ভালোবাসার পাগলামি

ভালোবাসার পাগলামি

“তুমি যে দিন দিন বদলে যাচ্ছ সেটা কি বুঝতে পারছো”?
বসন্তের বিকেল। চারিদিকটা প্রকৃতির নতুন রুপে ছেয়ে গেছে। শুষ্ক শীতের কনকনতা শেষে রুক্ষময় পরিবেশকে ছাড়িয়ে প্রকৃতির মাঝে নতুন সাজ রব রব করছে। আমি পার্কের বেঞ্চটাতে বসে চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছি। তখনি পাশে থাকা মেঘলা কথাটি বলল। আমি ওর কথা শুনে মেঘলার দিকে তাকালাম। সে আবার বলল…
– কি বললাম শুনতে পাওনি? তুমি যে বদলে যাচ্ছ তা কি তুমি বুঝতে পারছো?
– জানিনা (আমি, শান্ত ভাবে বললাম)
আমার কথা শুনে মেঘলা কেমন দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আমি সেই চাহনির মাঝে নিজের সর্বনাশ দেখতে পারছি।
– এভাবে তাকাবা না। তুমি বদলে যাচ্ছ আর তুমি জানো না?
আমি মেঘলার দিক থেকে চোখটা সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম..
– যখন কোনো মানুষ বদলে যেতে থাকে তখন সে বুঝতে পারে না যে সে বদলাচ্ছে। তার কাছে মনে হয় সে তার স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে কিন্তু আশে পাশের মানুষের কাছে ঠিকই ধরা পড়ে যে সে বদলে যাচ্ছে।
– তা এরুপ বদলানোর কি কোনো কারন আছে? (মেঘলা)
– সেটাও বুঝতে পারছি না,তবে বোঝার চেষ্টা করছি।
– আমাকে একটা সত্য কথা বলবে?
মেঘলার দিকে তাকালাম। এখন মেয়েটিকে দেখতে কেমন শুকনা শুকনা লাগছে। খুব টেনশনে আছে মনে হয়। আমি শান্ত ভাবে বললাম..
– অতীব জরুরি না হলে আমি মিথ্যের আশ্রয় নেয় না। এখন তোমার প্রশ্নের উপর নির্ভর করছে সত্য বলব নাকি মিথ্যে বলব।
আমার কথা শুনে মেঘলা কেমন করে যেন তাকালো। এবার কেন জানিনা আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমি কি এমন বললাম? চোখটা গোল করে নিচের ঠোট একটু বাকিয়ে মেঘলা বলল..
– আমাকে কি তুমি আগের মত ভালোবাসো?
মেঘলার কথা শুনে ফিক করে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হল। কারন এরুপ কথায় সচারচার কেউ এভাবে হাসে না। আমি বললাম..
– না আমি আগের মত তোমাকে ভালোবাসি না। তবে আগের থেকে আরো বেশি ভালোবাসি তোমায়।
মেঘলা কথাটি শোনা মাত্রই আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকালো। ওর চাহনি দেখে মনে হল সে আমাকে কিছু বলতে চাই। মেয়োটির এই কেমন চোখ করে তাকানোর মায়াতে মত্ত আমি আগেও ছিলাম এখনো আছি।

ভার্সিটির প্রথম বর্ষে মেয়েটিকে ক্যামপাসে ভিজতে দেখেছি। সেদিন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। লাগাতার বর্ষা থাকাতে ক্যামপাসে তেমন লোকজন ছিল না। তাই হয়ত কতগুলো বান্ধবিসহ সে ভিজছিল। সাদা ড্রেস, ঝুম বৃষ্টির মাঝে আর ঘন কালো চুলে তাকে দেখতে বেশ মোহনীয় দেখাচ্ছিল। তারপর থেকে মেঘলাকে ফলো করা শুরু করি। কোনো এক অবেলায় তাকে জানিয়েছিলাম আমার মনের অপ্রকাশিত কিছু আক্ষেপনা। জানিয়েছিলাম আমার মনের অবাধ্য কথাগুলো। ছ মাস ঝুলিয়ে রাখার পর কোনো এক স্নিগ্ধ বিকেলে আমি তার মনের মাঝে আমার বিরাজমান অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলাম।
।।
– কিছু বলবে মেঘলা?
– আমি যাচ্ছি, আমার ভালো লাগছে না কিছু।
– হুম সাবধানে যেও।
মেঘলা উঠে চলে গেল। হয়ত বিশেষ কিছু সে বলতে চেয়েছিল। আমার হয়ত ওর হাতটি ধরে জিঙ্গেস করা উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি তা জানতে চাইনি। ইদানিং আমার আগ্রহটা দিন দিন কমে যাচ্ছে সবকিছুর উপর থেকে। কেউ যদি এসে বলে “আবির তোর বাসার ছাদে এলিয়েন রা এসেছে দেখবি চল, আমার উত্তর হবে, এলিয়েন এসেছে তো কি হয়েছে”?.
অনেক্ষন বসে থাকারপর উঠে দাড়ালাম। ভালো লাগছে না কিছু। সময়ের ব্যবধানে আমি কেমন যেন হয়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি। এখন বিকেল ৫ টা বাজে। এসময়টায় আগে কত আড্ডা দিয়েছি বন্ধুরা মিলে। কত ঘুরেছি মেঘলাকে নিয়ে। কিন্তু এখন আর আগের মত সে সব হয় না। খুব মিস করি সেসব। বন্ধুরা এখন আর কাছে নেই। সবাই কাজের জণ্য বহুদুরে বাস করছে। সেসব দিনগুলোর কথা মনে হলে নিজের মাঝে উদাসিনতার ভাব দেখতে পাই।
সোজা বাসায় চলে আসলাম। অযথা ঘুরাঘুরি আমার ভালো লাগে না। বাসায় বসে বাচ্চাদের মত কার্টুন দেখাই আমার প্রধান কাজ। তবে মেঘলার সাথে দেখা করাটাও একটি বড় কাজের মধ্যে পড়ে। তবে যত বেশি দেখা হবে ততবেশি নাকি ভালোবাসা কমে যাবে। আর যত কম দেখা হবে তত ভালোবাসা বাড়বে, এটা মেঘলারই কথা। কিন্তু এখন আমার সাথে ওর দেখা করার আগ্রহটা বেশিই।
মাগরিবের নামাজ শেষ করে দিলাম এক ঘুম। এক ঘুমে জেগে দেখি ১২ টা বাজে। কিন্তু আমাকে কেউ ডাকলো না কেনো? ওহ কেন ডাকবে? বাসায় তো কেউ নাই।।আম্মু তো ছোট খালার বাসায় গেছে। ধীরে সুস্থে উঠে ফ্রিজ থেকে কিছু খেয়ে নিলাম। তখনি ফোনের দিকে চোখ পড়ল। ৪৭টা মিসড কল আর ২১ টা মেসেজ। ৫ টা আম্মুর কল। আর বাকিগুলো মেঘলার। আম্মুকে আগে কল দিয়ে খানিক বকা খেয়ে নিয়ে মেঘলাকে কল দিলাম।
– হ্যালো? (আমি)
– হুমম বলো।
– আসলে ঘুমিয়েছিলাম তাই ফোন ধরতে পারিনি।
– ওহ আচ্ছা ভালো

– তুমি কি রেগে আছো?
– তোমার উপর রাগ করে কোনো লাভ নেই। আমি ভাবছি আমাদের ব্রেকআপের কথা। এতে দুজনেরই ভালো হবে।
– মন থেকে বলছো তো? (আমি)
– হুমম একদম মন থেকে বলছি। কারন, তুমি আর আগের মত মানুষ নেই পাথরের মুর্তি হয়ে গেছ। অনূভুতিহীন হয়ে পড়েছ।
– আমারো তাই মনে হচ্ছে। আচ্ছা যাই হোক, ব্রেকআপই ভালো হবে কি বল?
– হুমমম
হালকা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে ওপাশ থেকে। যদিও সে অনেক কষ্টে সেটা চেপে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু তা পারছে না।
– আচ্ছা রাখি তাহলে, বাই ঘুমাও। (আমি)
ফোনটা কেটে দিলাম। আমি জানি মেঘলা এখন কান্না করবে। মেয়েরা ছোট্ট কারনে মানে কাছের মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেলে কান্না করে দেয়। আর মেঘলা করেছে এখন ব্রেকআপ। মনে হচ্ছে গাল আর চোখ ফুলিয়ে কান্না করবে সারারাত।
আচ্ছা আমি যদি মেঘলার বাড়ির সামনে যায় তাহলে কেমন হয়? আমাদের বাসার কয়েকটি বাসা পরেই মেঘলাদের বাড়ি। ৫ মিনিটেই সেখানে পৌছে যাবো। তখনি বাড়ি থেকে বের হলাম। একটু পর মেঘলাদের বাড়ির সামনে আসলাম। মেঘলার রুমের বারান্দা রাস্তা থেকে দেখা যায়। কল দিলাম.. একবারেই রিসিভ..
– হ্যালো মেঘলা? (আমি)
– হুমম
– আমি তোমার বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনছি।যদি একটু বারান্দাতে আসতে।
সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিল। আমি মেঘলার বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছি। হুট করেই গেট খোলার শব্দ পেলাম। দেখলাম, মেঘলা বারান্দায় না এসে সোজা বাইরে চলে এসেছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম এরি মধ্যে খুব কান্না করেছে। অভিমানি কন্ঠে সে বলল..
– এত রাতে কেনো এসেছো?
– উমমম ব্রেকআপ হয়ে গেল তাই ভাবলাম শেষবার দেখা করে যায়।
– মাইর দিবো হাদারাম একটা। বলেছি বলেই কি সব শেষ হয়ে যাবে নাকি? যেহেতু ভালোবাসছো সেহেতু বিয়ে করতেই হবে তোমার।
মেঘলার গালদুটি ধরে কপালে আলতো করে একটি ভালোবাসার চুম্বন একে দিলাম। বেশিক্ষন থাকলাম না ওর কাছে। কারন এত রাতে বাইরে এসেছি বলে সে রাগ করেছে। কিন্তু আমি জানি সে আমায় দেখে কতটা খুশি হয়েছে। সে খুশিটা মুখ দিয়ে প্রকাশ না করলেও চোখ দিয়ে ঠিকই প্রকাশ করে দিয়েছে। অদ্ভুত চাহনি দিয়ে সে বুঝিয়ে দিয়েছে “ভালোবাসি পাগল তোমাকে”
আমি দুই পকেটে হাত গুজে হাটত হাটতে মনে মনে বললাম..
আমিও “ভালোবাসি পাগলি শুধু তোমাকেই”

…………………………………………(সমাপ্ত)……………………………………

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত