ধ্রুবতারার গল্প

ধ্রুবতারার গল্প

→প্রতিদিনের মত আজকেও প্রাইভেট শেষ করে নিজের গিয়ার সাইকেল নিয়ে রিকশাটার পিছু পিছু আস্তে আস্তে করে প্যাডেল মেরে এগিয়ে যাচ্ছে ধ্রুব।
প্রতিদিনের রুটিন এইটা ধ্রুবের,আর যাবার কারন যে একটাই এই রিকশায় করে যে মেয়েটা যাচ্ছে,ধ্রুব যে তাকে খুব ভালোবাসে।
.
মেয়েটার নাম তারা,খুব মিষ্টি দেখতে আর ধ্রুবের সাথে একি কোচিং এ পড়ে।ধ্রুব তাকে এই ৬মাস থেকে মনে মনে ভালোবেসে আসছে কিন্তু তাকে বলার সাহস পায়না যদি কোচিং এর ভাইয়ার কাছে নালিশ করে আর সে যদি ধ্রুবের বাবা-মাকে বলে দেয়।
তাই প্রতিদিন কোচিং এ বসে চোখাচোখি আর পড়ার শেষে তারার রিকশার পিছনে তাদের বাসা পর্যন্ত যাওয়া।আর গত ছয় মাস ধরে মেয়েটা এই বিষয়টা ফলো করে আসছে,যে প্রতিদিন এমন করবে ধ্রুব।
.
মেয়েটারও ধ্রুবকে খুব ভালো লাগে কিন্তু সে তো আর একটা মেয়ে হয়ে আগে বলতে পারে না,অপেক্ষা করছে কবে এসে ধ্রুব তাকে ভালোবাসার কথা জানাবে।তারা তার বাসার কাছে চলে আসল আর ধ্রুব সাইকেল টা একটু দূরে থামাল,মনে হচ্ছে সাইকেলের চেন পড়ছে এমন বুঝাচ্ছে।কিন্তু গিয়ার সাইকেলের যে চেন সহজে পড়ে না।
তারা বাসায় ঢুকার আগে গেট থেকে দেখে নেয় ধ্রুব এখনো দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটাও জানে যত টাইম সে বাসার ভিতর না ঢুকবে তত টাইম ধ্রুব দাঁড়িয়ে থাকবে তার ভিতরের যাবার অপেক্ষায়।
.
তারা খুব পছন্দ করে ধ্রুবের এই বিষয় গুলি।ভালোবাসে কথাটা এখনো বলেনি তাইতে এত কেয়ার।একটু পর ধ্রুব চলে যায় নিজের বাসার দিকে,আর হাজারো স্বপ্ন সাজাতে থাকে তার ভালোবাসার তারাকে নিয়ে।দিন যতই যাচ্ছে দুইজনের মনের ভালোবাসা খুব বেশি বাড়ছে।কিন্তু তবুও কেউ কাউকেই বলে না।একদিন কোচিং এর আর একটা ছেলে ছিল নীল নামে সে ও তারাকে পছন্দ করত।ক্লাস শেষে নীল তারাকে দাঁড়াতে বলল,তারা ও দাড়াল আর ধ্রুব সব দেখতে ছিল।
.
নীল তারাকে সরাসরি প্রপোজ করে।
কিন্তু তারা বলে দেখো আমি একজন কে পছন্দ করি আর তাকেই ভালোবাসি।আমি তোমায় ভালবাসতে পারব না।নীল তখন জানতে চায় কে সে যাকে তুমি ভালোবাসো?তারা তখন ধ্রুবকে দেখিয়ে দেয় আর বলে আমি ধ্রুবকে ভালোবাসি।নীল বলে ঠিক আছে,এই বলেই নীল চলে যায়।কিন্তু ধ্রুব দূর থেকে তাদের দেখছিল আর হিংসায় জ্বলে যাচ্ছিল।ভাবছে আজকেই তারাকে বলবে তার ভালোবাসার কথা।কিন্তু যখন তারা তার পাশ থেকে যাচ্ছে তখন আর কিছুই বলার সাহস পেল না।
.
প্রতিদিনের মত আজকেও তারা চলে যায়,আর পিছু পিছু ধ্রুব।রাতে বাসায় গিয়ে ধ্রুব ভাবে না এই ভাবে আর চলবে না,কিছু একটা করতে হবে তাকে,যে করে হোক তারাকে তার বলতেই হবে।ঠিক করল তারাকে একটা লাল গোলাপ দিয়ে তার মনের কথা বলবে।সকাল সকাল উঠে ধ্রুব ফুলের দোকানে চলে যায়,কিন্তু ধ্রুবের জন্য তো ফুলের দোকানদার আর কাচা ঘুম ভেঙে আসবে না,কিন্তু না এসে ও উপায় নাই দোকানের সাইনবোর্ড থেকে দোকানদারের নাম্বার নিয়ে ১০মিনিট পর পর ফোন দিয়ে পাগল করে দিছে।
.
দোকানদার এসেই দিল ঝাড়ি ওই মিয়া এত সকালে কেউ দোকানে আসে?
ধ্রুব বলে ভাই রাগ করেন না।আজকে জীবনে কাউকে প্রথম প্রপোজ করব তাই সেরা ফুলটা খুঁজে নিতে আসছি। সবার আগে,তাই সকাল সকাল আসা।
পরে দোকানদার ও খুশি হয়ে দোকানের সেরা ফুলটা খুঁজে ধ্রুবকে দিল।ধ্রুব ফুল,গিফট,চকলেট সব নিয়ে ব্যাগে রাখল।সাইকেল নিয়ে কোচিং এর সামনে হাজির কিন্তু আজকে সে পড়তে যাবে না।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাহস অর্জন করবে তারাকে প্রপোজ করার জন্য।
.
এদিকে ধ্রুবকে ক্লাসে না দেখতে পেয়ে তারার মন ও খারাপ।ভাবছে কিছু হল না তো আবার ধ্রুবের।চিন্তা করতে করতে ক্লাস শেষ করে বাইরে এল তারা।এসে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে।
নিজের অজান্তেই চোখের কোনে জল চলে আসে তারার।চোখের জল আড়াল করেই রিকশা নিয়ে চলে যায়,ধ্রুব ডাক দেয় কিন্তু তারা ফিরে না,খুব বেশি অভিমান করছে ধ্রুবের উপর।তারা ক্লাসে বসে বসে যখন ধ্রুবকে মিস করছিল,তখন সে বুঝছে ধ্রুবকে কতটা ভালোবাসে আর কতটা ভালোবাসা ধ্রুবের জন্য তার মনের মধ্যে আছে।
.
ধ্রুব তাড়াতাড়ি সাইকেলে করে তারার পাশে পাসে যাচ্ছে আর বলছে তারা একটু কথা আছে তোমার সাথে প্লিজ দাড়াও।কিন্তু তারা কোন কথা বলে না।রিকশাওয়ালা কে বলে মামা আপনি চালান।ধ্রুব অনেক সময় ধরে বলে যাচ্ছে কিন্তু তারাকে থামতে বলতে বলতে কখন যে রোডের মাঝে চলে আসে খেয়াল করেনি।পিছন থেকে একটা মাইক্রোবাসের সজোরে আঘাতে ধ্রুব ছিটকে রাস্তার পাশে পড়ে যায়।তারা শব্দ শুনে পিছনে ফিরে দেখে ধ্রুব রাস্তার পাশে পড়ে আছে,লোক জড়ো হচ্ছে।তারা রিকশা থেকে নেমে ছুটে যায় ধ্রুবের কাছে।পড়ে লোকজনের সহযোগীতায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
.
তারার চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরছে।
কেন সে দাঁড়ালো না,কেন সে ধ্রুবের কথা শুনল না।ডাক্তার বলল একটু অজ্ঞান হয়ে গেছে,আর ডান হাতটা ভেঙে গেছে।প্লাস্টার করে দিছি কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।ধ্রুব বেডে শুয়ে আছে জ্ঞান এখনো ফিরে নাই,তারা পাশেই বসে আছে দেখছে আর ভাবছে আজকে যদি বড় রকমের একটা বিপদ হয়ে যেত তবে?ভাবতে ভাবতে দেখে ধ্রুবের জ্ঞান ফিরছে।তারা ধ্রুবে জিজ্ঞেস করে তুমি ঠিক আছো? ধ্রুব বলে আছি কিন্তু হাতের কি হইছে?আর তুমি ঠিক আছো তো?
.
তারা বলে নিজে তো হাত ভেঙে অজ্ঞান ছিলা এমন চিৎকার করে থামতে বলছিলা কেন?কি বলতে চাইছিলা?ধ্রুব বলে কি আমার হাত ভেঙে গেছে এখন আমি কি করে বলব তোমায়।তারা জানতে চায় কথা কি তুমি মুখ দিয়ে বলবে নাকি হাত দিয়ে,বলো কি বলতে চাও?ধ্রুব বলে তবে আমি তোমায় এখন প্রপোজ করব কি করে এই ভাঙা হাত দিয়ে?
আমি ব্যাগের মধ্যে কত কি আনছি দেখছো তুমি।তারা বলে কেন তুমি আমায় প্রপোজ করবে কেন,আমি তো তোমায় ভালোবাসি না,আর করেও লাভ নাই আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি।
.
ধ্রুবের চোখে পানি চলে আসে তারার কথা শুনে।তবে কি নীলকে ভালোবাসে তারা?ধ্রুব বেড থেকে নেমে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়,আর তারা চুপি চুপি ব্যাগ থেকে ফুল বের করে ধ্রুবের পিছনে গিয়ে ধ্রুবকে প্রপোজ করে……
.
“””উইল ইউ ম্যারি মি?
.
ধ্রুব পিছন ফিরে দেখে যেমনি করে হাটু গেড়ে বসে তারাকে প্রপোজ করার কথা আগের রাতে সে কল্পনা করছিল,ঠিক তেমনি তারা তাকে প্রপোজ করছে।
এখন ধ্রুব তাকে কি বলবে,খুব বেশিই ভালোবেসে ফেলছে তারাকে তাইত মনের অজান্তেই নিজের চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।বাম হাত দিয়ে ফুলটা নিল ধ্রুব।তারা উঠে দাঁড়িয়ে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বলে খুব বেশি ভালোবাসি তোমায়।আর ধ্রুব বলে এত ভালোবাসো তাইতো প্রথমদিনই হাত ভেঙে দিলে।তারা বলে কি আমি হাত ভেঙে দিছি যাও কথাই নাই তোমার সাথে।এমন হাজারো রাগ অভিমান নিয়েই ধ্রুবতারার ভালোবাসার গল্প এগিয়ে যাচ্ছে অজানা ভবিষ্যৎ এর দিকে,না জানি ভবিষ্যৎ তাদের আবারও কোন গল্পের সাক্ষী করে কিনা।…….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত