মায়াবতীর স্পর্শ

মায়াবতীর স্পর্শ

হাটছি একা,বসছি একা,আজ আর হাত টা ধরার মত কেও নেই। তবে হ্যা,এক সময় ছিলো। এক সময় বললে ঠিক হবে না।কয়েক দিন আগে ও ছিল।কিন্তু কী করবো,এমন এক জন এর সাথে রিলেশন করছিলাম।যে কী না,আমার ভালবাসা গুলু কে প্যারা ভাবতো।হয়তো তার প্রতি আমার একটু বেশিই কেয়ারিং ছিল।কিন্তু এই বেশি কেয়ারিং টা সেই প্যারা হিসেবে নিতো।তাই সেই নিজেই চার বছর এর রিলেশনশিপ ব্রেকাপ করে।শীতের সকালে ঘন কুয়াশার মাঝে হাটতে হাটতে কথা গুলা ভাবছে সাবিহা।সে একটা ছেলে কে অনেক ভালোবাসতো।

শুধু সেই ছেলে টা কে ভালবাসতো না,ছেলে টা ও তাকে অনেক ভালোবাসতো।তাদের রিলেশন শুরু হয়,বেষ্ট ফ্রেন্ড থেকে।দুজন ই এইবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার।ছেলেটার নাম শাওন….তাদের রিলেশনশিপ ব্রেকাপ হওয়ার পিছনে সাবিহার ই দোষ।শুধু শুধু সন্দেহ,কারো সাথে বেশি কথা বলতে দিতো না,কোনো মেয়ের সাথে যদি দরকারি কথা বলে,তাহলেই শুরু হয়ে যায় সাবিহার পাগলামী।সারা রাত ই কথা বলতে হতো সাবিহার সাথে।ফ্রি ফেবু চালাতে হতো শাওন কে।তারপর ও ফেবুতে দেখলেই সাবিহা শাওন কে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করতো।কয়েক দিনন তো সবার সামনে থাপ্পড় ও মারছে।

সাবিহা ভাবতো তার এই পাগলামী ছিল, শাওন এর প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ।কিন্তু,শাওন মোটেও এসব ভাবতো না,সেই ভাবতো এই গুলা হচ্ছে প্যারা।আর যত দিন যেতে লাগলো,সাবিহার পাগলামী ও বাড়তে থাকলো।শাওন তাই বিরক্ত হয়ে তাদের রিলেশন ব্রেকাপ করে।এখন হয়তো শাওন সাবিহার এই পাগলামী গুলা মিস করে হয়তো করে না।কিন্ত্ সাবিহা প্রতিটা মুহুর্থে শাওন কে মিস করে।প্রতিটি রাত তার কষ্ট বৃদ্ধি করে।সাবিহার পড়া লেখার ও অনেক ক্ষতি হচ্ছে।নাহ,এভাবে আর থাকা যায় না।নিজেকে শক্ত করতে হবে,শাওন কে তার ভুলে যেতেই হবে।কিন্তু সে কোনোভাবেই শাওন কে ভুলতে পারছে না।কীভাবে ভুলবে তাদের এই দীর্ঘ রিলেশনশিপ এর কথা।কলেজে মাঝে মাঝে শাওন এর সাথে চোখাচোখি হয়।

হয়তো তখন,শাওন এর চোখে দুস্টমি থাকে।কিন্তু সাবিহার চোখে থাকে এক ফোটা অশ্রু। সাবিহা মাঝে মাঝে দেখে শাওন অন্য মেয়েদের সাথে হাত-পা নেড়ে কথা বলে।তখন সাবিহার রাগে শরীর জ্বলে,কিন্তু না তার শরীর এর থেকে তার মন টা বেশি জ্বলে।কিন্তু সেটা কেও দেখছে না।সেটা বাহিরে প্রকাশ পায় তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া উত্তপ্ত এক ফোটা জ্বল দিয়ে।একদিন সাবিহা দেখে যে,একটা মেয়ে এসে শাওন কে জড়িয়ে ধরে।সাবিহা ভাবলো,গিয়ে তাকে থাপ্পড় মারবে।কিন্তু মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে যুদ্ধ করতে হলো।কারন, এই অধিকার সেই অনেক আগেই হারিয়ে ফেলছে। এভাবে মনের বিরুদ্ধে সাবিহা কে হাজার যুদ্ধ করতে হয়।
শাওন একদিন দেখলো যে,একটা ছেলে সাবিহা কে প্রপোজ করলো।কিন্তু সাবিহা ছেলে টা কে কিছু না বলে ওই স্থান ত্যাগ করলো।ছেলে টা ওই স্থানেই দাঁড়িয়ে রইলো। সেই দিন শাওন এর মন টা কেন যেন, সাবিহার জন্য আগ্রহ বাড়াতে লাগলো।

তার মন তাকে বার বার বলতেছে,সাবিহার কাছে ফিরে যেতে।কিন্ত শাওন কিছুই বুঝতে পারতেছে না।এই ব্যাপার টা তাকে সারা রাত ঘুমাতে দিল না।তবে কী সাবিহা অন্য কারো হয়ে যাবে..?অন্য  কারো হলে আমার কী..?সেই তো এখন আর আমার না অন্য কারো হলে আমার কী আসে যায়..?বিভিন্ন প্রশ্ন তাকে ঘিরে ধরছে।তবুও কেন,সাবিহার জন্য তার পুরানো ভালোবাসা জেগে উঠছে। পরের দিন আবার দেখলো,ছেলে টা সাবিহার পিছে পিছে যাচ্ছে।শাওন আর নিজেকে  আটকাতে পারলো না।শাওন ও পিছে পিছে গেল। গিয়ে দেখে ছেলেটা সাবিহা কে আবার প্রপোজ করতেছে।শাওন গিয়ে ছেলে টা কে কলার ধরে দুই টা থাপ্পড় মারে।

–গায়ে হাত দিলেন কেন..(ছেলে টা)
–তুই তারে(সাবিহা) প্রত্যেক দিন ডিস্টার্ব করছ কেন।
–আমি তারে প্রপোজ করতে আসছি..!(ছেলে টা)
–আমি তার বফ..! সো এখন থেকে আর ডিস্টার্ব করবি না।
–তোরে আমি দেখে নিবো।

এই বলে ছেলে টা চলে যায়।আর শাওন সাবিহার দিকে রাগী চোখে একবার তাকায়,তারপর চলে আসে।সাবিহা পিছন থেকে ডাক দেয়…কিন্তু শাওন আর ফিরে তাকায় না।সাবিহা ভাবতেছে,ওর সাথে তো আমার রিলেশন নাই..তাহলে আমাকে আরেকজন প্রপোজ করলে ওর সমস্যা কী..?মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে সাবিহা।সাবিহা আরো ভাবে তাহলে কী সে এখনো আমাকে ভালবাসে..?সেই কী আমার কাছে ফিরে আসতে চায়..?নাহ,সেটা কেন হবে আমি তো ওকে প্যারা দিইই..?নিজেকে এই রকম হাজার প্রশ্ন করে সাবিহা।এসব ভাবতেছে…হঠাৎ সেই দেখে যে কলেজের এক পাশে কিছু লোক ভিড় করে কী যেন দেখছে।সাবিহা ও গেলো,গিয়ে দেখে শাওন এর রক্ত মাখা পড়ে আছে।যে ছেলে কে শাওন থাপ্পড় দেয়..ওই ছেলে টা দলবল দিয়ে শাওন কে মারে।সাবিহা দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন এর সাহায্যে শাওন কে হাসপাতালে নেয়। এই মুহুর্থে শাওন হাসপাতালের একটি বেডে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে।আর অন্যদিকে সাবিহা হাসপাতালের বারিন্দায় বসে আছে।একটু পর ডাক্তার আসলো

–আপনি কী রোগীর অভিভাবক। (সাবিহা কে বলে ডাক্তার)
–নাহ,আমি ওর ফ্রেন্ড।
–তাহলে তার অভিভাবক কে খবর দিন।
–আচ্চা,

সাবিহা শাওন এর মা-বাবাকে খবর দেয়।সাবিহা সারা দিন শাওন এর সাথে বসে থাকে,আর কান্না করে,তবে সেই কান্নার কোনো শব্দ নেই।অবশ্য শাওন এর মা-জানে যে,তারা দুজন অনেক ভালো বন্ধু।এর বেশি কিছু তিনি জানতেন না।সাবিহা সকালে আসে রাতে যায় বাসায়।শাওন এর শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত ঝরে,যার কারনে দুই দিন পর তার জ্ঞান ফিরে।আর এই দুই দিন সাবিহা সারাক্ষণ শাওনের পাশে ছিল।আর রাতে বাসায়। গিয়ে সারা রাত কান্না করতো। এইদিকে শাওন এর মা-বাবা তাদের সম্পর্কের কথা বুঝে যায়।আর সাবিহার বাবা বিষয় টা জানতে পারে,সাবিহার এক বান্দুবি বলে দেয়।যখন শাওন এর জ্ঞান ফিরে তখন দেখে সাবিহা তার পাশে বসে আছে।সেই বুজতে পারে সাবিহা কতটুকু কেয়ারিং করছে। এরপর দুই পরিবারের সম্মতি তে তাদের বিয়ে হয়।আর সাবিহা নিজের আপন মানুষ কে সারা জীবনের জন্য আপন করতে পেরেছে।

নোট :-সত্যিকার এর ভালোবাসা,কখনো হারিয়ে যায় না।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত