অন্যরকম প্রেম

অন্যরকম প্রেম

কেমন অাছেন??

নিজের কানে বিশ্বাস হচ্ছে না এই মেয়ে অামাকে জিজ্ঞেস করলো?? অবশ্য বিশ্বাস করার মত না।

যাকে অনেক দিন ধরে ফলো করছি কিন্তু কাছে যেতে পারছি না, কথা বলতে পারছি না।

অাজ রাস্তায় দাড়িয়ে থাকারর সময় মেয়েটি নিজেই জিজ্ঞেস করছে?? অামি অবশ্য তাকে খেয়াল করিনি অাজ। সে নিজ থেকেই কথা বললো।
কথাটার কি উত্তর দিবো?? মনে ভেতর কেম যেন এক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে মেয়েটি হেটে চলে যাচ্ছে।

অারে এই তো সুযোগ তার সাথে কথা বলার। অামি অার দেরি না করেতার পিছন পিছন হাটতে লাগলাম। মেয়েটি অামার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

অনেক জোর হেটে তার পাশাপাশি গেলাম। উত্তেজনার রেশটা কেটে উঠতে পারিনি তাই হাটু কাপছে।

– অাপনি কেমন অাছেন??
– ভালো। অাপনি??
– ভালো।
– এই উত্তরটা সেখানেও দিতে পারতেন।
– কিন্তু অাপনার সাথে হাটা হতো না।
– অাচ্ছা তাই??
– হ্যাঁ

অাবার দুজন নিরব হয়ে গেলাম। কেউ কোনো কথা বলছিনা, হাটতে লাগলাম অাপন মনে। হটাৎ মেয়েটি একটা গেইট দিয়ে ঢুকে পড়লো।

বুঝলাম এটাই তার বাসা। পেছন ফিরে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। হাসির অর্থ কিছুই বুঝলাম না।

অামার কেমন যেন নিরবতা সৃষ্টি হলো। মেয়েটি যতক্ষণ পাশে ছিলো ততক্ষণ ভালোই লাগছিলো।

মনে যে উত্তেজনা ছিলো সেটাও এখন কেটে গেছে। অামি অাবার অামার রাস্তায় ফিরে যাই। অফিস যেতে হবে।

অফিস টা কাছে বলে রোজ দুপুরে এসে খেয়ে যাই, অার অামার জন্য বস দুপুরে দুই ঘন্টা ছুটি বরাদ্দ করেছে।

করবে নাইবা কেন? সেই দুঘন্টার জন্য অনেক কিছুই যে অামাকে দিয়ে করিয়ে নেয়।

অামি যখন খেয়ে এসে রাস্তায় দাড়াই তখনই এই মেয়ে হাতে কয়েকটা বই নিয়ে কোথা থেকে অাসে।

অাগে গোলির মুখে দেখি না যখনই খেয়ে অাসি ঠিক তখনই যায়।

অামার অাবার প্রতিদদিনের টাইম রুটিন হয়ে গেছে। সেদিক থেকে হয়তো মেয়েটির এসময় ছুটি হয়।

সেটা হতেই পারে অনেক কলেজ ভার্সিটি এসময় ছুটি হয়ে যায়।
অাস্তে অাস্তে অফিসের দিকে চলে এলাম। মাথায় শুধু এই কিছু মুহূর্তের কথা ঘুরছে।

এবার হয়তো একটা সাহসিকতার কাজ করা যেতেই পারে। এখন হয়তো মেয়েটির সাথে সব সময় কথা বলা যেতেই পারে।

নাহহ যদি অাবার খারাপ কিছু ভাবে?? সে তো ভদ্রতার খাতিরে একদিন কথা বলছে, প্রতিদিন দেখে সে হিসাবে।

তাহলে গেইট দিয়ে ঢুকার সময় অামার দিকে ফিরে হাসলো কেন?? নাহহহ থাক..

.
অাজ অাবার দেখা হবে অাবার কথা হবে ভাবতেই কেমন লাগছে। অাচ্ছা বলবে তো?? ধুরর অামি এক ভিতু এত ভয় পাচ্ছি কেন??
অফিসে গেলাম ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি বার বার অাজ যেন টাইম যাচ্ছে।

কাজের প্রতি মন নেই একটুও বার বার ঘড়ি দেখার জন্য মনে হচ্ছে টাইম যাচ্ছে না।

অবশেষে বাসায় গেলাম, খেতে বসে খাওয়ার দিকে মন নেই। প্লেটে হাত নেড়েই যাচ্ছি অন্যমনস্ক হয়ে।

মা অামার দিকে তাকিয়ে অাছে কি করছি অামি।

– কিরে কোন দিকে তাকিয়ে অাছিস?
– কই না। মায়ের কথায় হকচকিয়ে গেলাম।
– প্লেটের ভাত কোথায় যাচ্ছে খবর অাছে?
– উম্ম হ্যাঁ,কই
– কি বকছিস?
– অারে ধুরর।
– খেয়ে যা
– না ভালো লাগছে না।
– কার কথা ভাবছিস?
– কার কথা মানে??
অামো তো হা হয়ে গেলাম,মা কীভাব। বুঝলো অামি কারো কথা ভাবছি? সত্যি মায়ের মতন তো সব বুঝে।
– ওই মেয়েটা??
– এ্যায়য়য়, কোন মেয়ে?
– কাল যে মেয়েটার সাথে কথা বললে বলতে গলির ওদিকে গেলি।
– তুমি কি করে দেখলে?
– অামি তো অামার ছেলের কোনো খেয়ালই রাখি না তাইনা??
– ওহ কবে থেকে?? হাহাহা
– মাইর খাবি?
– হুম এখন সেটাও ভালো লাগবে।
– অাচ্ছা!!! তাহলে বাসায় নিয়ে অাসিস।
– অারে না না অামি পারবো না।
– তুই এত্ত ভীতু?
– ধুরর
– যা যা টাইম হয়ে গেছে।

এহহ লজ্জা অার রাখার মত না। মাও প্রেমের ব্যাপরে জানে। অাবার অামাকে ভীতুও বললো??

ছি ছি রাহুল তোর জীবন চেয়ে লজ্জাবতী গাছ অনেক ভালো।

ঠিক সময় দাড়ালাম, মেয়েটি অাসছে। অাবার অামার হাত পা কাঁপছে। উপরের দিকে তাকাতেই মা জানালা দিয়ে তাকিয়ে অাছে দেখছি।

ধুরর না কথা বলবো না চলে যাবো।

হাটা দিলাম এমন সময় মেয়েটি অামার দিকে তাকাতে তাকাতে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।

ধুরর কথা বললার জন্য কত কিছু করলাম সারাদিন কথাই বললাম না। এমন সময় মা ডাক দিলো অামাকে না মেয়েটিকে।

অবাক ব্যপারতো, মা মেয়েটিকে ডাক দিলো অার বললো বাসায় অাসতে। মেয়োটি কিছুক্ষন হা করে ছিলো তার পর বাসার দিকে গেলো।

মেয়েটির চাইতে অামি অারো বেশি হা হয়ে গেলাম। মা কি করবে কে জানে, মনে ভেতর কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে।
বাসায় একবার ফিরে যাবো?
না থাক, পরে মা থেকে জেনে নেয়া যাবে।

কিছু না ভেবে অাবার বাসার দিকে গেলাম। অাফিস অার ভালো লাগছে না।

ভবিষ্যৎ সম্পত্তি নিজের বাসার অার অামি অফিস যাবো?? পাগল নাকি?? নিজেরে পাগল মনে হচ্ছে।
– মা
– কি??
– কি চলছে??
– কিছু না।
– কিছু তো।
– অামি তাহলে যাই অান্টি।
– হুমম মা। যা বলছি মনে থাকবে তো??
– হ্যাঁ
– লক্ষ্মী মেয়ে।

এর মধ্যে কি এমন কথা হয়ে গেলো মনে রাখার মত? মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।

– মা
– কি??
– কি কথা বলছো??
– তোকে বলবো কেন??
– অাচ্ছা নাম টা কি জিজ্ঞেস করছো??
– এ্যয়য়য়??
– কি??
– এতদিন ঘুরঘুর করছিস অার নামই জানস না??
– ইয়ে মানে হয়েছে কি জানো তো….
– হইছে অার জানতে হবে না মেয়েটার নাম অনন্যা।
– দারুন তো।
– চিনির মত তাই না??
– ঊফফ তুমিও না।

অনন্যা?? অাহা কি সুন্দর নাম।
নামে ঢুবে যাচ্ছি। তার প্রেমে তো সাঁতার কাটতে হবে। অাচ্ছা সে কি অামাকে ভালোবাসবে?? না বাসলেও অামি বাসবো। একতরফা।।

এভাবে অারো কয়েক দিন কেটে গেলো। তাকে দেখা অল্প একটু কথা বলা। এখন অার অাগের মত লজ্জ্বা পায় না। তার সাথে কথা বলে ভালোই লাগে।

একদিন অফিস থেকে এসে দেখি বাসায় অারো লোকজনের উপস্থিতি।

ব্যাপারটা জানতে জানতে শেষে এটা দাড়ালো যে উনারা অনন্যার পরিবারের লোকজন।

তাহলে কি মায়ের সাথে অনন্যার এই কথা হয়ে ছিলো?? হ্যাঁ নিশ্চই, তা নাহলে অাজ অামাকে না জানিয়ে, মা!!!

মায়ের ফোনে রিং হচ্ছে। নাম টা অনন্যার। অামি তো পুরাই অবাক।
অামি মূল ব্যাক্তি নাকি তৃতীয় ব্যাক্তি সেটাই বুঝতেছি না।
অামি প্রেম করবো, বিয়ে করবো অার অামার কাছে তার নাম্বার নাই, মায়ের কাছে অাছে? কেমনে কি?

যাই হোক দুজন ভালোই চলছে অামার অার কি চাই?? মা তো অামার সব সে যদি খুশি থাকে অামার অার কিছু চাই না।

দেশে যে সম্পর্ক নিয়ে এত ঝগড়া সেটাই তো মধুর হয়ে উঠছে। এভাবে যেন থাকে সারা জীবন।

অবশেষে অনন্যা কে পার্মানেন্টলি মায়ের কাছে নিয়ে এলাম।

এখন অার দুপুরে খাওয়ার পর মোড়ে দাড়াতে হবে না। সাথে রাতের খাবারের পরও দেখা পাওয়া যাবে হাহাহা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত