ভালবাসি নীলা তোমাকে

ভালবাসি নীলা তোমাকে

— নীলা, তুমি? ব্যাগ সহ কি ব্যাপার?
— আমি চলে আসছি।
— কি?
— আমি বাসা থেকে চলে আসছি।
— কেন?
— বাইরেই দার করিয়ে রাখবা?
— ওপস স্যারি। ভিতরে আসো।
— ~~~~~~~~~~
— এই কাঁদছ কেন, নীলা? কি হয়েছে বলো আমাকে?
— আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।
— কী!!! কি হয়েছে নীলা? সব খুলে বলো তো।
— হঠাৎ করেই আব্বু আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছেন। আচ্ছা তুমিই বলো, এখন কি আমার বিয়ে করার সময়? সবে মাত্র অনার্স তৃতীয় বর্ষে উঠলাম। কতো স্বপ্ন ছিলো। জীবনে আগে প্রতিষ্ঠিত হবো তার পর না হয় বিয়ে নিয়ে ভাববো। তার মধ্যেই আব্বু জামেলা করে বসলো। তাই কোনো পথ খুজে না পেয়ে পালিয়ে চলে আসলাম।
— তুমি কি কাউকে ভালবাস?
— হুম। আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই একটা ছেলে নাম নিয়ান। আমায় ওকে খু্ব ভালোবাসে।
আমি কিছুটা অবাক হলাম। তবে আমার অবাক হওয়াটা মুটেও উচিত হয়নি। কারন ও অনার্স এ পড়ে। একজন কে ভালোবাসতেই পারে। কিন্তু আমার বুকটা এমন হাহাকার করছে কেন? নীলার ডাকে ঘুর কাঁটলো।
— ওর সাথে প্ল্যান করেই বাসা থেকে বের হইছি। ও বলছে ওর নাকি সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। তাই আমি যেন ততদিন তোমার এখানে থাকি। তোমাকে ও অনেক বিশ্বাস করে।
— কিন্তু নীলা তুমি তো জানো এই ফ্ল্যাটে আমি একা থাকি। লোকে কি বলবে বলো?
— ওকে থাকো তুমি। আমার কেউ নাই বুঝছি। আমি এখনই চলে যাব।
— কোথায় যাবে?
— জাহান্নামে যাব। তাতে তোমার কি?
— ওকে ওকে। রাগ করতে হবে না। আমি দেখছি কি করা যায়।
— নিলয়, আমার না খুব ভয় করছে!! যদি আব্বু জেনে যায় আমি তোমার এখানে আছি,,,
— ধুর। কিছু হবে না। আমি আছি তো।
কথাটা বলতে খুব কষ্ট হলো। সেই কলেজ লাইফে নীলার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। সারাদিন মজায় মেতে থাকতাম আমরা তিনজন। ভাবছেন আরেকজন টা কে? রিফাত। রিফাত ছিল আমাদের দুজনেরই চোখের মুণি। অাবার নীলার ছোট চাচা। সমবয়সী হওয়ায় তাদের মধ্যে কোন জড়তা কাজ করতো না। তিনজন মিলে খুব দুষ্টামি করতাম, খুব। একবছর যেতে না যেতেই নীলার প্রতি আমি দূর্বল হয়ে পড়ি। কিন্তু কখনো বুঝতে দেয়নি। প্রতিনিয়ত একটা ভয় আমাকে ধাওয়া করতো। যদি জেনে যায়? তবে তো আমি শেষ। এই হারামি বন্ধু দুইটাকে তো হারাবই সাথে আমার ভালবাসাও। তাই নিরবে শুধু রাতে কেঁদে যেতাম। ইন্টার কম্প্লিট করার পর আমি চান্স পাই রাজশাহীতে আর ওরা দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর আমি ইচ্ছে করেই ওদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। রিফাত মনে হয় আমার উপর খেপে আছে। তিন বছর যাবৎ আমার ওর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। আমার নাম্বার পরিবর্তন করছি। কিন্তু নীলা আমার নাম্বার ঠিকানা কই পেলো?
— এই একদম কাঁদবা না কিন্তু। আর তুমি আমার ঠিকানা পেলে কোথায়?
— “পুষ্প পত্র” আইডিটা আমার। যে তোমার ফেসবুক বিশ্বাস্থ্য বন্ধু।
ধুর শেষ পর্যন্ত আমি একটা ফেক মেয়েকে বিশ্বাস করলাম? নীলা এখনো কাঁদছে। ওর চোখের পানি মুছে দিলাম।
— এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমার সাথে থাকা যাবে না।
— আচ্ছা আর কাঁদবো না। (চোখ মুছতে মুছতে)
— নিয়ান কে ফোন দিছ?
— হু। দরজায় নক করার পূর্বেই কল দিছি।
— ওকে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
— আচ্ছা।
.
সূর্যটা প্রায় অস্থমিত। রক্তিম আভা ছড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির মাঝে। পাখিরা কিচির মিচির করে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। এই সময়টাতে একা একা ছাদে দাড়িয়ে থাকি। কিন্তু আজ পাশে একজন মুখ ভার করে দাড়িয়ে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই জিজ্ঞেস করলাম।
— চাচা জান কেমন আছেন??
রিফাতকে আমরা দুজন চাচাজান বলে ডাকতাম
— ওর খবর নিয়ে তুমি কি করবা? ও তোমার উপর প্রচন্ড খেপে আছে। যদি কখনো খুজে পায় তবে তোমাকে হসপিটালে যাওয়া লাগতে পারে।
— তুমি মুখ ভার করে রাখছ কেন? এখনো ভয় লাগছে?
— নাহ। আব্বু আম্মুকে খুব মিস করছি।
— সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না। নিয়ানের সথে কতোদিন যাবৎ সম্পর্ক তোমার?
— সাত মাস।
— মাত্র সাত মাসে এতোটা নির্ভরশীল হয়ে গেলা?
— ও অনেক ভালো। আমার অনেক কেয়ার করে। আমায় অনেক ভালোবাসে।
— হুম। বাড়ির মালিক দেশের বাইরে গেছে মাস খানেকের জন্য। আমি দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকি। তাই এখন বাসা সম্পূর্ণ ফাঁকা। শুধু আমি ছাড়া এই বাড়িতে এখন একটা কাক পক্ষিও থাকে না। তাই নীলা যদি থাকে তবে সমস্যা হবে না। আমি এই বিষয়টা নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি এই কয়েক মাসেই নীলা ছেলেটাকে এতো বিশ্বাস করে ফেললো? আজ কালকার রিলেশন বুঝা বড় দায়। নীলা আসার পর থেকে দেখলাম না ওর ফোনে নিয়ান কোনো ফোন দিতে। যদিও নীলা নাম্বার পরিবর্তন করেছে। তবুও নিয়ান এর কাছে তো অবশ্যই নাম্বারটা আছে। নিয়ানের সম্পর্কে প্রতিটা কথা একেকটা তীর হয়ে আমার হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছে। প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে বুকের ভিতর। নিয়ান সম্পর্কে নীলার বলা কথাগুলোর কোনো সত্যতা আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আনমনে কথাগুলো ভেবে যাচ্ছিলাম।
— ওই কি ভাবছো এতো?
— নাহ কিছু না। চলো রাত হয়ে গেছে নিচে যায়।
নীলা কোনো কথা না বলে নিচে চলে গেল। প্রচন্ড শীত করছে তাই আর দাড়িয়ে না থেকে আমিও নিচে চলে গেলাম। সীড়ি দিয়ে নামছি আর ভাবছি ওর মনটা ভালো করতে হবে। হইতো আঙ্কেল আন্টির কথা মনে পড়ছে তাই মন খারাপ। কি করা যেতে পারে?
.
রাত নয়টা বাজে। নীলা এখনো মুখ ভার করে বসে আছে।
— নীলা, চলো গেম খেলি।
— নাহ ভালো লাগছে না। তুমি খেল।
— একা একা খেলব কি করে? চলো খেলি?
— কি গেম?
— তোমার সব চেয়ে প্রিয় সেই গেমটা। যেটা কলেজ লাইফে আমরা তিন জন খেলতাম।
— তোমার মনে আছে?
— হুম। আমি মাঝে মধ্যে যখন তোমাদের খুব মিস করতাম তখন ছোট ছোট এই কাগজের টুকরা গুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকতাম।
কথা গুলো বলতে বলতে আমার ড্রয়ার থেকে কাগজের টুকরা গুলা বের করলাম। এইটা দেখে নীলা তো অবাক। সেই আগের কাগজ গুলোই। নীলার কলেজ লাইফের লিখা।
— তোমার কাছে এখনো এই কাগজগুলো আছে?
— হুম। আরও অনেক কিছুই আছে। এখন চলো খেলি।
— আচ্ছা চলো।
খেলাটার নিয়ম হলো কাগজের টুকরা গুলোর মধ্যে কতগুলো কাজের নাম লিখা আছে। যেমন- চিমটি কাটা, কিল মারা, দৌড়ে ধরা, চোখের দিকে পলক হীন দুই মিনিট চেয়ে থাকা ইত্যাদি। সব গুলো একত্রে ফেলা হবে। যখন যেটা উঠবে তখন সেটা করতা হবে।
— নীলা, তুলো।
— নাহ তুমি আগে।
আমি তুললাম। চিমটি কাটা। নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় চিমটি কাঁটবো?
— কোথায় কাটবো মানে? হাতে কাটবা। আর আস্তে কাটবা কিন্তু
— আচ্ছা
— আউচ। এতো জোরে চিমটি কাটে?
কথাটা বলেই নীলা দিল আমার হাতে একটা চিমটি বসিয়ে। জায়গাটা লাল বানিয়ে ফেললো। এখন আবার মিটমিট করে হাসে? আবার কাগজগুলো ছুড়ে মারলাম।
— তুলো এবার।
— “”দৌড়ে ছুয়া””।
নীলা দাড়িয়েই ছুটতে লাগলো। আমিও পিছু পিছু ছুটতে লাগলাম। বেডের উপর দিয়ে, এই ঘর থেকে ওই ঘরে দৌড়াতে লাগলো। বালিস দিয়ে ঢিল মারতে লাগলো। আর বাচ্চাদের মতো হাসতে লাগলো। যখনই কাছে গেলাম তখনই ছুট দিল কিচেনের দিকে। একটু তেল পড়ে যায়গাটা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। আমি আগে খেয়াল করিনি। খেয়াল হলো যখন নীলা ধপাস করে পড়ে ওমাগো বলে চিল্লানি দিল। দৌড়ে কাছে গেলাম। এখনো বসে আছে। কাছে যেতেই না না এখন ছুলে হবে না। আমি পড়ে গেছি।
— উঠো তাহলে
— উঠতে পারছি না তো। পায়ে খুব ব্যাথা।
হাত বাড়িয়ে দিলাম। নাহ হাতে ভর দিয়েও উঠতে পারছে না।
— খুব বেশি ব্যাথা পাইছ?
— হু।
— কাঁদছ কেন?
— উঠতে পারছি না তো।
— এই জন্য কাঁদতে হয়?
কুলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। আজ থাক আবার কালকে খেলবো। এখন চলো খেয়ে নেই।
— আমি এখন কিভাবে খাব?
— আচ্ছা তোমার উঠতে হবে না। আমিই নিয়ে আসছি।
— আচ্ছা।
সব কিছু নীলের বেডের পাশে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। বেড়ে দিলাম। নীলা খাচ্ছে। ইসস কতো দিন পর একসাথে খাচ্ছি। চাচাজান টা যদি আজ পাশে থাকতো। চোখের পানি টলমল করছে তাই বাথরুমে চলে গেলাম। মুখ ধুয়ে আবার খেতে আসলাম।
. একদিন দুপুর বেলা টিউশনি থেকে বাড়ি ফিরলাম। এসে দেখি নীলা হাত পিছনে নিয়ে বসে আছে।
— হাত পিছনে কেন?
— এমনি।
— দেখি।
— নাহ
— দেখাও বলছি।
— ~~~~~
— হাত কাটলো কিভাবে?
— তরকারী কাটতে গিয়ে।
— আমি কি তোমাকে বলছিলাম রান্না করতে?
— নাহ
— তাহলে গেলা কেন?
— ~~~~
— খুলো দেখবো।
— নাহ। খুলা যাবে না। ব্যাথা পাবো।
— খুব বেশি কাটছে?
— নাহ একটু।
— এতো বড়ো বেন্ডিস। তাও বলছো একটু?
— ফ্রেস হয়ে আসো। খাবে
— আচ্ছা।
কিছুক্ষন পর-
— নীলা, খাচ্ছ না কেন?
— আমি পড়ে খাবো। তুমি খাও।
— পড়ে কি মাথা দিয়ে খাবে? হাত কেটে বসে আছে আবার বলছে পরে খাবে।
— ~~~~
— হা করো।
— নাহ
— কেন?
— তুমি আমাকে ঝাড়ি দিছ কেন? রাগ করছ কেন?
মুচকী একটা হাসি দিয়ে বললাম- দেখ তুমি হলে আমার অতিথী। আমানতও বলা যায়। নিয়ান আমার কাছে আমানত হিসাবে তোমাকে পাঠিয়েছে। এখন যদি তোমার একটা কিছু হয়ে যায় আমি কি বলবো তখন?
কথাটা শুনে নীলার মুখটা কালো হয়ে গেল। বেপারটা বুঝতে পারলাম না। টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে গেল। কাহিনীটা কি? আর তাছাড়া নিয়ান এর তো কোনো খবর দেখছি না। সাত দিন হয়ে গেলো।
নীলা ভুল কাউকে ভালবাসে নি তো আবার? না না এ কি ভাবছি আমি? এক প্লেট ভাত নিয়ে রোমে গেলাম। নীলা কাঁদছে।
— এই পাগলি। কাঁদছো কেন?
— তুমি আমাকে অতিথী বলে তাড়িয়ে দিতে চাও না? আমি বুঝি। সব বুঝি।
— ছিঃ ছিঃ কি বলে ওসব। তোমার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে। ঠিক আছে? এখন নাও হা করো।
— সত্যি তো?
— হুম সত্যি।
কি চায়ছে নীলা? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। নাহ আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। আমিও তো একটা মানুষ। যার জন্য চাচা জানের সাথে সব যোগাযোগ আজ বিচ্ছিন্ন, যাকে দেখলে ভিতরের সব কিছুতেই ঝাকুনি দিয়ে থরথর করে কাঁপে, তাকেই আজ রাখতে হচ্ছে নিজের রোমে, অন্যের আমানত হিসেবে। জীবনটা শূন্য শূন্য লাগে। প্রতিনিয়ত একটা হাহাকার বুকের ভিতর থেকেই যায়।
— ওই! কখন থেকে হা করে বসে আছি। কি ভাবছো হু?
— না না কিছু না। খাও
.
দশ দিন হয়ে গেল। নিয়ানের কোনো খবর নেই। নীলাকে নিয়ানের কথা বলতেই মুখে মেঘের হাব ভাব ফুটিয়ে তুলে। নাহ, আমি আর পারছি না। নিয়ানের সাথে কথা বলে দ্রুত পাঠিয়ে দিতেও পারছি না। এই কইটা দিনে বড্ড বেশিই মায়া জমে গেছে। ঘরটা যে ফাঁকা হয়ে যাবে। ও যদি চলে যায় তবে কে বলবে, আমার না খুব ভয় করছে। আমি তোমার রোমে শুব। শান্তিতে নিষ্পাপ শিশুটির মতো ঘুমাবে আর এদিকে চেয়ারে বসে সারা রাত জেগে থাকতে হবে আমায়। কে বলবে, যাও ফ্রেশ হয়ে আসো এক সাথে খাবো। বড্ড বেশিই মিস করবো পাগলিটাকে। কিন্তু যেতে তো হবেই। ও তো আর আমাকে ভালবাসে না। তাকে আমি কি দিয়ে আঁটকে রাখবো? কোনো বাঁধনেই তো বাঁধতে পারলাম না। শুধু নিজেকেই ডুবিয়েছি ভালবাসার অতল সাগরে। একা একা পড়ন্ত বিকালে ছাদের এক কোণে দাড়িয়ে কথা গুলো আনমনে ভেবে যাচ্ছি। কখন যে নীলা এসে দাড়িয়েছে টেরই পায় নি। বুঝতে পারলাম যখন অনুভব করলাম কারো স্পর্শে আমার গালের এক ফুটো জলকণার নিঃশ্বেষ ঘটেছে।
— কাঁদছো কেন?
— কই নাতে।
— মাত্র এইটা কি মুছলাম তাহলে?
— নিয়ান কবে আসবে?
— কালই আসবে। একটু আগে কথা হয়েছে।
— হইতো সেই খুশিতেই দুফুটো জল বেরিয়ে আসলো তোমাদেরকে অভিনন্দন জানানোর অভিপ্রায়।
— ভালোই তো কথা শিখেছ। নিজেকে আড়াল করতেও এক্সপার্ট হয়ে গেছ দেখছি।
পকেটে থাকা ফোনটা কাঁপছে। আমার মোবাইলটা ইদানিং কি জানি হইছে লাউড স্পিকার ছাড়া কথা বলা যায় না। ফোনটা রিসিভ করলাম।
— আসসালামু আলাইকুম স্যার। কেমন আছেন? কি করছেন? (নওরিন- স্টুডেন্ট)
— ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো। তুমি?
— আমি ভালো নেই স্যার। (মেঘ যুক্ত কন্ঠ)
— কেন?
— স্যার। কালকে একটু তাড়াতাড়ি আসবেন? ওই মিষ্টি কালার পাঞ্জাবীটা পড়ে আসবেন।
— কেন?
— প্লিজ স্যার।
— ওকে
নীলার মুখটা রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। হঠাৎ এমন চেহারা করলো কেন? একটু আগেও তো মুচকী হেসেছে। গোধূলীর সাথে কন্টাক্ট করে এমন করে নি তো আবার? তবে বেশ ভালোই লাগছে।
— ও কি তোমার স্টুডেন্ট?
— হ্যা
— কোন ক্লাসে পড়ে?
— ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
— দেখতে কেমন?
— পরীর মতো।
— ওহ আচ্ছা
নীলা নিচে চলে গেল। একটা হাত সামনে। তাই বুঝতে পারলাম কাঁদছে হইতো। কিন্তু কাঁদবে কেন? মেয়েদের বুঝা বড় দায়। কি বেপার আবার চলেও এলো। বোকার মতো শুধু দাড়িয়ে আছি আমি।
— কাল তো নিয়ান আসবে তাই চলে যেতে হবে। আর কভু দেখা হবে কি না জানি না। তাই চলো শেষ বারের মতো ওই খেলাটা একটু খেলি।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালাম। হাহাকার টা যেন উত্তর উত্তর বেড়েই চলেছে।
— চলো।
— তুমি তোল।
— হ্যা তুলছি।
— “”জড়িয়ে ধরা”” না এ হতে পারে না। এমন কিছু তো গেমের মধ্যে লিখা ছিল না।
— নীলা, এইটা কোথা থেকে আসলো?
— আমি কি জানি। খেলার নিয়ম অনুসারে এখন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরবে।
— কিন্তু
— কোনো কিন্তু না। ধরো বলছি
— নাহ এ হয় না নীলা।
বুকে একটা ধাক্কা অনুভব করলাম। কিছু একটা বুকের ভিতর ঢুকে যেতে চাইছে।
— নীলা ছাড়ো বলছি। নীলা কাজটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। ইচ্ছে করছিল আমিও জড়িয়ে ধরি এবং চিৎকার করে বলি আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু পারলাম না। পারলাম না আমি। নীলা আবার জড়িয়ে ধরলো এবং হাও মাও করে কেঁদে দিল।
— এই কাঁদছো কেন?
— আমাকে জড়িয়ে ধরো না কেন?
— একদম ব্ল্যাকমেইল করবা না।
— আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না নিলয়। তুমি এতো বোকা কেন হুম? তুমি কি কিছুই বুঝো না?
— কি বলছো এসব?
— হ্যা। আমি সত্যি বলছি। সেই কলেজ থেকে তোমায় ভালবাসি। হাদারাম একটা। আমাকে কখনোই বুঝ নি তুমি। কেন এতো কষ্ট দিলে আমায়?
— তাহলে নিয়ান? নিয়ান কে? কেঁদেয় দিলাম অবশেষে।
— নিয়ান কেউ না। নিয়ান নামের কেউ নেই। শুধু এতদিন অভিনয় ছিল।
— এসবের মানে কি? সরাসরিই তো বলতে পারতে।
— ইসস। আমাকে এতোদিন কাঁদায়ছ না? তাই আমিও দশটা দিন প্রতিশোধ নিলাম।
কি মেয়েরে বাবা। কপালে কি আছে আল্লাহই জানে।
— আমি তোমাকে ভালবাসি না। আমার স্টুডেন্টই ভালো।
— কী? ওকে যাও তুমি তোমার স্টুডেন্ট এর কাছে। ফিরে এসে আমার জানাজা দিও।
— ছিঃ ছিঃ এসব কি বলে? আমি তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
— লাগবে না তোমার ভালবাসা। যাও এখান থেকে
নাহ বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই জড়িয়ে ধরলাম।।
— এই পাগলি, তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব হ্যা? তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো বলো?
নীলা কাঁদছে। কাঁদুক মেয়েটা। এইটা সুখের কান্না। ভিজোক না শার্টটা। তাতে কি। সামনে তাকিয়ে দেখি সব গুলো কাগজই নতুন। ওকে ছেড়ে দিয়ে কাগজ গুলো নিতে যাব। নাহ, ছাড়ছে না পাগলিটা। তাই জড়িয়ে ধরেয় কাগজ গুলো নিলাম। একটা একটা করে খুললাম। প্রত্যেকটার মধ্যেই লিখা জড়িয়ে ধরা। তার মানে এইটাও একটা চাল। হঠাৎই চোখ পড়লো হাতে। কি বেপার বেন্ডিস কই?
— নীলা, হাত ভালো হয়ে গেছে?
— হুম
— এমন করলা কেন?
— এমন না করলে কি আর তিন দিন যাবৎ তোমার হাতে খেতে পারতাম।
— আচ্ছা। এখন তো হাত ভালো। নিজের হাতেই এখন খেতে পারবা।
— দরকার পরলে এখন গিয়ে হাত কাঁটবো
— না না থাক। হাত কাঁটতে হবে না। আমিই খাইয়ে দিব।
— হুম। মনে থাকে যেন। একটা ইয়ে দিবা?
— না না। ওগুলো বিয়ের পর
— আচ্ছা।
— কাল তো নিয়ান আসবে না?
— আসবে একজন। তবে নিয়ান না
— কে?
— চাচা জান
— কি? সত্যি? ছাড়ো ছাড়ো
— কেন?
— হসপিটালে ফোন দিতে হবে না? সিট বুকিংয়ের জন্য
— আরে ধুর। চাচা জানই তো আমাকে তোমার কাছে পাঠালো। সব প্ল্যান চাচা জানের।
— ও বজ্জাত একটা
— কি?
— নাহ কিছু না। চাচা জান জানলো কিভাবে?
— হিহিহি তোমার ডাইরিটা চাচাজানের কাছে। সাথে আমারটাও…….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত