আমার মিষ্টি পরী

আমার মিষ্টি পরী

-আমি একজনকে ভালোবাসি।(অপূর্বা)
-ভালই,তা আমি কি করতে পারি??(আমি)
-আপনি আপনার বাবাকে বলে বিয়ে cancel করে দেন।
-ওরে বাবা,এই কাজ আমার দ্বারা সম্ভব না।
-প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন।আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারব না।
-ভালোবাসতে তো কেউ বলে নি।শুধু বিয়ে করতে বলেছে।
-আপনি কি আমার সাথে ফাজলামি করতেছেন।

(অপূর্বার মুখ রাগে লাল হয়ে গেল।অপূর্বাকে প্রথম দেখাতেই আমার পছন্দ হয়।আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে।বাবা নিজেই মেয়ে পছন্দ করেছে।আজ ফোন করে অপূর্বা এইখানে ডাকল।আমি অবশ্য ধারণা করতে পেরেছিলাম এমন কিছুই ঘটবে।)

-না,সত্যিই আমি ফাজলামি করছি না।but করার চেষ্টা করছি।
-আপনি চেষ্টা করতে থাকুন।আমি যাচ্ছি।আর হ্যা, আপনি যতই চেষ্টা করেন না কেন,বিয়ের দিনই আমি পালিয়ে যাব।

এই বলে অপূর্বা হন হন করে রেস্টুরেন্ট এর বাইরে চলে গেল।আর আমি তার যাওয়া টুকু উপলব্ধি করলাম।
আজ অপূর্বার সাথে বিয়ে।হয়ত আজই পালাবে অপূর্বা।কিন্তু ওর আচরণ দেখে তা মনে হচ্ছে না।
যথারীতি বিয়ে সুন্দর ভাবেই শেষ হলো।আর অবাক করা বিষয় অপূর্বা ও পালিয়ে যায় নি।সব হই হোল্লোড় শেষে আমি আমার রুমে ডুকলাম।
অপূর্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।ওকে দেখে আমার কেন জানি খুবই আনন্দ হচ্ছে।
আমি অপূর্বার পাশে গিয়ে বসে দুষ্টমি করে জিজ্ঞাস করলাম

-আরে আপনি এইখানে,পালিয়ে যান নায় কেন? অপূর্বা রাগে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাল।
-ফাজলামি করবেন না।এমনিতেই মাথা খারাপ।(অপূর্বা)
-হুমম।
-আর হ্যা, আপনার খুশি হওয়ার কোন কারণ নেয়।আমার bf আজকে সব গোছাতে পারে নায় বলেই আমরা পালাতে পারি নায়।কয়েকদিন এর ভিতর আমরা ঠিকই পালিয়ে যাব।
-ওকে ভাল।তোমরা প্রস্তুতি নাও,আমি একটু ঘুমায়।
-হ্যালো মিস্টার নিচে শুবেন আপনি।আমি আপনার সাথে শুতে পারবনা।
-ওকে।

-আপনাদের রিলেশন কত দিনের??(আমি)
-আপনার এতো কিছু জানার দরকার কি??((অপূর্বা)
-না মানি,এমনি।
-আপনার জন্য সুখবর আছে।
-কি!! বলেন।
-আমার bf এক মাস পর আমাকে নিয়ে যাবে।আপনি অনেক সময় পাবেন।সব গুছিয়ে নিতে।পারলে আরেকটা মেয়ে যোগার করে নিন।
-এত বড় সুখবর!আমার আবেগে চোখে পানি চলে আসতেছে।
-ফাজলামি করবেন না।আর হ্যা।এই এক মাস আমার থেকে দুরে দুরে থাকবেন।
-ওকে।
-আর আপনার নিচে শুতে হবে না।উপরেই শুন।কিনতু মাঝখানের বালিশ এর অপর পাশে ভুলেও যেন হাত না আসে।
-আমি আমার যথা সাধ্য চেষ্টা করব।
-আপনি কি আমার সাথে সব সময় ফাজলামি কররবেন নাকি?!!
-চেষ্টা তো করতেছি।কিন্তু পারতেছি না।
-ওফফ!!

(এইভাবে আমাদের দিনকাল চলতে থাকল।আমার কেন জানি অপূর্বাকে রাগাতে অনেক ভাল লাগে।ওর রাগে মুখ যখন লাল হয়ে যায় তখন ওকে ঠিক অপ্সরীদের মত লাগে।ওর চলে যাবে এই কথা মনে করলে খুব কষ্ট লাগে।কিন্তু আমি এই একমাস স্মরণীয় করে রাখতে চাই।তাই প্রত্যেকদিন ওর জন্যে গোলাপ ফুল আনি।আর সারা রাত ওর পাশে ওর মায়াময় চেহারা দেখে কাটিয়ে দিই।যতই দিন যাচ্ছে আমার শরীর ততই ভেঙে পরছে।আমি বুঝতে পারছি না।অপূর্বাকে ছাড়া আমি কেমনে থাকব।আমি অনেক ভালবেসে ফেলেছি।আমার মনে হয় অপূর্বা তা জানে।কিন্তু হয়ত ওর করার কিছুই নেই।অন্য আরেকজন ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে।আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে।”অপূর্বা আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি”)

-এই কি অবস্থা হচ্ছে আপনার?
-আপনার আমাকে নিয়ে চিন্তা না করলেও হবে।আপনি আপনার যাওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করেন।
-আপনার খারাপ লাগবে না?
-কি আজব কথা! আমার বিয়ে করা বউ অন্য কারো সাথে পালিয়ে যাবে তাতে আমার গর্ব হবে।খারাপ লাগার তো প্রশ্নই ওঠে না।
-আপনি কি রাগ করছেন?আসলে আমার করার কিছুই নেই।আমি..
-আমি বুঝতে পারছি।আপনি সুখে থাকবেন তাতেই আমার খুশি।
-হুম।

আজ আমার সাথে অপূর্বার শেষ দিন।আজকে ও চলে যাবে।তাই সকাল সকাল আমি বের হয়ে গেলাম।ওর দিকে তাকানোর শক্তি আমার নেই।আজ আর অফিস যাব না।সারা দিন বাইরেই কাটিয়ে দিব।কিছুই ভালো লাগছে না।অপূর্বার সেই মায়াময় মুখ বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছে।ইচ্ছে করছে বাসায় ফিরে গিয়ে অপূর্বাকে জড়িয়ে ধরে বলি আমাকে ছেড়ে চলে না যেতে।কিন্তু আমি তা করব না।মোবাইলও অফ করে দিলাম।আজ রাত করেই বাড়ি ফিরব।আসলে বাড়ি যেতেই ইচ্ছে করছে না।অপূর্বাকে ছাড়া নিজেকে অনেক শূন্য মনে হবে।আসলে কি অবাক বেপার, একমাস আগেই ওকে ছাড়া আমি দিব্যি সাচ্ছন্দে থাকতাম।আর আজ ওকে ছাড়া কোন কিছু চিন্তা করতেও কষ্ট হচ্ছে।মানুষের মন খুব দ্রুতই পরিবর্তন হয়।আর ভালোবাসার ক্ষেত্রে তো আরো দ্রুত।যেমনটি আজ আমার সাথে হয়েছে।

রাত প্রায় 12টা।বাসার একটা চাবি সবসময় আমার সাথে থাকে।দরজার সামনে অনেক্ষন দাড়িয়ে আছি।আসলে ডুকতে ইচ্ছে করছে না।তাও মনের সাথে যুদ্ধকরে ডুকলাম।চারপাশ অন্ধকার।অপূর্বাকে ছাড়া সত্যিই ঘর শূন্য হয়ে গেল।ওর হৈ চৈ,রান্না ঘর হতে বেডরুম,আবার টিভির রুম।এই নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকত।সেই ব্যস্ততা আর নেই এখন।আমি দরজা বন্ধকরে দাড়িয়ে আছি।হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।আমি ঘুরে দাড়িয়ে দেখি অপূর্বা। আমি সত্যিই খুব অবাক হয়ে গেলাম।ওকে দেখে এতো খুশি লাগছে,মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না।আমার এতো খুশি আগে কখনো লাগেনি।

-এতক্ষণ কই ছিলে।(কান্না করতে করতে)
-কেন,বাইরে ছিলাম।
–এতক্ষণ বাইরে কি?
-আমি মনে করেছি আপনি চলে গেছেন।তাই আসতে ইচ্ছে করে নি।
-কত টেনশনে ছিলাম জানো তুমি?
-আজব কথা।সারা দিন আমাকে কষ্টে রেখে ওনার টেনশন!!
-ফাজলামি করবা না।আর আপনি করে বলতে হবে না।তুমি করে বলবা।
-জি ম্যডাম।তা তোমার bfকি আরো কিছু সময় চেয়েছে।
-তোমার সাথে আমি মজা করছিলাম।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে কতটা ভালোবাস।তাই মিথে্য বলে তোমাকে পরীক্ষা করলাম।

-তো আমি পাশ করেছি?
-একদমই না।আমার গোলাপ ফুল কই?
-আমি তো মনে করছি তুমি নাই।তাই ….
-এতো কিছু বুঝিনা।তুমি এখন আমার গোলাপ ফুল নিয়ে আসবা।আর প্রত্যেকদিন আমার গোলাপ ফুল চাই।
-তা ঠিক আছে।কিন্তু এত রাতে গোলাপ ফুল কই পাব?
-জানি না।যেখান থেকে পাও এনে দাও।
-ওকে আমার মিষ্টি পরী।

কি আর করা ফুল আনতে বেরিয়ে পরলাম।তাও এখন অনেক আনন্দ লাগছে।কেননা আমার এই মিষ্টি পরীকে আকড়ে ধরে বাকিটা জীবন কাটাতে পারব।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত