♥নীল পদ্ম♥

♥নীল পদ্ম♥

প্রায় তিন মাস শানুকে বিয়ে করেছে ইবু, কিন্তু বউ হিসাবে
শানুকে র্স্পশ করা তো দুরের কথা ভাল ভাবে কথা বলতে
পারেনি সে। সারাদিন শানু মন খারাপ করে বসে থাকে। ইবু কিছু
জিজ্ঞাসা করলে কথা বলে না! .
রাতে ঘুমানোর সময় দু’জন খটের দু মেরুতে আর মাঝখানে
কোলবালিশ দিয়ে রাখে শানু! ইবু শানুর দিকে তাকালে
শানু বিপরীত দিক মুখ ঘুরিয়ে ঘুমায়। এইগুলোতে খুব কষ্ট লাগে
ইবুর, কত স্বপ্ন ছিল বউকে নিয়ে । লাইফে প্রেম করেনি
বউয়ের সাথে হালাল প্রেম করবে বলে কিন্তু কিছুই হল না! হয়ত
সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না!
.
বাসর রাত একটা স্বরনীয় রাত,বাসর রাতে শানু বলেছিল আপনি এই
ঘরে থাকলে আমি ছাদে গিয়ে ঘুমাবো! নতুন বউ হয়ত লজ্জা
পাচ্ছে তাই ইবু সেই রাতে ছাদে ঘুমাইছিল। কিন্তু আজ তিন মাসে
ও কি লজ্জা ভাঙ্গে নি শানুর? শানুর মুখে কবুল বলার পর
থেকে তার প্রেমে পড়েছে ইবু। ইবুর বন্ধু ইফাত বলে
দিল প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় ১ টা করে লাল গোলাপ
নিয়ে শানুকে দিতে কিন্তু তাতে ও কাজ হয় না! অনেকে
অনেক কিছু বলেছে বউয়ের ভালবাসা পাওয়ার জন্য কিন্তু ইবুর
ভাগ্যটাই অনেক খারাপ।
.
ইবু অনেক খোজ নিয়ে জানতে পেরেছে রাফিন নামের
একটা ছেলের সাথে শানুর রিলেশন ছিল। আর শানু তার কথাই
ভাবে, রাফিনের স্থানে ইবুকে বসাতে পারছে না সে। কিন্তু
বিয়ের পর কখনো খোজ নিল না রাফিন? এইটা ভেবে আরও মন
খারাপ করে থাকে শানু!
.
আজ কেন জানি ইবুকেকে ভাল লাগতে শুরু করেছে শানুর।
কেমন বোকা ছেলে কত খারাপ ব্যাবহার করার পরও তার উপর
একটুও রাগ করেনি! সেদিন সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা
পেয়েছিল শানু। খবর পাওয়ার সাথে সাথে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে
বাসায় চলে আসে ইবু । আর ওই ৩ দিন সৈকত প্রতিটা সময় শানুর
পাশে থেকেছে,নিজে রান্না করে ভাত মেখে খাইয়ে
দিয়েছে শানুকে। পায়ের ফুলা স্থানে পানি গরম করে ছ্যাঁক
দেওয়া, ঠিক মত ঔষধ খাইয়ে দেওয়া ইত্যাদি করেছিল ইবু।
.
ইবু দুপুরে বাইরে খায় তাই অফিসের কাজ শেষ করছিল এমন সময়
ফোনটা বেজে উঠলো…
আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে ফোনের স্কীনের দিকে!
শানু ফোন দিয়েছে.. তাই একটু দেরি করে রিসিভ করলো
ইবু।
.
-হ্যালো?
— ওই তোমার ফোন ধরতে কত সময় লাগে হুম?
-না! মানে আগে কখনো তো তুমি ফোন দেওনি তাই দেরি
করলাম।
— আচ্ছা এখন বাসায় আসো?
-কেন কি হইছে?
— কিছু না তুমি আসো তো!
-আচ্ছা ঠিক আছে।
— হুম.. রাখি তাইলে?
-আচ্ছা..
.
ইবু কিছুই বুঝতে পারছে না! তাড়াতাড়ি রিকশা নিয়ে বাসায় গেল। কলিং-
বেল দেওয়ার আগেই আজ শানু দরোজার সামনে হাজির। ইবু
হা করে তাকিয়ে আছে শানুরর দিকে, আজ শানু কালো শাড়ি
পড়েছে,চুল গুলো ছাড়া একি তার বউ নাকি অপ্সরী? সেটা ভাবছিল
সে! হঠাৎ শানু ইবুর হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেল..
–ওই কি দেখছিলে এমন করে?
-আমার বউয়ের প্রেম পড়েছি আবার! তাই তাকে দেখছিলাম..
.
শানু লজ্জাতে লাল হয়ে যাচ্ছে..
মুখে মুচকি হাঁসি।
-আচ্ছা শানু আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই?
–হুম.. বল।
-আচ্ছা এখন যদি তোমার সাথে আমি ঠিকমত কথা বা বলি,অন্য
মেয়েকে নিয়ে ভাবি তাহলে তোমার কেমন লাগবে?
–খুব খুব খারাপ লাগবে।
-আচ্ছা শানু তুমি যে রাফিন কে মিস কর আমি এইটা জানি! কিন্তু এখন
তুমি আমার,তোমার পুরোটা জুড়ে শুধু আমি থাকতে চাই। আমি
লাইফে প্রেম করতে পারতাম কিন্তু করিনি,কারন আমি একজনকে
ভালবাসতে চেয়েছি আর ভাগ্যে ক্রমে সেই মেয়েটি তুমি।
দেখ তুমি আমার সাথে ঠিকমত কথা বলতে চাও না আমিও মানুষ,আমারও
কষ্ট লাগে শানু।
.
টপ টপ করে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে শানুর,সে ইবুকে
জড়িয়ে ধরে বলল..
–আমকে ক্ষমা করে দেও! আমি তোমাকে অনেক কষ্ট
দিয়েছি। আমার রাফিনের সাথে যা ছিল সব-ই আবেগ আর ভালবাসা কি
সেটা তুমি এই কয়দিনে শিখাইছো। এখন আমার পুরোটা জুড়ে শুধু
তুমি আছো আর থাকবে চিরকাল।ইবু আমি তোমাকে অনেক
ভালবেসে ফেলেছি। আমাকে তোমার বুকে ঠায় দিও
সারাজীবন।
.
ইবু তাকিয়ে আছে শানুর দিকে আজ নতুন রুপে
দেখছে তাকে। অদ্ভুত একটা মেয়ে সে,ভালমত কাঁদতে ও
পারে না! শুধু চোখের জল ঝরে ,নাক লাল হয়ে যায় আর ঠোঁট
ফুলে কাঁপতে থাকে। ইবু হাত দিয়ে শানুর চোখের জল
মুছে দিল..
-এই পাগলী কাঁদো কেন?
–ওই আমি একা কাঁদি? তোমার চোখে জল কেন?
-এমনি।
–আমারও এমনি।
-তোমার ফুলা ঠোঁটে …
–কি?
-ইচ্ছা করছে খুব।
–কি ইচ্ছা করছে?
-কামড় দিতে!
–ওরে নষ্ট। আমি রান্না করেছি চল তোমাকে আজ খাইয়ে
দিবো।
-হুম… তারপর কিন্তু ই..য়ে দিবো বউ!
–কত দুষ্ট রে! চল তো ..
.
শানু আজ ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস ভোনা করেছে কারন এইটা
ইবুর খুব পছন্দের খাবার।
–আচ্ছা মিস্টার তুমি খাইয়ে দেও আমাকে! ওই যে আমার পায়ে ব্যাথা
পাওয়ার সময় খাইয়ে দিয়েছিলা.. আমার কিন্তু অনেক ভাল লেগেছিল।
-আচ্ছা মায়াবীনি।
.
ইবু শানুকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে।
-আচ্ছা তুমি এত সুন্দর রান্না কর আগে জানতাম না তো!
–আরে আগে তো সুন্দর করে রান্না করিনি । হি হি হি
-কত দুষ্টু রে আমার বউ।
–হুম..
.
খাওয়া শেষ করে ইবু অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল,এমন সময়
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। শানু ইবুর কাছে এসে বলল..
–আচ্ছা আজ অফিস না গেলে হয় না?
-যেতে পারছি না তো! বৃষ্টিতে ভিজে যাবো পুরা,আর তেমন
কাজও নাই।
–আচ্ছা তাইলে চল ছাদে যাই?
-কেন?
–ধুর গাধা! বৃষ্টিতে ভিজবো।
-আরে ঠান্ডা লাগবে তোমার!
–দুর..কিছু হবে না! তুমি চল তো।
-হুম,তবে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না ওকে?
–হুম,ঠিক আছে।
.
শানুর বাচ্চাদের মত স্বভাবটা এখনো যায় নি! খিল খিল করে
হাসছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে। ইবু রেলিংয়ের উপর বসে এক
দৃষ্টিতে শানুর দিকে তাকিয়ে আছে, যেমনটি চেয়েছিল
তেমনই বউ পেয়েছে শুধু কয়টা দিন সময় লেগেছে আপন
করে নিতে। কালো শাড়িতে ফর্সা দেহ একটু বেশি মানায়, হুম তাই
তো শানুর দিক থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছা করছে না
ইবুর। হঠাৎ হাতে করে পানি নিয়ে ইবুরর দিকে ছুড়ে দিল
শানু।
— ওই কি দেখ হা করে?
-তোমাকে! আজ বেশি সুন্দর লাগছে।
–ওই আমি তোমার বউ! আমাকে পাম দিতে হবে না।
-আরে পাম না! সত্যি
–আচ্ছা আসো আমার সাথে ভিজবে!
-না থাক,তুমি ভিজো আমি দেখি।
–ধুর।
.
শানু এসে ইবুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল । তারা দু,জন
বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ভিজলো। ইবু শানুর দিকে তাকিয়ে বলল..
-শানু চল এইবার।
–আর একটু থাকি না?
-আরে ঠান্ডা লাগবে যে!
–আচ্ছা আমি যাবো না! তুমি নিয়ে যাও..
-আচ্ছা। আমার গলা ভাল করে ধরো না হলে পড়ে যাবা।
–হুম…
.
ইবু আড়কোলা করে ধরে শানুকে নিয়ে হাটছে আর শানু
খিল খিল করে হেসে চলেছে। হা তারা সুখের ঠিকানা খুজে
পেয়েছে হয়ত। আর এইভাবে চলে যাক তাদের সামনের দিন
গুলো…………

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত