অন্য রকম ভালোবাসা

অন্য রকম ভালোবাসা

মিজান দশম শ্রেণীর ছাত্র । শহরের একটা স্কুলে লেখাপড়া করে সে। শুধুমাত্র ওর পড়াশুনার জন্যই পুরো পরিবারের, গ্রাম থেকে এসে এইশহরে থাকা ।
বাবা চাকরির জন্য এখানে থাকতেপারেন না, সপ্তাহে দু’একদিন আসেন । তাই মা’কেই
সামলাতে হয় সংসারের পুরো দায়িত্ব। মধ্যবিত্ত পরিবার,
তাই সারা বছর টানা পোড়েন লেগেই থাকে । লেখাপড়া, বাড়ীভাড়া, বাজার-খরচ চালাতে মুটামুটি হিমসিম থেতে হয় তাকে, তার উপর আবার চিরসঙ্গী কোমরের ব্যাথা! শত কষ্টের
মাঝেও তিনি নিজের কথা ভুলে ছেলের সকল চাহিদা পূরন করেন।
~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~
কিছুদিন পর ১৪ই ফেব্রুয়ারী।

বন্ধুমহলে আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে,”কে কার প্রিয়জনকে কি gift দেবে?”এই নিয়ে ।
মিজানের অবশ্য তেমন বিশেষ কেউনেই।
কিন্তু সেও gift কেনার জন্য টাকা জমাতে থাকে।
সে ঠিক করে, এবার’ভালবাসা দিবসে’ মাকে একটা কিছু দিবে ।
মার্কেটে অনেক ঘুরাঘুরির পর খুবসুন্দর একটা শাড়ী পছন্দ করে মায়ের জন্য । কিন্তু বিপত্তিটা হল দাম নিয়ে!
শাড়ীটার দাম লেখা ৭০০/- টাকা.!
(একদর)।
কিন্তু ওতো এই ক’দিনে টিফিনের
টাকা বাঁচিয়ে মাত্র ৩৫০ টাকা জমাতে পেরেছে.! তাই হতাশ মনে বাড়ী ফেরে সে ।
ভেবে পায়না, কি দেবে মাকে ।
এদিকে ১৪ই ফেব্রুয়ারী আসতে আর মাত্র একদিন বাঁকি!
অবশেষে সারারাত অনেক ভেবেচিন্তে একটা আইডিয়া মাথায়
আসে!
পরদিন সকালে পা টিপে টিপে মা’র ঘরে যায়, দেখে মা নামাজ পরছে । চুপিচুপি মায়ের ড্রয়ার থেকে কি যেন একটা নেয়!
তারপর ভাঁজ করে পকেটে রেখে দ্রুত কেঁটে পরে । এরপর সোজা চলে যায় দোকানে ।
এদিকে, রাত থেকেই মায়ের কোমরের ব্যাথাটা বেড়েছে ।
তাই তিনি ভাবলেন, আজ অন্তত দুটো ট্যাবলেট কিনে খাবেন ।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তিনি ঔষধের প্রেসকিপ্শনটা খুঁজে পাচ্ছেননা ।
কিন্তু ড্রয়ারের মধ্যেই তো ছিল ওটা! গেল কোথায়?
এমন সময় মিজান, সুন্দর একটা গিফ্ট পেপার দিয়েমোড়া একটা প্যাকেট নিয়ে মায়ের কাছে হাজির ।
মুখে এক চিলতে হাসি, আজ সে মহাখুশী!
মাঃ এটা কি?
মিজানঃ আজ’বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ তাই তোমার জন্য gift..!
মাঃ এর মধ্যে কি?
মিজানঃ আঃহা খুলেই দেখনা.!
মা অত্যন্ত যত্নের সাথে প্যাকেটটি খোলেন ।
এবং খুলে যা দেখেন, তাতে তো তিনি হতবাক! প্যাকেটের মধ্যে রয়েছে তার কোমরের ব্যাথা আরপ্রেসারের অনেকগুলো ট্যাবলেট! প্রায় ১মাসের ওষুধ,সাথে প্রেসকিপ্শনটাও!
মাঃ বোকা ছেলে, এসব তুই কেন
কিনতে গেলি…
মাঃ কিন্তু ….এতোগুলো টাকা তুই কোথায় পেলি..? মিজানঃ টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়েছি মা ।
আবেগাপ্লুত মা মিজানকে বুকের
মাঝে জড়িয়ে ধরেন…
আর বলেন,”তুই অনেক অনেক বড় হ বাবা..!”
বলতে গিয়ে মায়ের চোখে পানি চলে আসে ।
মিজান আলতো করে তা মুছে দেয় ।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত