুমিই আমার পৃথিবী

কথাগুলি ক্রমশ সিরিয়াস হচ্ছে দুজনেই জানে। মাত্র এক মাস হলো বিয়ের। দুজনই দুজনকে খুব ভালবাসে। সারাদিনই দুষ্টুমি, ঝগড়া, মান অভিমান লেগে থাকবে দুজনার মাঝে। কিন্তু দিন শেষে দুজনেই হয়ে ওঠে দুজনার পৃথিবী। চির পরিচিত এই দিনগুলির শুরু সেই কলেজ থেকে। তবে এই ঝগড়া,
রাগ, মান অভিমান যেন চিনি ছাড়া চায়ের মতো।

>>আর আমি? তোমার মাঝেই যে পৃথিবী খুজে বেড়াই জানো না?
>হুম জানি তো তবু ঝগড়া করা লাগবেই?
>>শুধু তো তোমার সাথেই। অন্যকেউ তো নয়
>চল নিচে চল। ঠান্ডা খুব আজ
>>আমার না পায়ে ব্যাথা
>সে কি! নিজেই তো হেটে এলে উপরন্তু আমায় টেনে নিয়ে এলে
>>কেন যে এই ভূতটার নজরে পরলাম। বোকা ভূত কিচ্ছু বুঝেনা। (অভিমান করে বললো মীম)
>ইঙ্গিত বুঝতে বাকি রইলো না রাসুর। হঠাৎ মীমকে কোলে তুলে নিলো রাসু। আর বললো “ভূত নজর দেইনি। বরং পেত্নী নজর পরছে বলেই আজ আটার বস্তা তুলতে হচ্ছে” তাই না? বলেই রাসুর বুকে মুখ
লুকিয়ে ডিসুম ডুসুম দুষ্টুমিষ্টি আদর দিতে লাগলো মীম

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত