চন্দ্রাবতী

চন্দ্রাবতী

০১

আমি প্রতি সপ্তাহে ১ দিন করে এই জায়গায় যাই, মন ভালো করার জন্যে। কিন্তু এই সপ্তাহে পরপর ২ দিন গিয়েছিলাম আজও সেখানে গিয়েছিলাম,মন খারাপ না আমার সেদিনের পরিচিত ছেলেটিকে খুজঁতে। ছেলেটিকে আজও দেখলাম না,অনেকক্ষণ অপেক্ষাও করলাম কিন্তু পেলাম না তাও।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল দেরী হয়ে যাবে বাসায় ফিরতে হবে ভেবেই রওয়ানা হয়েছি বাসার পথে। ধ্যাত রিকশা নাই একটাও আজ আবার দেরী হবে মায়ের বকাও খেতে হবে,কেন যে আসি এতদূর হাটতে হাটতে। আর আসবই না।

এই রিকশা এই রিকশা যাবেন???
রিকশা: কই যাবেন?
আমি: বাসার ঠিকানা বললাম।
রিকশা: যাব না অতদূর।

 মেজাজটা বিগড়ে গেল আমার যাবে না যখন তখন ঠিকানা জিজ্ঞেস করার কি দরকার ছিল? রিকশাচালক দের ব্যবহার দেখলে মনে হয় আমাদেরি দায় বেশী। আজ আমি হাটেই যাব এই বলে রাগে গজগজ করতে হাটতে শুরু করলাম।

পিপ,পিপ… এই যে ম্যাডাম শুনছেন…

আমি কিছুটা ভয় পেয়ে পিছু ফিরলাম,অনেক অবাক হলাম পিছু ফিরতেই ততক্ষণাৎ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল ওমা আপনি? কই ছিলেন এতদিন হু? আজও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করোছিলাম ওখানে আসেননি কেন?

ছেলেটি: মুচকি হাসি দিয়ে বলল,ম্যাডাম উঠে আসেন বাইকে,আপনাকে পৌছে দিচ্ছি।

আমার রাগ আরো বেড়ে গেল ওর ব্যবহারে,এমন কেনো ও আমি এতগুলো কথা বললাম,জানতে চাইলাম এত কিছু কোন প্রয়োজনি বোধ করল না উওর দেওয়ার। কিন্তু কেন জানি বাইকে ওর পিছু বসতে খুব ইচ্ছা হল,চড়ে বসতেই রাগগুলো কই চলে গেল বুঝলাম না।

ও বলে উঠল ম্যাডাম রাগ তাহলো কমেছে,এবার যাওয়া যাক। আমি কিছু বললাম না তবে অবাক ও হলাম না ওর কথা শুনে।

বাসার সামনে পৌছেঁ গেলাম ভয় লাগছে বাসায় ঢুকতে,আজ মা কে যে কি বলবে….

এই যে চন্দ্রাবতী ভয় পেও না আন্টি কিছু বলবে না, বাসায় যাও। আমি ওর কথা বিশ্বাস করলাম না, ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরলাম…

মা: চন্দ্রা মা এত দেরি করে ফেরা কি ঠিক?
আমি: রিকশা পাই নি, আর হবে না মা
মা: যাও ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।

আমি এবার সত্যিই অনেক অবাক হলাম,মা এর আচরণে এ কি করে সম্ভব? এত দেরি করে ফিরলাম মা কিছুই বললো না। ওর কথাই তো ঠিক হলো, আচ্ছা ও কি করে জানল মা বকবে না,তখন মনে পড়ল ও তো আমার নাম ধরে ডেকেছিল আমার নাম তো ওকে বলিনি আর এটাতো দিদার দেয়া নাম। মাএ ২ দিনের পরিচয় ওর সাথে। আমার নাম কিভাবে জানল?
মাথায় আমার জট পাকিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারগুলো, না আর ভাবতে পারছি না আমি শুয়ে পরলাম বিছানায়…

০২

আমাদের বংশে কোন মেয়ে নাই, আগে ছিল কিনা জানি না এখন আমিই একমাএ মেয়ে। সবাই আমাকে খুব তাই অনেক আদর করে। দিদা তো আমার নাম চন্দ্রা থেকে চন্দ্রাবতী করে দিয়েছিল। যতদিন বেচেঁ ছিলেন আমাকে ঐ নামেই ডাকতেন, এমনকি অন্য কেউ তার সামনে শুধু চন্দ্রা বলে ডাকলে খুব বকা দিত রাগ করে।

দিদা আমাকে অনেক ভালবাসত ওনার কাছে গেলে আমাকে অনেক গল্প শুনাতেন। আমার যখন ৬ বছর বয়স তখন বাসার কেউ কেন জানি দিদার কাছে আমাকে আর যেতে দিতেন না। এমনকি আমি কখনো আমার মা, কাকি কাউকেই দিদার রুমে যেতে দেখি নি। শুধু বাবা আর কাকা যেতেন। দিদা নিজেই নিজের দেখভাল করতেন।

এর কারন জানতে চাইলে আমাকে বলতেন দিদার অনেক জটিল অসুখ হয়েছে কাছে গেলে আমারো হবে… আমি তাও চুপ চুপ করে যেতাম গল্প শুনার লোভে আর চন্দ্রাবতী নামটা দিদার মুখ থেকে শুনতে আমার বেশ লাগত।

আমার বয়স যখন ১০ দিদা তখন মারা গেল, তারপর থেকে আর কেউ চন্দ্রাবতী বলে ডাকে না। খুব মিস করতাম দিদা আর ঐ নামটাকে। আজ হঠাৎ ৫ বছর পরে আবার কেউ আমায় এই নাম ধরে ডাকবে আমি কল্পনা করতেই পারছি না। যতটা দিদার কথা মনে পড়ছে তার থেকে বেশী অবাক লাগছে ভেবে কি করে ও জানলো এই নামটা। এই নামটা তো আমার কোন বন্ধু বান্ধবও জানে না।
কি করে সম্ভব! ওর সাথে পরিচয় হয়েছে মাএ ২ দিন হলো, তেমন কথাও বলিনি,আমার নামটাও বলিনি। আর সেখানে দিদার দেওয়া নাম কি করে জানল?

মা : চন্দ্রা কি হল? তাড়াতাড়ি খেতে আয়।
মা ডাকছে, যাচ্ছি মা।
আমি: খাওয়ার টেবিলে আমি বাবা কে জিজ্ঞাসা করলাম, বাবা আমাকে তোমরা আর চন্দ্রাবতী বলে ডাক না কেন?
বাবা আমার কথাটা শুনে মনে হলো একটু ভয় পেলো, আমাকে তা না বুঝতে দিয়ে বলল।
বাবা: মামনি এখন এসব নাম চলে না,তাই। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমায় পড় যাও।

আমি খাওয়া শেষ করে ঘরে আসলাম,আজ আমার কিছুতেই ঘুম আসবে না জানি আমি। মাথায় সন্ধ্যার কাহিনীগুলো এমনিতেই ঘুর পাক খাচ্ছিল,এখন আরো যোগ হল বাবার হঠাৎ ভর্য়াত মুখটা।চন্দ্রবতী এই নামটাতে আসলে কি আছে?আর কেনইবা দিদা সবার থেকে আলাদা হয়ে এক রুমে থাকত… আজ বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে এসব।

না কাল ছেলেটিকে খুজেঁ বের করে সব জানতে হবে,ও নিশ্চয় আমাদের পরিবারের কেউ হবে।

০৩

ঘড়ির কাটা ঢং করে বেজে উঠল ঘড়ির দিক তাকাতেই দেখি ২ টা বেজে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে যে এত রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি। চিন্তা করতে করতে মাথা ঘুরছে শুয়ে পড়লাম বিছানায়,কখন যে ঠিক ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। সকাল ৭ টায় ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাকে। মা না ডাকলে হয়তো আরো ঘুমাইতাম। তাড়াতাড়ি নাস্তা করে কলেজ এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।

আপনাদেরকে তো বলা হয়নি আমার একটা রোগ আছে। রোগের নাম ভুলে যাওয়া। তবে গাজনী ছবির মত না কিন্তু। ঐ আরকি ঘুম থেকে উঠলে আগের কোন কথা মনে থাকে না কেউ মনে করিয়ে দিলে আবার সব মনে পড়ে যায়। এই রকম আরকি আমার রোগের ধরণ। মা বলে দিদার মৃত্যুর পর থেকেই নাকি আমি এমন হয়ে গেছি।

আজো রাস্তায় কোন রিকশা পাচ্ছি না, ধ্যাত কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ‘পিপ পিপ…. হ্যালো চন্দ্রাবতী চলে আসো আমি তোমায় পৌছেঁ দিচ্ছি।’
আমার মনে পড়ে গিয়েছে গত রাতের কথা, তাই আমিও একটু বুদ্ধি করে উওর দিলাম, ‘ওকে যেতে পারি, তবে আমার কলেজ শেষে আবার দেখা করতে হবে,রাজি।’
ছেলেটি: মুচকি হাসি দিয়ে বলল, আমি জানি তুমি কি জানতে চাও? তোমার ১৮ বছর যেদিন হবে সেদিন তুমি সব এমনিতেই জানতে পারবে।
-তার মানে আপনি আমার সম্বন্ধে সবই জানেন, আমার পরিবারকেও চিনেন?
ছেলে: হুমম,আর বেশী কিছু জানতে চেওনা, আমি বলতে পারব না।
-কে আপনি? আমি জানতে চাই?
ছেলে: বলার সময় আসলে বলব।
-বেশ, আমি অপেক্ষায় থাকলাম। আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
ছেলে: আমাদের জগৎ এ কেউ কারো বন্ধু হতে পারে না চন্দ্রাবতী।
-আপনাদের জগৎ মানে? আপনি আমার মতই তো মানুষ কি বলছেন এসব?আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
ও খুব জোরে হাহা করে হেসে উঠল। আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম, আমার খুব রাগ লাগে যখন কেউ আমার কথা শুনে উওর না দিয়ে হাসে…
হঠাৎ পিছন হতে রিবার গলা শুনলাম। রিবা আমার বান্ধবী।
রিবা: চন্দ্রা কি রে কলেজ যাবি না? এখানে একা দাড়িয়ে কি করিস?
আমি রিবার কথা শুনে অবাক হলাম, কিছু বললাম না। চুপ করে ওকে খুজতেঁ লাগলাম এক নিমিষেই কোথায় চলে গেল ঠিক বুঝলাম না।
রিবা: কি রে,কি খুজিঁস?চল দেরি হচ্ছে একসাথে যাই।
আমি আর কিছু না বলে রিবার সাথে যেতে লাগলাম। আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল রিবা আসতেই কি চলে গেল না রিবা ওকে দেখতে পাচ্ছে না, শুধু আমি পাচ্ছি দেখতে… না বুঝতেছি না। আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাএী, ভূত প্রেত এসবে বিশ্বাস করতাম না কখনই।

আজ কেন জানি নিমিষেই মনে হতে লাগল আমার সাথে ভৌতিক কিছু একটা হতে যাচ্ছে।

০৪

কলেজে গিয়ে কোন ক্লাসেই মন বসাতে পারলাম না। কি হচ্ছে আমার সাথে! শুধুই ভাবতে থাকলাম…

এখন আমার বয়স ১৬ চলছে ১৮ হতে তো এখনো দু বছর বাকি।এতদিন সবকিছু না জেনে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। কিছু্ একটা করতে হবে, সাহস হারালে চলবে না,মনোবল আনতে হবে এই বলে নিজেকে ঠিক করতে লাগলাম।

ক্লাসগুলো যে কখন শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না,এত বিদঘুটে ঝামেলায় থাকলে কি আর পড়ালেখা হয়? এমন সমস্যায় পড়ছি কাউকে বলতেই পারছি না। কেউ বিশ্বাসী করবে না,বরং বলবে মনের ভুল এসব আমার। কলেজ শেষ হতেই আজ বাড়ি চলে আসলাম,অন্যদিন হলে আড্ডা দিতাম ফুচকার দোকানে। আজ আর এসবে মন নেই,শুধুই মাথায় ঘুরছে কি করে জানবো আমার পরিবারের ইতিহাস।

বাসায় ফেরার পথে ভাবলাম ওর সাথে আবার দেখা হবে, সাড়া পথ খুজলাম না দেখতে পেলাম না।

বাসায় ঢুকতেই…

মা:চন্দ্রা কিরে আজ এত তাড়াতাড়ি এসেছিস,শরীর খারাপ নাকি তোর?
আমি : না মা,এমনি আজ ভাল লাগছে না,চলে আসলাম।

কথাগুলো বলেই ঘরে চলে আসলাম,চারিপাশ আমার অসহ্যকর লাগছে। হঠাৎ আমার দিদার রুমের কথা মনে পড়লো,দিদা মারা যাবার পর থেকে সেই যে রুমটাতে তালা দেয়া হয়েছে আর কেউ খুলেনি। চাবি বাবার কাছেই আছে একটু খুজলেই পাওয়া যাবে, আমি কখনো চুরি করি নি, আজ আমাকে চুরি করতেই হবে,আমার মন বলছে ঐ রুমেই আমার সব উওর আছে…

মা ডাকছে… যাচ্ছি মা

মা: তুই এখনো গোসল করিস নি,যা করে নে গোসল, শুন চন্দ্রা আমি আর তোর বাবা একটু বাহিরে যাচ্ছি তুই লক্ষী মেয়ের মত গোসল করে খাবার খেয়ে পড়তে বস। একদম টিভি দেখবি না,আমরা সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসব।

মা যখন বললেন বাহিরে যাবেন তারপর থেকে আমার কানে মায়ের কোন কথাই পৌছাল না… আমি শুধু অপেক্ষা করতে লাগলাম,আর মনে মনে অনেক খুশি হলাম।

বাবা মা চলে যেতেই বাবার রুমে গেলাম, তন্ন তন্ন করে সব জায়গায় খুজতেঁ লাগলাম চাবিটা। বাবার আলমারিতে ১ টা পুরাতন চাবির গোছা পেলাম,দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা দিদার ঘরের চাবি। দেরী না করে সিড়ি বেয়ে চললাম দিদার রুমে, শরীরটা অনেক ঘামছে কেন জানি… শুনেছি ভয় পেলে এমন হয়… ইমম না নিজেকেভয় পেলে হবে না নিজেকে সাহস জোগাতে হবে…

দিদার ঘরের সামনে পৌছালাম,বুকটা ধক করে উঠল… এক মিনিটের জন্যে মনে হচ্ছিল ফিরে যাই,অনেকদিনের বন্ধ ঘর বাসায় কেউ নাই যদি কিছু হয়, ফিরে যেতে পা বাড়ালাম।

০৫

ফিরে আসার পথে পা বাড়াতেই মনে হলো কে যেন আমাকে ডাকছে পিছন থেকে চন্দ্রাবতী বলে, আর বলছে কি রে গল্প না শুনেই চলে যাচ্ছিস। এতদিন বাদে আসলি, থাক না কিছুক্ষণ। আমি ভাবলাম আমার মনের ভুল এটা কেমন করে হতে পারে!!! দিদাতো মারা গেছে তিনি কিভাবে কথা বলবেন? এটা ভেবেই আরেক পা বাড়ালাম চলে আসার জন্য। ঠিক তখনি পিছন হতে আবার শুনলাম সেই কথাগুলো,এবার আমি পিছু ফিরলাম দেখি কেউ নাই,তবু ভয় আর লাগছে না,মনে হচ্ছে প্রচুর সাহস আমার আমি আর দেরি না করে এগিয়ে গিয়ে তালাটা খুলে ফেললাম।

তালাটা খুলতেই মনে হল দরজার কাছ থেকে কে যেন সরে গেল। আমি অনুভব করতে পারলাম,তবে দেখতে পারলাম না।…..
এক পা এক পা করে ঢুকতে লাগলাম ঘরে, আলো জ্বালার জন্য সুইচ খুজঁতে লাগলাম। পেয়েও গেলাম। ভেবেছিলাম আলো জ্বলবে না। কিছুটা অবাক হলাম। আরো বেশী অবাক হলাম আলো জ্বালার পর ঘরটার অবস্হা দেখে। এত সুন্দর পরিপাটি করে সাজা,এক ফোটাও ধুলাবালি নেই।
৫ বছর ধরে বন্ধ ঘর যে এত সুন্দর থাকতে পারে আমার জানা ছিল না।

একটা গন্ধ নাকে এসে লাগল, মনে পড়ে গেল এটাতো দিদার গায়ের গন্ধ, আমার বুঝতে আর বাকি রইল না এই ঘরটাতে দিদা এখনো বসবাস করে। কিন্তু কি করে সম্ভব এটা বুজতে পারলাম না। আমি দিদার খাটের দিকে এগোতে লাগলাম,বুক ধক ধক করলেও কেন জানি ভয় পাচ্ছি না। নিজেকে গোয়েন্দা গোয়েন্দা লাগছে। আরেকজন সঙ্গী সাথে থাকলে মন্দ হত না।

অনেকদিন পর দিদার খাটে বসলাম ঘরের এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হঠাৎ চোখ চলে গেল দিদার টেবিলের উপর নীল রং এর মলাটের ১ টা ডায়েরী। আমি ডায়েরী টা হাতে নিলাম,বেশ ভারী লাগল,ডায়েরী টা খুলতেই দেখলাম বেশ পুরাতন আমলের।

প্রতিটা পাতা ভর্তি অসংখ্য লিখা, আমার এখনি পড়তে ইচ্ছা করছে,হাতে সময় নেই একটু পর মা চলে আসবে আমি ডায়েরী টা আর পড়লাম না রুম থেকে বের হতে লাগলাম,দরজাটা লাগাবো ঠিক সেই মূহুর্তে কান্নার আওয়াজ শুনলাম, দিদার গলার আওয়াজ আমার বুঝতে সমস্যা হলো না,মাথায় আমার কি কাজ করলো হঠাৎ জানিনা, আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল দিদা কাদিঁও না আমি রোজ আসব

মূহুর্তেই থেমে গেল কান্নার আওয়াজ আমি তালা দিয়ে চলে আসলাম ঠিকি তবে আমার মনটা পড়ে থাকল দিদার কাছে,খুব কষ্ট হতে লাগল দিদার জন্যে, মনে হচ্ছে দিদা মৃত্যুর পর একদম শান্তিতে নেই

০৬

চাবিটা নিজের কাছেই রেখে দিলাম,বাবার অনেক ভুলো মন জানি খুজবেঁ না। আমার আর তড় সইছে না, আমি তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে দরজা লাগালাম এখন শুধু ডায়েরী আর আমি।

ডায়েরীর ১ম পেজ

“আমি মৃন্ময়ী,আমরা দু ভাই দু বোন। আমি সবার ছোট বাসার মধ্যে। আমার আবদার গুলো সবাই সবসময় পূরণ করতো। আমি কারো কতা শুনতাম না,যখন যা ইচ্ছা তাই করতাম, বাধা ছিল না কোন। পরিবারের কেউ আমার উপর রাগ হতে পারতেন না,কারণ বাবা আমায় খুব আদর করতেন। বাবাকে সবাই খুব ভয় করতেন,বাবার ভয়ে আমায় শাসন করার সাহস কারো ছিল না। আমি পড়ালেখায় ছিলাম খুব ভাল আমার অন্য ভাইবোনদের থেকে সেকালের যুগ হলেও আমার বাবা আমাকে শিক্ষিকা বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। বাবা খুব রাগী হলেও আমাদের ৪ ভাইবোনের সব আবদার পূরণ করতেন। ছোটবেলা তা আমার এইভাবেই বেড়ে উঠা।

আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন বাবা মারা যায় কলেরায়। আমরা মা সহ নানা বাড়িতে চলে যাই। তখন থেকেই আমাদের ৪ ভাইবোনের সুখের জীবনটাতে বিপত্তি হয়ে যায়।

আমার ২ মামা ও ২ মামী ছিলেন নানা বাড়িতে। নানা নানী কেউ বেচেঁ ছিলেন না। মামীরা আমাদের মেনে নিতে পারেনি, মামাদের বুঝিয়ে একেএকে সবার বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার যখন পালা আসে আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে। আমার বাবা স্বপ্ন গুলোকে বির্সজন দিয়ে বিয়ের পীড়িতে বসেছিলাম। মা এবং আমার ভাইবোনেরা মামাদের অনেক করে বলেছিল আমাকে বিয়ে না দিতে। বাবার স্বপ্নের কথাও বলেছিল। মামা-মামীরা তখন ব্যঙ্গ করে বলেছিল মেয়ে মানুষ পড়ালেখা করে নাকি?”

৬ পাতা পরলাম, মা ডাকছে চন্দ্রা খেতে আয় তাড়াতাড়ি। মা আর ডাকার সময় পায় না। আমি ভারী ভারী মুখ নিয়ে খেতে গেলাম,মনটা পড়ে রইল ডায়েরীর পাতায়।

০৭

খুব চট জলদি খেয়ে রুমে চলে আসলাম,ডায়েরী টা খুললাম…

“আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, এখন আমার বয়স ১৩। আমার স্বামীকে এখনো দেখি নি আমি ভাল করে,বসে আছি ঘরে খুব ভয় লাগছে…

না যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটা না ও। খুবি ভালো আমার স্বামী,সে আমাকে পড়াতে চেয়েছে, শুধু বলেছে আমার শাশুড়ি মা যেন না জানে।

আমি শাশুড়ি মা খুবই দর্জাল এবং সেকালে।আমি সবকিছু মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম।সব মিলে ভালোই চলছিল আমার পড়ালেখা আর সংসার।এভাবে আমি মেট্রিক পাস ও করে ফেললা।।

ডায়েরী টার প্রতিটা পেজে খুব অল্প করে লিখা,আমার মনটা বিষন্ন হয়ে গেল… এই ডায়েরীতে আর কিছু নাই এরপর সব পেজগুলো সাদা আর সাদা। আমি তারপরো ডায়েরীর পেজগুলো উল্টাতে লাগলাম। ১০ টা পেজ উল্টার পর আমি আবার লিখা পেলাম। পড়া শুরু করলাম…
“আমার আজ ১ম সন্তান মেয়ে হয়েছে।

আমি অনেক খুশী আমার স্বামীও টাই। আমার শাশুড়ি একদম খুশি না,তিনি ছেলে চান,আমাকে অনেক খারাপ খারাপ ভাষায় বকেছেন,আমি কিছু বলি নি।আমার স্বামী ১ টা এনজিওতে চাকরি করতেন। হঠাৎ তার বদলি হয়ে গেল অন্য জায়গায় সে আমাকেও নিয়ে যেতে চাইলেন ওখানে ভালো কলেজে ভর্তি করে দিবেন।শাশুড়ি যেতে দিল না,আমার আর সামনের দিকে আগা হল না।

প্রতি মাসেই আমার স্বামী আসত আমাদের দেখতে।আমার শাশুড়ি তখন আমার নামে অনেক কথা বানায় বানায় বলতেন। আমার স্বামী তা বিশ্বাস করে মারধরো করতেন।আমার সুখের সংসারটায় নেমে আসল আগুন শুধুই মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ায়।

আমার মেয়ের এখন ৪ বছর। আমার আজ ২ টি যমজ ছেলে সন্তান হয়েছে।বাসার সবাই খুব খুশী। আবার সুখ ফিরে আসল আমার সংসারে,কিন্তু আমার পড়ালেখা আর হলো না।

দেখতে দেখতে আমার ছেলেরাও বড় হয়ে যাচ্ছে,আমার মেয়ের এখন ৫ বছর। আমার মেয়েকে এই বাড়িতে শুধু আমি আদর করি।একদিন দুপুরবেলা আমি ছেলেদের নিয়ে ঘুমায় গিয়েছিলাম,একটা বিকট চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙল। বাহিরে বের হতে দেখি আমার মেয়েকে ধরে মারছে আমার শাশুড়ি, জিজ্ঞেসা করলাম মারছেন কেন?

ওনি বললনে,তোমার মেয়ে কোন কাজ পারে না,দেখ আমার শাড়িটা ধুতে দিয়েছি কি অবস্হা করেছে… আমার খুব খারাপ, রাগ দুটাই লাগলো বলতে পারলাম না কিছু। মেয়েকে নিয়ে ঘরে আসলাম।

মেয়েটা আমার যত বড় হতে লাগল ততই ওকে আমার শাশুড়ি সহ্য করতে পারত না।এভাবে চলতে লাগল সবকিছু।

আমার আবার ১ টি ছেলে সন্তান হল। আমার এখন ১ টি মেয়ে ৩ টি ছেলে। আমার শাশুড়ি আমার মেয়েকে আমার কাছে এখন আসতেই দেয় না,বাড়ির সব কাজ ওর দারা করে নেয়।আমার স্বামী ও কিছু বলে না।আমি কিছু বলতে গেলেই অমানবিক অত্যাচার চলে আমার উপর।আমার ৮ বছরের ছোট মেয়েটি আমার থেকে অনেক ভালো বুঝে সবকিছু। সে আমাকে মানা করে ওর হয়ে কিছু বলতে,রাতের আধারে চুপটি করে আমরা মা মেয়ে দেখা করি এখন।”

০৮

ডায়েরীর লিখাগুলো পড়তে পড়তে আমার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসতেছে,চোখের পানিগুলো মুছে আবার পড়া শুরু করলাম…

“শাশুড়ি আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে,আমার মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দরী, অনেক ভালো ঘরেই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওর বয়স অনেক কম মাএ ৯, আমি ওকে পড়াতে চেয়েছিলাম আমার মত জীবনটা হতে দিতে চাইনি,না তা পারলাম না,আমার থেকে আমার মেয়ের জীবনটা আরো বেশী খারাপ ওকে ১ টা অক্ষরো শিখাতে পারি নি।নিজেকে ব্যর্থ মা মনে হচ্ছে,চোখের সামনে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল কিছু করতে পারলাম না।

মেয়ের বিয়ের পর থেকে ডায়েরী লিখা বাদ দিয়েছিলাম,আজ আবার লিখছি, অনেক খুশি আজ আমি, বিয়ের ২ বছর পর আজ আমার মেয়ে আসবে আমার কাছে,আমার মেয়ের ১ম বাচ্চা হবে আমার কাছে, খুব খুশি আমি।

খুশিটা আমি ধরে রাখতে পারি নি,আমার মেয়ের ১ম সন্তান হয়েছে মেয়ে,ওর শ্বশুরকুল তেমন ১ টা খুশি হয়নি বলে গিয়েছে এমন বউ আমাদের দরকার নেই। আমার শাশুড়ি খুব অপমান বোধ করছে এতে,আমার ওপর সব দোষ দিয়ে দিল, আমি নাকি অলক্ষ্মী আমি আমার মেয়েকে দেখভাল করেছি বলেই মেয়ে সন্তান হয়েছে। সেদিন থেকে আমার শাশুড়ি ১টা প্রথা বানালো এ বাড়িতে যারা বউ হয়ে আসবে তাদের কারো সামনে কোনদিনি আমি যেতে পারবে না,৫ বছর পার হয়ে গেলে কোন মেয়ে শিশুও আমার সামনে আসতে পারবে না।
আমার স্বামী, ছেলেরা সবাই এই কুসংস্কার মেনে নিল,আমি খুব আশ্চর্য হলাম আমার ছেলেরা কোন প্রতিবাদ করল না,বুঝতে আর বাকি রইল না ওরাও ওদের দিদা,বাবার মত হয়েছে।

এখন আমি একঘরে হয়ে গেছি,আমার মেয়ের সাথে আমার আর কোনদিন দেখা হবে না,তাও আমার কোন দুঃখ নেই আমার মেয়েটাতো সুখে থাকবে।শুনেছি আমার শাশুড়ি আমার মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়িতে ফেরত দিয়ে এসেছে। আমার মেয়েকে তারা আবার মেনে নিয়েছে।

কোন কাজ কাম নাই আমার এ বাড়িতে এক ঘরে শুধু পরে থাকি একাই, অন্যদিন খুব দেরীতেই ঘুম থেকে উঠি, আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম,নিচে খুব হৈ চৈ হচ্ছে। বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম কি হচ্ছে বুঝতে পারার জন্যে। শুনলাম আমার মেয়ে আসবে, তার নাকি আবার বাচ্চা হবে।শুনে খুব খুশি হলাম আবার ভয় ও পেলাম তাড়াতাড়ি ভগবানের কাছে এসে প্রার্থনায় বসলাম ভগবান যেন এবার আমার মেয়েকে ছেলে দেয়।

ভগবান আমার প্রার্থনা শুনেছিল কি না জানি না আমি,আমার মেয়ের ২য় সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই আমার শাশুড়ি আমার মেয়েকে বিষ পানে হত্যা করেছিল।আমার শাশুড়ির এক সৈ নাকি দেখতে বুঝতে পারতো মেয়ে হবে নাকি ছেলে হবে। সে বলেছিল মেয়ে হবে তার কথার ভিওিতে আমার মেয়েকে আমার মত অলক্ষ্মী বানিয়ে বিষ পান করাতে তার একটুও খারাপ লাগেনি।

আমি কিছুই করতে পারি নি, আমি শুধু উপরের বন্দী ঘর হতে আমার মেয়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম, মা,মা,ওমা বাচাঁও আমার গলা জ্বলে যাচ্ছে। বারবার এই কথাটাই শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি যেতে পারিনি আমার মেয়েকে বাচাতে, আমার শাশুড়ি তালা দিয়ে দিয়েছিল দরজায়।
আমার ছেলেরাও ওর দিদিকে বাচানোর জন্য একটুও এগিয়ে যায় নি।

আমার মেয়েটাকে যখন দাহ করতে নিয়ে যায় তখনো আমাকে ওর মুখটা দেখতে দেয়নি।

এখন আমি অনেক বৃদ্ধা হয়ে গেছি,আমার শাশুড়ি, স্বামী বেচে নেই। ছেলেরা সবাই বিয়ে করেছে ওদের বাচ্চা ও হয়েছে।সুখের সংসার ওদের। অতীতের প্রথানুযায়ী আমি এখনো একঘরে হয়ে আছি। ওদের কারো বউকেই দেখতে পারি না। তবে আজ আমি খুশী অনেক আমার মেঝ ছেলের ১ টা মেয়ে হয়েছে, সে আজ আমার কাছে আসবে। অনেকদিন পর কেউ আমার ঘরে আসবে।

০৯

“আমার ঘরটা আজ খুব উজ্জ্বল করছে আমার মেঝ ছেলের মেয়ে এসেছে আমি ওকে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম,হবই না কেন ও যে আমার মেয়ে চম্পাবতীর মত দেখতে। সেই ডাগর ডাগর চোখ,কথা বলার ভঙ্গি সব এক। এ যে আমার চম্পাবতী। ও আমার রুমের সবকিছু চোখ বুলিয়ে দেখছিল।আমি ওকে চম্পাবতী বলে ডাকলাম কি রে কাছে আসবি না।

ও মিটি হাসি দিয়ে বলল দিদা তুমি আমার নাম জানো?

আমি অবাক হলাম আবার খুশী হলাম।ছেলেদের প্রতি যে রাগ খোপ ছিল তা নিমিষেই দূর হয়ে গেল।ওরা ওদের দিদিকে তাহলে এখনো মনে রেখেছে। আজ আমার বড্ড ভালো লাগছে।

চন্দ্রাবতী আমার কাছে রোজ আসত আমি ওকে গল্প শুনাতাম অনেক,দিনগুলো আমার এখন বেশ যায়। তবে বেশীদিন চলল না এই সুখের দিন, চন্দ্রাবতী ৬ বছরে পা দিবে কাল আর ওকে আসতে দিবে না আমার কাছে। এটা ভেবেই খুব খারাপ লাগল”।

দিদার ডায়েরী পড়া শেষ হল। আর ১ টা পেজ ও লিখা নেই। তবে আমি এখনো বুঝতে পারলাম না ঐ ছেলেটা কে? আর দিদা কেনইবা ঐ রুমে এখনো আসে। না আমাকে এখনি যাওয়া লাগবে দিদার রুমে।
ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত ২ টা বাজে। বাসার সবাই ঘুমন্ত কেউ বুঝতে পারবে না,আমি চাবি,আলো নিয়ে পা বাড়ালাম দিদার রুমের দিকে।

দিদার রমে প্রবেশ করলাম, আলো জ্বালালাম দিদা দিদা বলে ডাকতে লাগলাম, কেউ সাড়া দিল না,আবার ডাকলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল… চলে আসার জন্য পা বাড়ালাম।
দিদা বলে উঠল…
কিরে চলে যাচ্ছিস?
আমি খুশী মনে পিছু ফিরে বললাম না দিদা,আমি সব জানতে এসেছি। কই তুৃমি? আমি কি তোমাকে দেখতে পাবো না?
দিদা:আমাকে দেখে ভয় পাবি না তো?
আমি: না তুমি সামনে আসো।
দিদা: এই যে আমি।
আমি কিছু শুধু ধোয়া দেখলাম আর ওখান থেকে কথা শুনতে পেলাম। খুব ভয় পেয়ে চিল্লাতে যাব মনে হল কেউ আমার মুখ চেপে ধরল।
দিদা: পাগলী, চিল্লাস না,আমি জানতাম তুই ভয় পাবি। তোর ১৮ বছর হলে তোর সামনে আসতাম। তুই তো নিজে নিজেই সব এখনি জানতে চাস। ভয় পাস না। আমি কারই ক্ষতি করব না।
আমি: দিদা আর ভয় পাব না,দুঃখিত মন খারাপ করিও না।

দিদা কিছু বললো না,আমি জিজ্ঞাসা করলাম দিদা তুমি তো মারা গেছ কিভাবে আসো তুমি?

দিদা: তোর বাবা,কাকারা আমার সৎকার করেনি,তোর পিসীর,পিসীর ছেলেরো করেনি। শুধু আমার না তাদের আত্মা এ বাড়িতেও আসে রে চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী দে না আমাদের ৩ জন কে শান্তি। বেচেঁ থাকার সময় আমাদের তো কোন শান্তি দেয়নি পৃথিবীতে, আমরা চাইও না। এখন তো মারা গেছি। এখন দে। কিছু কর না আমাদের জন্য। সেই কবে থেকে আমরা ৩ জন শান্তির জন্য ঘুরতেছি।

অন্তিম পর্ব

চোখ মেলে আমি দেখলাম আমার রুমে শুয়ে আছি। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আমি এখানে কিভাবে আমি তো দিদার রুমে দিদার সাথে কথা বলছিলাম। মা আসল,
মা: চন্দ্রা, কেমন লাগছে এখন তোর?
আমি: কি হয়েছিল আমার?
মা: তুই গত রাতে তোর দিদার রুমে গিয়ে চিৎকার করছিলি আমাদের শান্তি দাও বলে। তোর আওয়াজ শুনে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে সেখানে যেতেই দেখি তুই মাটিতে পড়ে আছিস।
আমি: মা,বাবাকে ডাক।
মা: তোর,বাবা,কাকারা ব্যস্ত মা। তোর দিদা,পিসীর,পিসতুতো ভাই এর আজ সৎকার হবে।

আমার শুনে খুব ভালো লাগল, এবং বুঝতে বাকি রইল না ঐ ছেলেটা আমার পিসতুতো ভাই ছিল। আবার মনটাও খারাপ হয়ে গেল আমার তো ওকে খুব ভালো লেগে গিয়েছিল, ও মানুষ হলে খুব ভালো হত।

মা: একা একা কি বিরবির করিস?
আমি: কিছু না, আচ্ছা মা আমার পিসী ছিল বলনিতো?
মা: আমি,তোর কাকী কেউই জানতাম না আমরা। কাল রাতে তোকে ঐ অবস্হায় দেখে তোর বাবা কাকা খুব ভয় পায়,সারা রাত তারা ৩জন খুব কাঁদছে। সকাল হতেই তারা বলল আজ সৎকার করবে। তখনি আমরা জানলাম।
আমি: পিসীর ছেলের নাম কি ছিল?
মা: বাদ দে না এসব চন্দ্রা। খেতে আয়।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। আজ অনেক ভালো লাগছে আমার।

৮ বছর পর:

আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি ১ টা কলেজের শিক্ষিকা।দিদার স্বপ্ন পূরন করেছি। সেদিনের পর থেকে বাবা,কাকা সবসময় আমাকে দিদা, পিসীর গল্প শুনাতো, দিদার রুমেও যেতে দিত।

আমি রোজ রাতেই দিদার রুমে যেতাম,এখনো মাবাবার বাসায় গেলেই যাই। দিদার খাটে শুয়ে চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই দিদা,পিসীর হাসিমাখা মুখটাকে।

আর হে আমি পিসীর ছেলের মত ১ জনকে খুজেঁ পেয়েছি। তাকেই জীবনসঙ্গীনি করেছি।সেও আমাকে চন্দ্রাবতী বলেই ডাকে। আমাদের সুখের সংসার। আমার শাশুড়ি অনেক ভালো। আমার মেয়ে মৃন্ময়ী কে অনেক আদর করে। আমি ঠিক করেছি আমার মেয়েকে উকিল বানাবো। দেশের অবহেলিত, অত্যাচারিত মেয়েদের পাশে দাড়িয়ে, প্রতিবাদ করবে,ন্যায্য বিচার দিবে তাদের।

কিছু কথা:

এটা এক কাল্পনিক গল্প,আমার নিজের কল্পনা থেকেই লিখা,জানি না আপনাদের পড়ে কতটুকু ভালো লেগেছে। মন্তব্য জানাতে ভুলিয়েন না।যদি কোন ভুল এুটি থাকে আমার গল্পে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাকে বলবেন।। ধন্যবাদ সবাইকে এত কষ্ট করে ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত