দুষ্টু প্রেমিকা

দুষ্টু প্রেমিকা

–আমি আপনাকে ভালবাসি?

ছাদের এক কোণায় ডায়েরী হাতে বসে আছি। তখনই
পিছন থেকে কোন রমণী উপরোক্ত কথাটি বলিয়া উঠিলেন। সত্যতা যাচাই করতে, পিছু ফিরে থাকালাম, দেখি বাড়িওয়ালার বড় মেয়ে আদিবা দাঁড়িয়ে আছে।

–কিছু বলছেন আমাকে?
–হ্যা,
–কি?
–আমি আপনাকে ভালবাসি!
–কতটুকু?
–যতটুকু ভালবাসলে একটা মেয়ে হয়ে, ছেলেকে প্রপোজ করতে পারে,ততটুকু।
–কিন্তু….
–কিন্তু কি?
–সমস্যা একটা আছে।
–কি?
–আমি তো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ!
–প্রতিশ্রুতিটা কি?
–আমি তার সাথেই প্রেম করব,যে হাঁচিটা চেয়ে চেয়ে দিতে পারে!
–কি?
–হ্যা,
–এটা তো কখনও সম্ভব নয়!
–তাহলে, আমারও আপনার সাথে প্রেম করা সম্ভব নয়!
চেয়ে দেখি আদিবার চোখ অশ্রুজলে ভরে গেছে। কিছু বলার আগেই দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।
আমি হাসতে হাসতে ছাদেই শেষ।

আমি শেখ আফরান,এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
আর কেঁদেকেঁদে যে নেমে গেলেন,ইনি বাড়িওয়ালার বড় মেয়ে, আর আমার গফ আদিবা।
আমি ওকে ভালবাসি ঠিকই, কিন্তু ও যতবার আসে আমার কাছে ততবার হাসি তামাশা করে রাগিয়ে দেই।
ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেলাম। তখনই মা এসে হাজির…
–কি রে, কি হয়েছে?
–না, কিছু না।
–তাহলে,মিটমিট করে হাসছিস কেন?
–এমনি।

পরেরদিন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হতেই দেখি আদিবা বাসার নিছে দাঁড়িয়ে?কিন্তু আজ থাকে কেমন অন্যরকম লাগছিল,
–কাল যতবার হাঁচি এসেছিল ততবার চেস্টা করেছি, কিন্তু চেয়ে চেয়ে দিতে পারিনি।চোখটা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।
–তাহলে আপনার প্রেম করার বয়স হয়নি?
–কি?
–হ্যা।
–বয়স আঠারো, আর আপনার ক্লাসমেট আমি, আর আপনি বলছেন প্রেম করার বয়স হয়নি!
–আপনে তো আমার ক্লাসমেট
–হ্যা
–তাহলে তো সমস্যা!
–কি?
–প্রেম করার জন্য আমি আপনার জন্য ঠিক না!
–কেন?
–কেননা,নিজের ক্লাসমেটের সাথে প্রেম করা, আর অন্যের বউ পালা একি কথা।
–কি?
–হ্যা।

আমার কথা শুনে রাগের পরিমাণটা মনে হয় বেড়ে গেছে।অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে, অন্যদিকে হাটা ধরল।আমিও ভার্সিটির উদ্দেশ্যে হাটা ধরলাম।
ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে কিছু ভাল লাগছিল না, তাই লেখতে বসেছিলাম ডায়েরীতে। কিন্তু নিজের রুম তন্নতন্ন করে খোঁজেও ডায়েরীর অস্থিত্ব খোঁজে পেলাম না।
যেই মাকে ডাকতে যাব!ওমনি আদিবা আমার রুমে এসে হাজির!
–কি বেপার,আপনি এখানে?
–কেন!আসতে বারণ না কি?
–না,তা হঠাৎ কেন আসলে?
–এই নিন(একটা খাম এগিয়ে দিয়ে)
–কি এটা!
–আমার বিয়ের কার্ড,পরশুদিন আমার বিয়ে,কাল গায়ে হলুদ!
–কি?
–হ্যা,প্রথম দাওয়াত আপনাকেই দিলাম,আসবেন কিন্তু!
–মানে কি?
–ভাল থাকবেন,আসি!
আদিবা রুম থেকে চলে গেল।
আমি কার্ডটা হাতে নিয়ে বসে আছি।একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ঠিক মাথায় ঢুকছে না!কার্ডটা বিছানার মধ্যে রেখে দিলাম, খোলে পড়ার ইচ্ছে নেই।
আমি এখনও সেই জায়গায় বসা আছি,চোখ দিয়ে টুপটুপ করে একফোঁটা একফোঁটা করে জল বেয়ে পড়ছে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আছে অশ্রুতে।

আজ নিজেকে কেমন জানি অসহায় লাগছিল।যে মেয়েটা কি না আমার ভালবাসার জন্য হাজারো পাগলামি করত,কাল না কি তার গায়ে হলুদ।
আমি তো থাকে ভালই বাসতাম,কিন্তু রাগানোর জন্য অনেক উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতাম।
তখনই মা এসে হাজির!
–কি রে,কাঁদছিস কেন?
–কই না তো(চোখ মুখ মুছে নিলাম)
–তবে,এই রুমের মধ্যে বসে আছিস কেন?যা বাহিরে ঘুরে আয়?
–ভাললাগছে না!
–কেন কি হয়েছে?
–কিছু হয়নি,এমনি!
মা রুম থেকে চলে যাবার পর, উঠে দরজা লাগিয়ে ফেললাম।
বিছানার মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে নিজেকে লেলিয়ে দিয়েছি। বালিশটা পর্যন্ত চোখের জলে একাকার।কি করব না করব কিছুই মাথায় আসছিল না। তবে যে করে হউক এ বিয়ে আমাকে আটকাতে হবে।আদিবা কে কখনও হারাতে চাইনা আমি।
সারাটা রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি।বারবার শুধু আদিবা চোখের সামনে চলে আসছিল।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আদিবাদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম।বাসায় ঢোকতেই দেখি সবাই হাজির,
যেন বিয়ে খেতে চলে আসা। দাড়াও বিয়ে খাওয়াচ্ছি।
কিন্তু আদিবা কই? কোথাও খোঁজে পেলাম না।
শেষমেশ আংটিকে জিজ্ঞাস করতেই হল?
–আংটি, আদিবা কোথায়?
–ছাদে মনে হয়!

দৌড়ে ছাদে গিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখি আদিবা দাঁড়িয়ে আছে!!পাশে যেতেই বলে উঠলাম!
–আমি আপনাকে ভালবাসি?
–আজ আমার গায়ে হলুদ!
–কিসের গায়ে হলুদ,
–কার্ডটা খোলে পড়েছ?
–না,
–জানতাম পড়বে না,ওটা আমার বিয়ের না,বার্থডে কার্ড ছিল!
–কি?
–হ্যা,
–মিথ্যে বললে কেন?
–আমাকে কাঁদানোর শাস্তি এটা!
–কি?
–হ্যা,
………শুরু আরো একটা ভালবাসার!

………………………………………………….সমাপ্তি……………………………………………………

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত