দুটি ভালেবাসার চোখ

দুটি ভালেবাসার চোখ

-“কিরে কোথায় আছিস “?
-“আমি কোথায় আছি তা দিয়ে তোর কি “?
-“আমার কি মানে? রেহান কোথায় আছিস সত্যি করে বল “।
-“আমি বুলু ভাইয়ের টং এ আছি “।
-“টং এ কি করিস “?
-“কি করি মানে? চা খায়,সিগারেট খায় “।
-“তুই এখনও সিগারেট খাস “?
-“কেনো খায় তো। আমি আবার কবে বলেছি যে খায় না । দেখ লেবু তুই কিন্তু আমাকে বেশি প্রশ্ন করছিস “।
-“এই তুই আবার লেবু বললি কেনো আমায়। আমি তোকে কতবার বলেছি আমাকে লাবণ্য বলে ডাকবি “।
-“এই তুই রাখ তো। ভালো লাগছে না “।
-“এই রেহান এই ফোন রাখবি না “।
-“তে কি করবো তোর সাথে কি এখন ঝগড়া করবো মুঠোফোনে “?
-“না। আমি এখন নিকুঞ্জে বসে আছি। তুই এখন এখানে আসবি “।
-“কেনো? আসবো কেনো? আমার এখন সিগারেটের দাম দেওয়ার মতোই টাকা আছে। আমি এখন হেঁটে হেঁটে আসতে পারবো না “।
-“আচ্ছা তোর বিকাশে দুইশ টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। একটা সি এন জি নিয়ে চলে আয় “।
-“আমার দুইশ টাকা ক্যাশ আউট করতে ভালো লাগে না। সবাই ফক্ষিন্নী ভাবে “।
-“তে কি ওরা তো ঠিকই ভাবে। তুই তো ফকিরই । ফকির না হলে এখন ঠিকই একটা সি এন জি নিয়ে চলে আসতি “।
-“এই তুই রাখ আমার ভালো লাগছে না “।
-“এই রেহান এই ফোন রাখবি না। হ্যালো হ্যালো “।
ফোনের ওপারে লাবণ্যের হ্যালো হ্যালো তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বরটা রেহানের কাছে এই মুহূর্তে খুব বিরক্তের লাগছে। হাতের সিগারেটটা মুখের মাঝে নিয়ে চিকন ধোয়ার কুন্ডলী বের করছে রেহান । চায়ের কাপের গরম ধোয়াটা উড়ছে না। কিন্তু অনেক গুলো মাছি এসে বিরক্ত করছে চায়ের কাপের কাছে । রেহানের ফোনে টুংটুং শব্দ বেজে উঠলো। একটা মেসেজ। মেসেজটা অন করতেই দেখলো বিকাশে দুইশ টাকা ক্যাশ ইন এর মেসেজ। লাবণ্য ঠিক দুইশ টাকায় পাঠিয়েছে । রেহানের মনটা বিক্ষিপ্তভাবে পাগল হয়ে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে খুব শান্ত করে নিলো। লাবণ্যকে রেহান ভালোবাসে কিন্তু কতটা ভালোবাসে তা প্রকাশ করে না। আর লাবণ্য রেহানকে কতটা ভালোবাসে তা সব প্রকাশ করে দেয় । রেহানের জন্য লাবণ্য নিকুঞ্জে অপেক্ষা করছে। নিকুঞ্জ একটা বড় কমপ্লেক্স । বারো তলা বিশিষ্ট এই কমপ্লেক্স এর ছাদেই রেহান আর লাবণ্যের সময়টা কাটে। ভালোবাসা, রাগ,অভিমান,ক্ষুণসুটি নিয়েই ওদের সময়টা পার হয়ে যায়। রেহান টং থেকে বের হয়ে বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে খুব ইতঃস্বতার সাথে দুইশ টাকা ক্যাশ আউট করলো। তারপর সে কিছু সিগারেট কিনে একটা সস্তা ভাড়ার সি এন জি খুঁজতে থাকলো। একটা পেয়েও গেলো সস্তা সিএনজি।
-“মামা যাবেন “?
-“কই যাবেন “?
-“ধানমন্ডি “।
-“হ, যামু “।
-“মামা ভাড়া কত “?
-“দুইশ টেহা দিয়েন “।
-“না, মামা । প্রতিদিন যায় দেড়’শ টাকায় আর আপনি দুইশ চান কি করে “।
-“আচ্ছা দিয়েন । উঠেন যায় গা “।
বলার সাথে সাথে রেহান উঠে পড়ে। রোজ রোজ একই মিথ্যা বলতে বলতে এখন এটা সত্যি অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে রেহানের কাছে । রেহান এখন দেড়’শ টাকা ছাড়া সি এন জি তে উঠে না । পুরো এক ঘন্টা পর রেহান পৌঁছালো নিকুঞ্জে লাবণ্যের কাছে। আজ লাবণ্য সরিষার হলুদ ফুলের রঙের মতো একটা ওড়না পড়েছে আর গাঢ় কাঁচা আমের রঙের মতো একটা জামা আর রক্তের মতো লাল রঙের পায়জামা। লাবণ্যকে বেশ মানিয়েছে। লাবণ্য এরকমের পোষাকই পরে। ওর তিনটা তিন রকমের না হলে পড়তেই নাকি মন চায় না। রেহান পা টিপে টিপে গিয়ে লাবণ্যের চোখ জোড়া চেপে ধরে। লাবণ্য রেহানের মাথায় হাত দিয়েই বলে দেয়,
-” রেহান তুই “?
রেহান লাবণ্যের চোখ জোড়া ছেড়ে দিয়ে বিশাল ছাদের ওপর ওয়াল ঘেসে বসে পড়ে। লাবণ্য রেহানের চুলগুলো টেনে ধরে বলতে শুরু করে,
-“কি রে তুই এখনও চুল কাটিস নি “?
-“দেখতেই তো পাচ্ছিস “।
-“কাটিস নি কেনো? দাঁড়ি গোঁফ টাও তো অমনই আছে “।
-“হুম। টাকা ছিলো না তাই কাটি নি “।
লাবণ্য ভ্রুটা কুঁচকে নি বললো,
-“টাকা ছিলো না মানে? আমি না তোকে এটার জন্য এক হাজার টাকা দিছি। চুল আর টি-শার্ট কিনবি বলে “।
-“হুম দিছিলি কিন্তু ধার ছিল তা শোধ করে দিছি “।
-“তুই কোনোদিনও মানুষ হবি না তাই না “।
-“তে আমি এখন কি? মানুষ নেই এখন “?
-“নাহ্ নেই। তুই এখন গাধা। আস্ত হাদারাম গাধা “।
-“তে মানুষ করলেই তো পারিস “।
বলেই লাবণ্যের চোখে চোখ রাখলো রেহান। লাবণ্যও কিছু সময়ের জন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রেহানের দিকে । কিছুক্ষণ নিরবতা থাকে ওদের মাঝে। তারপর রেহানই নিরবতা ভেঙে দিয়ে একটা সিগারেট বের করে মুখে দেয়। লাবণ্য নাকটা ছিটকে নিয়ে রেহানের মুখ থেকে সিগারেটটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিয়ে রেহানে পাশে বসে রেহানের কাঁধে মাথা রেখে রেহানকে জিজ্ঞেস করে,
-“আচ্ছা রেহান তুই কি মানুষ হবি না কখনও “?
-“হুম হবো তো। তুই চাইলেই হবো “।
-“আমি যদি তোর কাছে থেকে হারিয়ে যায় কখনও “?
-“এই এইসব ফাউল কথা বলবি না “।
-“কেনো বলবো না। আমি কি তোর বিয়ে করা বউ নাকি যে সারাজীবন তোর কাছে থাকবো “?
রেহান কিছুক্ষণ নিরব থাকে। লাবণ্য একটা আদুরে চিমটি কেটে বলতে থাকে,
-“কি রে চুপ কেনো? কিছু বল “।
রেহান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-“তুই কি আমার বউ হবি “?
লাবণ্য রেহানের কাঁধে থেকে মাথাটা তুলে নিয়ে চোখ জোড়া চিকন করে পাকিয়ে ইশারা দিয়ে বললো,
-“কি বললি “?
রেহান ওর চোখটা নামিয়ে নিয়ে আবার নিরব হয়ে যায়। লাবণ্যও কিছু বলে না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে রেহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বেশ কিছুক্ষণ পরে লাবণ্য রেহানের মাথাটা দুহাত দিয়ে উচু করে তুলে রেহানের চোখে চোখ রেখে খুব সাহস নিয়ে মনের ভেতরের কথাটা আবারও বাহির করে বলে,
-“তুই আমাকে বিয়ে করবি “?
লাবণ্যের মুখে কথাটি শোনার পর,রেহানের বড় বড় দাঁড়ি গোঁফে ঢাকা ঠোঁটের ফাঁকে এক ঝাক আনন্দরা চিকচিক করতে থাকে। লাবণ্যের হলুদ ওড়নাটা টেনে নিয়ে বউয়ের সাজে সাজিয়ে ওকে বুকের সাথে আগলে রাখে রেহান। আর ওর মুখ বেয়ে শেষ বিকেলের চিকচিকে রোদের হাতছানিতে কয়েকটুকরো কবিতার লাইন বের হয়। লাবণ্য চোখ জোড়া বন্ধ করে গভীর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রেহানের বুকে। আর রেহান চোখ খুলে লাবণ্যকে জড়িয়ে চেয়ে থাকে শেষ বিকেলের নরম নীল আকাশের দিকে। দুটি ভালোবাসার চোখ নীল আকাশকে ইশারা করে বলতে থাকে
-” এখন সুখের বৃষ্টি নামাও। আমরা দুজনে আজ ভালোবাসার সুখের বৃষ্টিতে ভিজতে চাই “।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত