লাভ স্টোরি

লাভ স্টোরি

দীর্ঘ ছয়মাস রং নাম্বারে কথা বলার পর আজ মেয়েটার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে নিশো। মেয়েটা ইডেন মহিলা কলেজে পড়ে তাই কলেজ গেইটে দেখা করতে বলল। ইসসসসসস ভালবাসার জন্য এখন ইডেন মহিলা কলেজের সামনে যেতে হবে। লোকজন দেখে কি ভাববে?? এই ছ’মাসে একবারও কেউ কাউকে ভালবাসি কথাটা বলেনি। দুজনেরই ভালবাসার কথাটা মনেই রয়ে গেল। কি সাংঘাতিক ব্যাপার??

নিশো ইডেন কলেজ গেইটে পৌছে গেছে। এত মেয়ের ভিড়ে ওকে খুঁজে পাবে কিভাবে?? পাশেই একটা মেয়ে নীল রঙের জামা পড়ে দাড়িয়ে আছে। নীলপরী!! সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের কি দিয়ে বানিয়েছে কে জানে?? এই পপপপপপপরী ইডেনে!! অবাক হওয়ার তো কিছু নাই, এখানে অনেক পপপপপরী আছে। মনে হচ্ছে সেও কারও জন্য অপেক্ষা করছে। হয়তবা কোন এক রাজকুমার!! যাইহোক ওসব পরীদের উপর নজর দিয়ে লাভ নেই। নিশো তার স্বপ্নকন্যাকে ফোন দেয় পাশেই রিংটোনটা বেজে ওঠে সেই নীল রঙের জামা পড়া নীল পরীটার। নিশো’র একটু সন্দেহ হল। মেয়েটা ফোন রিসিভ করেই হ্যালো হ্যালো বলছেকি অবাক করা কান্ড পরীটার কণ্ঠ নিশো’র ফোনে চলে এলো!! কি আজব ব্যাপার??

—এক্সকিউজ মি?? আপনি কি ফিওনা??(নিশো)
—জ্বী, আপনি?? (ফিওনা)
—চলেন একটু ওদিকে গিয়ে কথা বলি!! এখানে আমার ইজি হচ্ছেনা।
—আশ্চর্য ! আমি আপনার সাথে ওদিকে যাব কেন??
—আরে চলেন না!! চলেন.!!
—দেখেন, আমি আপনাকে চিনি না!! আর ডিস্টার্ব করবেন না তা নাহলে কিন্তু মেয়েদের হাতে গণধোলাই খেতে হবে।। আর আপনি আমার নাম জানেন কি করে??
—সেই জন্যই তো বলছি, একটু ওদিকে যাই!!
—আপনি যাবেন এখান থেকে। ওকে আপনি থাকেন!!

তারপর নীলপরীটা এপাশ থেকে ওপাশে চলে গেল। নিশোও নাছোরবান্দা যাবে কোথায়?? দেখাতো ওর সাথেই করতে এসেছে!! মেয়েটা নিশো’র এদিকে আসা দেখে খানিকটা রেগে গেল। এবার একটা থাপ্পরই দিতে হবে।।

—আচ্ছা, আপনার কি শরম নেই?? আবার আমার কাছে এসেছেন??(ফিওনা)
—শরম তো আপনিই ভেঙে দিয়েছেন!!(নিশো)
—মানে??
—আমার নাম নিশো।
—নিশো??
—হ্যাঁ নিশো!
—তার মানে তুমিই সেই ফোনের নিশো??
—হুমমমম, নীলপরী। আমিই সেই ফোনের নিশো।
—তাহলে আগে বলনি কেন??
—আমিও প্রথম তোমাকে চিনতে পারিনি!! যখন চিনতে পারলাম ভাবলাম একটু মজা করি!!
—আমি এখন ঠিক করেই নিছিলাম যে, এখনি তোমাকে একটা থাপ্পর দিব!!
—তা?? তো দাও!!
—না, এখন আর দেওয়া যাবেনা!!
—আচ্ছা, এখানেই থাকবে নাকি অন্যদিকে যাবে?? এখানে আমার খুব অস্বস্তি লাগছে।।
—হুমমম, চলো.!!

তারপর একটু ঘুরাঘুরি আর খাওয়া-দাওয়া হল তাদের দু’জনের। কিন্তু আজও তাদের ভালবাসার কথাটা শেয়ার করা হল না। কি জানি হয়তবা তাদের প্রথম দেখা তাই একটু নার্ভাস দুজনেই!!

তারপর রাতে

—হ্যালো??(ফিওনা)
—হ্যালো ফিওনা বল! (নিশো)
—কি করছ তুমি??
—কিছুনা!! তোমার কথাই মনে পড়ছে!!
—সত্যিই??
—হুমমমম। তুমি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর!! একদম নীলপরী তুমি।
—তাই?? তুমিও কিন্তু অনেক স্মার্ট!!
—আচ্ছা, কি কর তুমি??
—তোমার সাথে কথা বলি! তুমি কি কর??
—মনের কল্পনায় তোমাকে আঁকছি! তুমি কিন্তু একটু রাগীও বটে!!
—কিভাবে বুঝলে??
—ঐ যে তুমি যখন এপাশ থেকে ওপাশে চলে গেলে তারপর তোমার কাছে গেলাম। বাপরে বাপরে!! এই পপপরী হঠাৎ করে রাগপরী হয়ে গেল কিভাবে?? আমি কিন্তু ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই বুঝি ইডেনের নরম নরম হাতে কঠিন মার খেতে হবে। তাইতো কথা আর না বাড়িয়ে সোজাসুজি নামটা বলে দিলাম।

—ও এই কথা। আমি রেগে গিয়েছিলাম একটু তবে কখনো মারতাম না। আমি এমন ধরনের মেয়ে না! পরিচয় না পেলে রাগটা ভিতরে চেপে ধরে সোজা চলে আসতাম।।
—যাইহোক, তুমি যেমন সুন্দর তোমার কথাও তেমন সুন্দর!! আচ্ছা, একটা গান শুনাও না!!
—কি গান??
—তোমার পছন্দের সেই রবীন্দ্রসংগীত।
—তোমার কি রবীন্দ্রসংগীত সত্যিই ভালো লাগে নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বল??
—আরে না!! রবীন্দ্রসংগীত আমারও অনেক প্রিয়। কিন্তু সবসময় শোনা হয় না। মাঝেমধ্যে তোমার কাছ থেকেই শুনি!!
—আমারও খুব ভালো লাগে।।

কয়েকদিন পর আজ দ্বিতীয়বারের মত নিশো আর ফিওনা দেখা করবে। প্রথম দিনের পর থেকে তারা খুবই এক্সাইটেড!! আজ দেখা হবে টিএসসি চত্বরে গরম গরম দু’কাপ চা নিশো দু’হাতে করে নিয়ে আসছে।

—এই নাও ধর!! ইসসসসস, আঙ্গুল পুড়ে যাচ্ছে!(নিশো)
—(নিশো’র হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে) থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার!!(ফিওনা)
—(চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে) এখানকার চা না অনেক ভালো!!

ফিওনা শুধু মাথা নাড়াল। নিশো ফিওনার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। আর যখনই চায়ের কাপে চুমুক দিবে ঠিক তখনি নিশো বলে উঠল….

— আই লাভ ইউ!

নিশো এ কথাটা বলেই অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। লুকানো মুচকি হাসি দিয়ে শুনেও না শোনার ভান করে ফিওনা বলল…..

—কিছু বললে??
—হুমমমমম।
—কি??
—আই লাভ ইউ ফিওনা!!

ফিওনা মনে মনে খুশি হলেও কিছু না বলেই চা টা শেষ করল! নিশো নিরবতা পালন করছে। সে কি কোন ভূল করে ফেলল?? তারপর কিছুক্ষণ কথা বলা আর না বলার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর বিদায় নিল তারা! রাতে নিশো’কে ফোন দিয়ে ফিওনা বলল

—হ্যালো, কি করছো তুমি ?(ফিও না)
—কিছুনা, বসে আছি! তুমি??(নিশো)
—আমিও!!
—কি আমিও??
—আই লাভ ইউ!! কথাটা বলেই ফিওনা ফোন কেটে দেয়।
—হ্যালো ফিওনা হ্যালো!!

যাইহোক নিশো’র খুশি এখন কে দেখে ?? একবার বিছানায় লাফ দেয় আবার সোফায় গিয়ে বসে। একবার বারান্দায় গিয়ে আকাশটা দেখে আবার নিজের চেহারাটা আয়নায় বারবার দেখে। ভালবাসার মানুষটা আজ তাকে সত্যি কথাটা বলেছে। নিশো এখন সবচাইতে বেশি খুশি। ফিওনা যখন ভালবাসি কথাটা বলল মনে হচ্ছিল ফোনের ওপাশ থেকে ভালবাসার গন্ধটা বাতাসে ভেসে আসছে!! কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দেয় ফিওনা

—কি ব্যাপার…?? ফোন কেটে দিলে কেন?? (নিশো)
—এমনিতেই।(ফিওনা)
—আচ্ছ্, শোন কাল তোমার সাথে দেখা করব!
—না, কাল না।
—তোমাকে দেখতে মন চাইছে। প্লিজ এমন করোনা!! আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে এখনি তোমার কাছে চলে আসি।
—ইসসসসসসসসস, সখ কত?? দৈর্য্য ধরেন মিস্টার।। অপেক্ষার ফল মধুর হয়।।
—আই লাভ ইউ ফিওনা।
—লাভ ইউ টু!!

দু’দিনপর ঠিক এই মূহুর্তে একটি পার্কের খোলামেলা পরিবেশে বসে আছে নিশো ও ফিওনা। তারা আজ একটু উদ্বিগ্ন।

—তোমার হাতটা একটু ধরি!!(নিশো)
—(মুচকি হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিল)

নিশো ধরবে কি ধরবে না একটু হিমশিম খাচ্ছে। একবার ধরতে চায় আবার সরিয়ে ফেলে। এটা দেখে ফিওনার খুব হাসি পাচ্ছে। নিশোর দিকে তাকিয়ে বলে ভয় পাচ্ছ নাকি?

—না মানে না, হ্যাঁ না হ্যাঁ।
—আচ্ছা, কেউ কি প্রেমিকার হাত ধরতে ভয় পায়??

নিশো এবার ঠিক লজ্জ্বা পাচ্ছে!! ফিওনার হাতটা জড়িয়ে ধরেই অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। এদিকে ফিওনা মুচকি হেসেই যাচ্ছে। তারপর ফিওনা নিজেই নিশোর কাঁধে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরল!! ছেলেটা ভীষণ কেয়ারলেস?? গার্লফ্রেন্ডকে কিভাবে জড়িয়ে ধরতে হয় সেটাও জানেনা?? এত লজ্জ্বা কিসের??

—এই, তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরছ না কেন??(ফিওনা)
—না মানে কেউ যদি দেখে ফেলে!(নিশো)
—কারা দেখবে?? এখানে তো সবাই প্রেমই করতে আসে।

ফিওনার এমন আচরন দেখে নিশো আস্তে আস্তে তাকে জড়িয়ে ধরল। কি অন্যরকম একটা ফিলিংস্। এই প্রথম কোন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরল সে। চারিদিকে নিস্তব্ধ, পাখিদের কলকলানি, শুধু ফিওনা আর নিশো বসে আছে। একে-অপরকে জড়িয়ে। বাতাসে ভেসে আসছে ফিওনার মধুর লুকানো হাসি। ভালবাসা ছুঁয়ে দিয়েছে তাদেরকে। ফিওনা মনে মনে ভাবছে….ও যদি আমাকে এভাবেই সারাজীবন আগলিয়ে রাখে। আমি কখনোই ওকে ছেড়ে চলে যাব না। অনেক বেশি ভালবেসে ফেলেছি ওকে।

তিনবছর হয়ে গেল তাদের ভালবাসার সম্পর্কটা এভাবেই রোমান্টিকতায় চলতে থাকে। বেলা গড়িয়ে এখন রাত হয়েছে। কিন্তু আজ সারাদিন ফিওনা কিছু খায়নি। গতকাল থেকে নিশোর সাথে কোন যোগাযোগ হচ্ছেনা। নিশো ভালো করেই জানে যে, ফিওনা তার সাথে কথা না বলে এক মূহুর্তও থাকতে পারেনা। সারাক্ষণই তাকে মিস করে। আজ দুদিন যাবত কোন কথা হচ্ছেনা, ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। এত কেয়ারলেস ছেলেটা একটু খোঁজখবরও তো নেওয়া যায়। কোন প্রবলেম হলে তো একটা ফোন দিয়ে জানাতে পারতো।। না খেয়ে ফিওনা আজ ভীষণ ক্লান্ত। ওর চোখের পানিতে বালিশ ভিজে টইটুম্বুর!! কাজল মাখা মায়াবিনী হরিণীর চোখ দুটো আজ অথই সমুদ্রে ডুবেছে। ক্লান্ত-নিস্তব্ধ, রাগ-অভিমান আর অফুরন্ত ভালবাসা নিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সে খেয়ালও করেনি ফিওনা। সকালেই হঠাৎ ফিওনার ফোনটা বেজে ওঠে!!

—হ্যালো নিশো, কি হয়েছে তোমার?? ফোন বন্ধ ছিল কেন তোমার?? আমি কতবার ট্রাই করেছি। সুইচ অফ আর অফ !!(কাঁদো কাঁদো গলায় কথাগুলো বলল ফিওনা)
—এত ব্যস্ত হবেনা। সব বলছি তোমাকে। (নিশো)
—(এবার ঠিকই কান্না করে) তুমি জানো এই দু’দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি??
—হুমমমমম পাগলী, আমি জানি। তুমি যে কতটুকু ভালবাসো আমি তা জানি। আচ্ছা এখন শোন, কি হয়েছিল!!
—কি হয়েছিল তোমার??
—কান্নাটা বন্ধ কর!!
—হুমমমম। (এপাশ থেকে ফিওনা বাম হাতে চোখের পানি মুছে)
—দু’দিন আগে বাসায় আসার সময় রাস্তায় বাইকএক্সিডেন্ট হয়।
—কি বাইকএক্সিডেন্ট?? কিভাবে?? তুমি ঠিক আছোতো??
—আমি আগেই বলেছি এত ব্যস্ত হয়ো না।
—তুমি জানোনা তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে থাকব?? (আবার কান্নার আওয়াজ করে)
—ইসসসসসসসস, এখন তুমি কান্না থামাবা!!
—(কোন কথা নেই, শুধু কান্নার আওয়াজটা শোনা যাচ্ছে)
—আরে বাবা আমি ঠিক আছিতো। আমার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে তখনই আমার ফোনটা ভেঙে যায়। আমি একটু চোট পেয়েছিলা। একদিন হসপিটালে ছিলাম। তোমাকে জানাব এমন কোন পরস্থিতিই ছিলনা।। প্লিজ তুমি রাগ করোনা!!!
—কি বলছ তুমি?? তুমি কি সত্যিই ঠিক আছো এখন??
—হুমমমম, এখন মোটামুটি অনেকটা ভালো। আর তোমার ভালোবাসা আছেনা!! তোমার ভালবাসাতে আমি ঠিকই সুস্থ আছি।

—তোমার সাথে দেখা করতে চাই। তোমার বাসায় আসবো না তুমি বেরুতে পারবে!!
—না বেরুতে পারবো আর তুমি যদি চাও বাসায় আসতে পারো!!
—(একটু হাসি দিয়ে) না পরে আবার বলবে বিয়ের আগেই শ্বশুড়বাড়িতে চলে এসেছি।।
—তোমাকে তো আমি বিয়ে করবোই !! দেখবে ঠিকই একদিন তোমাকে বিয়ে করে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো। আর তখনই আমার চাওয়া-পাওয়াটা বুঝিয়ে দিতে হবে!!
—যাও দুষ্ট কোথাকার !! যেদিন বিয়ে করবে সেদিন ভেবে দেখবো কি করব!!
—সেদিন কি তোমার ভেবে দেখার অপেক্ষায় থাকবো?? আমার তো একটু অধিকার থাকবেই!!
—আচ্ছা, হবে হবে!

এখন নিশো আর ফিওনা অপেক্ষায় আছে সেই দিনটার জন্য!! যেদিন তাদের দু’জনের মধ্যে কোন বাধা থাকবে না। দুটি আত্মা একে পরিণত হবে….

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত