রাঁধুনি বউ

রাঁধুনি বউ

ভার্সিটি তে ভর্তি হবার পর থেকেই আমি সেখানেই থাকি!! পাশেই একটা ম্যাসে…. প্রতিদিন সকালে নিজেনিজে রান্না করতে হয়!! আমি রান্নায় খুব একটা ভাল ছিলাম না!! আম্মার কাছে শুনেশুনে রান্না করতাম! কারন এখানে রাঁধুনি পাওয়া যায়না…. ভাবছেন কি বিড়ম্বনা?? এখন রান্না করা শিখছি ক্রমে!! আমাদের এলাকা থেকে অনেক ফ্রেন্ডস এসেছে!! কারও এখানে দুলাভাই বাড়ি! কারও মামাবাড়ি!! কারও এটা সেটা আত্নীয়ওর আত্নীয় সুসম্পর্ক দুসস্পর্ক….. সে অনেই ঝামেলা!! তাই ওরা কেউ আমার মত ঝামেলা পোহায় না!! অনেক খুঁজেছি কিন্তু রান্নার লোক আর পায়নি…. এখানে হোটেলের খাবার খেলেই আমার ( বোঝেনই তো) হবেই!! পেটে সহ্য নেইনা!! তাই আম্মার থেকে রান্না করা শিখছি…. আদ্ভুত বেপার এখন জাজা রান্না করতে পারি তার একটা লিষ্ট বলা যাকঃ আলু ভর্তা, ডিম ভাজি, মাঝারি মাছা ( আঁইশ কম) ভাজি তারপর রান্না, দুধ, সেমাই, ভাত, ডাল ( ডাল খুব ঝামেলা) ভাজি, ঝোল এসব পারি!! কিন্তু??? কিন্তু হয় লবণ কম! নাই ঝাল বেশি, হলুদ কম তেল বেশি এসব কি খাওয়া যায়??? আমার রান্না কেমন টেষ্ট করানোর জন্য একটা কুকুর কে ইনভাইট করলাম!! আমি নিজের হাতে আপ্যায়ন করছি!! এই প্রথম নিজে কাউকে খাওয়াবো যেই প্রাণী হলেই হল!! ওর জন্য একটা প্লেট জোগার করলাম…..
তারপর খাবার পরিবেশন করলাম…. কিন্তু একি হল??? কুকুর শুঁকে আর খেলো না! শুনেছি এদের ইন্দ্রিয়বোধ অনেক বেশি তার মানে???? থাক সেসব কথা!! এই কুকুর চোখ দিয়ে আমাকে বোঝাল>>
কুকুর- যতোসব অখাদ্য আমাকে দিয়ে খাওয়াবে ভেবেছো?? এত সোজা না আমরা জাতী হিসাবে এখন অনেক সচেতন….
আমি- এই অখাদ্য কি রে??? বল যে তোর পেট ভরা তাই খাবিনা আর আমি নিজে খেয়েছি অসাধারণ লেগেছে!! তোদের জাতীতে রুচিবোধ টা উঠে গেছে বুঝলি???
!———
সেদিন বাজারে যেয়ে বেগুন আর আর ট্যাংরা মাছ নিয়ে এলাম আমার খুব প্রিয়!!! আম্মা বলেদিল সেভাবে রান্না করলাম দারুণ টেষ্ট ওয়াও…. সামান্য কিছু রেখেদিলাম বিড়ালের জন্য!! ভার্সিটি শেষ করে বাসায় এসে দেখলাম বিড়াল নিজেই খেয়ে নিয়েছে!! তারপর কৃতজ্ঞতা সূচক একটা ম্যাও বলল!! আমি প্রাণে তৃপ্তি পেলাম!! আজ আমি সার্থক রাধক… আম্মা আমার বন্ধুর মত সবকিছু শেয়ার করি!! তার মানে আমি নিজেই এখন রান্না পারি… ভাল লাগছিল এটা ভেবে… ধ্যাত আমি নিজেই রাধক…..
——-
দেখতে দেখতে আমি সেকেন্ড ইয়ারে পা ফেলেছি।। এরমাঝে আবার ভর্তি শুরু হল!! এক মেয়েকে আবার খুব ভাল লাগল!! ওর চুল গুলা অসাধারণ!! চোখদুটো মায়াবী,, হিজাব পরা মেয়ে আমার প্রিয়, আর দেখতে সুন্দরি আছে!! আরে ভাই শহরের সবমেয়েই ফর্শা!!! তো একদিন আমি ডেকে কথা বললাম!!! মেয়েটা নতুন তাই কিছুই বোঝেনা….!!! মানে ভার্সিটির কিছুই চেনেনা…
আমি- এখানে নতুন???
মেয়ে- জ্বী ভাইয়া!!
আমি- নাম কি?? কোন ডিপার্টমেন্ট??
মেয়ে- মায়া, ব্যবস্থাপনা ডিপার্টমেন্ট!!
আমি- এখানে থাকো কই???
মায়া- আমার কাজিনের বাসায়!! ভাইয়া আমাকে ক্লাসরুম টা একটু দেখাবেন প্লিজ???
আমি- হ্যা আসো!!! তা বাসায় কে কে আছেন???
মায়া- সবায় আছেন আমি একা বাবা মা,।।
আমি- ভাল!! তা আমার নাম্বার টা রাখো কিছু জানার থাকলে একটা কল দিবা…
মায়া- জ্বী আচ্ছা….
——
এই মেয়েকে পটানো এত সোজা আমি ভাবতাম মেয়ে পটানো কঠিন কাজ!! তবে আমার ডাল রান্নার থেকে সোজা আছে… তবে আমি দারুণ কফি বানায়!! একবার খেলে বারবার খেতে মন চাইবে আমি শিওর!! কারন কফির হাত আমার অনেক ভাল!! একবার দুই ফ্রেন্ডস আমার রুমে আসে আমি বানিয়ে খাওয়ালে ওরা খুব প্রশংসা বলে!! শুনে আমার ভালোই লাগে…..
—–
রাতে একটা নাম্বার থেকে কল এলো অচেনা ঃ
আমি- হ্যালো কে???
মায়া- আমি মায়া চিনতে পারছেন??
আমি – ও হ্যা চিনেছি!! কি বেপার কেমন আছো???
মায়া- ভাল আপনি??
আমি- আমিও ভাল!! আচ্ছা তুমি রান্না করতে পারো???
মায়া- ( হাসি ফ্রী) মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে রান্নাতো অবশ্যয় পারি!!
আমি- আচ্ছা আমাকে বিরানী বানাতে হেল্প করতে পারবা???
মায়া- হ্যা অবশ্যয়!!!
( প্রণালী অনুযায়ী সবকিছু করলাম)
আমি- আচ্ছা এখন খাবো???
মায়া- না না আগে ঠান্ডা হবে তারপর….
আমি- বুঝেছ দারুণ ঘ্রাণ আসছে নাকে!! মনে হচ্ছে খেতে দারুন হবে!!!
মায়া- কাল সকালে কিন্তু আমার জন্য নিয়ে আসবেন ভুল যেন না হয়!!!
আমি- হ্যা আনবো!!!
তারপর খেলাম!!! খেতেই বমি!!! ছিঃ ঘ্রাণ ভাল কিন্তু খেতে এত জঘন্য ছিঃ!!!
ঐ মেয়েকে কলঃ
আমি- ঐ এটা কি হল???
মায়া- কি হবে বিরানি…
আমি- ধ্যাত কিছুই হয়নি!! খেতে এসেই বমি আসছে এত খারাপ রান্না ছিঃ!!!
মায়ার হাসি দেখে কে!!!
মায়া- আচ্ছা এখন কিছু খেয়ে ঘুমান কেমন!!!
আমি- আচ্ছা বাই….
সকালে রান্না করলাম না রাগ করে!!! দুপুরে রান্না করবো….
—-
ভার্সিটে গেলাম!! দেখা হল মায়ার সাথে!!! তারপর মায়া বললঃ
মায়া- আপনার ক্লাস কখন??
আমি- দুপুরে। তোমার???
মায়া – দেরি আছে!! আচ্ছা এখানে নির্জন স্থান কই???
আমি- ওই পাশে আসো আমার সাথে!!!
মায়া- চলুন।।
এরপরে আমরা বসলাম, মায়া বলল!!!
মায়া- সকালে কি রান্না করলেন??
আমি- সকালে রান্না করিনি!! দুপুরে রান্না করব!!
মায়া- কি রান্না হবে আজ মেনু কি??
আমি- বেগুন ভাজি আর ডাল!!
মায়া- ( হাহাহা) আচ্ছা এখন এটা খান আমি রেঁধেছি আপনার জন্য!! আপনার বিরানি পছন্দ এজন্য….
আমি- দাও তো খেয়ে দেখি!!! ওয়াও অসাধারণ!! তুমিতো পাক্কা রাধুনি!! কিন্তু আমার থেকে কম!!!
মায়া- ভাল লেগেছে আপনার??
আমি- ভাল বলে ভাল খুব ভাল!!! কিভাবে রাধলে আমি তো পারলাম না!!!
মায়া- ম্যাজিক!!!
আমি- আচছা শুনো আমাকে মাঝেমাঝে কিন্তু খাওয়াতে হবে বলে দিলাম
মায়া- আচ্ছা খাওয়াবো!!! চলুন ক্লাসে যেতে হবে!!! আর বাকিটা বাসায় নিয়ে যান!! মজা করে খাবেন….
আমি — আচ্ছা আজকে ক্লাস করব না!! বাসায় যেয়েই খাবো!!!
মায়া- হাহাহাহ আচ্ছা ঠিকাছে বাই!! রাতে কথা হবে!!!
—-
শুরু হল ফ্রেন্ডশিপ! আজকাল এই মেয়েই রান্নাকরা শিখায়!! আম্মাকে আর জ্বালায় নাহ… আগের থেকে রান্নায় স্বাদও এসেছে!!! ভাবলাম কুকুর কে আবার দাওয়াত দিবো!!! এরপরে একদিন ডেকে খেতে দিলাম!! আজ খুব খেলো!! চোখ দিয়ে বোঝাল – রান্নাটা ঝিংকু ছিল বাবু!!!
শুনে বেশ লাগলো আমার!!
—-
মায়াকে বলতেই মায়া হেসে খুন!!! এরপরে একদিন প্রপোজ করলাম নিজের রান্না করা খাবার দিয়ে!! মায়া খেতে খেতে রাজী হল!!! আর ব্যাচ আমিও পেয়ে গেলাম রাঁধুনি বউ…..!!!
আজকাল মেয়েটা বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসে!!! আমি আমি বাসায় এসে ভুরিভোজ করি!! এই ১৮ সালে এমন গফ পাওয়া কপালের বেপার!!! আজকাল খাবার নিয়ে বারতি চিন্তা করতে হয়না!! আর সবকিছুই এই মেয়ে করে দেই!! আমি চুপ করে সব দেখি!! মেয়েটা মিষ্টি আছে কিন্তু!!! একদিন বিকালে হাত ধরে ঘুরতে গেছিলাম নদীরতীরে!! বা পার্কে যায় ঘুরতে!! মেয়েটা আমাকে একটা ঘড়ি কিনে দিয়েছে!! দেখতে ভালোই!! আমি এখনো কিছুই দেইনি!! কি দিতে তা শিখার জন্য আরেকটা প্রেম করার দরকার!!!
—–
রাধুনি বউ আমার ভাল রাঁধতে জানে….!!! লেখকের পক্ষ থেকে ২৫ সালে বিয়ের দাওয়াত দিলাম….!!! আসবেন কিন্তু!! আর কার রান্না খাবেন??? বউ নাকি আমার???

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত