চোখের আড়াল

চোখের আড়াল

আমার চোখে ঘুম নেই। আমি যে এমন বেধড়ক বর পাগলী হবো সেটা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। এখন তো এটা ভেবে নিজেরই লজ্জা করছে। কি করে যে আমি এমন হলাম সেটাই বুঝে পাচ্ছি না। সন্ধ্যায় বাবার বাসায় এসে পৌছেছি। সারা পথ স্যামস্ এর সাথে ফোনে অনেক বার কথাও বলেছি। এখন বাবা মায়ের সাথে সময় কাটাবো বলে সে ফোন করছে না। কিন্তু আমার তো কিছুই ভালো লাগছে না। স্যামস্’কে ভেবে ভীষণ অস্থির আমি। বউয়ের প্রতি সে যত্নশীল হলেও নিজের ব্যাপারে সে খুব কেয়ারলেস। তাই তার সব কেয়ার আমাকেই করতে হয়। সপ্তাহখানেক বাবার বাসায় থাকবো বলে এসেছি কিন্তু স্বামীর চিন্তার ঘনঘটায় আমি এতটাই অস্থির যে রাত টুকু পোহানোই কঠিণ হয়ে গেছে দেখছি। জীবনটা হুট করেই এ ভাবে বদলে যাবে ভাবিনি। আসলে নারীর জীবনটা বিয়ের পরে পুরাই বদলে যায়। পৃথিবীর সব মানুষ গুলো পর হয়ে স্বামীই একমাত্র আপন হয়ে জীবনে নতুন সূর্যদয় হয়। কি আশ্চর্যজনক ঘটনা! রক্তের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও অদ্ভুত একটা টান সৃষ্টি হয় যেটা রক্তের আত্মীয়র সাথেও হয় না। আজব এই সম্পর্ক!

ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে বিয়ের ছবি গুলো বের করে একটার পর একটা দেখে চলেছি। কত খুশিতে মাখামাখি স্যামস্ এর চোখ দুটো! কতটা বছর অপেক্ষা করে, কত ঝড় তুফান পার করে আমাদের বিয়ে! কতটা চেয়ে ছিলাম আমরা একে অপরকে! শেষমেস আল্লাহ যে আমাদের প্রার্থনা শুনে ছিলেন সেটাই অনেক কিছু। “পেছন থেকে আমি ওর চোখ ধরে আছি, আর আমার বরের মুখটা পুরাই নার্ভাস”, এই ছবিটা দেখে আমি হেসেই ফেললাম। এত সুন্দর একটা স্মৃতি ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে আছে। হাসতে হাসতে তার কথা মনে পড়তেই আবার মন খারাপ হয়ে গেলো।

তাকে খুব ফোন করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে বার বার বলে দিয়েছে আমি যেন তাকে ফোন করে সময় শেষ না করে আব্বু আম্মুকে সময় দিই। এখন তাকে ফোন করলে এসব ভাষণ আবার দেবে আর একটাই ডায়ালগ তার, “এই মেয়ে তুমি এত জামাই পাগলি কেনো?” তাই ফোন করতেও পারছি না। সে যে বিখ্যাত আস্ত মস্ত বউ পাগল সেটা তো কিচ্ছু না, সব দোষ আমার একার।

ধ্যাত্তেরি! কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। জানি না সে কি করছে! খেয়েছে কি না কে জানে!
তানভীরের ডাকে চেতনা ফিরলো।
__”কি রে আপা ডিনার করবি না?”
__”না আমার ক্ষুধা নেই, তোরা কর।”
__”সেকি রে, এত দিন পর বাপের বাড়ি এলি, তোর আম্মু তোর জন্য কত কিছু রান্না করলো আর তোর ক্ষুধা নেই? বিয়ের পরে তুই এত ভালো হয়ে গেছিস কি করে রে আপা?”
__”ঐ খারাপ কবে ছিলাম আমি? আর কবে তোর মত খাই খাই করেছি?”
__”কুল বেবি কুল। এত রেগে যাচ্ছিস কেনো? তুই কি বরকে রেখে বাপের বাড়িতে এসে ফেঁসে গেছিস?”
__”বেশরম ছেলে! আমি তোর বড় বোন তাই মুখ সামলে কথা বল। না হলে টুল এনে তার উপর দাড়িয়ে তোকে থাপ্রাবো।”
__”বুঝেছি তুই কেনো এত রেগে গেছিস।”

ধুর না জানি সে কি কি বুঝে বসে আছে। ভালোই হলো এখন ওর সাথে একটু ঝগড়া করবো তারপর সেই উছিলায় রাগ করার ভান করে কাল সকালে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো। উফ্ কি বুদ্ধি আমার! ঝগড়াটে মুখভঙ্গি করে বললাম-
__”ও আমি এখানে এসেছি বলে তোর সহ্য হচ্ছে না তাই না? বোনকে বিয়ে দিয়ে তো তাড়িয়েই দিয়েছিস তারপর আবার কেনো এসেছি? ঠিক আছে কালকেই আমি চলে যাবো।”
__”এই এই থাম। শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাবি ভালো কথা তাই বলে আমাকে আসামী বানিয়ে যাবি নাকি? ইম্পসিবল!”
__”কিসের আসামী বানাচ্ছি? তুই যেটা ভাবছিস সেটাই তো বলছি।”
__”তুমি যে আমাকে ফাঁসানোর মতলব করছো সেটা না বুঝার মত নির্বোধ আমি নই ধেড়ে খুকী।”
__”কি বললি হারামী?”
__”বলছি, তুই এক সপ্তাহের আগে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারবি না।”
__”কেনো?”
__”কেনো মানে? তুই আমার একটাই বোন তাই আমি চাই তুই এক দুই সপ্তাহ বা এক মাস এখানেই থাক।”
এই ছেলে তো দেখছি উল্টা চাল দিয়েছে। থাক ঝগড়া করার কাজ নাই। তাই চেপে গেলাম কিন্তু রাগ হচ্ছে খুব।
এর মধ্যে আম্মু রুমে এসে বললো-
__”চল ডিনার করবি।”
__”ক্ষুধা নেই আম্মু। রাতে খেতে ইচ্ছে করলে খাবো।”
__”এত দূর থেকে এসেছিস অথচ ক্ষুধা নেই? আজব তো!”
__”এসেই তো নাস্তা করেছি। ওগুলো এখনো হজম হয়নি।”
আমার কথা শুনে আমার ব্যাক্কল ভাই বললো-
__”তোমার মেয়ের বিয়ে হয়ে হজম শক্তি কমে গেছে। কে জানে, নাই হয়েও যেতে পারে।”
রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করলো। আম্মুকে বললাম-
__”তোমার ছেলে কিন্তু কাঁটা ফুটিয়ে কথা বলছে আম্মু। আমি কাল সকালেই চলে যাবো। সবাই ঠিকই বলে, বিয়ের পর মেয়েদেরকে বাবা মাও পর করে দেয়।”
__”এই তুই এত রিয়্যাক্ট কেনো করছিস? সে কি আজ প্রথম এ ভাবে কথা বলছে নাকি? ছোট বেলা থেকেই তো তোরা ঢিল ছুড়ার মত করে কথা বলিস। তাহলে আজ কেনো রিয়্যাক্ট করছিস?”
__”কেনো আবার? বিয়ে করে আমি বদলে গেছি তাই।”
আম্মু আর তানভীর হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ওদের তাকিয়ে থাকা দেখে আমার ভীষণ লজ্জা অনুভব হচ্ছে। কি এমন বলেছি রে বাবা যে, এমন করে তাকিয়ে থাকতে হবে! ধ্যত্তেরি!

রাত দেড়টা বাজে, আমার চোখে ঘুমের লেশমাত্রও নেই। পৃথিবীর কোনো মেয়ে বোধ হয় বাপের বাড়ি এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি। আমিই প্রথম সেই মেয়ে, যে এমন একটা মহাণ পরিস্থিতিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমাকে এটার জন্য এ্যাওয়ার্ড দেয়া উচিত। সব অবদান আমার গুণধর বরের তাই তাকে দশ বারোটা এ্যাওয়ার্ড জোর করে দেয়া উচিত।
নাটোরে এসে এক সপ্তাহ থাকবো শুনে আমার গুণধর বর বলে ছিল-
__”সাত দিনের জন্য তো যাচ্ছো সখী, সাত দিন থাকতে পারবে তো?”
আমিও বুক ফুলিয়ে গলাবাজি করে বলে ছিলাম-
__”না পারার কি আছে গো? ঠিক আছে দশ দিন থেকে দেখাবো তোমাকে।”
আমার কথা শুনে সে হো হো করে হেসে বলে ছিল-
__”কি যে দেখবো তা আল্লাহই জানে।”

এখন তো মনে হচ্ছে সে আগে থেকেই সব জানতো। আর তাই মজা নিচ্ছিল। ডাক্তাররা যে জ্যোতিষ টাইপের হতেও পারে তা এই প্রথম দেখলাম। আরে বাবা সে আমার সাথে এলেই তো আর কোনো ঝামেলা থাকতো না। কত করে বললাম তাও সাথে এলো না। বলে কি না তার ছুটি নেই আর রোগীর চাপ একগাদা। একটা দেশের প্রেসিডেন্টও এত বিজি থাকে না, যতো বিজি আমার বর থাকে। সব আমার শত্তুর শত্তুর শত্তুর।

আর ফোন না করে থাকতে পারছি না। বাট এখন ফোন করলে সে আমাকে জামাই পাগলি বলে খ্যাপাবে। আচ্ছা জ্বালায় পড়েছি! জামাইকে ভালোবাসলেও পাগল বলে। এদের কাজই হলো মেয়েদের দোষ গর্ত করে খুঁজে বের করা। এসব ছেলেদের শিক্ষা দেয়ার জন্য মাসখানেক বাপের বাড়িতে থাকা উচিত। কিন্তু এমন শিক্ষা তাকে দিতে গেলে আমি নিজেই শিক্ষিত হয়ে যাবো। তাই চুপ করে আছি।

ফোন হাতে নিয়ে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। ফোন করবো কি করবো না ভেবে ভেবেও কুল কিনারা পেলাম না। কত নিষ্ঠুর আমার বর! সেও তো আমাকে ফোন করতে পারতো অথচ এখানে পৌছানোর পর জানিয়েছি যে আমি ঠিকঠাক পৌছে গেছি তারপর বললো-
__”সবার সাথে মজা করে সময় কাটাও। আমাকে ফোন করে সময় শেষ করো না। তোমার হাতে তো সময় কম তাই।”
হাতে কিসের সময় কম সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না। অবশ্য প্রশ্নও করিনি।

ফোনে ওর নম্বরটা আঠারো বার উঠিয়ে কেটে দিয়েছি। উনিশতম বারে নম্বর উঠিয়ে বসে আছি। “জামাই পাগলি” বলে আমাকে সে খ্যাপাবে সেই ভয়ে কল করছি না। ধুর খ্যাপাকগে, আমার জামাইয়ের পাগল আমি তাতে কার বাপের কি? আমি পাগল হবো না তো কি পাড়া পড়শী পাগল হবে? পাড়া পড়শী পাগল হলে তো ওদের দূরদশার শেষ নেই। মরিচ থেরাপি দিয়ে কবিরাজি শুরু করবো। আর কি কি থেরাপি তাদের দেবো তা না হয় না-ই বা বললাম।

হ্যাঁ আমি জামাই পাগল তাই ফোনটা করেই ফেলি। রিং হতেই সে ধরে ফেললো। বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__”এই তুমি ঘুমাওনি এখনো?”
__”হ্যাঁ ঘুমিয়ে ছিলাম বাট ফোনের টোন শুনে জেগে গেছি।”
__”ভয়েস শুনে তো অমন লাগছে না”
__”তুমি ঘুমাওনি কেনো?”
__”আমি তো ঘুমিয়েই গেছিলাম হঠাৎ মনে হলো তুমি জেগে আছো।”
__”এটাও কি তোমার টুনি মনের অবদানে?”
__”হ্যাঁ টুনিই তো বললো, এই তোর বউ পাগল বর এখনো জেগে আছে।”
__”কিহ্ আমি বউ পাগল?”
__”তা নয় তো কি?”
__”আমি ভদ্রলোক, বরং তুমিই জামাই পাগলি। এই রাত বিরাতে জামাইকে ফোন করে ঘুম ভাঙানোর কাজটা এক মাত্র জামাই পাগলিরাই করে।”
__”হ্যাঁ আমি জামাই পাগলি তাতে তোমার কি হ্য?”
__”না তো আমার কিছু না।”
__”তুমি কেনো জেগে আছো সেটা আগে বলো ভদ্রলোক।”
__”তোমার ভয়েস শুনেও কিন্তু মনে হচ্ছে না যে তুমি ঘুম ভেঙে কথা বলছো।”
__”আমি তো পানি খেয়ে এসে কথা বলছি।”
__”তোমার ঘুম আসছে না এটা বললে কি হবে?”
__”কে বললো ঘুম আসছে না?”
__”আমার টুনা মন বললো।”
__”সে তো একটা মিথ্যুক। সব ভুলভাল্ বলে। গবেট একটা। তোমার মত ব্রিলিয়ান্ট ছেলের মন এমন গবেট এটা ভাবতেই কেমন কেমন যেন লাগে।”
__”কিহ আমার মন গবেট?”
__”হ্যাঁ গবেট।”
__”আর তোমার টুনি মন খুব ট্যালেন্ট তাই তো?”
__”হ্যাঁ সে খুব ট্যালেন্ট। দেখো আমি নিজে গবেট হয়ে কত্তো ট্যালেন্ট মন বহন করি।”
__”তো দেখি সে কেমন ট্যালেন্ট, ইন্টারভিউ হয়ে যাক।”
__”স্যরি টুনির চাকরী করার ইচ্ছে নেই।”
__”কিহ?”
__”সে চাকরী করবে না।”
__”ট্যালেন্ট হলেই না চাকরীর প্রশ্ন আসছে। তুমি আর তোমার টুনি, দুজনই আস্ত মস্ত গবেট।”
__”মোটেও গবেট না টুনি। এসব বললে কিন্তু ঝগড়া ঘোষণা করবো।”
__”আমি তো ঝগড়া করি না। তুমি একা কতক্ষণ চিল্লাচিল্লি করবা?”
__”কিহ আমি চিল্লাই? বাবা……”
__”সোনা তোমার বাবা এ বাড়িতে আছেন। তুমি নাটোর থেকে চিল্লাচিল্লি করলে তোমার বাবা তো শুনতে পাবেন না।”
__”ঠিক আছে আমি বাবাকে ফোন করছি।”
__”এত রাতে বাবাকে ঘুম থেকে জাগাবা?”
__”তাহলে তুমি ভুল স্বীকার করে নাও।”
__”নেবো আগে তোমার টুনির ট্যালেন্ট এর প্রমান দাও”
__”এই যে তুমি বাড়ি ফেরার পর থেকেই চিরকুট পড়ে চলেছো। চিরকুট পড়ে হেসেও চলেছো। এই সব তো টুনিই আমাকে বলেছে।”
__”কিহ?”
__”জ্বী”
__”শোনো তোমার টুনি তোমার মতই পাজি, তাকে পিটানো দরকার।”
__”আর ট্যালেন্ট এর প্রমান নিবা?”
__”না না থাক লাগবে না।”
__”কেনো গো? আর একটু নাও!”
__”নাটোর কন্যা তুমি নাটোরে বসেও এ ভাবে আমাকে নার্ভাস কেনো করছো?”
__”এটাই তো আমার জীবনের লক্ষ্য।”
__”জানি তো ফাজিল মেয়ে। এখন লক্ষী মেয়ের মত ঘুমিয়ে যাও মেয়ে।”
__”ঘুম আসছে না তো।”
__”কেনো?”
__”সব দোষ তোমার।”
__”কি করেছি আমি?”
__” আমার সাথে আসতে বলেছি কিন্তু আসোনি। তাই সব দায় তোমার। এখন আমার ঘুম কি করে এনে দেবে সেটা তুমি জানো।”
__”বই পড়তে শুরু করো দেখবে ঠিক ঘুম চলে এসেছে।”
__”কিহ? আমি বই পড়বো?”
__”মনে হচ্ছে বই গরু ছাগলরা পড়ে আর সেটা মানুষ হয়ে তুমি কি করে পড়বে!”
__”হ্যাঁ বই গরু ছাগলেরাই পড়ে। আমি ওসব পড়ি না।”
__”পাগলি একটা। এখন ফোন রেখে চোখ বন্ধ করে থাকো। ঘুম ঠিক আসবে।”
__”শোনো”
__”বলো”
__”তুমি কি আমাকে খুব মিসড করছো?”
__”একদম করছি না কারণ আমার পাগলি বউটা এখন তার প্রিয়জনদের কাছে আছে।”

ফোন রেখেও ঘুম এলো না। চোখ বন্ধ করে অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব ভেবে নিলাম। তারপর কখন ঘুমিয়েছি তা জানি না।
সকালে স্বামীর ঘরে ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলেও আমাকে পেয়ে আব্বুর খুশি দেখে যাবার কথা বলতেই পারলাম না। সবার সাথে সারা দিন খুশি থাকার চেষ্টা করলেও স্যামস্ এর ভাবনা মন থেকে গেলো না। মনে হচ্ছে আমি সদ্য প্রেমে পড়েছি আর কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছি না। এদিকে সে তো দিব্যি নির্ভাবনাতেই আছে। বউকে নিয়ে তার কোনোই ভাবনা নেই। যদি থাকতো তবে সাথে আসতো। ঠিক আছে আমিও যাচ্ছি না। দেখি সে বউকে ভুলে কত দিন থাকে। সারা দিনে আমার পাজি বর একবারও আমাকে ফোন করলো না। আমিও সারাটা দিন খুব করে মনটাকে বুঝালাম যে আমার বর আমাকে একটুও ভালোবাসে না। ভালোবাসলে সে ঠিক সাথে আসতো। এসব বুঝিয়েও সন্ধ্যায় আমার টুনি মন বললো, সে নাকি বরকে না দেখে থাকতেই পারছে না। নিজের মন যদি নিজের বিরুদ্ধে চলে তাহলে কেমন লাগে?

সন্ধ্যায় নাস্তা না করে লাইট অফ করে শুয়ে থাকলাম। হঠাৎ কে যেন আমার রুমে ঢুকে লাইট অন করলো। চোখ মেলেই দেখি আমার নিষ্ঠুর বর দরজায় দাড়িয়ে। হায় রে বর পাগলি আমি যে, ঘোরের মধ্যে বরকেই দেখতে পাচ্ছি। মনের দুঃখে চোখ বন্ধ করলাম। কিছুক্ষণ পর আমার মাথায় কারোর হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। চোখ মেলে দেখি সে। ইয়া আল্লাহ আমার সাথে এসব কি হচ্ছে? আমি কি রিয়্যালী পাগল হতে চলেছি? আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে সে বললো-
__”ভ্রম নয় বাস্তবেই আমি তোমার সামনে সোনাবউ।”
আমি লাফ দিয়ে বসলাম। ওর তো আসার কথা নয় তাহলে? গভীর অভিমানে কেঁদে ফেললাম। সে আমার চোখের নিচে হাত রেখে অশ্রু গুলো ধরে ফেললো।
__”আমি কি কাঁন্না দেখতে এসেছি?”
আমি জবাব দিলাম না। সে অভিমানের স্বরে বললো-
__”কাঁন্না না থামালে এখনই চলে যাবো কিন্তু। বুঝেছি আমি এসেছি বলে তুমি খুশি হওনি।”
ওর কথা শুনে গরম মেজাজ আরো গরম হয়ে ফুটতে শুরু করলো। বললাম-
__”ঠিকঠাক আমার মনটাকে বুঝতে না পারলেও ভুলভাল্ ঠিকই বুঝো তুমি।
সারাটা দিন একটি বারও ফোন করে আমার খবর নেয়ার প্রয়োজন বোধ করোনি।”
__”কে বলেছে আমি খবর নিইনি?”
__”ফোন না করে জ্যোতিষ গিরি করে খবর নিছো তাই না?”
__”আমি খবর নিয়েছি, আমার বউ গত রাতে ডিনার করেনি, সকালের নাস্তা লাঞ্চ কিচ্ছু ঠিকঠাক ভাবে করেনি তাই তো তার সাথে নাস্তা করতে চলে এসেছি।”
__”কাল আমার সাথে এলে কি ক্ষতি হতো তোমার?”
__”তুমিই তো বললে যে সাত দিন শুধু নয় তুমি আমাকে ছেড়ে দশ দিনও থাকতে পারবে। তাই একটা রাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম।”
__”কি দেখলে?”
__”দেখলাম আমার ডাকুরানী বউ খুব সাহসী, সে বর ছাড়াই মাস খানেক থাকতে পারবে।”
__”ট্রল করছো আমাকে নিয়ে? বাবাকে ডাকবো? এখন কিন্তু সন্ধ্যা।”
__”এই না না, একদম না।”
__”তুমি আসলেই একটা পঁচা মার্কা স্বামী। আমি বলে তোমার সাথে সংসার করছি। অন্য কোনো মেয়ে হলে ঠিক পালাতো।”
__”এই তো এতক্ষণে তোমাকে বউ বউ লাগছে।”
__”কিহ?”
__”জ্বী আমার বর পাগলি বউটা।”

আমি ওর দিকে চেয়ে আছি অপলক। এই সেই মানুষটি যাকে না দেখে আমি মরেই যাচ্ছিলাম। কত শত বার তাকে বলেছি যে তুমি আমার নিঃশ্বাস। এই কথাটা গতকাল থেকে শত শত বার প্রমাণ হয়ে গেছে।

আমি স্বার্থক যে আমি এরকম একটা পাগলি টাইপের বউ পাইছি। আমিও তাকে সীমাহীন ভালোবাসি। তবে মাঝে মাঝে সেটা প্রকাশ করি না। কারণ আমার পাগলীটা তার ভালবাসার পাগলামো গুলা আরো বাড়াবে বলে। আর আমার বর পাগলী বউটা কিছুতেই তার বরকে চোখের আড়াল করে থাকতে পারে না।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত