মিষ্টি বৌ এর দুষ্টু জামাই

মিষ্টি বৌ এর দুষ্টু জামাই

এই শোন না (রাজ) হ্যা বল (স্নিগ্ধা) ভালোবাসো তো আমাকে? কেন ডাউট আছে? আছেই তো কি? আমার ভালবাসা নিয়ে তোমার ডাউট আছে? আজিব!!! মানুষের ডাউট থাকতেই পারে। এটা মানুষের জন্মগত অধিকার। তাই? তা সাহেবের কেন ডাউট হলো শুনি না মানে তুমি তো সারারাত আমার সাথে কথা বল। তো? না মানে আম্মু বলছিল অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। তুমি যেহেতু আমার সাথে অতি ভালবাসা দেখাইতেছ তো কি??? কি মিন করলা তুমি? এই!! এভাবে তাকিও না প্লিজ। ডাক্তার বলেছে আমার হার্ট এ্যাটাকের ঝুকি আছে।

হোক না। হার্ট এ্যাটাক ৷ না হলে তুমি ঠিক হবে না। এটা বলতে পারলা তুমি? না পারার কি আছে? সত্যই তো বললাম। হুম বুঝছি!!! আম্মু ঠিকই বলে মেয়েরা ভাল হয়না। এরা ছেলেদের মন বুঝেনা হু  এই যে মি. গাধা, সবসময় আম্মুর কথা শোন কেন? আর কে আছে আমার?? আব্বুর কথা শুনিনা আমি। তাই? দাড়াও তোমার বউ হয়ে আমার শশুড়ের সাথে একজোট হয়ে তারপর তোমাকে সাইজ করব। হেহে!!! বউ হবা!!! কি বল!!! লজ্জা করতেছে আমার। তাই? এত লজ্জা কেন তোমার? লজ্জা থাকতেই পারে। আচ্ছা হইছে। এখন চল ফুসকা খাব। না!! আম্মু না করছে ফুসকা খেতে। খেলে পেট খারাপ করবে। আচ্ছা তোমার খেতে হবেনা। আমি খাব। না আমিও খাব। এখন না বললে খাবে না? এখন খেলে তো আর আম্মু দেখবে না। বাহ্বা কি বুদ্ধি তোমার। হুহ!!! অনেক বুদ্ধিমান আমি। হইছে এবার অভিনয় ছাড়। বহুত ভাল একটিং করছিস। মাম্মা এটা তুই বলতে পারলি? আমি তো যাস্ট রিয়ার্সেল দিচ্ছিলাম। কাল হলিউডের মুভিতে শুটিং আছে তো আমার।
হলিউডের মুভিতে এসব ডায়লগ? মুভির নাম কিরে? আরে কি জানি? ওহহহহ!!! হ্যা!!! মনে পড়ছে। মুভির নাম “দ্য গ্রেট লাভার রাজ”। ওরে!!! কি কিউট নেম। মাইয়ারা তো মুভির নাম শুইনাই ফিদা হইয়া যাইব। তুই ফিদা হইছিস? তোর এই চাপাবাজিতে আমি ফিদা হব? তার মানে তুই মাইয়া না কেন কেন? এখন না বললি নাম শুইনা মাইয়ারা ফিদা হইয়া যাইব। তুই হস নাই। সো ইউ আর নট মাইয়া। আজকে তো তোরে চিবাইয়া খামু। শোন ভুলেও মরিচ দিস না। আমার কষ্ট হবে তো। যা ই হোক তোর হবু জামাই তো। ইইইইই..!!! রাজ!!! আহহহহ!!!! বাবুনি এমন করে না। দাত ভেঙ্গে যাবে তো। তখন সবাই বলবে রাজের বউয়ের দাত নেই। তোর বউগিরি বের করছি। আমার এখনো সময় এত্ত খারাপ হয়নি যে তোকে বিয়ে করব। ছিঃ ,,,হবু ,,,জামাইকে ইনসাল্ট করিস না। দেখ আর কিছু যদি বলিস লাথি দিয়ে গাড়ির নিচে ফালাই দিমু।

আমি মরলে কিন্তু তুই বিধবা। তুই দাড়া আজকে। তোর বউগিরি ছুটাচ্ছি। এই শোন ফিউচারপ্ল্যানিং কর। এক ডজন বাচ্চা নিব। আপাততো গেলাম অতঃপর একদৌড়। এখন যদি স্নিগ্ধা হাতের কাছে আমাকে পায় তবে সত্যই গাড়ির নিচে ফেলে দিবে। স্নিগ্ধা আমার বন্ধু না বউ না জিএফ সেটা নিয়ে আমিও কনফিউজড। তবে বউ না এটা সিউর। কারণ আমি এখনো কবুল বলিনি। আর আমি তো একটা অকর্মার ঢেকি নামেই পরিচিত। গত তিনবছর যাবত ভার্সিটিতে কন্টিনিউয়াসলি ফেল করছি। তবু প্রাইভেট ভার্সিটি বিধায় এখনো রাখছে। পাবলিক ভার্সিটি হলে লাথি দিয়ে বলত ” যা নিজের রাস্তা মাপ। তোর মত অকর্মা থাকার থেকে না থাকা ভাল।” স্নিগ্ধাও আমার এক ইয়ার জুনিয়র ছিল।

এখন আমি ওর জুনিয়র। শুনতেও কেমন লাগে। নিজের বউ নিজের সিনিয়র। মানে হবু বউ আরকি। তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। আদুভাই আমি হয়েই ছাড়ব। ছোটবেলা থেকে সবাই কাউকে না কাউকে আদর্শ হিসেবে নেয়। আমার সাথের গুলা ডাক্তার ইন্জিনয়াররে নিছে। আমি আদুভাইরে আদর্শ হিসেবে নিছি। ছোটবেলা থেকেই ফেল করার কত চেষ্টা করছি। কিন্তু না লেখলেও টিচাররা পাশ দিয়ে দিত। জানেনই তো এখন ফেল করা কতটা কঠিন হয়ে গেছে। এখন চান্স পাইছি। এখন চান্স ছাড়মুনা। আদুভাই আমি হবই। কাল নাকি স্নিগ্ধার বড়বোনের গায়ে হলুদ। আমাদের পুরো ফ্যামিলির দাওয়াত। আমার ডেড আর হেতের ডেড নাকি খুব ভালো দোস্ত। আমার বাপে নাকি হেতের বাপের থেকে দেখে লেখে পাশ করছে।

আমিও ট্রাই করছিলাম স্নিগ্ধা যখন আমার ক্লাসমেট আছিল তখন। কিন্তু পাশ করতে পারিনাই। বংশের ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারলাম না। আমার মত কুলাঙ্গার আমার বাপে যে কেন জন্ম দিছিল। স্নিগ্ধার বোনের বিয়েতে আসছি। স্নিগ্ধাকে দেখলাম ওর সব বান্ধবীদের সাথে বসে আছে। অনেক সুন্দর লাগছে। ভাবলাম কিছু দুষ্টামি করা যেতেই পারে। ওদের কাছে গেলাম৷ স্নিগ্ধার পাশের একটা মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। এই তুমি মেঘা না? (আমি) জিনা। আমার নাম সুমি। (মেয়েটা) ওহহহহ!!! সরি!!! ভুলে গেছিলাম। বাই দ্য ওয়ে নামটা কিন্তু কিউট তোমার মত। ফ্লার্টিং করছেন? আরে না কি যে বল। আমি বিবাহিত।  সত্যি? বিশ্বাস হচ্ছে না। কি যে বল!!! আমি জানি আমি কিউট। তাই বলে এতটা না। না সত্যই কিন্তু আপনি কিউট।

তুমিও কিন্তু কম না। আর পরিচয় করিয়ে দেই। এই হচ্ছে আমার বউ। (স্নিগ্ধাকে দেখিয়ে দিলাম। আমার ফ্লার্টিং দেখে এমনিতেই স্নিগ্ধা ক্ষেপে ছিল। এটা বলাতে তো পুরা ব্রাস্ট। আমি শেষ) কি? (সবাই একসাথে) হুম। তোমরা কিন্তু আমার শালি। এদিকে আস (স্নিগ্ধা) না,,,,,,(রাজ) আস বলছি,,,,(চোখ রাঙিয়ে) স্নিগ্ধা আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে এল। দেখে মনে হচ্ছে রাগে ফেটে যাচ্ছে। এক কোণে এনে দাড় করাল। এটা কি হলো?(স্নিগ্ধা) কি হবে? (রাজ) আমি তোর বউ হলাম কবে? না হলেও হবি তো। ভুলেও না। আর সুমির সাথে ফ্লার্টিং করছিলি কেন? কেন? তোর জ্বলছে বুঝি? একদমনা। যাস্ট জিজ্ঞেস করলাম। আচ্ছা শুননা ফিউচার প্ল্যানিং কিন্তু আমার প্রায় শেষ। আমরা বারটা বাচ্চা নিব। এগারজন ফুটবল খেলবে। একজন অতিরিক্ত।

কেউ ইনজুরি হলে নামবে আরকি। তোর লজ্জা নাই? সেটা কি জিনিস? রাজ তোরে কিন্তু পাপ্পি দে না উফফফফ!!!! পেইন!!! ইউ টু কি বললি? না ইউ চেইন। সাইকেলের অতঃপর আবার দৌড়। পিছনে আর তাকালাম না। আসলে বুঝতে পারার পর থেকে জানি যে স্নিগ্ধার সাথেই নাকি আমার বিয়ে ঠিক। তাই অন্য কোন মেয়ের দিকে না তাকিয়ে স্নিগ্ধাকেই লাইন মারি। যদিও লুচ্চামি করার চান্স ছাড়ি না। ছিঃ!!! লুচ্চামি বলতে নাই। শুদ্ধ ভাষায় ফ্লার্টিং। সত্য বলতে স্নিগ্ধার বড় বোনের সাথেই বিয়ে হত আমার। কিন্তু ভুলবশত হেতে আমার এক মাস আগে হয়ে গেছে। এজন্য সিরিয়াল চেন্জ হয়ে স্নিগ্ধাতে আসছে। কি আর করার। আমারও মেনে নিতে হলো। বিয়ে ভালভাবেই সম্পন্ন হলো। এর মধ্যে স্নিগ্ধার সামনে খুব কমবারই পড়েছি। আর পড়লেও চোখ বন্ধ করে দৌড় দিছি। স্নিগ্ধার বড়বোন যেহেতু গেছে আমার রাস্তা ক্লিয়ার। বাসায় বিয়ের কথা বলা যায়। আর ব্যাচেলর থাকতে ভালো লাগছে না।

অতঃপর বাপের কাছে নিজের বিয়ের আবেদন নিয়ে হাজির। হাটু কাপছে। তবুও বলতেই হবে। আব্বু আসব? (রাজ) জি স্যার আসেন (আব্বু) আব্বু কিছু বলার ছিল। হুম বলেন। না মানে তোমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। তো? আম্মুরও কষ্ট হয় কাজ করতে। কেন? কাজের লোক আছে তো। রান্না করতে কষ্ট হয় তো। না আমার একদম কষ্ট হয় না। (আম্মু) ও মা!!! আমারে বিয়া করতে দিবানা নাকি এইযে তোমার মার কষ্ট হয় না। (আব্বু) তাহলে থাক। না থাকবে কেন? কি বলবি বল না মানে বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম আরকি বলেই এক দৌড়ে রুমে। বাপের মুখে আর তাকাইনি। দুপুরে খেতে টেবিলে গেলাম। গিয়ে দেখি বাবা বসে।

এমনিতেই ভয়ে হাটু কাপছে। কিজানি বলে!!! তোর কথাটা নিয়ে ভাবলাম। (আব্বু) (আমি) আসলেই তোর মার কষ্ট হচ্ছে। (এই না হলে আমার বাপ) ভাবছি আরেকটা কাজের লোক বাড়াই দিমু কাজের লোক কেন? কাজ করবে। না না। থাক আর কাজের লোক লাগবে না। তো কি করতে পারি? আমি বিয়ে করলে বিনা পয়সায় কাজের লোক পেয়ে যাবে। বাপেরে বিয়ে করার কথা বলছ। লজ্জা করেনা। তোমরা বুঝনা যে আমারে বিয়ে করানো দরকার? তাইতো বললাম। খাওয়াবি কি? ও হাতি না যে একমণ কলাগাছ দিতে হবে। কিছুই তো করিস না তুই। কে বলল? আদুভাই হওয়ার চেষ্টা করতেছি। ওহহহহ!!!! তোরে নিয়ে যে কি করব? কিছু করতে হবে না। বিয়ে করিয়ে দাও। আজ আমার বিয়ে। সেই দিনটি যেটার জন্য গত বাইশ বছর যাবত ওয়েট করছি। স্নিগ্ধাকে সেই ভাবে সাজানো হইছে। অনেক কিউট লাগতেছে। আমার বাপে আসলেই আমার কথা খুব ভাবে।

স্নিগ্ধাকে আমার পাশে এনে বসানো হলো। আমি তো মনে মনে সেই উৎফুল্ল। স্নিগ্ধার হাতে চিমটি কাটলাম।  কি হইছে? (স্নিগ্ধা) আমি অবশেষে আমার ফিউচার প্লানিং সফল করার পথে। (রাজ) লজ্জাহীন পুলা। একটা দিব। এহহহহ!!! জামাইরে মারবি??? আর হ্যা মিশন কিন্তু বাসর রাত থেকেই শুরু হবে। স্নিগ্ধা এবার কিছু বলল না। ঘুম কেড়ে নেয়া সেই হাসিটা দিল। এই না হলে আমার বউ!!!!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত